মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারকে আন্তর্জাতিক মানের করতে ১৯৭৩ সালের আইনের আওতায় প্রণীত বিধানের কিছু সংশোধন করার সুপারিশ করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সম্পর্কিত বিশেষ দূত স্টিফেন জে. র্যাফ। বাংলাদেশ সফর শেষে ১৩ জানুয়ারি গুলশানে আমেরিকান ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা জানিয়েছেন। তার মতে আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করতে পারলে বিশ্বের সামনে বাংলাদেশ রোল মডেল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবে। এক্ষেত্রে অভিযুক্তদের অতীত বা বর্তমান মূল্যায়ন না করে অপরাধের মাত্রা বিচার করলে বিচার সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হবে।
তার এই সুপারিশের প্রেক্ষিতে আইনমন্ত্রী শফিক আহমেদ বলেছেন,মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে গ্রহনযোগ্যতা বাড়াতে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের কিছু বিধি পরিবর্তনে কোন অসুবিধা নেই। ১৪ জানুয়ারি সাংবাদিকদের আইনমন্ত্রী এ কথা জানান।
একথা কারোরই অজানা নয় যে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের উদ্যোগ নেওয়ার পর থেকেই আমেরিকা ও ইউরোপে অপপ্রচার শুরু করে ক্ষতিগ্রস্ত মহলটি। তারা নানাভাবে এই উদ্যোগকে প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা করে যাচ্ছে। এ কারণে সরকার আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নেওয়ার উদ্যোগ নেয়। এরই ধারবাহিকতায় সরকারের আমন্ত্রণে ১০ জানুয়ারি বাংলাদেশ সফরে আসেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার মানবতাবিরোধী অপরাধ বিষয়ক দূত স্টিফেন জে র্যাফ। রুয়ান্ডা ও সিয়েরা-লিয়নে যুদ্ধাপরাধ বিচারের জন্য গঠিত ট্রাইব্যুনালে আইনজীবি হিসেবে কাজ করার অভিজ্ঞতা রয়েছে তার। এই সফরে তিনি সরকারের নীতি নির্ধারকদের সঙ্গে কথা বলেন। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুন্যাল পরিদর্শন করে বিচারক, তদন্ত কর্মকর্তা এবং সরকারি আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলেন। পাশাপাশি বিরোধী দলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়া, জামাত নেতা এবং সুপ্রীম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন।
ষ্টিফেন জে র্যাফ বলেন, মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার হতে হবে আন্তর্জাতিক মানের। তাই বিচারের কাজের প্রক্রিয়াকে আরো স্বচ্ছ করতে আইনের সংশ্লিষ্ট বিধানের কিছুটা সংশোধন প্রয়োজন বলে তিনি মনে করেন।
স্টিফেন র্যাফ অভিযুক্তদের আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্য প্রয়োজনীয় সময় ও সুযোগ দেওয়ার কথাও বলেন। অভিযুক্তদের দীর্ঘদিন আটক না রেখে তাদের আটকাদেশ পর্যালোচনায় আনা প্রয়োজন বলে মত দেন।
তবে এক্ষেত্রে তিনি উদাহরণ দেন: কম্বোডিয়ায় বিচার চলাকালে কয়েক মন্ত্রীকে তিন বছর আটক রাখা হয়। বাংলাদেশে একই রকম ভাবে বিচার চলবে কীনা সেটা বাংলাদেশর ব্যাপার। তবে কোন বিষয়ে
যাতে প্রশ্ন না ওঠে সেদিকে খেয়াল রাখতে পরামর্শ দেন রাফ।
তিনি বলেন, কোন অভিযুক্তের বিচারের সময় তাদের অতীত ও বর্তমান রাজনৈতিক পরিচয় যেন কোনোভাবে বিচারকে প্রভাবিত করতে না পারে সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে।
ষ্টিফেন রাফ জানান, দেশে ফিরে গিয়ে শিগগিরই তিনি তার সুপারিশ বাংলাদেশ সরকারকে জানাবেন।
অন্যদিকে আইনমন্ত্রী শফিক আহমেদ বলেছেন,মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে গ্রহনযোগ্যতা বাড়াতে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের কিছু বিধি পরিবর্তনে কোন অসুবিধা নেই। স্টিভেন জে র্যাপ ট্রাইব্যুনালের কিছু বিধি পরিবর্তনের যে কথা বলেছেন,সেগুলো যেকোন সময় পরিবর্তন ও সংযোজন করা যাবে বলেও জানান আইনমন্ত্রী। আইনমন্ত্রী আরো বলেছেন,মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার যেন প্রশ্নবিদ্ধ না হয় সেজন্য আন্তর্জাতিক মান বজায় রাখা হবে। তিনি বলেন,এই বিচারে সহায়তা করতে যুক্তরাস্ট্রের বিশেষ দূত সব ধরণের সহায়তা করবে বলে নিশ্চয়তা দিয়েছেন।
এখন প্রশ্ন :: সরকার আন্তর্জাতিক কীভাবে এসব সুপারিশ গ্রহণ করে(চাপ এড়িয়ে) যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিশ্চিত করে।
বিদেশীদের এসব উদ্যোগে সাধারণ মানুষের মধ্যে সন্দেহ তৈরি হয়।