উচু হ্যান্ডেলে ধরা হাত, সামনে প্রসারিত দুই পা.... আরামদায়ক ফুটরেস্টে রাখা, মাথায় ক্যাপ বা ওপেনফেস হেলমেট, পেছনের তুলনায় সামনের চাকা উচু, সামনে বড় আকৃতির প্রসারিত ফুয়েল ট্যাংক, দুটি চাকাই যথেষ্ট চওড়া; এমন বাইকে চেপে দৃষ্টিসীমা পর্যন্ত নিরিবিলি রাস্তা দিয়ে চলেছে; এমন দৃশ্য হয়তো আমরা অনেক ইংরেজী সিনেমাতেই দেখেছি। মোটরসাইকেল বলতে আমরা যা বুঝি তার থেকে সামান্য ভিন্ন বৈশিষ্ট্যযুক্ত এই বাহনকেই ক্রুজার মোটরসাইকেল বলে।
১৯৩০ থেকে ১৯৬০ সালের দিকে আমেরিকায় উদ্ভব হয় ক্রুজার মোটরসাইকেলের। Harley Davidson, Indian এবং Excelsior এর মতো কোম্পানীর হাতে তৈরী হতে থাকে এই বাইকগুলো। দুর্বল বা কম টর্ক থাকলেও ক্রুজার মোটরসাইকেলের ইনজিনগুলো সব সময়ে অধিক শক্তিশালী হয়ে থাকে। ক্রুজারে সাধারনতই V-Twin ইনজিন দেখা যায়। অধিক আরামযুক্ত সীট, সোজা মেরুদন্ড বা কিছুটা পেছনের দিকে বেকে যাওয়া, শক্তিশালী ব্রেকিং সিস্টেম ক্রুজারের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। পাওয়ার ক্রুজার নামে আরেক ধরনের ক্রুজারের প্রচলন দেখা যায় যেখানে ইনজিনের থাকে প্রচন্ড শক্তি, উন্নত ব্রেক এবং সাসপেনশন থাকে, পর্যাপ্ত গ্রাউন্ড ক্লিয়ারেন্স থাকে এবং কখনও মোটাসোটা (musacular) হয়ে থাকে; যেমন - Yamaha V-Max.
বাংলাদেশে কখন থেকে প্রচলন ঘটে সেটির সঠিক ইতিহাস না জানা গেলেও ট্রাফিক সার্জেন্টদের ব্যবহৃত জংশেন কোম্পানীর ১২৫সিসির ক্রুজারগুলোই সবথেকে বেশি প্রচলিত, যদিও সাধারনের মাঝে ক্রুজারের প্রচলন কিছুদিন আগেও তেমন ছিলো না বললেই চলে। Regal Raptor ব্র্যান্ডটির মাধ্যমে বাংলাদেশে স্টাইলিশ ক্রুজারের আগমন ঘটে। যদিও সিসি সীমাবদ্ধতার কারনে ক্রুজারের প্রকৃত সুবিধা পেতে বাইকাররা বঞ্চিত হচ্ছেন। বর্তমানে আমাদের দেশে Keeway Superlight 150, Haojue TR, Haojue TZ, AtlasZongshen ZS, Znen Vento, Pegasus Fabio, Auge Classic ইত্যাদি জনপ্রিয়। এছাড়াও খুব অল্প সময়েই বাজারে আসবে Bajaj Avenger 150 Street, H Power Dark, এবং UM Runner এর কিছু মডেল। এর বাইরেও কিছু অপ্রচলিত ক্রুজার রাস্তায় দেখা যায়। অর্থাৎ ধীরে ধীরে ক্রুজার মোটরসাইকেলের প্রচলন বাড়ছে বাইকারদের মধ্যে।
ক্রুজার মোটরসাইকেলের ভালো দিক
স্টাইল: ক্রুজার মোটরসাইকেল ব্যবহারের অন্যতম একটি কারন হলো স্টাইল। ভিন্ন ধারার স্টাইলিশ লুকের কারনেই ক্রুজারপ্রেমীরা ক্রুজার ব্যবহার করে থাকেন। একজন বাইকার ক্রুজার চালিয়ে গেলে তার বাইকের স্টাইল এবং বসার স্টাইলের কারনেই অনেকের নজর কেড়ে নেয়।
লং রাইড: ক্রুজার প্রেমীদের ক্রুজার মোটরসাইকেল ব্যবহারের আরেকটি অন্যতম কারন হলো লং রাইড। লং রাইডের বাহন হিসেবে ক্রুজার অতুলনীয়। শক্তিশালী ইনজিন, আরামদায় সিটিং পজিশন ইত্যাদির কারনে লং রাইডের জন্য ক্রুজার বাইকের উপরে আর কিছু হতে পারে না।
আরাম: মোটরসাইকেলের ধরনগুলোর মধ্যে আরামের দিক দিয়ে নি:সন্দেহে ক্রুজার মোটরসাইকেল সবচেয়ে এগিয়ে। উচু হ্যান্ডেল, নীচু আরামদায়ক সীট, সামনে প্রসারিত ফুটরেস্ট বাইকারকে বাইক চালাতে সর্বোচ্চ আরামের জোগান দিয়ে থাকে। কম টর্ক দ্রুত গতির জোগান না দিলেও শক্তিশালী ইনজিন একটানা দীর্ঘপথ পাড়ি দিতে সব সময়েই প্রস্তুত থাকে।
ক্রুজার মোটরসাইকেলের মন্দ দিক
দাম বেশি: সাধারন প্রচলিত বাইকের তুলনাতে একটু বেশি মূল্যের হয়ে থাকে। যদিও সুবিধার তুলনাতে দামকে ইগনোর করা যেতেই পারে।
জ্বালানী খরচ বেশি: সাধারন বাইকের তুলনাতে ক্রুজার মোটরসাইকেলে জ্বালানি খরচ বেশি হয়ে থাকে। একুট বেশি সিসি এবং বেশি শক্তির ইনজিন, ওজনে ভারী এবং চাকা মোটা হওয়াতে জ্বালানি খরচ বেশি লাগে। ক্রুজার প্রেমীরা সাধারনতই জ্বালানি খরচের মতো বিষয়কে এড়িয়েই ক্রুজার মোটরসাইকেল কিনে থাকেন।
শহরে ভীড়ের অনুপযোগী: আমাদের মতো দেশে এটা বড় সমস্যা। যেখানে লং রাইডের পাশাপাশি শহরের ব্যস্ত রাস্তাতেও চলতে হয়। কম টার্নিং রেডিয়াস এবং লম্বা হুইলবেজ থাকায় শহরের ভীড়ে ক্রুজার মোটরসাইকেল চালাতে কষ্টকর। এছাড়াও অন্যান্য মোটরসাইকেলের তুলনাতে আয়তনে একটু বেশি মোটা থাকাও আরেকটি বড় সমস্যার কারন।
পরিশেষে
প্রকৃত সত্য হলো ক্রুজার বাইক ব্যবহারের উপযোগী রাস্তা এবং পরিবেশ বাংলাদেশে নেই। নিরিবিলি একটানা রাস্তা পাওয়া মুস্কিল। প্রতিটি রাস্তাই ব্যস্ততম, ফলে ঘন ঘন ব্রেকিং এবং গিয়ার পরিবর্তনের প্রয়োজন পড়ে। এছাড়াও শহরের মধ্যে ভীড় ঠেলে এই বাইক নিয়ে ঘোরাঘুরি খুবই কষ্টের। তবুও শখ বা প্রয়োজনের কাছে সমস্যা হার মেনে যায়। যারা মাঝে মাঝে লং রাইড দিয়ে থাকেন তারা প্রচলিত ক্রুজার ব্যবহার করতে পারেন। যদিও ক্রুজার মোটরসাইকেল শহরের মধ্যে ব্যবহারের উপযোগী নয়, তবুও ব্যবহার করতে চাইলে কিছু ক্রুজার মোটরসাইকেল রয়েছে যেখানে ব্রেকিং এবং গিয়ার শিফটিং সাধারন বাইকের মতো সহজ করা হয়েছে, সেগুলো ব্যবহার করতে পারেন।
বিশেষ কৃতজ্ঞতা: হাসিন হায়দার
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে জানুয়ারি, ২০১৭ রাত ১২:৫৭