somewhere in... blog

সরকারী অফিসে একদিন: বাহ্ আপনার কাগজ তো খুবই স্ট্রং ! ;)

০১ লা নভেম্বর, ২০২২ রাত ৩:৫৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

জাতীয় পরিচয় পত্র অফিসের একটি শাখা, সকালবেলা গিয়েছি, পরিচয় পত্র করতে হবে. কাঠের একটা সাধারণ টেবিলে দুই জন বসে আছেন, ওনাদের ঘিরে ছোটোখাটো একটা জটলা, বেশির ভাগ ই প্রবাসী। কিভাবে বুঝলাম? আমাদের প্রবাসীরা কোমরে ছোট একটা ব্যাগ ঝোলাতে পছন্দ করেন, সাথে কাঁধে একটা সাইড ব্যাগ ঝোলে। সরকারি কর্মচারীরা একটু আয়েশি ভাবে খারাপ ব্যবহার করছেন, চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছি. ঝাড়ি শেষ হলে আমাকে কর্কশ ভাবে জিজ্ঞাসা করলেন "আপনার কি?"
জী, এন আইডি করবো,
এতদিন করেননি কেনো? আমি চুপ
যান,আপনার এলাকায় তিন মাস পর কাজ শুরু হবে
কিছুক্ষন মলিন মুখে দাঁড়িয়ে থেকে মিন মিন করে বললাম " জি আমিতো দেশে ছিলাম না তাই করতে পারিনি"
" তা এই কথাটা আগে বলেননি কেন? আমিতো আপনাকে জিজ্ঞাসা করেছি", বুঝলাম ওনার কথার উত্তর না দেয়াটা সীমাহীন আস্পর্দার ভেতর পড়ে. আরো বেশ কিছুক্ষন দাঁড়িয়ে থেকে খেয়াল করলাম উনি একটু পর পর উঠে বাইরে যান, আবার ফিরে আসেন। বাইরে যেয়ে খেয়াল করলাম কোনো এক চিপায় আবেদনকারীরা ওনাকে একটা ছোট স্লিপের সাথে একশ টাকার নোট জোর করে পকেটে গুঁজে দিচ্ছেন। ওনার গলায় সমস্যার কারণটা বোঝা গেলো। আমি বিনীত ভাবে বড়ো কয়েকটা নোট দিলাম (সবার কাছে ক্ষমাপ্রার্থী, ঘুষ প্রমোট করছিনা, কিন্তু আমি নিরুপায় ছিলাম )
১৮০ ডিগ্রি ঘুরে গেলেন, গলায় যতদূর সম্ভব মধু নিয়ে বললেন " ভাই একটু কষ্ট করে হাতের ছাপ দিয়ে আসেন আর এই এফিডেফিট তা করে কাগজ পত্র নিয়ে আসেন। আপনি যদি প্রবল আবেগ প্রবন হন তাহলে এই কণ্ঠস্বর আপনার চোখ ভিজিয়ে দেবে, ভিজতে গিয়েও টাকার কথা মনে হতেই ড্রেনের মতো পানি আবার ভিতরে চলে গেলো, ধন্যবাদ দিয়ে বেরিয়ে আসলাম

আগারগাঁ হাতে ছাপ:
এখানে ছাপ নেয় দেখতে আগে আমি কার্ড করেছি কিনা, গেটে এক সিকিউরিটি নাম লিখছে, আমার সিরিয়াল দেখলাম ৩৪, দাঁড়িয়ে আছি, সাহেবদের লাঞ্চ ব্রেক, আমি দাঁড়িয়ে থাকাকালীন আমার পরে যারা এসেছিলেন তাদের ২ জন চাপ দিয়ে বেরিয়ে এলেন, সিকিউরিটি কে জিজ্ঞাসা করতেই ওনার ছোবল "অরে ভাই আমিতো সিরিয়েল নেই নাই, কে আসছে তার রেকর্ড রাখছি, ঠিক আছে এরপর আপনি যাবেন" নিজের স্মার্টনেস কে অভিশাপ দিয়ে ঢুকলাম।
রুমের দুই প্রান্তে দুই টেবিল, ওনাদের ভেতর কোনো একটা ফল নিয়ে আলোচনা চলছে, মুখের দিকে না তাকিয়ে হাত বাড়ালেন, স্প্লিট সেকেন্ড এ আমি চিন্তা করছি নোট চাইছেন না কাগজ, আল্লাহর নাম কাগজটাই দিলাম, ততক্ষনে আলোচনা তুঙ্গে, আমার ফর্ম টা প্রিন্ট করলেন, বললেন আঙ্গুল এই কাচের উপর রাখেন।কুক্ষন মনে হয় একেই বলে, ওনাদের গল্পের রেশ এখন তুঙ্গে, কি কিনলেন দেখি বলতেই লিচু ছোড়াছুড়ি শুরু হয়ে গেলো, মনে হবে ক্যাচ প্রাকটিস সেশন চলছে, আমি হাত দিয়েই রেখেছি, মিউ মিউ করে বললাম "অন্য হাত দেব?", লিচুর সরেস রস গিলতে গিলতে আধবোজা চোখে বললেন "অন্য হাত", কাগজ প্রিন্ট হয়ে এলো, ঘ্যাচাং করে সই করলেন, যান !

এফিডেভিট:
একটা কাগজ ধরিয়ে দিয়েছিলো এফিডেফিট কি লিখতে হবে, ওই টুকু একটা কাগজে এত লেখা আর এতো ছোট ফন্ট দেখে মাথা চক্কর দিয়ে উঠলো। পানি খেয়ে মাথা থাবড়াতে থাবড়াতে প্রশ্ন করলাম এতো ছোট লেখা কিভাবে পড়বো। উনি বিগলিত হয়ে বললেন কম্পিউটারে দোকানে গেলে ওরা করে দেবে, বুঝলাম বাংলাদেশের জিডিপি কিভাবে এমন বাড়ছে, লোকাল অর্থনীতির কি সুন্দর সমন্বয়, দলিলে প্রিন্ট হলো, উকিল কোথায় পাই. কম্পিউটার আলা কান চুলকে বললেন টাউন হল যান. হাতে দলিল জাতীয় কাগজ মানে আপনি ৰসগোল্লা, হাজার মাছি ছেকে ধরলো। একজনকে কাজটা দিলাম, উনি চোখের নিমেষে হাওয়া হয়ে গেলেন, এক মিনিট পর ফিরে আসলেন সিল ছাপ্পর সহ, প্রশ্ন করলাম কে সাইন করলো, আমাকে দেখতে চাইলোনা কেন? উনি বললেন " অরে ভাই, আমগো উকিল জেনুইন, কোনো ধানাই পানাই নাই, ওনার নাম ঠিকানা দেয়া আছে ". কেন জানি মনে হল বহুরূপী কোনো চরিত্র, যেই নিগোশিয়েটর, সেই উকিল, সেই আবার ব্যাক্ষা দিচ্ছে।

আসলো সেই দিন:
পরের দিন সকালে আমার ফাইল বগলদাবা করে হাজির, খেয়াল করলাম আমার কাগজে ফর্মটা ছাড়া বাংলা লেখা কিছু নাই, সবই ইংরেজী। শুধু আমার মায়ের ডেথ সার্টিফিকেটেই চারটা কাগজ ইংরেজী, সিল মিল মারা। আমার ফাইলটা দেবার পর উনি পাতা উল্টাতে থাকলেন, মনে হবে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স এর কোনো রোবট, পাতা উল্টাচ্ছেন আর স্ক্যান করছেন, ভুল হলেই মেশিন বিপ করে উঠবে। ভাগ্য ভালো কিছু হয়নি, বসে অঅপেক্ষার পালা হাতের ছাপ দেবো, একটু পর ডাক পড়লো, সাধারণত অফিস সহকারী নাম ধরে ডাকেন, উনার হাতে ফাইল, উনি আবার সেই এ আই সহকারে পাতা ওল্টানো শুরু করলেন। প্রশান্তির হাসি দিয়ে বললেন " বাহ্! আপনার কাগজ পত্র তো খুব স্ট্রং!", ওনার আইডিয়াই নাই বা পড়েই দেখেননি ইংরেজিতে কি লেখা। ফিঙ্গার প্রিন্ট নিচ্ছেন একজন মহিলা, বেশ ভালো ব্যবহার। উনি আমাকে খুব সুন্দর করে একটা আঙ্গুল দেখিয়ে বললেন আপনার এই আঙ্গুলের প্রিন্ট ঠিক হচ্ছে না, চেপে ধরেন। উনি যেভাবে দেখালেন এত অর্থ খুবই নোংরা আর হাস্যকর। কাজ শেষ গল্প শেষ.

কিছু প্রশ্ন আর অনুরোধ ,কার কাছে করবো:
- এতবড়ো একটা বিল্ডিং এ ওয়ান স্টপ সার্ভিস নেই সেটা খুব হাস্যকর, কেন হাতের ছাপ চেক করতে ২/৩ জায়গায় ছুটতে হবে
- এফিডেভিট নামক ফর্মালিটিজ শুধু শুধু টাকা আর শ্রম নষ্ট
- এক দিস্তা কাগজ আবেদনকারির কাছ থেকে চাওয়া হয় কিন্তু আমার ধারনা ওনারা পড়েও দেখেননা কি লেখা অথবা কতটা অথেনটিক
- দোয়া করে নিরিহ প্রবাসীদের সাথে হান্কি পান্কি বন্ধ করেন

পরবর্তী পর্বে লিখবো ভূমি অফিস, ডিপিডিসি মিটার আর লোকাল কমিশনার অফিসের অভিজ্ঞতা, সবাইকে শুভেচ্ছা।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা নভেম্বর, ২০২২ ভোর ৪:৪২
১৯০ বার পঠিত
৮টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সঠিক ইতিহাসে জানতে হলে মেজর ডালিমকেও আমলে নিতে হবে

লিখেছেন আবদুর রব শরীফ, ০৬ ই জানুয়ারি, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৯

সঠিক ইতিহাস জানতে হলে যেমন আপনাকে মেজর ডালিমের বক্তব্যকে আমলে নিতে হবে তেমনি ‌শেখ মুজিবের বক্তব্যও নিতে হবে।

আপনি একজনের ১৭ বছর একই ওয়াজ করা বক্তব্যকে বাইবেল আর মেজর ডালিমের বক্তব্যকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বাধীনতার ঘোষক কে?

লিখেছেন এম ডি মুসা, ০৬ ই জানুয়ারি, ২০২৫ রাত ৮:২৭

মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর ১৯৫৭ সালের কাগমারী সম্মেলনে "আসসালামুয়ালাইকুম" বলে পাকিস্তানকে বিদায় জানানোর ঘটনা বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের একটি ঐতিহাসিক মাইলফলক। তিনি তখন পূর্ব বাংলার জনগণের অধিকার, ভাষা, ও স্বাধীনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেলিম অনোয়ারের ব্যান নিয়ে আপনি কিছু বলছেন না কেন?

লিখেছেন জেনারেশন৭১, ০৬ ই জানুয়ারি, ২০২৫ রাত ৯:৩৫



এই ব্লগে কাকে ব্যান, সেমিব্যান, কমেন্ট ব্যান করলে আপনি খুশী হয়ে থাকেন? চাঁদগাজী/সোনাগাজীকে নিশ্চয়ই; এটা ভালো! চাঁদগাজী/সোনাগাজী "ব্যক্তি আক্রমণ" করে থাকে। সেলিম আনোয়ার কি আক্রমণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ষড়যন্ত্র করে অন্য দেশের সাহায্য নেয়া আওয়ামীলীগের পুরানো অভ্যাস

লিখেছেন সাড়ে চুয়াত্তর, ০৬ ই জানুয়ারি, ২০২৫ রাত ১০:২৭

বহুদিন পর্যন্ত এই দেশের লোক জানতো যে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা মিথ্যা ছিল। জনগণের ধারণা ছিল শেখ সাহেবকে শায়েস্তা করার উদ্দেশ্যে পাকিস্তানের শাসকরা এই মামলা সাজিয়ে ছিল। কিন্তু বেশ কয়েক... ...বাকিটুকু পড়ুন

খুনির মুখে ইতিহাস শিক্ষা ও অধঃপতিত মানস

লিখেছেন sabbir2cool, ০৭ ই জানুয়ারি, ২০২৫ সকাল ৯:৩৪


বাংলাদেশের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আত্মস্বীকৃত খুনি মেজর শরিফুল হক ডালিমকে প্রকাশ্যে এনেছেন আলোচিত ফেসবুক-সাংবাদিক ইলিয়াস হোসেন। গত রোববার (৫ জানুয়ারি) রাতে ইলিয়াস ‘বিশেষ লাইভে যুক্ত আছেন বীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

×