নদীমাতৃক দেশ বাংলাদেশ। আর তাই ধুলো-বালি-কাদা আমাদের নিত্যসংগী। এছাড়াও ২-৩ মাস রয়েছে বর্ষাকাল। দেশের সকল রাস্তাই পাকা নয়, আর শহরের রাস্তাও অনেক এলাকাতেই খানাখন্দক থাকায় কিছু পানি-কাদা থাকেই। মোটের উপরে রাস্তায় বাইক চালালে শীতকাল হোক বা বর্ষাকাল; বাইকে একটু আধটু কাদাপানি লাগেই। আর বর্ষাকালে গ্রামের রাস্তায় কাদার কথা নতুন করে বলার কিছুই নাই। বর্ষায় কাদা লাগলে মাঝে মাঝেই বাইক ওয়াশ করা দরকার আর সাধারন দিনেও কিছুদিন অন্তর অন্তর বাইক ওয়াশ করা দরকার। তাহলে বাইক দেখতেও যেমন সুন্দর থাকে, তেমনি ময়লা-কাদা লাগা জায়গায় মরিচা পড়ার সম্ভবনাও থাকে না।
বাইক ওয়াশের জন্য স্থানীয় পরিচিত মেকানিকস/সার্ভিসিং সেন্টার থেকেই করিয়ে নিতে পারবেন। যদিও সেটি সব সময় হয়ে উঠে না। আর তাই চাইলে আপনার প্রিয় বাইকটি নিজের হাতেই ওয়াশ করাতে পারেন। প্রতিটি কাজের কিছু কষ্ট আছেই, কিন্তু ওয়াশ শেষে যখন চকচকে একটি বাইক আপনার সামনে থাকবে তখন পেছনের কষ্টটুকু ভুলে যাবেন বলেই আশা করা যায়। আর সবচেয়ে বড়কথা চকচকে পরিস্কার একটি বাইক বাইকারের রুচীর পরিচয়ও বহন করে।
বাইক ওয়াশ জটিল কোনো কাজ নয় এবং প্রয়োজনীয় উপকরন গুলোও মোটামুটি আমাদের সকলের বাসাতেই থাকে। আসুন দেখি ঘরোয়াভাবে বাইক ওয়াশে কি কি লাগে-
১. শ্যাম্পু/শাওয়ার জেল (বাইকের জন্য আলাদা শ্যাম্পু পাওয়া সেটি নিতে পারেন, তা না হলে মাথায় দেয়া শ্যাম্পুর ২-৩টি মিনি প্যাকই যথেষ্ট)
২. কিছু নরম সুতির কাপড়/টিস্যু পেপার, টুথব্রাশ, রংএর ব্রাশ এবং সামান্য মবিল(ইনজিন ওয়েল)
৩. হ্যান্ড শাওয়ারসহ পানির পাইপ, অথবা বালতি এবং মগ
কিভাবে বাইক ধৌত করবেন-
প্রথম পদ্ক্ষেপ-
একটু ঢালু জায়গা নির্বাচন করুন বাইক ধৌত করার জন্য। যেন পানি গড়িয়ে চলে যেতে পারে। বাইকটি ডাবল স্ট্যান্ড করে দাড় করান। এরপর পানির পাইপ দিয়ে বা বালতি থেকে মগে করে পানি নিয়ে আস্তে আস্তে পুরে বাইক ভিজিয়ে দিন। বিশেষ করে ইনজিন, ইনজিনের নীচে, টায়ার, মাডগার্ড, সাইলেন্সার পাইপের নীচে, স্ট্যান্ড ইত্যাদি জায়গাতে কাদা/ময়লা লেগে থাকে। এখানে ভালোভাবে পানি দিয়ে ভিজিয়ে দিন। কিছুক্ষন অপেক্ষা করুন ময়লাগুলো ভিজে নরম হওয়ার জন্য। এরপর ময়লা জায়গা গুলো ব্রাশ করে পরিস্কার করুন। ময়লা জায়গাগুলো পাইপের পানি দিয়ে পরিস্কার করুন অথবা মগে করে পানি নিয়ে একটু জোরে ঢেলে দিন যেন ময়লাগুলো চলে যায়।
দ্বিতীয় পদক্ষেপ-
বালতিতে ২মগ পরিমান পানি নিয়ে তাতে শ্যাম্পু মিশিয়ে ফেনা করে ফেলুন। এরপর নরম কাপড়ের সাহায্যে পুরো গাড়িতে শ্যাম্পু দিন। ইনজিন এবং কষ্টকর জায়গা গুলো ব্রাশের সাহায্যে শ্যাম্পু দিন। মিনিক দশেক অপেক্ষা করুন এরপর নরম কাপড় দিয়ে পুরো গাড়ি হালকা ঘষে পরিস্কার করুন এবং ইনজিন ও টায়ার, মাডগার্ড এরিয়াগুলোতে ব্রাশের সাহায্য নিন। আবার পুরো গাড়িতে পরিস্কার পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। ইনজিনের নীচে বা মাডগার্ড এলাকাতে জোরে পানি দিন যেন কোনো কাদা-ময়লা না লেগে থাকে। ১০-১৫ মিনিট অপেক্ষা করুন বাইকের পানি ঝরে পড়ার জন্য এরপর শুকনা নরম সুতির কাপড় দিয়ে বাইকটি মুছে ফেলুন যেনো কোথাও পানি লেগে না থাকে, প্রয়োজনে টিস্যু পেপারের সাহায্য নিতে পারেন।
বাইক থেকে পানি শুকিয়ে গেলে চেইনে সামান্য মবিল দিন এবং বাইকটি স্টার্ট দিয়ে ৫মিনিট ইনজিনটি চালু রাখুন।
বাইক ধোয়ার ক্ষেত্রে কিছু পরামর্শ
০১. গরম ইনজিনে পানি ঢালবেন না, প্রয়োজনে কিছুক্ষন অপেক্ষা করুন
০২. বেশি ক্ষারযুক্ত সাবান/শ্যাম্পু/ডিটারজেন্ট ব্যবহার করবেন না, বাইকের রং নষ্ট হয়ে যাবে।
০৩. বাইক ধোয়ার সময় বাইকের চাবিটি খুলে রাখুন যেন সেদিক দিয়ে পানি না ঢুকে পড়ে।
০৪. ডিস্ক ব্রেকে কোনো তেল জাতীয় জিনিস না লেগে থাকে এবং ড্রাম ব্রেকের ভেতরে পানি ঢুকে না পড়ে সেদিকে খেয়াল রাখুন.
০৫. বাইক ওয়াশ শেষেই বাইক না চালিয়ে অন্তত কিছু সময় পরে চালান, বিভিন্ন জায়গায় জমে থাকা পানি গুলো আপনাকে বিরক্ত করতে পারে।
০৬. বাইক ধোয়ার সময় এমন কিছু ব্যবহার করবেন না যাতে বাইকের গায়ে দাগ পড়ে যেতে পারে।
এভাবে আপনার প্রিয় বাইকটি আপনি বাসাতেই ধৌত করতে পারেন, খরচ বাচার বিষয়টি না বাদ দিলাম, কিন্তু নিজের হাতে বাইকটি ঝকঝকে নতুনের মতো করে তোলার যে আনন্দ এর মুল্য অনেক।
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে অক্টোবর, ২০১৬ বিকাল ৫:০৯