বাংলাদেশের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আত্মস্বীকৃত খুনি মেজর শরিফুল হক ডালিমকে প্রকাশ্যে এনেছেন আলোচিত ফেসবুক-সাংবাদিক ইলিয়াস হোসেন। গত রোববার (৫ জানুয়ারি) রাতে ইলিয়াস ‘বিশেষ লাইভে যুক্ত আছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা মেজর ডালিম (বীর বিক্রম)’ শিরোনামের লাইভ টকশোতে যুক্ত হন সাবেক এই সামরিক কর্মকর্তা। ইলিয়াসের নিজের ইউটিউব চ্যানেলে প্রচারিত টকশোটি মুহূর্তেই ভাইরাল হয়। এতে ডালিম যা বলেছেন সেটা স্বাভাবিকভাবেই ছিল বঙ্গবন্ধুর প্রতি তার চিরায়ত বিদ্বেষ, আক্রোশ ও আক্রমণ।
ডালিম বাংলাদেশের ইতিহাসের ঘৃণ্যতম এক চরিত্র। এতদিন শোনা যাচ্ছিল তিনি মারা গেছেন। তবে ইলিয়াস হোসেন যে ডালিমকে লাইভে এনেছেন উনি সেই খুনি ডালিম কিনা এটা এখনো নিঃসন্দেহ নয়। সামাজিক মাধ্যমে এটা নিয়ে আলোচনা চলছে।
টকশোর শুরুতে মেজর ডালিম বলেন, “দেশবাসীকে বিশেষ করে নতুন প্রজন্মের ছাত্র-জনতাকে, যারা আংশিক বিজয় অর্জন করেছেন, তাদের লাল শুভেচ্ছা জানাই। বিপ্লব একটি সমাজ যেকোনো রাষ্ট্রে একটি চলমান প্রক্রিয়া। সেই অর্থে তাদের বিজয় এখনো পুরোপুরি অর্জিত হয়নি। তার জন্য আরও সময় প্রয়োজন।” ২৪-এর গণঅভ্যুত্থানের নেপথ্যের নায়ক ছাত্র-জনতাকে পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, “সম্প্রসারণবাদী-হিন্দুত্ববাদী ভারত যার কবজায় আমরা প্রায় চলে গিয়েছি। সেই অবস্থান থেকে সেই ৭১’এর মতো আরেকটা স্বাধীনতা অর্জন করতে হবে। তা না হলে বিপ্লব ব্যর্থতায় পর্যবসিত হবে।”
৭৫ এর হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যের কারণ সম্পর্কে মেজর ডালিম বলেন, “খুবই স্পর্শকাতর প্রশ্ন। নিজের বাদ্য নিজে বাজানো যায় না। প্রথম কথা, ১৫ই আগস্ট কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা না। এটার সূত্রপাত হয় মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন অবস্থায়। আমরা বুঝতে পেরেছিলাম বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধটা কাদের ইন্টারেস্টে হচ্ছে? এটা কি আমাদের ইন্টারেস্টের জন্য হচ্ছে যে আমরা মুক্তিযুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করব। নাকি অন্য কোনো উদ্দেশ্যে কাজ করব।” ডালিম বলেন, “যখন সাত দফাতে চুক্তি করে নজরুল ইসলাম, তাজ উদ্দিনকে পারমিশন দেওয়া হলো একটা প্রভিশনাল গভমেন্ট গঠন করার। সাতটা ক্লজ পড়ে সাইন করার পর নজরুল ইসলাম ফিট হয়ে পড়ে গিয়েছিলেন যে, আমরা ক্রমান্বয়ে ভারতের একটা করদরাজ্য-অঙ্গরাজ্যে পরিণত হব।”
ডালিমের পুরো বয়ানে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে বিতর্কিত করার প্রয়াস ছিল। অথচ উনি কিনা একাত্তরের খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা। ফলে এই ডালিম কি সেই ডালিম--এটা নিয়ে সন্দেহ থেকে যায়।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু বিদ্বেষী অনেকেই হয়েছেন বিভিন্ন সময়, কিন্তু কোন খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা মুক্তিযুদ্ধকে প্রশ্নের মুখে ফেলে দেয়--এটা ডালিমের সাক্ষাৎকার প্রচারের আগে বিশ্বাস করার উপায় ছিল না।
খুনি ডালিমের সাক্ষাৎকার প্রচারের পর পর সামাজিক মাধ্যমে অনেকেই বঙ্গবন্ধুর প্রতি তাদের চিরায়ত বিদ্বেষ উগড়ে দিচ্ছেন। তারা বঙ্গবন্ধুকে দেখছেন তার খুনির চোখে, খুনির মন-মানসে। অথচ এটা যে কত বড় ভুল সেটা তারা বুঝতেও অপারগ। কোন খুনি কি তার শিকারকে মহান করে, নাকি তার উদ্দেশ্য চরিত্র হরণ? স্বাভাবিক এই বোধটুকু হারিয়ে ফেলেছেন তারা।
খুনির মুখে ইতিহাসের এই শিক্ষা আমাদের অধঃপতির মন-মানসের চিত্রায়ন। খুনি ডালিম বাংলাদেশের ইতিহাস রচনা করবে এবং এই ইতিহাস বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্ম গিলবে--এরচেয়ে বড় হতাশার আর কিছু থাকতে পারে না।
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই জানুয়ারি, ২০২৫ সকাল ৯:৩৪