somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

মোটরসাইকেল ভ্যালী
মোটরসাইকেল ভ্যালী ২০১২সালের ২৫শে জানুয়ারী প্রতিষ্ঠিত হওয়া বাংলাদেশের সর্ব প্রথম এবং সর্ব বৃহৎ মোটরসাইকেল বিষয়ক ওয়েবপোর্টাল। মোটরসাইকেল বিষয়ক তথ্য, দাম, সংবাদ, রিভিউ, টিপস, শোরুমের ঠিকানা সহ মোটরসাইকেলের প্রায় সব কিছুই রয়েছে এখানে।

কোন বাইক কিনবেন?

২২ শে অক্টোবর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:১৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

অনেকেই জানতে চান ভাই একটি মোটরসাইকেল কিনবো। সাজেশন দেন কোনটি কিনবো? অনেকেই বলেন এই বাজেটের মধ্যে কোন বাইক ভালো হবে? এমন প্রশ্নের সহজ বা এক কথায় উত্তর দেয়া বেশ কঠিন। কেননা কারো জন্য একটি বাইক নির্ধারন করা কয়েকটি অপশনের সমন্বয়ে হয়। যেমন বাইকটি কি কাজে ব্যবহার হবে, প্রতিদিন কি পরিমান চালানো হবে, চালানোর স্বাভাবিক রাস্তা কেমন হবে, কোন ধরনের বাইক পছন্দ, কোন ব্রান্ড পছন্দ এবং সবচেয়ে বড় কথা বাজেট কেমন? চলুন বিষয়টি নিয়ে আরেকটু আলোচনা করি।

প্রতিটি বাইকেরই ভালো এমন মন্দ দিক রয়েছে।শক্ত, মজবুত, টেকসই , গতি এবং ডিজাইনের কারনে হোন্ডা, ইয়ামাহা, সুজুকি সহ জাপানিজ বাইকের জনপ্রিয়তা আমাদের দেশে সব সমযেই রয়েছে। এরপরে আমরা ইনডিয়ান ব্রান্ডগুলোর কথা বলতে পারি যেমন বাজাজ, হিরো, টিভিএস, মাহিন্দ্রা ইত্যাদি।

চাইনিজ ব্রান্ড এবং চায়না মেইড বাইকগুলো(অনেক ক্ষেত্রেই মুল ব্রান্ড অন্য দেশের, তৈরী চায়নাতে) বাংলাদেশে তাদের শক্ত অবস্থান তৈরী করে নিচ্ছে। তাদের মধ্যে ডায়াং-রানার, কীওয়ে, লিফান, এটলাস-জংশেন, জিনান, ডায়ুন ইত্যাদি। তুলনামুলক দামে কম কিন্তু আধুনিক সব সুবিধাযুক্ত থাকে। টেকসই কিছুটা কমই বলা যায়।

দেশীয় পন্য শ্লোগান দিয়ে ওয়াল্টন বাইকের যাত্রা শুরু হলেও নিম্নমানের পন্য এবং বাজে কাস্টোমার সার্ভিসের কারনে ওয়ালটন বাজার থেকে সরে গিয়েছে। রানার অনেক আগে থেকেই তাদের কাস্টোমারের কাছে বিশ্বাসটি ধরে রেখেছে দাম এবং মানের কারনে। যমুনা গ্রুপ পেগাসাস নামে বাইকের ব্রান্ড চালু করেছে। রাস্তায় তাদের বাইক খুবই কম দেখা যায়।

এছাড়াও অনেকে ব্যক্তিগত বা ক্ষুদ্র উদ্যোগে বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন ব্রান্ডের বাইক আমদানী করে থাকেন।

বাইকের উৎপাদনের দেশ এবং ব্রান্ড নিয়ে অনেক আলোচনা হলো, এবার ঢুকে পড়ি মুল আলোচনায়। একটি বাইক কিনতে গেলে প্রধান যে প্রশ্নটি আসে সেটি হলো কি কাজে ব্যবহার হবে? আমরা সেভাবেই আলোচনাটি এগিয়ে নিবো, সাথে থাকবে মুল্য এবং অন্যান্য বিষয়।

সাধারন ব্যবহার
সাধারন ব্যবহার বলতে শহর বা গ্রামের মধ্যে চলাচল। প্রতিদিন সর্বোচ্চ ২০-৫০কিমি যাতায়াত হবে। এমনক্ষেত্রে রানার এর ৫০ থেকে ১২৫সিসি পর্যন্ত বিভিন্ন বাইক রয়েছে, কীওয়ে এবং লিফান/ভিক্টোর-আর এর রয়েছে ১০০সিসির কিছু বাইক। এই সেগমেন্টে ইনডিয়ান ব্রান্ডগুলোর জনপ্রিয়ত অনেক বেশি। যেমন হোন্ডা ৮০সিসি, সিবি শাইন বা ড্রীমনিও, ইয়ামাহার রয়েছে স্যালুটো, সুজুকির হায়াতে, বাজাজের রয়েছে ডিস্কোভার সিরিজ, বাজাজ সিটি১০০, বাজাজ প্লাটিনা ইত্যাদি। টিভিএস এর রয়েছে টিভিএস মেট্রো ১০০ এবং মেট্রোপ্লাস। ১০০সিসি সেগমেন্টে হিরোর রয়েছে অনেকগুলো বাইক। তার মধ্যে আইস্মার্ট, স্প্লেন্ডর+, গ্ল্যামার অন্যতম জনপ্রিয়। এছাড়াও মাহিন্দ্রা ব্রান্ডের সেন্টুরো সিরিজ বেশ জনপ্রিয়।

বেশি বা রুঢ় ব্যবহার
দিনের একটি বড় অংশ যদি বাইকের উপরে কাটাতে হয় সেক্ষেত্রে আপনাকে আরাম, টেকসই এর দিকে বেশি মনযোগ দিতে হবে। এক্ষেত্রে অন্তত ১২৫সিসি থেকে ১৫০সিসি আপনার জন্য ভালো হবে যেমন হোন্ডা সিবি ট্রিগার, হোন্ডা সিবি শাইন, ইয়ামাহা এসজেড-আরআর, হিরো হাংক, হিরো স্প্লেন্ডর+, হিরো গ্ল্যামার, কীওয়ে আরকেএস ১২৫, ১৫০। হাউজুয়ে কুল আপনার তালিকায় থাকতে পারে।

স্পীড এবং স্টান্ট
আপনি যদি স্পীড লাভার হোন অথবা স্টান্ট করতে পছন্দ করেন তাহলে আপনাকে যেতে হবে একটু বেশি সিসি বাইকে যেতে হবে। যদিও আমাদের দেশে আপাতত ১৫৫সিসির বেশি বাইক অনুমোদিত নয়। এই সেগমেন্টে ইয়ামাহা এফজেডএস, ফেজার, আর১৫, হোন্ডা সিবিআর, সুজুকি জিক্সার সিরিজ যথেষ্ট জনপ্রিয়। এছাড়া বাজাজ পালসার, টিভিএস আরটিআর এবং হিরো হাংক এবং এক্ট্রিম অন্যতম জনপ্রিয়। এর বাইরে লিফান কেপিআর বহুল পরিচিত বাইক।

ক্রুজার: দি বস
আপনি যদি লং টুর দিতে চান আরামের সাথে রাজকীয়ভাবে তাহলে আপনাকে বেছে নিতে হবে ক্রুজার বাইক। সিসি লিমিটের কারনে আমাদের দেশে আরামদায়ক এবং শক্তিশালী ক্রুজার বাইকগুলো আসে না। যেগুলো পাওয়া যায় সেগুলো ও মন্দ নয় যেমন কীওয়ে সুপারলাইট, রিগ্যাল র্যা প্টর, বাজাজ এভেন্জার, হাওজুয়ে টিআর ইত্যাদি।

স্কুটার
একটা সময় আমাদের দেশে মেয়েদের বাইক নামেই পরিচিত ছিলো কিন্তু ভেসপা স্কুটার চালাতো ছেলেরাই। যাইহোক স্কুটার মুলত কমিউটার বাইক বা ফ্যামিলি বাইক হিসেবে শহর বা গ্রামে অল্প দুরত্বে আরামের সাথে চলাচলের জন্য সেরা বাহন। বর্তমানে প্রায় প্রতিটি ব্রান্ডেরই স্কুটার রয়েছে। টিভিএস পেপ, ওয়েগো, মাহিন্দ্রা ডিউরো, রোডিও। এছাড়াও জিনান ব্রান্ডের অনেকগুলো স্কুটার রয়েছে। যেগুলো ৫০সিসি থেকে ১৫০সিসি পর্যন্ত।

ইলেক্ট্রিক বাইক
পরিবশে বান্ধব এবং কম খরচের কারনে পৃথিবীব্যাপী ইলেক্ট্রিক বাইকের চাহিদা বাড়ছে। বাংলাদেশে ইলেক্ট্রিক স্কুটার বেশি পাওয়া যায়। তাদের মধ্যে গ্রীন টাইগার অন্যতম জনপ্রিয়। এগুলো শহরে, গ্রামে অল্প দূরত্বে চলাচলের জন্য আদর্শ বাহন। যারা ঠান্ডা মাথায় ঝামেলাবিহীনভাবে পথ চলতে চান তাদের জন্য আদর্শ বাহন। ইদানিং বাইক টাইপ এবং স্পোর্টি লুক দিয়েও কিছু ইলেক্ট্রিক বাইক পাওয়া যাচ্ছে।

বাইকের দাম
কমিউটার বা সাধারন ব্যবহারের বাইকগুলো ৬০হাজার টাকা থেকে শুরু করে ১লাখ ৭০হাজার এর মধ্যেই হয়ে যায়। বেশি ব্যবহারের উপযোগী বাইকগুলো সাধারন ১লাখ ২০হাজার থেকে শুরু করে ২লাখ টাকাই যথেষ্ঠ। স্পোর্টস বাইক দুইলাখ থেকে পাঁচলাখ বা তারও বেশি। ক্রুজারগুলো প্রায় দুইলাখ থেকে ৩লাখের মধ্যেই দাম। ইলেক্ট্রিক বাইক গুলো ৪০ হাজার টাকা থেকে শুরু করে বিভিন্ন দামের রয়েছে।

তেল সাশ্রয়ী
সাধারন বাইক এবং স্কুটার বাইক গুলো কিছুটা তেল সাশ্রয়ী বাইক হয়। বাজাজ ব্রান্ডের সুনাম রয়েছে কম জ্বালানী খরচের জন্য। এছাড়াও টিভিএস মেট্রো, হিরো আইস্মার্ট খম জ্বালানী খরচের জন্য সুপরিচিত। জাপানী ব্র্যান্ডগুলো ইনডিয়ান ব্রান্ডের থেকে একটু বেশি তেল খরুচে।

টেকসই

বাইকের দীর্ঘস্থায়ীত্বের জন্য নি:সন্দেহে জাপানী ব্রান্ডগুলোর উপরে আস্থা রাখতে পারেন। এরপরে ইনডিয়ান এবং অন্যান্য। টেকসই এর ক্ষেত্রে দাম একটি বড় ভূমিকা রাখে। কমদামে বেশি টেকসই বাইক পাবেন না।


আফটার সেলস সার্ভিস এবং পার্টস
যত সুন্দর এবং ভালো বাইকই হোক, তাদের বিক্রোয়ত্তর সেবার মান যদি ভালো না হয় তাহলে সে বাইক না কেনাই বুদ্ধিমানের কাজ। যতো ভালো ব্রান্ডই হোক, যদি তাদের পার্টস সহজলভ্য না হয় তাহলে সে বাইক কিছু সময় পরে বোঝা ছাড়া আর কিছুই নয়। কাজেই কোম্পানী এখন আছে কিছুদিন পরে নাই হয়ে যাবে এমন সম্ভবনা থাকলে সেদিকে তাকানোর প্রয়োজন নেই। বাইক একটু খারাপ হোক তাও ভালো কিন্তু বিক্রোয়ত্তোর সেবা নিয়ে কোন কারনে বিপদে পড়তে না হয় সেদিকে খেয়াল রাখুন। আপনার বাইকের সার্ভিস সেন্টার যেনো আপনার নাগালের মধ্যেই হয়। আপনি থাকেন সিলেটে আর সার্ভিস নিতে ঢাকা আসতে হবে, এমন বাইক না কেনাই ভালো।

পরিশেষে
বাইক কেনার পূর্বে অবশ্যই ঠিক করে নিতে হবে আপনি কি কাজে বাইকটি ব্যবহার করবেন। এবার সেই কাজের সাথে ডিজাইন, পারফরমেন্স এবং দামের সমন্বয় করে বাইক কিনে নিতে পারেন। কোনো বাইকই শতভাগ নিখুত নয়। একই বাইকের মধ্যে সব গুনের সমাহার কখনই পাওয়া সম্ভব নয়। যে বাইক স্পীড পাবেন সে বাইক তেল বেশি খাবে, যে বাইক টেকসই হবে সে বাইকের দাম বেশি। কাজেই বাইক কিনতে আপনার প্রয়োজন, পছন্দ এবং সামর্থের সমন্বয়ে যে বাইকটি হবে, সেটিই হবে আপনার জন্য সেরা বাইক।

হ্যাপী বাইকিং।

সর্বশেষ এডিট : ২২ শে অক্টোবর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:১৫
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ফখরুল সাহেব দেশটাকে বাঁচান।

লিখেছেন আহা রুবন, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৫০





ফখরুল সাহেব দেশটাকে বাঁচান। আমরা দিন দিন কোথায় যাচ্ছি কিছু বুঝে উঠতে পারছি না। আপনার দলের লোকজন চাঁদাবাজি-দখলবাজি নিয়ে তো মহাব্যস্ত! সে পুরাতন কথা। কিন্তু নিজেদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হচ্ছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। প্রধান উপদেষ্টাকে সাবেক মন্ত্রীর স্ত্রীর খোলা চিঠি!

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:০৩




সাবেক গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনকে মুক্তি দিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে খোলা চিঠি দিয়েছেন মোশাররফ হোসেনের স্ত্রী আয়েশা সুলতানা। মঙ্গলবার (২৯... ...বাকিটুকু পড়ুন

কেমন হবে জাতীয় পার্টির মহাসমাবেশ ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৫৬


জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিক্ষুব্দ ছাত্র জনতা আগুন দিয়েছে তাতে বুড়ো গরু গুলোর মন খারাপ।বুড়ো গরু হচ্ছে তারা যারা এখনো গণমাধ্যমে ইনিয়ে বিনিয়ে স্বৈরাচারের পক্ষে কথা বলে ,ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ হওয়াতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী

লিখেছেন সামিউল ইসলাম বাবু, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১২:১৩

ফিতনার এই জামানায়,
দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী খুব প্রয়োজন ..! (পর্ব- ৭৭)

সময়টা যাচ্ছে বেশ কঠিন, নানান রকম ফেতনার জালে ছেয়ে আছে পুরো পৃথিবী। এমন পরিস্থিতিতে নিজেকে গুনাহ মুক্ত রাখা অনেকটাই হাত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা

লিখেছেন মুনতাসির, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৮:২৪

বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×