যেভাবে বুঝবেন আপনি প্রচণ্ড বজ্রপাত ঝুঁকিতে রয়েছেন কিংবা অল্প সময়ের মধ্যে আপনার আশ-পাশে বজ্রপাত আঘাত করতে যাচ্ছে।
আপনারা ইতিমধ্যেই জেনেছেন যে এই সপ্তাহ থেকে বাংলাদেশে কলাবৈশাখি ঝড় শুরু হতে যাচ্ছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কালবৈশাখী ঝড় এর কারণে বাংলাদেশের মানুষ সবচেয়ে বড় ঝুঁকি অনুভব করছে তা হলও তীব্র বজ্রপাত এর কারণে প্রতিবছর ৩০০ থেকে ৪০০ মানুষের মৃত্যু। আমার পূর্বের পোষ্ট থেকে জেনে নিতে পারেন ৪ প্রকারের বজ্রপাত সম্বন্ধে যার মধ্যে ২ টি হলও মেঘ থেকে ভূমিতে ও ভূমি থেকে মেঘের দিয়ে বজ্রপাত। কোন স্থানের উপর দিয়ে কালবৈশাখী ঝড় বয়ে যাওয়ার পূর্বে ভূমির পৃষ্ঠে ধনাত্মক কিংবা ঋনাত্ন চার্জ জমা হতে থাকে। মেঘের ও ভূ-পৃষ্ঠের যে স্থানে বেশি শক্তিশালী চার্জ জমা হয় সেই স্থানের চার্জ সাধারণ বিপরীত স্হানের অপেক্ষাকৃত দুর্বল চার্জকে নিজের দিকে আকর্ষন করে ও বজ্রপাত ঘটায়। সহজ ভাষায় বলতে হয় গ্রামের চৌধুরী সাহেবের আহবানে সাড়া দিয়ে দুর্বল মানুষটি চৌধুরী সাহেবের উঠানে উপস্থিত হয়।
যদি দেখেন যে মেঘলা আকাশের নিচে দাঁড়ানো অবস্হায় আপনার কিংবা আপনার পাশের মানুষটির মাথার চুল খাড়া হয়ে গেছে সংযুক্ত ছবির মানুষ দুইজনের মতো তবে বজ্রপাত থেকে প্রাণে বাঁচতে চাইলে চিতা-বাঘের গতিতে দৌড়ে নিরাপদ আশ্রয় নিতে হবে।
ছোটবেলায় অনেকেই পরীক্ষা করেছেন চিরুনি দিয়ে মাথার চুল আঁচড়ে টেবিলের উপর রাখা কাগজের টুকরোর উপর ধরলে ছোট-ছোট কাগজের টুকরো চিরুনির দাঁতের দিকে আকর্ষিত হয় কারণ চুলের সাথে চিরুনির ঘর্ষণের ফলে চিরুনির দাঁতে স্থির বিদ্যুৎ বা অচল বিদ্যুৎ উৎপন্ন হয় যা কাগজে অবস্থিত বিপরীত মুখি চার্জকে আকর্ষণ করে ও কাগজের টুকরো চিরুনির দাঁতে জামা হয়। ঠিক একই প্রক্রিয়ায় মেঘের নিচে অবস্থিত শক্তিশালী বৈদ্যুতিক চার্জের প্রভাবে ভূ-পৃষ্টে জমা হওয়া বিপরীত মুখি চার্জকে নিজের দিকে টানতে থাকে ও ভূ-পৃষ্টে জামা হওয়া চার্জ মেঘের গোঁড়ার দিকে রওনা দেয়।
যেহেতু শুষ্ক বায়ু বিদ্যুৎ অপরিবাহী তাই ভূ-পৃষ্ঠে অবস্থিত চার্জ ভূ-পৃষ্ঠের উপর অবস্থিত পরিবাহী বস্তু খুঁজতে থাকে মেঘের কাছে পৌছানোর জন্য। প্রাকৃতিক ভাবে সবচেয়ে বড় গাছটি হলও সবচেয়ে বড় মই যে মই বেয়ে ভূ-পৃষ্ঠে অবস্থিত চার্জ সবচেয়ে কম সময়ে ও কম শক্তি ব্যয় করে মেঘের গোঁড়ায় পৌছাতে পারে। ঠিক একই কথা প্রযোজ্য খোলা মাঠে কাজ করা কৃষকের ক্ষেত্রে। একই কথা প্রযোজ্য ঝড়ের সময় খোলা স্কুল মাঠে বৃষ্টির পানিতে ফুটবল খেলা কিশোরদের ক্ষেত্রে। একই কথা প্রযোজ্য ঢাকার এলিট মেয়েদের স্কুলের বৃষ্টিতে জল-কেলী-রত মেয়েদের ক্ষেত্রে। এই প্রত্যেকটি সময়ই যে কোন সময় যে কেউ বজ্রপাতে আক্রান্ত হয়ে গুরুতর আহত কিংবা নিহতে হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল।
hair raising before lightning strike
উপরে সংযুক লিংকের ভিডিওতে দেখুন সমুদ্রে জাহাজের উপর অবস্থানরত যাত্রীদের মাথার চুল আকাশের দিকে খাড়া হয়ে গেছে তাদের মাথার উপরে থাকা ঝড় পূর্ব মেঘের গোঁড়ায় অবস্থিত শক্তিশালী বৈদ্যুতিক চার্জের প্রভাবে। সংবাদে প্রকাশ যে এই ভিডিও ধারণ করার ১০ মিনিট পরেই শক্তিশালী বজ্রপাত আঘাত করে জাহাজটির উপর অবস্থিত বৈদ্যুতিক রডে।
ব্লগারদের প্রতি অনুরোধ, নিজেদের পরিচিত মানুষদের কে কালবৈশাখী ঝড়ের সময় খোলা মা ঠে বৃষ্টিতে ভেজে কিংবা ফুটবল খেলা থেকে বিরত থাকতে। একই সাথে কৃষকদের বলুন মাথার চুল আকাশে দিকে খাঁড়া হলে প্রাণ বাঁচাতে দ্রুত নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিতে।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই মার্চ, ২০২৫ দুপুর ১২:২৬