somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নর্স মিথলজিঃ দেবতা ওদিন ও ব্যাল্ডার

২০ শে জুলাই, ২০১৩ দুপুর ২:৪১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

গ্রীসের কোন দেবতা বীর হতে পারতেন না। সকল অলিম্পিয়ান ছিলেন অমর এবং অপরাজেয়।তারা কখনো অনুভব করতেন না সাহসের উত্তাপ;গ্রাহ্য করতেন না বিপদকে। এটি ভিন্নতর ছিল এসগার্ডে।জায়াণ্টদের নগরী ছিল জোতুনহিমে।তারা ছিল দেবতাদের সক্রিয় ও অনড় শত্রু।এবং দেবতারা এও জানতো যে পরিশেষে তাদের পূর্ণ পরাজয় অবধারিত।

দেবতা ওদিনঃ জিউসের মত ওদিনও ছিলেন আকাশ-পিতা।তবে জিউস ও ওদিনের মধ্যে আর কোনো সাদৃশ্য পাওয়া কঠিন হবে।ওদিন এক অভিনব ও অনন্য চরিত্র,সর্বদাই একাকী।এমনকি তিনি যখন দেবতাদের সাথে ভোজসভাতে বসেন তখন কোনো খাবার গ্রহন করেন না।তার সামনে পরিবেশিত খাবার তিনি তার সামনে অবনত হয়ে থাকা দুটি নেকড়েকে দিয়ে দেন।


তার কাধের উপর বসে থাকে দুটি দাড়কাক যারা প্রতিদিন উড়ে বেড়ায় পৃথিবীময় এবং তার জন্য নিয়ে আসে মানুষের কৃতকর্মের খবর।একটির নাম ‘চিন্তা’(হুগিন) এবং অপরটির নাম স্মৃতি(মুমিন)।যখন অন্য দেবতাদের ভোজ দেয়া হয় তখন ওদিন ভাবতে থাকেন ‘চিন্তা ও স্মৃতি তাকে কি জানালো।Elder Edda তে তার বর্ননা এরকম দেয়া হয়,
“মেঘ-ধূসর এক পোশাকে সজ্জিত এবং
মাথা ও ঘাড়ের বস্ত্রাবরনটি আকাশ-নীল”
অন্য সকল দেবতাদের একত্রে দায়িত্বের চাইতে তার ছিল অধিকতর বেশী দায়িত্ব;ধ্বংসের দিন ‘রাগনার ’কে যতদূর সম্ভব পিছিয়ে দেয়া।তিনি ছিলেন সর্ব-পিতা,দেবতা ও মানবকূলের সর্বাধিপতি এবং তিনি সর্বক্ষন সন্ধান করেতেন গভীরতম জ্ঞানের।জ্ঞানী মিমিরের সুরক্ষায় থেকে তিনি চলে গিয়েছিলেন জ্ঞানের কূপ এর নিচ পর্যন্ত,এ থেকে এক চুম্বক পাওয়ায়র আশায় এবং মিমির উত্তর দিলেন যে,এ জন্য তাকে হারাতে হবে একটি চোখ,তিনি চোখটি হারাতেও রাজি হলেন।অনেক কষ্ট ভোগের মাধ্যমে তিনি জয় করেন রুনেসের জ্ঞানও।রুনেস ছিল জাদুকরী শব্দাবলী যা কাঠ,ধাতু,পাথর যেকোনো কিছুর উপর খোদাই করলে তার জন্য বয়ে আনতো চরম ক্ষমতা।ওদিন এগুলোকেও আয়ত্তে আনলেন রহস্যময় যন্ত্রণাভোগের মাধ্যমে।তিনি তার কষ্টার্জিত জ্ঞানকে সঞ্চারিত করেন মানুষের জন্য।সকল বিবেচনাতেই তিনি ছিলেন মানবজাতির জন্য হিতৈষী।
বুধবার হল ওদিনের দিবস।তার নামের দক্ষিণী রূপ ‘উদেন’।

দেবতা ব্যাল্ডারঃ ব্যাল্ডার ছিলেন নর্স দেবতাদের মধ্যে সবচেতে প্রিয়,মর্ত ও স্বর্গ উভয় স্থানেই।তিনি ছিলেন দেবতা ওদিনের পুত্র।


তার মৃত্যুর মধ্য দিয়েই দেবতাদের মধ্যে প্রথম বিপর্যয় নেমে এসেছিলি।এক রাতে তিনি স্বপ্নে নিজ মৃত্যুকে প্রত্যক্ষ করলেন।তার মা ফ্রিগা(ওদিনের স্ত্রী) এটি শুনে তাকে বিপদ থেকে উদ্ধার করার ব্যাপারে মনস্থ করলেন।ফ্রিগা সারা পৃথিবীময় ঘুরে বেরিয়ে জীব ও জড় সকল কিছু থেকেই প্রতিজ্ঞা করালেন যে,তারা ব্যাল্ডারের কোনো ক্ষতি করবে না।কিন্তু ওদিন তখনও ভয় পেলেন।তিনি ঘোড়া চালিয়ে নেমে গেলেন মৃতদের জগতে;সেখানে সকল কিছু সাজানো ছিল উৎসবের সাজে।‘একজন জ্ঞানী মহিলা’ তাকে বললেন কার জন্য এই বাড়িটি সাজানো হয়েছেঃ
‘সুরাটি তৈরী করা হয়েছে ব্যাল্ডারের জন্য,
শীর্ষ-দেবতাদের আশা এখন তিরোহিত।‘
ওদিন জানলেন যে ব্যাল্ডারের মৃত্যু অবশ্যম্ভারী।কিন্তু অন্য দেবতারা বিশ্বাস করতেন যে ফ্রিগা তাকে নিরাপদে রেখেছেন।তাই তারা আনন্দের জন্য তাকে নিয়ে একটা খেলা শুরু করলো।তারা ব্যাল্ডারের দিকে পাথর,বাণ ইত্যাদি নিক্ষেপ করে কিন্তু তা ব্যাল্ডারকে কোনো ক্ষতি করতে পারে না।কিন্তু একজন দেবতা এ বিষয়টি নিয়ে খুশি হতে পারলো না;লকি ।সে সর্বদা ঘৃণা করত অশুভ শক্তিকে এবং ঈর্ষা করত ব্যাল্ডারকে। সে ব্যাল্ডার কে আহত করার জন্য স্থির প্রতিজ্ঞা করল।ফ্রিগা ব্যাল্ডারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য সকল কিছুর থেকেই প্রতিজ্ঞা করায়;ব্যতিক্রম একটি ক্ষুদ্র তরু গুল্ম যা এমনই তুচ্ছ বলে পাশ কাটিয়ে গেলো।এইটুকুই লকির জন্য যথেষ্ট।সে ওই তরু-গুল্ম সাথে নিয়ে গেলো দেবতাদের মাঝে।সেখানে সবাই ব্যাল্ডারের সাথে মজা করছিলো। ব্যাল্ডারের অন্ধ ভাই হোডার বসে ছিল পাশেই। লকি তাকে জিজ্ঞাসা করল, ‘কেন খেলাটিতে অংশ নিচ্ছ না?’
হোডারঃ যেহেতু আমি অন্ধ।
লকিঃ এবং এমনকি ব্যাল্ডারের দিকেও কিছু নিক্ষেপ করনি! এখানে আছে একটি গাছের শাখা।এটি নিক্ষেপ কর এবং আমি তোমায় দিক নির্দেশনা দেব।
লকির দিক নির্দেশনায় হোডার তরু-গুল্মটিকে তুলে সর্বশক্তিতে নিক্ষেপ করল এবং ব্যাল্ডারের হ্রদপিন্ডকে ছিদ্র করে ফেললো।ব্যাল্ডার মারা গিয়ে লুটিয়ে পড়ল মাটিতে।



তার মা ফ্রিগা তখনও আশা ছেড়ে দিতে অস্বীকার করে।ফ্রিগা দেবতা হারমোডকে পাঠালো মৃতদের রাজ্যে ব্যাল্ডারকে ফিরিয়ে আনার জন্য।যখন হারমোড দেবতাদের মিনতিসহ পৌছলেন মৃতদের দেবতা হেলার কাছে,তিনি উত্তরে বললেন যে,তিনি ব্যাল্ডারকে ফিরিয়ে দেবেন যদি তার কাছে প্রমান করা যায় যে সর্বত্র ব্যাল্ডারের জন্য শোক প্রকাশ করা হয়েছে।কিন্তু যদি একটি বস্তু বা প্রানী ও কাদতে অস্বীকার করে তবে তিনি তাকে মুক্তি দেবেন না।দেবতারা দ্রুত দূত পাঠিয়ে সকল সৃষ্টিকে বলে দেয় ব্যাল্ডারে জন্য শোক প্রকাশ করতে।তারা কোনো প্রত্যাখ্যান ছাড়াই সেই দাবি মেনে নিল। স্বর্গ-মর্তের সকল কিছুই কাদলো ব্যাল্ডারের জন্য।দূতগণ সেই আনন্দের সংবাদ নিয়ে ফিরে যেতে শুরু করলেন দেবতাদের কাছে।একেবারে শেষ সময়ে তারা মুখোমুখি হলো স্ত্রী জায়ান্টের এবং জগতের সকল দুঃখ পর্যবসিত হলো নিস্ফলতায়,কারন সে কাদতে অস্বীকার করলো। “তোমরা আমার কাছ থেকে পাবে কেবল শুল্ক অশ্রু;ব্যাল্ডারের জন্য আমার কোনো মঙ্গল বোধ নেই,এমনকি আমি তাকে কোনো মঙ্গলও দিতে পারবো না”,সে তোতলানো কন্ঠে বলল। তাই হেলা তাকে মৃত অবস্থাতেই রেখে দিলো।
লকি শাস্তি পেয়েছিলো।দেবতারা তাকে ধরে আনলো এবং বেধে রাখলো এক গুহার মধ্যে।তার মাথার উপর স্থাপন করা হলো এক বিষধর সাপ।কিন্তু তার স্ত্রী সিগীন এগিয়ে আসে তাকে সাহায্য করতে।সে তার পাশে যায়গা করে নিলো এবং সর্পবিষ টিকে নিয়ে গেলো এক পেয়ালাতে।এর পরেও যখন তাকে পেয়ালাটি শুন্য করতে হলো তখন বিষ পড়লো লকির উপর;এক মুহূর্তের মধ্যে তার যন্ত্রনা এমন তীব্র উঠলো যে তার শরীরের প্রবল আলোড়ল কাপিয়ে তুলল মর্তভূমিকে।


উৎসঃ http://en.wikipedia.org/wiki/Baldr
Click This Link
Click This Link
Mythology by Adith Hamilton-Chapter VII
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে জুলাই, ২০১৩ দুপুর ২:৪৬
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ফখরুল সাহেব দেশটাকে বাঁচান।

লিখেছেন আহা রুবন, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৫০





ফখরুল সাহেব দেশটাকে বাঁচান। আমরা দিন দিন কোথায় যাচ্ছি কিছু বুঝে উঠতে পারছি না। আপনার দলের লোকজন চাঁদাবাজি-দখলবাজি নিয়ে তো মহাব্যস্ত! সে পুরাতন কথা। কিন্তু নিজেদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হচ্ছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। প্রধান উপদেষ্টাকে সাবেক মন্ত্রীর স্ত্রীর খোলা চিঠি!

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:০৩




সাবেক গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনকে মুক্তি দিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে খোলা চিঠি দিয়েছেন মোশাররফ হোসেনের স্ত্রী আয়েশা সুলতানা। মঙ্গলবার (২৯... ...বাকিটুকু পড়ুন

কেমন হবে জাতীয় পার্টির মহাসমাবেশ ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৫৬


জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিক্ষুব্দ ছাত্র জনতা আগুন দিয়েছে তাতে বুড়ো গরু গুলোর মন খারাপ।বুড়ো গরু হচ্ছে তারা যারা এখনো গণমাধ্যমে ইনিয়ে বিনিয়ে স্বৈরাচারের পক্ষে কথা বলে ,ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ হওয়াতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী

লিখেছেন সামিউল ইসলাম বাবু, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১২:১৩

ফিতনার এই জামানায়,
দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী খুব প্রয়োজন ..! (পর্ব- ৭৭)

সময়টা যাচ্ছে বেশ কঠিন, নানান রকম ফেতনার জালে ছেয়ে আছে পুরো পৃথিবী। এমন পরিস্থিতিতে নিজেকে গুনাহ মুক্ত রাখা অনেকটাই হাত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা

লিখেছেন মুনতাসির, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৮:২৪

বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×