এয়ারপোর্ট, একটা দেশের প্রথম ইমপ্রেশন, অনেক লক্ষবার এসব নিয়ে আলোচনা হয়েছে, কোনো লাভ হয়নি, এই জীবন তো দুরের কথা, নেক্সট দশ, বিশ জেনারেশন কোনো উন্নতী দেখে যেতে পারবে কিনা জানিনা।
জরুরী প্রয়োজনে দেশে যাওয়া প্রয়োজন, আমার মেয়ের পাসপোর্টে ভিসা নাই, নো ভিসা রিকোয়ার্ড সিল নেবার সময় নাই, বাংলাদেশ হাইকমিশন ওয়েবে পরিস্কার লেখা আছে, যেসব দেশে বাংলাদেশ অ্যাম্বাসী আছে, বাংলাদেশ ভ্রমনের আগে অবশ্যই ভিসা নিতে হবে, কোনো অন অ্যারাইভাল ভিসা দেয়া হবেনা।
প্নেন থেকে নেমে সেই চেনা পরিচিত দৃশ্য, ব্যাজ পরা সরকারী এয়ারপোর্ট অফিশিয়ালদের কানের কাছে মশার মত গুনগুন 'স্যার কি লাগবে, ভিসা থেকে শুরু করে, লাগেজ উঠায়ে দেব, খুশী হয়ে যা পারেন দিয়েন' .. ডাব্লিউ টি এফ, আমার মত আমজনতার কাছে যদি এভাবে ঘ্যানঘ্যান করে, একটা বিদেশী পেলে তো পা জড়ায়ে বসে থাকবে, এদের ম্যানেজারকে পেলে কষে একটা চড় মারতাম, হয়ত সেই পাঠিয়েছে এই বলে ' যান কিছু টু পাইস কামানোর ধান্দা করেন, পেলে আমাকে ভাগ দিয়েন, কাজ করা লাগবেনা'
অন অ্যারাইভাল ভিসার টাকা দেবার কাউন্টার, ভিসা ফি $50 USD + 1.5% VAT, খুব ভালো কথা, আমরা একটাকার বিনিময়ে চকলেট বা 'মামা পরে নিয়েন' বা একেবারে না নিয়ে অভ্যস্ত কিন্তু একজন বিদেশী অবশ্যই আশা করবে, সঠিক চেইন্জ ফেরত পাবার, সবার কাছ থেকে $51 USD নেবেন, ভালো, এটা কোনো রেষ্টুরেন্ট না যে আপনি ২৫ সেন্ট জোর করে টিপস নেবেন বা ফেরত দেবেন না, তাহলে অ্যামাউন্ট টা এমনভাবে সেট করা উচিত যাতে সঠিক চেন্জ ফরতে দিতে কোনো অসুবিধা না হয়। টাকা জমা দিয়ে লাইনে দাড়িয়ে আছি ভিসা নেবার, আমার সামনে কিছু চাইনিজ, দেখলে বোঝা যায় সস্তা চাইনিজ মাল বিক্রি করতে আসছে। আপনার যতই ভিসা থাক বা যত রাশভারী দেশের পাসপোর্ট থাক, একটা দেশের ইমিগ্রেশন কাউন্টার এ দাড়ালে হালকা ভয় পাবার কথা, কারন তার অথোরিটি আছে আপনাকে না ঢুকতে দেবার, আমাদের দেশে সেটা ব্যাতিক্রম, কাউন্টার এ যিনি বসে আছেন তিনি মনে হয় বাংলার ছাত্র ছিলেন, বোম মারলেও একটা ইংরেজী শব্দ বের হচ্ছেনা মুখ দিয়ে, আমি পেছনে দাড়িয়ে দেখছি, একজন ফি জমা না দিয়ে আসছে ভিসা করতে, উল্টা ঝাড়ি মারে হালকা ইংরেজীতে, আমাদের অফিসার তাকে বোঝাতে পারলেন না, আগে টাকা জমা দিতে । অনেক কষ্টে অসহায় ভাবে আকারে বোঝাতে পারলেন ' ওখানে যেয়ে টাকা জমা দিয়ে আসো'। আমি নিশ্চিত, আমাদের কোনো ডেস্কে কোনো ট্রেইনড অফিসার নাই, সকালে সবাই কাজে আসে এবং যে যার ইচ্ছামত ডেস্কে বসে পড়ে, আরেকটা থাবড় দিতে ইচছা হলো ম্যানেজমেন্ট কে। ও হ্যা, আরেকটা কথা,ভিসা কাউন্টার এর পেছনে একটা কাচের রুম সেখানে পরিস্কার বাংলায় (!) লেখা 'রোগ নির্নয় কেন্দ্র'' কেউ বুঝবেনা ওটা কিসের রুম কিন্তু সবচেয়ে দুঃখজনক দরজার হ্যান্ডেলে কেউ একজন কাগজে হাতে লিখে দিয়েছে 'টানুন'।
KP (আশা করি মানে বুঝতে পেরেছেন) ম্যানেজমেন্ট এইটুকু কমান্ড দিতে পারেনি যে প্রিন্ট করে দিতে।
এবার ইমিগ্রেশন কাউন্টার, কোনো হাই, হ্যালোর ধার ধারে না, তিনটা পাসপোর্ট দিলাম, বোবার মত সিল দিয়ে ছুড়ে মারল, কোথায় যাব, কতদিন থাকব কোনো প্রশ্ন নাই, দেখলে মনে হবে হয় বোবা না সাধুবাবা বট গাছের নিচে ধ্যান করতে বসছে। লাগেজ নিয়ে বের হচ্ছি, একজন কাস্টম অফিসার প্রশ্ন করলেন 'কোথা থেকে আসছেন'? আমি বললাম, সে বলল 'যান''। আমি বললাম 'চেক করবেন না'? উনি প্রচন্ড বিরক্ত হলেন, আমি চলে যাচ্ছি, গেটে একটা গার্ড (আমার কাছে মনে হয়েছে একজন গার্ড যেভাবে দায়িত্ব পালন করে একজন অফিসার তার কাছে কিছুনা) আমাকে বললেন লাগেজ স্ক্যানিং এ দিতে, আমি ব্যাগ নামাতে যাবো, কাস্টম অফিসার ছুটে আসলেন, গার্ডে পারলে মারতে যান 'আমি যেখানে ছেড়ে দিয়েছি, তুমি ক্যানো বললা স্ক্যানিং এ দিতে', অসহ্য! একটা ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট এটা!
পরবর্তী পর্বে লিখব ডিপারচার কাহিনী, যাবার আগে একটা কুইজ, ডিপারচার কার্ডে এতবড় একটা ভুল!
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে অক্টোবর, ২০১৮ ভোর ৫:৩৬