বিএনপি নেতৃত্বাধীন স্বাধীনতা বিরোধীরা যখন ক্ষমতায় ছিল তখনোতো মুক্তবুদ্ধি, অসাম্প্রদায়িক সাংস্কৃতিক সংগ্রাম, প্রগতিশীল লেখক বুদ্ধিজীবীদের ওপর এতটা উপর্যপুরি নৃসংশতা নেমে আসেনি। তবে আজ কেন
৫ জানুয়ারির বিতর্কিত নির্বাচনের পরও আমরা আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটকে ক্ষমতায় রেখেছি, এদের বুহূবিধ কুকর্ম মুখ বুঁঁজে সহ্য করছি কেবল, এদের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর সুযোগটাকে যেন পুরনো শকুনেরা ভিত্তভূমি হিসেবে তৈরি না করতে পারে। পাছে আবার জামায়াত ও উগ্র সাম্প্রদায়িক শক্তি ক্ষমতার মসনদে না বসে। তার প্রতিদান এই?
এক এক করে সহযোদ্ধার লাশের মিছিল ভারি হচ্ছে। বাধ্য করা করা হচেছ মুক্তচিন্তার সারথীদের বাইরে পালিয়ে যেতে। চাপাতি, গুলি, পুলিশের হয়রানি, প্রতিমুহূর্তে ছায়ার মতো পেছনে হন্তারকের পাহারা, একের পর এক নিত্যনতূন হত্যার তালিকা- এভাবে ভয় দেখিয়ে, চারিদিকে আতঙ্ক তৈরি করে সরকার কি বোঝাতে চায়। আমরা এ রাষ্ট্রের কেউ না? এ রাষ্ট্র তাহলে কাদের? কারা এর উন্মত্ত উত্তরাধিকার?
সরকার বলছে, তাদেরকে বেকায়দায় ফেলবার জন্য ষড়যন্ত্রকারীরা এসব বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছে। তাহলে এই যে হত্যার মিছিল দীর্ঘতর হওয়া, অব্যাহত হুমকি, মুক্তচিন্তার উপর রাষ্ট্রীয় নজরদারি স্রেফ বিশৃঙ্খলা?
মুক্তিযুদ্ধের চেতনা রহিত করে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম বলবৎ রাখা, ধর্মানুভূতির কথা বলে কেবলই ইসলাম ধর্মের স্বার্থ অক্ষুণ্ন রেখে অন্য ধর্মাবলম্বীদের একঘরে করে দেয়া, তাদের উপর নিপীড়ন, নির্যাতন করে দেশত্যাগে বাধ্য করা ও তাদের সহায় সম্পত্তি দখল করা, প্রগতিশীল ও মক্তুচন্তাকে ৫৭ ধারা দিয়ে টুটি চেপে ধরা, আর ধর্ম ভিত্তিক জঙ্গি-হন্তারকদের বাক, চিন্তা, ও জেহাদকে অবারিত করে দেয়া কোন শৃঙ্খলার নামান্তর? রাষ্ট্র বা সরকার কেন এ ধরণের শৃঙ্খলাকে (?) আশ্রয় প্রশ্রয় দিচ্ছে আর নীরব মদদ দিয়ে যাচ্ছে খুনীদের?
প্রগতিশীল, মুক্তচিন্তার মানুষ, সংস্কৃতিকর্মী, লেকক, ব্লগার, নাস্তিক, বিজ্ঞানী-বুদ্ধিজীবী বলে বলে আমরা জঙ্গিবাদিদের টার্গেটকে খুব ছোট পরিসরে নিয়ে এসেছি। এরা মূলত জঙ্গিবাদের প্রাথমিক টার্গেট। ওরা হয়তো এখন বলছে, ধর্ম নিয়ে প্ররশ্ন করি বলে সে আমাকে হত্যা করছে। আর আপনি ধর্ম নিয়ে কথা বলেন না, তাই নীরব। এরপর বলবে, আমি বিজ্ঞান নিয়ে লিখি বলে সে আমাকে হত্যা করছে, আপনি বিজ্ঞান নিয়ে লেখেন না, ভাবেন না, তাই আপনি নীরব। ওরা বলবে আমি গান গাই বলে ওরা আমাকে হত্যা করতে চায়, কেননা গানতো ইসলামে হারাম। আর আপনিও নিরাপদ বোধ করবেন, কেননা আপনি গান গানও না, গান শুনেনও না। এরপর ওরা বলবে, কবিতা লিখি বলে ওরা আমাদের হত্যা করছে, আমাদের কবিতায় প্রেম-প্রকৃতি, নারী, দেশ, চিন্তা, দর্শন থাকে। ওরা এসব একদম সহ্য করে না। ওরা বলবে কবিতায় শুধু মরুভূমি থাকবে, নইলে তুমি খতম। আমি বা আমরা খতম হবো। আপনারা নীরব থাকবেন, কেননা আপনারা কবিতা লেখনও না কবিতা পড়েনও না।
এরপর.... ওরা বলবে,আপনি দাড়ি রাখেন না, নামায পড়েন না, বোরকা পড়েন না, আপনি স্কুল-কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে যান, নারী-পুরুষ এক সঙ্গে চলেন, কথা বলেন, হাসেন, তো আপনি খতমের তালিকায়। আপনি লালনের তরিকার, মাইজভান্ডারি তরিকার আপনারও রক্ষা নাই।
আর রাষ্ট্র বা সরকার? তারাতো ক্ষমতার মসনদ স্থায়ী করতে মাথা পেতে নেবে বর্বর, মূঢ়দের আস্ফালন। চেতনার বিরুদ্ধে, চিন্তার বিরুদ্ধে, স্বপ্নের বিরুদ্ধে, স্বাধীনতা ও প্রগতির বিরুদ্ধে ওরা একেক করে আইন করবে, পুলিশ লেলিয়ে দেবে, আর্মি লেলিয়ে দেবে, আপনাকে করবে ঘরছাড়া, দেশ ছাড়া। কেন না আপনি এ রাষ্ট্রের কেউ না, দেশেরও কেউ না। আপনি একটা ফাউল, আপনি একটা আজাইরা...
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা নভেম্বর, ২০১৫ দুপুর ২:২৯