২য় পর্বের লিঙ্ক বাল্যপ্রেম এবং একজন ব্যর্থ প্রেমিক
নিষিদ্ধ জ্ঞান অর্জন ও চটি পর্ব
ছোটবেলায় আমার বেশ বই পড়ার অভ্যাস ছিল। তার মধ্যে যে সব ভদ্রোচিত বই ছিল তা হলফ করে বলতে পারি না । দস্যু বনহুর,মাসুদ রানা ইত্যাদি ওই বয়সে পড়া নিষিদ্ধ ছিল ।আমাদের সাথে আমার মামা থাকতেন, ওনার ছিল বইয়ের বিশাল সংগ্রহ । ক্লাশ ফাইভ সিক্সে পড়ার সময়ই এগুলি মামার আলমারি থেকে চুরি করে নিয়ে পড়তাম ।
এ ছাড়াও বিভিন্ন নিষিদ্ধ বিষয়ে জ্ঞানার্জনের বই আমার দারুন পছন্দের ছিল । বিশেষ করে জনৈক মাওলানা কর্তৃক লিখিত ‘বিবাহের পর স্বামী-স্ত্রীর কর্তব্য’ নামের কিছু বই ছিল যেগুলোর প্রচ্ছদে শুধু দুইটা হাতের হ্যান্ডশেকের ছবি; আর তার চারপাশে ছিল গোলাপ ফুলের মালার ছবি । বলা বাহুল্য সেই হাতদুটি স্বামী এবং স্ত্রীর হাত ।
এই সব নিষিদ্ধ বইগুলি বন্ধু বান্ধবের কাছ থেকে সংগ্রহ করে বাসার বিভিন্ন গোপন স্থানে লুকিয়ে রেখে নিষিদ্ধ জ্ঞান লাভের জন্য আমার যে অধ্যবসায় ছিল তা দেখলে নিঃসন্দেহে বিদ্যাসাগরও লজ্জা পেয়ে যেতেন । বিদ্যাসাগর নাকি জ্ঞানারহনের জন্য ল্যাম্প পোস্টের নিচে দাঁড়িয়ে পড়াশোনা করতেন । আর আমি এই সকল নিষিদ্ধ পড়াশোনা করতাম স্টোররুম,ছাদ,বাথরুম এমনকি সাহস একটু বেশি সাহস হবার পর পড়ার টেবিলে পাঠ্য বইয়ের ভেতর রেখে ।তবে এই তালিকায় আমার পছন্দের শীর্ষে ছিল বাথরুম ।
আমার এইসব বইয়ের সরবরাহকারিদের মধ্যে অগ্রগণ্য ছিল আমার বন্ধু রাসেল যে কিনা ‘চটি রাসেল’ নামেই বন্ধু মহলে সুপরিচিত ছিল । তার কালেকশন ছিল বিশাল । তার কালেকশনের বইগুলো সে আমাদের কাছে ভাড়া দিত বিভিন্ন রেইটে । সাদাকালো ছবিওলা বই দুইটাকা আর রঙ্গিন বই তিনটাকা ভাড়ায় পাওয়া যেত । আমার সাথে ভাল খাতির থাকার সুবাদে মাঝে মাঝে কিছু বই (নাকি চটি?) তার কাছ থেকে মাগনা নিতাম ।
অল্প বয়সে এই নিষিদ্ধ জ্ঞানার্জনের ফলাফল খুব একটা সুখকর হল না । আমি সব সময় এই নিষিদ্ধ বইগুলি এনে পড়া শেষ করে আবার বাসার সবার অগোচরে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আবার পাচার করতাম । বেশির ভাগ সময়ে বাথরুমে আমার এই জ্ঞানচর্চা চলত । আমাদের বাথরুমের ভেন্টিলেটরের ঘুলঘুলির ফাঁকে একটু চিপা জায়গা ছিল। চটি রাসেলের কাছ থেকে একবার সেবা প্রকাশনীর “ ---- বিষয়ে সাধারণ জ্ঞান” নামের একটা বই নিয়ে এলাম । বইটি নিয়ে যথারীতি বাথরুমে ঢুকলাম । পড়া শেষ না হওয়ায় বইটা ভেন্টিলেটরের চিপায় রেখেই চলে এলাম, পরবর্তী অধিবেশনে আবার অধ্যয়নের জন্য । যেহেতু ওই বাথরুমটা শুধু আমি আর মামা ব্যবহার করতাম তাই ঝুঁকিটা নিলাম । তাছাড়া কেউ খুব ভালভাবে খেয়াল না করলে অইখানে কোনভাবেই চোখ যাবে না ।
কিন্তু আমার কপাল ছিল খারাপ । মামা কিছুক্ষণ পরেই বাথরুমে গিয়ে ঢুকলেন ।যখন বেরিয়ে এলেন তখন দেখি তার হাতে চটি রাসেলের কাছ থেকে ২ টাকা দিয়ে ভাড়া করে আনা বইটি । দুনিয়ায় এত জায়গা থাকতে আমার মামার চোখ কিভাবে যে ওই ঘুলঘুলির চিপায় গেল তা আল্লায়ই জানেন । এবং মামার কাছে ধরা খাওয়ার পর উনি আমাকে এমন চিপা দিলেন তা আর বলার নয় ।
এভাবেই এক কিশোর প্রতিভার সীমাহীন আগ্রহের কোন প্রকার মুল্যায়ন না করে তাকে চরম ভাবে নিগৃহীত করে তার ওপর চরমভাবে দমন পীড়ণ চালানো হল । আর মামার হাতে ডলা খাওয়ার পর আমিও এই বিষয়ে ম্রিয়মান হয়ে পড়লাম । র্যাবের হাতে পড়লে বা টি এফ আই সেল থেকে যে সকল অপরাধী রিমান্ডের পর ছাড়া পায়,আমার অবস্থা হল সেরকম ।
শুনেছি রিমান্ডে ডলা খাওয়ার পর সন্ত্রাসীদের অনেকের খাওয়া দাওয়ায় অরুচি চলে আসে । আমারও এই ঘটনার পর এই বিষয়ে কিঞ্চিৎ অরুচি দেখা দিল । পরবর্তী কালে নীলক্ষেত অঞ্চলে বহুল বিক্রিত নিউজ প্রিন্টের চিকন চিকন পাতলা ছবিযুক্ত বইগুলোর প্রতি আর খুব একটা আগ্রহ বোধ করিনি । তার বদলে পরবর্তী কালে নীল চলচ্চিত্রের প্রতি মনযোগী হলাম । কোন দমন পীড়ন বা জুলুম আমার এই আগ্রহ আর মনযোগ কিন্তু দাবায়া রাখতে পারে নাই । সে গল্প যথাস্থানে হবে ।আজকের অধিবেশন এ পর্যন্তই । (চলবে)
পরবর্তী পর্ব – বাল্যপ্রেম এবং একজন ব্যর্থ প্রেমিক