বই পড়ার প্রতি আগ্রহ ছোটবেলা থেকেই।প্রাইমেরী পাশ করার থেকেই দেশী-বিদেশী ভিনিন্ন লেখকের গল্প-উপন্যাস পড়ার অভ্যেস।সেই থেকেই বই আমার নিত্যদিনের সঙ্গী।জুলভার্নের বই পড়ে যেমন পেয়েছি এডভেঞ্জারের স্বাদ,শার্লক হোমস পড়ে যেমন ডিটেকটিভ হওয়ার ইচ্ছা পোষণ করতাম,তেমনি আনা ফ্রাঙ্কের ডায়েরী পড়ে হু হু করে কেদেছি।জীবনের বিভিন্ন সময়ে পঠিত সেরা কিছু অনুবাদ বইয়ের একটা তালিকা তৈরী করলাম।-
গ্রেট এক্সপেক্টেশন- চার্লস ডিকেন্স
পিপ নামে এক ইংরেজ ছোকরার গল্প। তার বড়ো হওয়ার গল্প। সে অপরাধীদের সাহায্য করছে, নিজের ভালবাসার মানুষটাকে খুঁজছে, আবার এক বুড়ি বিধবাকে পুড়ে মরতেও দেখছে। তার নিজের জীবনের সবচেয়ে বড়ো আশাগুলো ব্যর্থ হচ্ছে। উপন্যাসের শেষে দেখা যাবে, সে তার পুরনো প্রেমিকাকে খুঁজে পাচ্ছে।
দ্য আলকেমিস্ট- পাওলো কোয়ালহো
অসাধারন একটা বই । জীবনটাকে আরো গভীরভাবে উপলব্ধি করতে পারার মত বই।সান্তিয়াগো নামে এক তরুন স্ব্প্নচারীর নিজেকে পাওয়ার গল্প বলা হয়েছে এখানে।
অল কোয়ায়েট অন দ্যা ওয়েস্টার্ন ফ্রন্ট- এরিখ মারিয়া রেমার্ক
প্রথমবার পড়ে চোখের পানি আর আটকিয়ে রাখতে পারিনি।পল বোমান নামক সতের বছরের এক কিশোর,রঙিন স্ব্প্ন দেখার যখন সময় তখন আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে গেল প্রথম বিশ্বযুদ্ধে ।লেখক বুঝিয়েছেন যে, হাজার বছরের সভ্যতাও মানুষের পশুত্বকে মুছে দিতে পারেনি।পল বোমার চরিত্রটার মাধ্যমে লেখক নিজের জ়ীবনের প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ভয়ংকর অভিজ্ঞতাই ফুটিয়ে তুলেছেন।
সোফিস ওয়ার্ল্ড- ইয়স্তেন গার্ডার
দর্শনভিত্তিক উপন্যাস।সোফি এমুন্ডসেন নামক চোদ্দ বছর বয়েসী এক কিশোরীর সাথে পরিচয় ঘটে আলবার্টো নক্স নামে এক রহস্যময় দার্শনিকের সাথে যে তাকে নিয়ে প্রাক-সক্রেটিস যুগ থেকে বর্তমান যুগ পর্যন্ত পাশ্চাত্য দর্শনের এক অসাধারন অভিযাত্রায়।একসময় তারাই দর্শনগত প্রহেলিকার জালে আটকা পড়ে।
থ্রি কমরেডস- এরিখ মারিয়া রেমার্ক
যুদ্ধোত্তর জামার্নীর ধ্বংসস্তূপের মধ্য দিয়ে পা ফেলে চলেছে তিনজন প্রাক্তন সৈনিক।সমস্ত বিশ্বাস ভেঙে জেগে রয়েছে শুধু অটুট বন্ধুক্ত আর প্রেম।তাদেরই এক জনের অপ্রত্যাশিত অকুন্ঠ আত্নত্যাগের কাহিনী এই থ্রি কমরেডস।
দ্য লস্ট ওয়ার্ল্ড-স্যার আর্থার কোনান ডয়েল
প্রফেসর চ্যালেঞ্জার ও তার দল এমন এক স্থান আবিষ্কার করে যেখানে আধুনিক মানুষের পা পড়েনি, ডাইনোসরের মত অনেক অদ্ভুত অদ্ভুত জীব সেখানে আজও টিকে আছে। এ নামে বিটিভিতে ছোটবেলায় এক ডাবিংকৃত টিভি সিরিজ দেখতাম। অনেকেই বোধহয় জানে না যে এই সিরিজের মূল শার্লক হোমসের লেখক আর্থার কোনান ডয়েলের উপন্যাস থেকে নেয়া।
দ্য গডফাদার- মারিও পুজো
এই উপন্যাস সম্পর্কে জানেননা এ রকম লোক খুঁজে পাওয়া কঠিন।আর যারা মোটামুট বইপত্র পড়েন, তাদের প্রায় সবাই উপন্যাসটি পড়েছেন।ভিটো কর্লিয়ানি আর তার পরিবারকে কেন্দ্র করে এর কাহিনি গড়ে উঠেছে।গডফাদারের সেই বিখ্যাত উক্তি-“প্রতিটা মানুষের জীবনেই এক সুনির্দিষ্ট নিয়তি থাকে”-এর মর্মার্থ মাইকেল কর্লিয়ানি চরিত্রটার মাধ্যমেই বিশেষভাবে ফুটে উঠেছে।পারিবারিক ব্যবসা থেকে দূরে সরে থাকতে চাইলেও নিয়তিই শেষ পর্যন্ত তাকেই গডফাদার বানালো।
ট্রেজার আইল্যান্ড-রবার্ট লুইস স্টিভেনসন
জিম হকিন্স নামে এক রোমাঞ্চপ্রিয় কিশোর বাস করে সমূদ্র তীরের এক শহরে।সে ও তার মা সেখানে একটি সরাইখানা পরিচালনা করে।একদিন সেই সরাই খানায় এসে উপস্থিত হয় এক বদরাগী মেজাজের ঝগড়াটে ক্যাপ্টেন।লোকটি হঠাৎ মারা গেলে তার একটি সিন্দুক থেকে একটি মানচিত্র পাওয়া যায় যা জিম এবং শহরের কিছু লোককে নিয়ে যায় এক দুঃসাহসিক অভিযানে।যেখানে তারা মোকাবেলা করে জলদস্যু ও বিশ্বাস ঘাতকদের।
লা মিজারেবল-ভিক্টর হুগো
জা ভালজা নামক এক হতভাগার জীবনের ঘটনা-দূর্ঘটনার কাহিনী। জা ভালজা চরিত্রটি ভিক্টর হুগোর এক অমর সৃষ্টি। এক টুকরো রুটির জন্য তাকে খাটতে হয়েছে ২০ বছরের জেল। বারবার জেল আর পালানোর মধ্যে কেটেছিল তার জীবন।
আনা ফ্রাঙ্কের ডায়েরী
উপন্যাসের ট্রাজেডী অনেক পড়েছি,তবে বাস্তব ট্রাজেডী যে গল্প-উপন্যাসের চেয়েও অনেক বেশি কষ্টের তা আনা ফ্রাঙ্কের ডায়েরী না পড়লে বোঝা যায় না।মাঝে মাঝে এই বইয়ের দুই-এক পাতা উল্টালেও মন বিষন্ন হয়ে ওঠে।
মিথলজি- এডিথ হ্যামিলটন
মিথলজি হ্যামিল্টনের বিশ্ববিখ্যাত ক্লাসিক, সর্বকালের সর্বাধিক বইগুলির মধ্যে অন্যতম।অলিস্পাসের গ্রীক দেবতাকূল থেকে ভ্যালহাল্লার নর্স দেবতাগণ সম্বন্ধে মন্ত্রমুগ্ধকারী মিথগুলো অতি নিখুতভাবে বর্নিত হয়েছে। সংগ্রহে রাখার মত একটি বই।
মিস্ট্রিরিয়াস আইল্যান্ড- জুলভার্ন
ক্লাস সেভেনে থাকতে পড়েছিলাম।কাহিনীর বিশেষ কিছু মনে নেই।দূর্ঘটনার ফলে ক্যাপ্টেন হার্ডিং ও তার দল এক রহস্যময় দ্বীপে আটকা পড়ে। যেখানে একের পর এক ঘটতে থাকে অপ্রত্যাশিত ঘটনা।শেষ পর্যন্ত জুলভার্নের আরেকটি ক্লাসিক ‘টুয়েন্টি থাউজেন্ড লিগস অর্ডার দ্য সি’ এর অসমাপ্তিত ক্যাপ্টেন নিমো ও নটিলাসের কাহিনী উটঘাটিত হয়েছে।
স্মৃতির পাতা উল্টিয়ে দেখলাম যে অনেক প্রিয় বই সম্পর্কে দুই তিনটা শব্দও মনে করতে পারি না, আবার চার-পাচ বছর আগে পড়া বই সম্পর্কেও স্পষ্ট ধারনা আছে।
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা জুলাই, ২০১৩ রাত ৮:১৮