প্রিয় বাবা,
সত্যই তোমাকে আজ অনেক miss করি। তুমি যখন আদর করে বলতে বোকা ছেলে কোথাকার, ঠিকমত চুলটাও আচরাতে জানেনা!! সত্যই আমি তখন অনেক কান্না করতাম। আমি কেন পারি না, তখন তুমিই আদর করে কাছে টেনে চুল ঠিক করে দিতে। বাবা তোমার কি মনে পড়ে?? সেইদিন হঠাৎ চেয়ার থেকে পড়ে যাওয়ায় তোমার সেইকি বকাঝকা!! তারপর তুমিই আমার কান্না থামানোর জন্য মেলায় বায়েস্কোপ দেখাতে নিয়ে গেলে। দিনটা আমার জন্য ছিল স্বর্গেরমত, তারপর ঘোড়ায় চড়ে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় ঘুরতে যাওয়া, অন্য রকম একটা ফিলিংস। সত্যই দিনটা মনে রাখারমত একটা দিনেই বটে। আচ্ছা বাবা তোমার কি মনে আছে, সেই দিনটার কথা..?? মামুনী মারা যাওয়া ২দিন পর হঠাৎ আমার প্রচন্ড জ্বরে গা পুড়ে যায়, তোমার রাজ্যর ব্যস্ততার মাঝেও আমাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে এলে তারপর, তারপর...!! এক ডাক্তারকেতো প্রাই মেরেই পেলছিলে আমার ট্রিটমেন্ট না করার জন্য। তারপর হাসি-কান্নায় কেঁটেগেল প্রায় ২০টি বছর, তুমি বায়না ধরলে আমায় বিয়ে করাবে বলে, কিন্তু আমি রাজি ছিলাম না। তুমি ওই দিন রাগে-দুঃখে কিছুই খাওনাই, মৃত্যুর আগে তোমার নাত বউ এবং নাতিকে দেখে যাওয়ার অনেক ইচ্ছা,অগ্যতা আমার রাজি না হয়ে উপায় ছিলনা। তারপর তোমার পছন্দেই বিয়েটা করে এক নতুন জগৎ এ পা দিলাম। কথায় আছে সুখে থাকলে ভূতে কিলায় তোমারো হয়েছিল একই দশা, কিছুতেই তোমার পছন্দের বউমা তোমাকে সহ্য করতে পারে না। এরপর তোমার আর আমার সম্পর্কটা হল "তেল আর জলেরমত" কিছুতেই তোমার সাথে আমার মিশ খাচ্ছিলোনা। শুনেছিলাম মেয়েদের (হাওয়া আঃ) কারণেই নাকি আদম (আঃ) স্বর্গ বিতাড়িত হয়েছিল তা যেন আমি স্ব-চোক্ষে দেখলাম বউ এর কারনে। তারপরেই আমিও কেন জানিনা তোমাকে এ্ড়িয়ে চলতে লাগলাম, যেন তুমি আমার কেউই না!! আমি এই অবস্থানে আসার জন্য তোমার কোন ভূমিকাই নাই। নিহাতেই অকারনে তোমায় তুচ্ছ মনে করতে লাগলাম। এক সময় তোমাকেই নিয়ে গড়ে উঠা মজবুত ভূবনটা হঠাৎ খুবেই নড়বড়ে হয়ে গেল। আচ্ছা বাবা কথাটা কি সত্য!! মুরুব্বীরা বলে নাকি "লাথী সব সময় নাকি পিছন থেকেই আসে" তুমিও নাকি তোমার মা-বাবার সাথে এমনেই আচরন করতে যা এখন আমি করতেছি..!! জীবনের অর্ধেকটা সময় তুমি নাকি বাড়ির বাহিরে কাটিয়ে ছিলে, বাবা--মায়ের কোন খোঁজ নেতে না। এবংকী একটা সময় আস্তিকতা পরিহার করে নাস্তিকদের মত জীবন-জাপন করতে, যার কারনে তুমি তোমার মতই নিরুদ্দেশ হীন চলাফিরা করতে।
আচ্ছা বাবা তোমার কি মনে আছে?? মৃত্যুর শেষ কিছুদিন আগেই তুমি পাশ করলে তোমার শেষ ড্রামা...
যে সন্তান তোমাকে সর্বদাই বোঝাভই কিছুই মনে করতো না, সেই ছেলের জন্যই তোমার তিলতিল করে জমানো সকল অর্থ সম্পদ লিখে দিলে যা দিয়ে ভালো ভাবেই শেষ জীবনা পরিচালনা করতে পারতে। তুমি কি জান বাবা...? সেইদিন রাত্রে আমি ভীষন অনূতপ্ত হয়ে পড়ি, ভেবে ছিলাম কালেই তোমার কাছে ক্ষমা ছেয়ে নিবো । প্রবাদে আছে," দাঁত থকতেই দাঁতের মর্যাদা দিতে হয়"।কিন্তু তুমা সেইদিন রাত্রেই আমাকে এয়াতিম করে চলে গেলে না ফিরার দেশে। জানো বাবা সেই দিনেই প্রথম অনূভব করি আমার পায়ের তলার শেষ মাটিটুকু সরে গেছে, আমার সাজানো-গোচানো একটা পৃথিবী আজ নিমেষেই লন্ডবন্ড হয়েগেল। বাবা তুমি কি জান..?? আমার ছেলেটিরও মা মারা গেছে কিছুদিন গত হল, এখন ছেলেটিই আমার সব। এখন আমি বুঝতে শিখেছি কেন তুমি আমায় এতটা ভালবাসতে।
সত্যই বাবা ওকে ছাড়া আমার পৃথিবীটা যেন একটা কায়েদী খানারমত। আচ্ছা বাবা তুমি কি আমায় এর চেয়েও বেশী ভালবাসতে? জানো বাবা এখন আমিও বিশ্বাস করি আমারও শেষ পরিণতি তোমার মতোই হবে কারণ "লাথী সব সময় পিচন থেকেই আসে"। আচ্ছা বাবা আমি কি তোমার কাছে ক্ষমা পাওয়ার যোগ্য..!! মনে হয় না এটার কোন ক্ষমা আছে। শেষ বেলায় তোমার কাছে একটাই অনূরোধ আমায় না হলেও তোমার বউমা আর কলিজার টুকরো নাতিকে হলেও ক্ষমা করে দিও....
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা সেপ্টেম্বর, ২০১৬ দুপুর ১:৫৮