দীর্ঘ দিন ফরেক্স এবং শেয়ার মার্কেটের সাথে জড়িত আমি।যদিও কাগজ কলমে আমি একজন টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার। কিন্তু প্রফেশনালি ফরেক্স এবং স্টক মার্কেট ট্রেডার এবং এই ফিল্ড নিয়েই কাজ করতে ভালোবাসি। অনেকেই বলে এতদুর পড়া লেখা করে কেন টেক্সটাইল এ জব করি না? চাইলেইতো টেক্সটাইল এ ভালো কোন জব করতে পারতাম।কিন্তু ফরেক্স এবং শেয়ার মার্কেট আমাকে যা দিয়েছে আমি তাতে ব্যাক্তিগত ভাবে খুশি। আমার এক সময় নিজেরি ছোট-খাট গার্মেন্টস ছিল।আমি টেক্সটাইল এ জব করলে কোন দিন নিজের গার্মেন্টস করতে পারতাম বলে আমি মনে করি না। আমি বিদেশে পড়া-লেখা করা অবস্থাতেও ফরেক্স থেকেই আর্ন করে চলেছি।ফুল-টাইম জব হওয়ার আগ পর্যন্ত আমি কখনো পার্ট-টাইম জব করি নাই।২০০৭ সালে প্রথম শেয়ার মার্কেট এর সাথে জড়িয়ে যাই ২০০৯ এর দিকে ফরেক্স মার্কেটের সাথে।শেয়ার মার্কেটে যখন ছিলাম তখন প্রথম প্রথম আমি ফান্ডামেন্টাল এবং আমার যুক্তিকে প্রাধান্য দিতা্ম পরে শিখলাম টেকনিক্যাল।
যখন বাংলাদেশের অনেক ট্রেডারই AMI BROKER কি জিনিস জানতো না, AMI BROKER দিয়ে কিভাবে টেকনিক্যাল এনালাইসিস করতে হয় জানতো না।এখনতো অনেক প্লাটফর্ম এবং অনলাইনেই এগুলা করা যায়। তখন AMI BROKER ছাড়া অন্য কিছু আমার জানা ছিল না। এক কথায় যদি বলি তখন বেশীর ভাগ লোকেই শেয়ার বাজার নিয়ে টেকনিক্যাল এনালাইসিস বুঝতে চাইতো না। এখনতো এটা সবাই করে প্রায়। ২০০৯ সালে যখন ফরেক্স শুরু করি তখন আমারো শুধু টেকনিক্যাল এর উপরেই ভরশা ছিল। সাপোর্ট, রেসিস্টেন্স, পিভট পয়েন্ট, মুভিং এভারেজ আর বাহারি ইন্ডিকেটরতো আছেই।ডেমোতে ব্যালান্স দ্বিগুণ হয় প্রতি মাসেই। আমারো ব্যাপারটা ভালো লাগলো। মনে হইলো আলাদিনের চ্যারাগ আমার হাতের কাছেই।
বাবার কাছ থেকে টাকা নিয়ে ডিপোজিট করলাম ২৫০০ ডলারের মত। এক মসে বেস ভালোই প্রফিট করলাম। পরের মাসে ব্যালেন্স ০০। টানা এক বছরে প্রায় ৩ বারের মত ব্যালেন্স ০০। ৫০০০ ডলারের উপরে শেষ আমার।শেয়ার বাজারের সব টাকায় আমি ফরেক্স এ ইনভেস্ট করে ফেলেছিলাম তখন।আমি তখনও স্টুডেন্ট। আব্বাও একটু বকা ঝকা করলো। বলল ফরেক্স এর ভুত মাথা থেকে সরাও। টুক-টাক শেয়ার বাজার করতেছিলা সেটাই কর।তারপর ২০১০ সালেতো শেয়ার মার্কেট এ বিশাল ধস। কিন্তু ফরেক্স এর ভুত মাথা থেকে সরে না।কি করি কি করি ভাবতেছি।কয়েক দিন চিন্তা করলাম কেন আমার ব্যালান্স ০০ হইলো? আমি কি টেকনিক্যাল বুঝি নাই? নাকি মানি নাই?দেখলাম যে না, বুঝছি ঠিকই কিন্তু কিছু ক্ষেত্রে হয়তো মানি নাই প্রোপারলি। তাই বলে ব্যালেন্স ০০ হবে? আরও কোন ফ্যাক্ট আছে কিনা খুজতে হবে। সেই প্রথন ফান্ডামেন্টালের সাথে পরিচয় আমার। ডেমো করতে থাকা আর ফান্ডামেন্টাল নিয়ে পরতে থাকা। ইন্টারনেট থেকে বই ডাউনলোড করে প্রিন্ট করে করে পড়ি।
এক বছরে কত বই পরেছি আমার মনে নাই, কিন্তু বছরে শেষে দুই বস্তা বই হইছিলো সেটা এখনো বাসায় আছে।কিন্তু আব্বা তখনো স্ট্রিক্ট। মন দিয়ে পরতে বলে, কিন্তু ইনভেস্ট করার টাকা দেয় না। শেষ পর্যন্ত আমার কলেজের এক টিচার যার সাথে আব্বার ব্যাক্তিগত সম্পর্ক ছিল। স্যারকে বললাম আপনি যদি আব্বাকে বলে টাকা এনে না দেন আমি পড়া-লেখা ছেড়ে দিব। যে ভাবেই হোক স্যারকে রাজি করাইলাম। স্যার আবাবকে বুঝাইল। দেখলাম আব্বা একটু রাজি। কিন্তু শর্ত হইলো এটাই শেষ টাকা দেওয়া আমাকে। সেই ১০০০ ডলার দিয়ে শুরু। আজ অবধি সেই ১০০০ ডলার শেষ হইলো না। ওটা দিয়েই টিকে আছি। কখনো লাভ, কখনো লস। কিন্তু দিন শেষে আল্লাহ্র রহমতে গেইনার। হ্যাঁ আমার জীবনের গল্পটা বলার উদ্দেশ্য আছে। এমনি এমনিতেই বলি নাই।
টেকনিক্যাল ব্যাপারটা ইনস্ট্যান্ট। আপনি এখন যা দেখতেছেন তার উপরেই ডিশিশন নিতে হবে। পিভট পয়েন্ট এর উপরে আছে বাই, নিচে আছে সেল। আজ থেকে এক সপ্তাহ, এক মাস বা এক বছর পর কি হতে পারে সেটা আপনি টেকনিক্যাল দিয়ে বুঝতে পারবেন না।ফান্ডামেন্টালি এটলিস্ট হিসাব করা যায়।যেটা টেকনিক্যাল দিয়ে কখনোই সম্ভব না। টেকনিক্যাল ব্যাপারটা ইনস্ট্যান্ট। আপনি এখন যা দেখতেছেন তার উপরেই ডিশিশন নিতে হবে। পিভট পয়েন্ট এর উপরে আছে বাই, নিচে আছে সেল।
আজ থেকে এক সপ্তাহ, এক মাস বা এক বছর পর কি হতে পারে সেটা আপনি টেকনিক্যাল দিয়ে বুঝতে পারবেন না। আপনি কোন রেসিস্টেন্স লেভেল দিয়ে বুঝবেন দেশ এই অবস্থাতে গিয়ে আর উন্নতি করবে না? কোন সাপোর্ট দিয়ে বুঝবেন একটা দেশ এর চেয়ে খারাপ অবস্থার মুখোমুখি হবে না। যদি তাই হতো GBP/USD গত ১৩ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন রেটে আসতো না। usd/cad এর এই অবস্থা হতো না। গত তিন মাস আগের ঘটনাটাই ধরেন। USD/CAD কি সেল মোডে ছিল? কখনোই না।তেলের দাম যত পরতেছিল usd/cad কোন রেসিস্টেন্স লেভেল মানছে? তেলের দাম কমাতে একের পর এক সব রেসিস্টেন্স ব্রেক করেতছিল। কারণ তাদের দেশের উপার্জনের একটা বড় মাধ্যম এই তেল।eur/chf এবং usd/chf এর কথা আপনাদের সবারই মনে আছে। এক দিনে কত পিপ্স পরছিল? ২৫০০ পিপ্স এর মত। কোন ইন্ডিকেটর এটা সিগন্যাল দিতে পারে? গত এক বছর আগেও মালয়েশিয়ার রিঙ্গিত ছিল ১ রিঙ্গিত= ২৮ টাকা। এখন ১৭-১৮ টাকা মাত্র। কোন টেকনিক্যাল ইনডিকেটরের কারনে এমন হইছে? কিন্তু কি ফান্ডামেন্টাল ইস্যু ছিল সেটা আমারা সবাই জানি।একের পর এক মালয়েশিয়া খারাপ সময় পার করছে। তাদের স্টক মার্কেটে বিশাল ধস। পেট্রলিয়াম এর দাম পরে জাওয়া। দুই দুইটা বিমান ক্র্যাস করা। প্রধানমন্ত্রী মালয়েশিয়ার বাইরে অর্থ পাচার। আরও অনেক ইস্যু ছিল।
কানার ভাই অন্ধকেও যদি সাপোর্ট রেসিস্টেন্স আকিয়ে দেওয়া যায় সেও বুঝবে। চ্যানেল আকিয়ে দিলেও বুঝবে।টেকনিক্যাল একটা নিদ্রিস্ট লেভেল এ আইশা আটকিয়ে যায়। আপনি চাইলেই নতুন কোন মুভিং এভারেজ ক্রিয়েট করতে পারবেন না। আপনি চাইলেই নতুন কোন ক্যান্ডেল স্টিক প্যাটার্ন তৈরি করতে পারবেন না। হিস্টোরি রিপিট। এই সুত্র দিয়েই টেকনিক্যাল ইন্ডিকেটর গুলি তৈরি করা। কিন্তু ফান্ডামেন্টালের কোন শেষ নাই। প্রতিনিয়ত হাজার হাজার ঘটনা ঘটবে আর আপনাকে মার্কেটে টিকে থাকতে হলে মার্কেটের সাথে আপ টু ডেট থাকতে হবে। ফরেক্স এ একটা কথা আছে ফরেক্স এ ৯০% লোক লুজার। আপনি বলতে পারেন ফরেক্স করে কিন্তু টেকনিক্যাল বুঝে না এমন লোক আছে? না কখনোই না। আমার জানা মতে যে রিয়েল এ ডিপোজিট করে সে মিনিমাম টেকনিক্যাল জিনিসটা বুঝে তবু কেন ৯০% লোক লুজার? কেন তারা মার্কেটের সঠিক সময়ে এন্ট্রি করতে পারে না? কারণ টেকনিক্যাল যে ইনস্ট্যান্ট। যতক্ষনে আপনি মার্কেট এ দেখতেছেন ততক্ষণে মার্কেট অনেক দূর মুভ করা শেষ। গত সপ্তাহের usd/jpy এর কথায় ধরেন। এটা কি বাই মোডে ছিল টেকনিক্যালি? না কখনোই টেকনিক্যালি বাই মোডে ছিল না। কিন্তু ফান্ডামেন্টাল অনেক বড় বড় ইস্যু ছিল এটা উঠবে। তাহলে কি টেকনিক্যালের দরকার নাই? হ্যাঁ অবশ্যই আছে। মার্কেটে এন্ট্রি এবং এক্সিট এর ক্ষেত্রে আছে। ধরেন অ্যামেরিকার কোন ভালো রিপোর্ট আসলো , তার মানে কি ডলার শুধু শক্তিশালী হতেই থাকবে? না একটা লেভেল পর্যন্ত হয়তো সেটা শক্তিশালী থাকবে। কিন্তূ কোন লেভেল পর্যন্ত থাকতে পারে সেটা আমরা টেকনিক্যাল দিয়েই ধারনা করে নেই। কয়েকটা ধাপে। হয়তো প্রথন রেসিস্টেন্স লেভেল ক্রস করলে মার্কেট ২য় রেসিস্টেন্স লেভেল পর্যন্ত যাবে, এ ভাবে তার পরের রেসিস্টেন্স......।।
সব রেসিস্টেন্স ব্রেক করলে আমরা ডেইলি, সাপ্তাহিক, মাসিক হাই দেখি। কারণ হিস্ট্রি রিপিট বলে কথা। আমাদের মেইন সমস্যা কোথায় জানেন? এই দেশের বেশীর ভাগ ট্রেডার নতুন, ইংলিশ এ দুর্বল ,হিসাব নিকাশে কাঁচা, অলস। নিজে মাথা খাটিয়ে কিছু করতে চাই না। টেকনিক্যাল তো এতটা জটিল না। কষ্ট করে ইংলিশ পরে বুঝতেও হয় না। মার্কেট হিসাব করে বেরও করতে হয় না। ২০১০ সালে শেয়ার বাজারে এত লোক গরীব হওয়ার কারণ জানেন? তাদের বেশীর ভাগ লোক ছিল অজ্ঞ। নিজে কিছু জানতো না অন্নের উপর দিয়েই চলতে চাইতো। তানাহলে, আজকে শেয়ার মার্কেটের এই অবস্থা হত না। মার্কেট পয়েন্ট ৬৫০০+ আমি তখন মার্কেট থেকে বের হয়ে গেছিলাম। কারণ আমার কাছে ওই পয়েন্ট এ ছিল অবিশ্বাস্য। কারণ আমার হিসাব মিলতো না। যে হারে শেয়ার এ রদাম বেড়েছিলও আমি সেই হারে দেশের উন্নতি দেখি নাই। একটা দেশের শেয়ার বাজার গেইন করলে সেই দেশের উন্নতি মাস্ট চোখে পরবে আপনার। কিন্তু আমার চোখে কিছুই পরে নাই। আমি বের হয়ে গেছিলাম। যদিও মার্কেট তার পরেও অনেক উঠেছে। সাময়িক আফসোস ছিল কিনতু বছর শেষে আমিই ছিলাম গেইনার। আপনাকে একটা প্রশ্ন করি? ধরেন একটা চকলেট কোম্পানি থেক উৎপাদন খরচ ৫ টাকা। আপানর কি ধারনা সেই চকলেটটা ক্যোঁৎ টাকায় বিক্রয় হলে মানান সয় হবে ? বা আপনি কতর মধ্যে হলে কিনবেন? ১০-১৫-২০-২০-৩০ এর বেশী? কখনোই না। কিন্তু ৫ টাকার একটা চকলেট যখন ৫০০ টাকতেও মানুষ কিনবে আপনাকে বুঝতে হবে সামথিং রং। আমি ২০০ টাকার শেয়ার ৩০০০ টাকাতে সেল হইতে দেখছি। যে শেয়ার কয়েক দি আগেও ছিল z ক্যাটাগরির। রাতারাতি এমন কি ঘটলো , কি এমন চাহিদা তৈরি করলো সেই প্রোডাক্ট যে এত দ্রুত দাম বেড়ে যাবে? আমার ভিতরে সব সময় এই প্রশ্ন গুলি ছিল। অল্পতে বের হয়ে গেছি কিন্তু গেইন করেছি। আসলে অনেক কথায় বললাম। আরও অনেক কথায় বলার ইচ্ছা ছিল। কিন্তু আর্টিকেল বড় হয়ে যেতে পারে তাই কিছু আর লেখলাম না। আবার ভয় ও আছে যারা টেকনিক্যাল গুরু তারা আবার পিছে লাগতে পারে।
ভালো থাকবেন সবাই।
we-freelancer.com এর পক্ষ থেকে সবার জন্য শুভ কামনা
আশা করি আপানারা সবসময় আমাদের পাশে থাকবেন।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা মে, ২০১৬ রাত ৮:০৯