দ্বিতীয় দিনের মতো কলেজে যেতে হলো এ্যালামনাই ষ্টুডেন্টদের গেট টুগেদার এর রেজিষ্টেশন করার জন্য। দুই দিন আগে যেদিন গিয়েছিলাম সেদিন কাজ শেষ না করেই ফিরে আসতে হয়েছিলো।গতকাল ফরম জমা দেয়া আর আরো দুই বান্ধবী সাথে দেখা করার জন্যই যাওয়া কিন্তু ফিরে এসেছি বিব্রত, হতাশা, অপমানবোধ নিয়ে।
ইন্টার পাশ করে কলেজ থেকে বেড়িয়ে এসেছি আরো ৬ বছর আগে। ঈদের পরে সাবেক ষ্টুডেন্টদের গেট টুগেদারের আয়োজন করা হয়েছে কলেজ কর্তৃপক্ষ ও সাবেক ষ্টুডেন্টদের সমন্বয়ে।ইন্টার পাশ করে অল্প কিছু বান্ধবীরাই একসাথে পড়ালেখার সুযোগ পেয়েছিলাম। বাকীরা বিভিন্ন ভার্সিটি, কলেজে।দু’চার জন ছাড়া বাকীদের সাথে দেখা সাক্ষাৎ হয়না বললেই চলে, কয়েকজনের সাথে হয় ফোনে যোগাযোগ। এই সুযোগে সকলের সাথে দেখা হবে এই আশায় বান্ধবীদের চাপাচাপিতে গেট টুগেদারে যোগ দিতে রেজিষ্ট্রেশন করতে যাওয়া। কিন্তু দ্বিতীয় দিনের মতো নিজের কলেজে গিয়ে হতে হলো অনেকটা বিব্রত, অপমানিত, লজ্জিত। কোথায় চলছে আমাদের সমাজ সেই হতাশা থেকেই লিখতে বসা……………………..
অপেক্ষা করছিলাম আরেক বান্ধবীর জন্য। ও আসতে দেরী করছিলো বিধায় আমরা কয়জন অপেক্ষা করছিলাম কলেজের দোতালায়।প্রচন্ড গরমে এমনিতেই অস্থির, আরেকদিকে অপেক্ষা তার উপরে যদি মাথা হট করার মতো কাজ করে ছোট ছোট ছেলেরা। এরা নিঃসন্দেহে আমার ছোট ভাইর সমান কারণ ছোট ভাই পড়ে ইন্টারে, তাদের দ্বারাই হলাম অপমানকর টিজিং এর শিকার।যারা অন্তত আমাদের থেকে ৬/৭ বছর করে ছোট তাহলে মাথা কিভাবে ঠিক থাকে?
অনেকদিন পর কলেজে এসেছি অপেক্ষা ফাঁকে কিছুটা সময় কাটিয়ে যাই ভেবে গল্প করছিলাম আমরা দোতালার বারান্দায়। কয়েকটি কয়েকজন ছেলে যারা নিঃসন্দেহে ইন্টারে পরে তারা তৃতীয় তলায় দাড়িয়ে দাড়িয়ে এমন সব কিছু বলছিলো যা যে কোন মেয়ের মেজাজ গরম হওয়ার কথা। সরাসরি আমাদের কিছু না বললেও আমরা ঠিকই বুঝতে পারছিলাম কথাগুলো আমাদের উদ্দেশ্য করেই বলা হচ্ছে।
এখানেই শেষ নয়, ওদের কয়েকজন আবার আমাদের সামনে দিয়ে যাচ্ছিল আর বিভিন্ন কমেন্টস করছিলো।যা শুনে আর মেজাজ ঠিক রাখা সম্ভব না আর যদি তা হয় নিজের সাবেক কলেজের ছোট ভাইদের দ্বারা। তখন যেন আর মাথায় কিছু কাজ করছিলো না। সাথের বান্ধবীদের বলেই ফেললাম……. কোন কলেজের পড়ে গিয়েছি? সেখানে এসে কি শিক্ষা পেয়ে গেলাম আজকে? কি দরকার এদের পড়ালেখা করার, কি শিখছে ওরা?
আমার কথাগুলি ভালো ভাবেই শুনতে পেলো ওরা। একটি ছেলে ঘুরে এসে বললো, কি বললেন আপু? ওর কথার উত্তর দেয়াতো দূরের কথা ওর মুখের ”আপু” শুনতেও তখন আগ্রহ বোধ করছিলাম না। শুধু বললামঃ যা বলেছি তা তো শুনেছোই আবার বলার কি দরকার? তোমাদের কলেজ পাশ করে গিয়েছি আরো ৬ বছর আগে, ৬ বছর পরে এসে এই মন্তব্যই শুনে গেলাম।
যে ছেলেটি কমন্টেস করেছিলো তাকে ডেকে কি বলেছে আবার বলতে বললো কিন্তু কমেন্টসকারী ছেলেটির মুখ দিয়ে আর কোন কথা বেরুলো না। আর প্রশ্নকারী ছেলেটিও কথা না বাড়িয়ে শুধু ”স্যরি” বলে দ্রুত কেটে পড়লো সামনে থেকে।বাকীরা আর সামনে আসলো না।
ইচ্ছে করছিলো না আর কলেজে দাড়িয়ে থাকি আর গেট টুগেদারের জন্য রেজিষ্ট্রেশন করি।কিন্তু বান্ধবীদের কারণে তা আর পারলাম না।কিছুক্ষনের মাঝে যার অপেক্ষা করছিলাম যে বান্ধবীটি চলে আসলে ওকে দিলাম আচ্ছা মতো বকা ।……… তোর জন্য আজ কলেজে এসে ছোট ছেলেদের কমেন্টস শুনতে হলো।
প্রিয় কমন রুমে গিয়ে ছেলেদের এ সব আচারণের বাস্তব কারণে
পেলাম। মাত্র ইন্টারে পরে অথচ এ সকল মেয়েদের ভাবের যেন শেষ নেই। কারো কারো পোষাক-পরিচ্ছেদ দেখে মনে হলো ভিন্ন অভিজ্ঞতা নিয়ে পাচ্ছি। ওদের অনেকেই যেভাবে চলাফেরা করে তাতে ছেলেরা এ বাড়াবাড়ি করবে সেটাই বোধগম্য হলো। আমরা পড়ার সময় কমনরুমসহ কলেজের পরিস্থিতি এতটা নাজুক ছিলো বলে মনে হয় না।দুই বছরের কলেজ জীবনে শুনতে হয়নি এরকম একটি মন্তব্যও। বেশীক্ষন অপেক্ষা না করে কমনরুম থেকে বেড়িয়ে আসলাম দ্রুতই। ভাবলাম….. আমরা মনে হয় এখনো ব্যাকডেটেড রয়ে গিয়েছি।
রেজিষ্টেশন ফরম জমা দিতে গিয়ে স্যারকে জানালাম বিষয়টি। স্যার অনেকটা হতাশা প্রকাশ করলেন আমাদের স্বান্তনা দিলেন। তার মন্তব্য এরকমঃ আসলে কি বলবো তোমরাও তো এ কলেজ থেকে পাশ করে গিয়েছো, তোমাদের নিয়ে আমাদের যা টেনশন ফ্রি ছিলাম আর এখন কয়েকশগুন বিব্রত এসকল ষ্টুডেন্টদের নিয়ে।কি শিখছে এরা, আর কি শিখাচ্ছি আমরা? স্যারের সাথে কথা না বাড়িয়ে বেড়িয়ে আসলাম কলেজ থেকে।
একথা কেউ বলবেন না যে আমি এ সমাজে একেবারে নতুন, কিছুই জানি না, চোখে পড়েনা তা নয় কিন্তু রাস্তায় বা এলাকায় যা হয় তা ভালই অবগত কিন্তু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও যদি এর বাহিরে না থাকে তাহলে শেখার জায়গায়ই তো থাকেনা।
আমার ছোট ভাইও তো ইন্টারে পড়ছে, চঞ্চলতা রয়েছে তাই বলে তো পরিচিত বা অপরিচিত এমন মেয়েদেরকে দেখলেই এভাবে মন্তব্য করবে না । অনার্সেপড়তে গিয়ে অনেক ক্লাসমেট পেয়েছি। যাদের অনেকে এখনো ফোন দেয়, কথা হয় কিন্তু প্রকৃতিগত দু একজন বাদে কই ওরা তো আমাদের সাথে খারাপ আচারণ করে না? বরং ওরা ক্লাসমেট বন্ধু হলেও আমাদের সম্মান দিয়েই কথা বলে। তাহলে আমাদের পরবর্তীরা কি শিখছে ? কেনই বা ওরা এ ধরণের আচারণ করবে?
প্রশ্ন তৈরী হয় আরো বড় করে………. কি শিখছে এরা পরিবার থেকে ? কি শিখছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে? কি শিখছে এ সমাজ থেকে?
ঘুনে ধরা সমাজটা কি তাহলে আগামী দিনে টোটালি পতনের মুখে???
রাতে এ কথাগুলোই বলছিলাম হৃদয়ের সাথে।বিব্রতবোধ, লজ্জিত আর অপমানবোধটার চেয়েও যা বেশী কাজ করছিলো তা হলো হতাশা। আবারো পুনরাবৃত্তি করলাম ওর সাথে……. আমরা মনে হয় এখনো ব্যাকডেটেড রয়ে গিয়েছি??
কথাগুলো বলতে পেরে কিছুটা হালকা হলাম আর একটি লম্বা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে ফোনটা রেখে দিলাম।
(কলেজের নামধামের দিকে গেলাম না কাউকে বিব্রত করবো না বলে)
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে জুন, ২০১৩ রাত ৮:২০