নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারে এমন গোবরে পদ্মফুল ফোটা অভিশাপস্বরূপ ! লেখাপড়া করা তীব্র পিপাসা তার। প্রাইমারি স্কুল থেকে ভার্সিটি পর্যন্ত সর্বত্রই তার মেধার প্রশংসা। মেধার মূল্যায়ন পাইনি তবে সমবেদনা প্রায়ই জুটে তার কপালে। ভার্সিটি টিচার থেকে শুরু করে গ্রাম্য মুরব্বী পর্যন্ত সর্বত্রই।
ছেলে বড় হবে -বড় চাকুরি করবে - জজ ব্যারিস্টার হবে -কল্পনায় ছেলের চারিপাশের সুখ মুচকি হাসি খেলে যায় মায়ের দু'টুঠে।
সেবার পূবের বাড়ির মুসলেহ চাচার মামলা মোকদ্দমার ব্যাপারে এক এডভোকেট অাসলেন গ্রামে। টাই-কোট পরা। সবাই কত সম্মান জানাচ্ছে উনাকে। মা এবারও কল্পনায়...! টাই-কোট পরে ছেলেও অাসবে এডভোকেটের বেশে। পাশের বাড়ীর চাচী এসে বলবে- অাসিফের মায়ের অার দু:খ থাকবে না। দক্ষিণ ঘরের ফুফু এসে বলবে - ভাবী, বড়লোক হইয়া ভুইলা যাইয়ো না অামাগো।
মায়ের খুশি সর্বত্র। হাসির রোল কল্পনায়। ছেলে ঘুরছে অফিসে অফিসে। চাকুরির ধান্ধায়। মাস্টার্স দেয়ার তিন বছর গত হল। কম করে হলেও ত্রিশবার যাওয়া হল ঢাকায়।
শুক্রবার! চাকুরির পরীক্ষা। এন কোম্পানি -তেন ইন্ডাস্ট্রি ইত্যাদি ইত্যাদি। ভার্সিটিতে পড়ুয়া অবস্থায় শুক্রবার থাকতো বন্ধ অথচ এখন শুক্রবার পরীক্ষাবার। নিজের দারিদ্রতাকে ঘোচাতে অারো কত শুক্রবার এর অপেক্ষা করতে হবে। অাসিফ জানে- শুক্রবার সুখবার হবে না তার জন্য।
গত মাসে বাড়ি থেকে অাসার সময় ছোট বোন এসে বলল- ভাইয়া কলেজে দু'মাসের বেতন দেয়া হয়নি, পরের মাসেই পরীক্ষা। বেতন - ফি পরিশোধ না করলে পরীক্ষা দিতে দিবে না। মায়ের প্রতি সপ্তাহে থেরাপি দেয়ার কথা। পাঁচ ছয় সপ্তাহ ধরে থেরাপি দেয়া হয়নি। একেবাড়ে কুজোঁ হয়েগেছে মা। মেরুদন্ডটা একটু বেকে গেছে। থেরাপিই এর একমাত্র সমাধান।
দারিদ্র পিতার অক্ষমতা অার উদাস চাহনি তাকে একেবারেই নাজেহাল করে ফেলেছে। দুটো টিউশনি দিয়ে অার কত চলা যায়। এদিকে মেসের ভাড়াও দেয়া হয়নি। পরের মাসে ভাড়া না দিলে নির্ঘাত বাসা ছাড়তে হবে। সারাদিন চাকুরির জন্য ঘুরঘুর অার সন্ধ্যায় বাসায় বাসায় স্টুডেন্ট পড়ানো। House Teacher! ছোট বেলায় শুনতাম - তোদের স্যার অথচ এবার শুনি তোদের House Teacher। বাহ! কত বড় টাইটেল। মাস্টার্স পাশ করে এর চেয়ে অার বড় কিইবা হতে পারে।
গত মাসে এক টিউশন মিডিয়া থেকে একটা টিউশনি মেনেজ করেছে। তাও অাবার এডভান্স পারসেনটেইজ দিয়ে। সন্ধ্যার পর পাশের মসজিদে নামাজ পড়ে পায়ে হেটেই টিউশনিতে যায় সে। অাজো সুবাহ ' দের বাসায় অাসছে। কয়েকবার কলিংবেল চাপল। এসব বড় বড় বাড়ীতে দু তিনবার কলিংবেল চাপা বড় কিছু না। দরজা খোলে সুবাহ অবাক করে বলল - স্যার অাপনি???
বাকিটুকু
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই এপ্রিল, ২০১৬ ভোর ৪:৪৪