somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বিস্ফোরণ (The Explosion)

২৯ শে জুলাই, ২০১৭ রাত ১২:০১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

একটা হাইপোথেটিক্যাল প্রশ্ন দিয়ে শুরু করি –
- তোমার সামনে যদি একটা সুইচ দেয়া হয় যেটা টিপলে এ পৃথিবীর অর্ধেক মানুষ মারা যাবে, তাহলে কি তুমি সেটা টিপবে?
- অবশ্যই না।
- ঠিক আছে। কিন্তু তোমাকে যদি বলা হয় সুইচটা না টিপলে আগামি একশ’ বছরের মধ্যে গোটা মানবজাতি বিলুপ্ত হয়ে যাবে? তখন কি করবে তুমি? এরজন্য যদি তোমাকে বন্ধুবান্ধব, পরিবার-পরিজন এমনকি আত্মহত্যাও করতে হয়, তাহলে?
এক কথায়, “তুমি কি মানবজাতিকে রক্ষা করার জন্য অর্ধেক জনসংখ্যা নির্মূল করবে?”

অবান্তর মনে হচ্ছে না? ইচ্ছে হচ্ছে এই অবান্তর পোস্ট নিয়ে আর সময় নষ্ট না করে অন্য কিছুতে চলে যেতে, তাই না? মানবজাতির বিলুপ্তি, তাই আবার হয় নাকি? সর্বশ্রেষ্ঠ জীব বিলুপ্ত হয়ে যাবে, তা-ও আবার একশ বছরে !? গাঁজাখুরি, এ তো অসম্ভব!

কিন্তু সত্যি এটা, মোটেও অসম্ভব নয়। তবে বলতে পারো, “অচিন্তনীয়” । মানুষের ভেতরে একটা আদিম ইগো, ডিফেন্স মেকানিজম রয়েছে- তার মস্তিস্ক বাস্তবতার যে চাপগুলো সহ্য করতে পারেনা তার সবগুলোকে বিতারণ করে। এটাকে বলে “অস্বীকৃতি”। অস্বীকৃতি হল মানুষের একটি কোপিং(coping) মেকানিজম। এটা না থাকলে আমরা প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে মরে যাবার হাজারটা সম্ভাবনার কথা ভেবে যারপরনাই ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়তাম। কিন্তু আমাদের মন, প্রবল চাপ তৈরি করতে পারে এমন অস্তিত্বশীল ভীতিগুলোকে ব্লক করে রাখে। আর সহ্য করার মতো চাপগুলোর দিকে মনযোগ দিতে সাহায্য করে- যেমন সময় মত কাজে যাওয়া কিংবা বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করা।

ভেবোনা এটা কেবল অনুন্নত মেধাশক্তির মানুষদের জন্য হয়। সাম্প্রতিক সময়ে এক ওয়েব-ট্র্যাকিং স্ট্যাডিতে দেখা গেছে উন্নত দেশগুলোর উচ্চমানের বুদ্ধিবৃত্তিক সমাজের মানুষদের মাঝেও কিছু কিছু জিনিস দেখামাত্র অস্বীকৃতি প্রবণতা কাজ করে। গবেষণা মতে, বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশিরভাগ ছাত্রছাত্রী মেরু অঞ্চলের বরফ-গলন কিংবা কোন প্রজাতির বিলুপ্তির সংবাদ-আর্টিকেলে ক্লিক করামাত্রই দ্রুত সেখান থেকে বের হয়ে যায়। তাৎক্ষণিক এই হতাশা থেকে মুক্তি পেতে তারা নিজেদের প্রিয় বিষয়গুলো বেছে নেয়; যেমন, খেলাধুলার সংবাদ, মজাদার হাসির কোন ভিডিও কিংবা সেলিব্রিটিদের গসিপ।

অবশ্য তুমি আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্য প্রাচীন মিথোলজির ভাবধারা আঁকড়ে ধরতেই পারো। সেখানে বলা আছে- অস্বীকৃতির মধ্যেই একজন বীরের অহংকার আর উন্নাসিকতা প্রকাশ পায়। যে লোক #বিশ্বাস করে এ দুনিয়ার বিপদ-আপদ তাকে স্পর্শ করতে পারবে না তারচেয়ে বড় অহংকারী বীর আর নেই! কিন্তু সেক্ষেত্রে তোমায় আমি অহংকারীর পরিণতি নিয়ে ভেবে দেখার অনুরোধ করব...

আমি জানি এসব কথা তোমার কাছে নতুন নয়, কিন্তু আমরা এসব কখনই পাত্তা দেইনা কারন এমনটা যে ঘটবে তা আমরা কল্পনাও করতে পারি না। কিন্তু বিশ্বাস করো, মানুষ যেটা কল্পনা করতে পারে না তা যে আদৌ ঘটবে না, তা কিন্তু নয়। বলতেই পারো, তুমি ততদিন বাঁচবেনা তাই টেনশন না করলেও চলবে। কিন্তু এই কথাটা তোমার সন্তানের সামনে গিয়ে বল যদি সাহস থাকে।

ইকোসিস্টেম সম্পর্কে তোমার ধারনা আছে নিশ্চই। সে হিসেবে তোমার জানা থাকার কথা যে, কোনো প্রজাতির সংখ্যা তার পরিবেশের সহ্যের সীমা ছাড়িয়ে গেলে তারা বিলুপ্ত হয়ে যায়- এটা একেবারেই স্বাভাবিক একটা ব্যাপার। গভীর অরণ্যে একটা ছোটখাটো পুকুরের কথা ভাবো, সেখানে পানির উপর ভেসে আছে শৈবাল, ওখানে ওরা ভালোমতোই টিকে আছে, পর্যাপ্ত পুষ্টি সংগ্রহ করে দিব্যি সুখে আছে। কিন্তু সেই সুখে অনিয়ন্ত্রিতভাবে তাদের সংখ্যা বেড়ে গিয়ে পুকুরের উপরিভাগ ছেয়ে ফেলল, ফলে সূর্যের আলো বাধাগ্রস্থ হল তাদেরই কারনে, ফলে পুকুরের পানিতে তাদের জন্য যে পুষ্টি তৈরি হতো সেটা হ্রাস পেতে পেতে বন্ধ হয়ে গেল। এবার অবশিষ্ট পুষ্টি ওই ব্যাপক পরিমান শ্যাওলার কারনে খুব দ্রুত নিঃশেষ হয়ে যাবে, ফলে ব্যাপক হারে মারা যেতে থাকবে তারা। একসময় পুরোপুরি বিলুপ্ত হয়ে যাবে।

তুমি কি জানো, ১৯০০ সালে মাত্র ১১৭ বছর আগে এই পুরো পৃথিবীর জনসংখ্যা ছিলো ১৬০কোটি (বর্তমান ভারতেই আছে ১৩২কোটি)...? তারপর ১৯৫০ সালে জনসংখ্যা বেড়ে হল ২৫০কোটি(প্রায় দ্বিগুন)। তারপর ২০০০সালে হয়ে গেল ৬০০ কোটি । আর আজ ৭৫৪ কোটি চলছে। ১৯০০ সাল থেকে যত মানুষ ৫০ বছরে বেড়েছে তারচেয়ে বেশি বাড়িয়েছি মাত্র ১৫-১৬ বছরে। এখন প্রতি ১২-১৩ বছরে ১০০ কোটি করে বাড়ছে! ২০৪৫সাল নাগাদ আমি-তুমি সহ মানুষ হবে ৯০০ কোটি এবং এই অবস্থা যদি চলতে থাকে তবে আমরা ২১০০ সালে ৯৬০কোটি থেকে ১২৩০কোটির ভেতর কোন একটা পর্যায়ে থাকবো... এগুলো কেবল সংখ্যা না, ভাল করে লক্ষ করো। ম্যালথাস ১৯৭৮ সালে হিসেব করে দেখিয়ে ছিলেন জনসংখ্যা জ্যামিতিক হারে বাড়ে। একটা কাপল (ধরি আমার বাবা-মা) দু’টি সন্তান জন্ম দিয়েছেন। আমরা দু’জন অন্য দু’জনকে বিয়ে করার পর এই দুই কাপল মোট জন্ম দিবে ৪জন। সেই ৪জন জন্ম দিবে ৮জন , তারপর ৮জন থেকে ১৬ জন, ১৬ জন থেকে ৩২ জন। বাড়ছেই কেবল, কমছে না। ফলাফলটা উপরে সংখ্যার মধ্যে তো আছেই, চারপাশেও আছে। দেখো, এখন জনসংখ্যা ‘বৃদ্ধির হার’ কমেছে, বৃদ্ধি কমেনাই। আর হার কমার পিছনে কারন হল, ছোটবেলার কাপড় যদি তুমি সারাজীবন পড়ে থাকো তাহলে একপর্যায়ে তোমার শরীর আর বাড়বে না, কাপড়ের চাপে বাড়ার জায়গা নাই তাই। যতদিন মানুষ যাযাবর ছিল তখন জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার কম ছিল। গত তিন-চার’শ বছর হয় মানুষ থিতু হওয়া শুরু করেছে এবং অবস্থান নিশ্চিত করার পর মনের আনন্দে জনসংখ্যা বাড়িয়েছে। আমার দাদার সন্তান ১০ জন, তার বড় ছেলের ১২ জন... আর এখন জীবনযুদ্ধের টানাপড়েনে বিভিন্ন কারনে পরিবারের সদস্য সংখ্যা আমরাই কম রাখার চেষ্টা করছি, কিন্তু তা-ও যথেষ্ট নয়। তবুও এই চাপের মধ্যেই মানুষ বেড়ে যাচ্ছে। কিন্তু বিয়ে করবো না, সন্তান নেবো না, এগুলো আমরা মাথায়ও আনিনা। অথচ এই সন্তান এই পৃথিবীতে কিভাবে সারভাইভ করবে? আর কিছু ধর্মান্ধ সহজ সমাধানের লোক কিছু আন্দাজ-পইরান না করেই বলে দেয়, - মুখ দিছেন যিনি, আহার দিবেন তিনি। দুর্ভাগ্যজনকভাবে এই কথা আফ্রিকার অধিকাংশ দেশের জন্য সত্য হচ্ছে না। যেখানে WHO প্রতিবছর পরিবার-পরিকল্পনা ও জন্মনিয়ন্ত্রনের পেছনে শতকোটি টাকা ব্যয় করছে, সেখানে ভাটিকান সিটি সেসব অঞ্চলে পাদ্রী পাঠিয়ে ধর্মের নামে অপব্যাখ্যা দিয়ে ওখানকার লোকজনদের বুঝাচ্ছে এগুলো পাপ! বাংলাদেশ বা ভারতেরও প্রায় একই দুর্দশা...

এখন পায়ে ধরি, দয়া করে এই লিংকটায় এখনই ঘুরে একটু দেখে আসো - https://www.census.gov/popclock/ এখন দেখ কত আছে আর এই লেখাটা পড়ার পড় দেখ কত হয়। মনে না থাকলে লিখে রেখো... বাংলাদেশও দেখো- Click This Link

তাকাও চারপাশে। পৃথিবীর সাইজ মোটেও বাড়েনি। খাদ্য উৎপাদন কিন্তু জ্যামিতিক হারে বাড়ছে না, সাধারণ গানিতিক হারে বাড়ে। একর প্রতি ১মন থেকে ২মন, ২ থেকে ৩,৪,৫,৬ এমন করে বাড়ছে; তাও বৈজ্ঞানিক বিভিন্ন গবেষণা, রাসায়নিক সার, কীটনাশক, হাইব্রিড ফসলের জন্য ইঞ্জিনিয়ারিং, বন কেটে অথবা জলাভুমি ভরাট করে বাড়ানো হচ্ছে। তার উপর আছে জ্বালানি ব্যাবহার, কয়লা, তেল, গ্যাস। মাত্র দেড়শ বছরের ভেতর এই সব রিসোর্স আমরা খনি থেকে উঠাতে উঠাতে অর্ধেক করে ফেলেছি এবং আরো দ্রুত শেষ হচ্ছে। পরিস্কার পানযোগ্য পানির পরিমান জ্যামিতিক হারে কমে যাচ্ছে। ভুগর্ভ থেকে যে হারে উঠাচ্ছি সেই হারে নামছে না, সাথে জ্বালানীর কার্বন-ডাই-অক্সাইড বৈশ্বিক উষ্ণতা ঘটিয়ে বরফ গলিয়ে পানির উচ্চতা বৃদ্ধি করে বাস এবং চাষযোগ্য ভুমির পরিমান প্রতিনিয়ত কমিয়ে দিচ্ছে। আগ্রাবাদের পানি নাকি জোয়ারের কারনে নামতে পারেনা, গলাপানিতে রিক্সা চলে। জানো, বর্তমানে এই পৃথিবীর প্রতি ৮জনে ১জন অর্থাৎ ৭৫০কোটির ৮ভাগের ১ভাগ #মানুষ না খেয়ে আছে? যখন তুমি ফ্যানের নিচে অথবা এসিতে বসে কম্পিউটার বা ফোনে এই আর্টিকেল ইন্টারনেটে পড়ছ, তখন পৃথিবীর ৫ভাগের ১ভাগ #মানুষ কেবল সূর্য আর চাঁদের আলোয় প্রাকৃতিক বাতাস সম্বল করে বেঁচে আছে। আরে বাবা, আর কয়বছর পর হজ্জে গেলেও তো তুমি ঠিকমত হজ্জ করতে পারবা না। আরাফার ময়দানে জায়গা পাবানা, সাফা-মারওয়া পাহাড়ে দৌড়ানোর জায়গা থাকবেনা, শয়তানকে মারা পাথর এসে তোমার গায়েই লাগবে, চুমু দেয়ার জন্য এখনই কাল-পাথরের কাছে যাওয়া যাচ্ছে না... কার কাছে আশ্রয় চাইবে মানুষ? কেয়ামত কি এই বেলায়ই দেখতে চাও? খেয়াল করে দেখো, উচ্চ জনসংখ্যার দেশ যেমন, চীন, ভারত, বাংলাদেশ এদের মানুষের উচ্চতা এবং আয়ু আর কম জনসংখ্যা যেমন অস্ট্রেলিয়া, জার্মান, রাশিয়া এদের অথবা আমাদের আগের প্রজন্মের মানুষদের আকার-আকৃতি এবং আয়ু। প্রকৃতি তার রিসোর্স অনুযায়ী আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছে ব্যালেন্স করার।

এবার আবার নিজের চারপাশে তাকাও। দু’দিন আগে অবিরাম বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতায় কষ্ট পেয়েছ। মনে পড়ে কয়টা চকলেটের বা চিপসের প্যাকেট রাস্তায় ফেলেছ? সবাই ফেলল তাই তুমিও... নগরায়নের পুর্বেই নিষ্কাশনের ব্যবস্থা সেই আদিম মায়ান কিংবা পেত্রা সভ্যতার মানুষও হিসেব করে নগর পরিকল্পনা করেছিল। আর আমাদের এখন সেই হিসেবেরও সময় নেই এতো মানুষের আবাসন চাহিদার কারনে। শহরগুলোতে তুমি পিচঢালা রাস্তা আর দালান দেখবে; পানি শুষে নেবার জন্য কোন মাটি দেখবে না। এই পানি-কাদা পার হয়েই তোমায় অফিসে আর বিদ্যালয়ে কিংবা ব্যাবসায় বা টিউশনে যেতে হবে, নইলে তুমি অভুক্ত থাকবে। পাশ করে বের হয়ে জীবিকা নির্বাহ করতে না পেরে এখনই আত্মহত্যা করতে চাইছ, পাবলিক ভার্সিটিতে পড়তে না পেরে শিক্ষার সুযোগ হারাচ্ছো, প্রশ্নপত্র ফাঁস তোমার জীবন ধ্বংস করে দিচ্ছে, কোন শিক্ষাবোর্ডের সব শিক্ষার্থী একযোগে মরে যেতে চাইছে, ফুটপাতে মানুষের ভিড়ে হাটা দায়, ছুটির দিনে মেলা বা ঘোরার জায়গাগুলো নাহয় বাদই দিলাম, ঈদ বা পুজোর ছুটিতে বাড়িতে যাওয়ার চেয়ে হয়তো পুলসিরাত পার করা সহজ হবে, হাসপাতালের করিডোরে পা ফেলার জায়গা নাই, আর সেই সাথে জীবনের নিরাপত্তা তো নাইই। সড়ক-নৌ দুর্ঘটনা, কারখানায় আগুন, দালানধ্বস ইত্যাদি ইত্যাদি ইত্যাদি। যুদ্ধ করতে করতে ত্যাক্ত-বিরক্ত হয়ে সন্তানদের অবাধ্যতা, দাম্পত্য কলহ, বিচ্ছেদ, খুন, ধর্ষন, মাদকাসক্তি, স্থুল বিনোদন, হিংসা, সমালোচনা, ফাঁপর, দুর্নীতি এগুলো কি তুমি এখনও কানেক্ট করতে পারছ না...?

এরই মাঝে তোমার চেয়ে বুদ্ধিমান কিছু মানুষ এসব ব্যাপার বুঝতে পেরে নিজের এবং নিজের বংশধারা রক্ষার জন্য নিজেকে নিরাপদ করার জন্য হেন কাজ নেই যা করছে না। ছোট প্রশ্নফাস সমস্যা নিয়েই কিছু ইঙ্গিত দেই, বুঝে নাও। প্রশ্নফাঁস হলে লাভ কার? কোন মতে পাস করার পর এই শিক্ষার্থীরা কি করবে? বড়লোক বা আমাদের মত মধ্যবিত্তের বাচ্চারা উচ্চশিক্ষার আশায় অবশ্যই কোন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকেই বেছে নেবে। আর জানোই তো, যত কাস্টোমার ততো লাভ। কিন্তু তাতে কি হলো? আমাদের কিছুই হল না। যাদের বাপের বড় প্রতিষ্ঠান আছে তারা পাশ করে সেখানেই ঢুকে পড়বে আর আমরা...!? যাক এই প্রসংগ, দেশে যাদের কাছে ব্যাপক টাকা আছে, তারা মহা বিপর্যয়ের সময় নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যেতে পারবে, উচু দামে খাবার, ঔষধ কিনতে পারবে, তেল, গ্যাস, বিদ্যুৎ তাদের ঘরেই থাকবে। তোমার সন্তানকে কি খাওয়াবে? চোখের সামনে মারা যাবে তারা, তোমার সন্তান, আপনজন, প্রতিবেশি। খাবারের জন্য ম্যাসাকার শুরু হয়ে যাবে, তোমার ভাই তোমাকে খুন করতে আসবে কেবল তোমার বাড়ির মাচায় একমাত্র লাউটার জন্য। লাশের সাগর পাড়ি দিতে হবে। কেয়ামত দর্শন হয়ে যাবে। আগুন, সালফার, মহাদূর্যোগ কিংবা পারমানবিক যুদ্ধ নয়... সবকিছুর শেষ হয়ে যাবে এই গ্রহের জনসংখ্যার ভারে।

এতোসব কিছু খুব শীঘ্রই আসছে। বর্তমান পৃথিবীর যে রিসোর্স তা দিয়ে বর্তমান জনসংখ্যার ৩ ভাগের ১ভাগ ভালভাবে চলতে পারবে। অর্থাৎ বর্তমানে আমরা অলরেডি পৃথিবীর দেড়গুন চাহিদা নিয়ে বসে আছি এবং এভাবে চলতে থাকলে ২০৩০ সাল নাগাদ আমাদের এই সাইজের আরেকটি গ্রহ দরকার পড়বে।

ব্যাপারটা এমন হবে না যে আমাদের চলমান গাড়ির গ্যাস আস্তে আস্তে শেষ হয়ে থেমে যাবে, বরং আমাদের গাড়িটা আচমকা রাস্তা শেষ হয়ে গভীর খাদে পড়ে যাবে। এবং ওই পতনের সময়টুকু আমরা খুনোখুনি করতে করতে কাটিয়ে দেব।

এটা হবেই নিশ্চিত, যদি কোন মহামারী বা ভয়াবহ দুর্যোগ এসে জনসংখ্যা আচমকা কমিয়ে দিয়ে না যায়। এই অবস্থায় Kingsman The secret service মুভিতে দেখা মি. ভ্যালেন্টাইনের উক্তি মনে পড়ে যায়, “শরীরে জীবাণু আক্রমন করলে শরীর তাপমাত্রা বাড়িয়ে দেয় যেন জীবাণু মরে। তাতে যদি কাজ না হয় তাহলে শরীরই মরে যায়, তারপর জীবাণু মরে। যেভাবেই হোক, জীবাণু কিন্তু মরেই... আর এখন পৃথিবী হচ্ছে সেই শরীরের মত, আর আমরা হচ্ছি জীবাণু। অনবরত পৃথিবীর ক্ষতিই করে যাচ্ছি।” আর বিশ্বাস করো, প্রকৃতি যদি উল্কাপতন ঘটিয়ে ডাইনোসর বিলুপ্ত করতে পারে তবে তোমাকেও...

হিসেবটা আরও সহজ করে দেই, ক্ষমতাশীল উন্নত রাষ্ট্র, যারা এই সমস্যাটা নিয়ে চিন্তিত; তারা বুঝে গেছে আমরা ইতিমধ্যে সেই একমুখি রাস্তায় ঢুকে গেছি, ফেরার কোন পথ নেই, ধ্বংস অনিবার্য। তাই, তারাও তাদের অস্তিত্ব রক্ষার প্রশ্নে যুদ্ধের সব আয়োজন সমাপ্ত করে এবার কেবল সেকেন্ড গুনছে। বিশ্ব পরিস্থিতির দিকে তাকিয়ে হিসেব কর, মিলে যাবে। খুঁজে দেখ, আমেরিকা তাদের কত বছরের তেল মাটির নিচেই মজুদ রেখে কত খরচ করে মিডল-ইষ্ট থেকে কিনে বা যুদ্ধ করে দখল করে হলেও তেল নিজের দেশে নিয়ে যাচ্ছে। কেন? কিন্তু এখনও তোমার এগুলো ভাবার সময় নেই, কারন পরের বেলার ভাত জোগাড় কিংবা প্রিয় মানুষটার টাইয়ের নট বাঁধতেই তুমি এইমুহুর্তে বেশি আগ্রহী। অথচ আমি তোমার সন্তানকে বাঁচানোর চেষ্টা করছি...

তাহলে কি করবে তুমি এখন? টিপবে সুইচটা? আরেকটু সহজ করে দেবো? অপশন দেই? কাদের মারবে তুমি?-
১। আস্তিক, ২। নাস্তিক, ৩। গরীব, ৪। বড়লোক, ৫। পুঁজিবাদী, ৬। বামপন্থী, ৭। রাজনীতিবিদ, ৮। শিক্ষিত, ৯। অশিক্ষিত, ১০। মুসলিম মারা ইহুদি, ১১। রোহিঙ্গা মারা বৌদ্ধ, ১২। হিন্দু মারা মুসলিম, ১৩। ইরাক-আফগান-জাপান-ভিয়েতনাম মারা আমেরিকান, ১৪। নোয়াখাইল্যা-বরিশাইল্যা, ১৫। জঙ্গীবাদী... কাকে মারবা তুমি? আমি জানি এখন তোমার ভেতর চরম মাত্রায় অস্বীকৃতি কাজ করছে। এটা ম্যাস মার্ডার বলে তুমি এটা নিয়ে ভাবতেও চাইছ না, কিন্তু অভুক্ত সন্তানকে তুমি কিংবা অভুক্ত তুমি এবং তোমার নাতীকে খাওয়াতে তোমার সন্তানকে কিন্তু অস্ত্র হাতে নিতেই হবে।

আমিও স্বপ্নে দেখতাম, আমার একটা ছোট্ট মেয়ে আমার বুকে হামাগুড়ি দিয়ে উঠে খেলতে খেলতে ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে যায়, মুখ থেকে লোল বের হয়ে আমার বুক ভেসে যায় আর আমি খুব ধীরে নিঃশ্বাস নেই যেন ওর ঘুম না ভেঙে যায়... ছোট ছোট পা ফেলে হাঁটতে শিখবে আর আমি নিজে হাতে ধরে তাকে ভায়োলিন বাজানো শেখাবো। পড়তে শিখলে কোরআন শরীফের একটা অনুবাদ উপহার দিয়ে বলব, “নাও, এটা তোমার সবচেয়ে কাছের বন্ধুর থেকে আসা চিঠি, যখনই মনে প্রশ্ন জাগবে এখানে উত্তর খুঁজে পাবে।” তারপর তাকে আরও আগে যত চিঠি এসেছিল, সবগুলোর সাথে পরিচয় করাবো। শিল্প, সাহিত্য, ইতিহাস, দর্শন যা কিছু আমি জানি তার সবটুকু তাকে দিয়ে যাবো।

কিন্তু এখন আর ওকে দেখিনা স্বপ্নে। শেষবার স্বপ্নে তাকে দেখেছিলাম রক্তাক্ত, বিবস্ত্র, একদানা খাবারের জন্য আরও কিছু হিংস্র মানুষ আর বেঁচে যাওয়া কিছু কুকুর-বেড়ালের সাথে কাড়াকাড়ি করছে, আর তারপর খাবার না পাওয়া কিছু হতাশ পুরুষ... আমি আর তাকে স্বপ্নে দেখতে চাইনা...

পৃথিবীতে হাঁটতেও দেখতে চাইনা, যদি না একটা নতুন গ্রহের সন্ধান পাই অথবা এই গ্রহটাকেই তোমাদের সবাইকে নিয়ে এমন একটা অবস্থায় পৌছে দিতে পারি যেখানে আমার মেয়েটা চোখ মেলে অবাক বিস্ময়ে কেবল সৌন্দর্য দেখতে পায়, সৃষ্টিরহস্য নিয়ে চিন্তা করায় আগ্রহী হয়... নয়তো, তোমার সন্তানই হবে আমার সন্তান, সেই ভালবাসাই থাকবে। আর আমার পিতা-মাতার অস্তিত্ব পৃথিবীতে ধরে রাখার জন্য আমার বোনই যথেষ্ট।

জানি, এই প্রতিজ্ঞা ধরে রাখলে কোন মূর্খ নারীও আমার সাথে জীবন বাঁধতে চাইবে না। চাইলেও এই পণ ধরে রাখতে দিতে চাইবে না। কিন্তু আমিও আমার রেখে যাওয়া অস্তিত্বের কাছ থেকে অভিশাপ শুনতে চাইনা, যে কেন এমন একটা বাজে পৃথিবীতে তাকে আনলাম।

সমাধানঃ যদি এখনও না বুঝে থাকো, তাহলে সমাধান আবার আরেকদিন স্পষ্ট করে বলব। আগে তুমি “অস্বীকৃতি” বুঝে তার সাথে বোঝাপড়ার চেষ্টা কর...

আর যদি #অস্বীকৃতি বুঝে থাকো তাহলে জেনে নিও- আমার কাছে এখন বিশ্বের সাড়ে সাতশ’ কোটি মানুষের সাথে তোমার আর কোন পার্থক্য নেই...
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে জুলাই, ২০১৭ রাত ১২:০৫
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

রাষ্ট্রদূত নিয়োগ নিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তুঘলকি কান্ড !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১২:৪৪

৫ই নভেম্বর অন্তবর্তীকালীন সরকারের তিন মাস পূর্ণ হয়েছে। চারিদিকে আলোচনা চলছে এই সরকারের সময়ে কোন মন্ত্রণালয় কেমন পারফরম্যান্স করেছে তা নিয়ে। আলোচনা হচ্ছে অতি গুরুত্বপূর্ণ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নিয়ে।পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকানরা ভীষণ কনজারভেটিভ

লিখেছেন মুনতাসির, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১০:২৬

আমেরিকা নিয়ে মন্তব্য করার যোগ্যতা আমার নেই—এটা প্রথমেই বলে ফেলা ভালো। আমি শুধু আমার অভিজ্ঞতার কথা বলছি। আমেরিকা তথা উত্তর আমেরিকাতে আমার যাওয়া হয়েছে বেশ কিছুবার। সবগুলো ভ্রমণ যোগ করলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনী ফলাফলে বাংলাদেশের জন্য দুশ্চিন্তা নেই

লিখেছেন মেঠোপথ২৩, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১:২১

যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনী ফলাফলে বাংলাদেশের জন্য দুশ্চিন্তা নেই

ট্রাম্প হচ্ছে একজন আপাদমস্তক বিজনেসম্যান। কমলা হ্যা্রিস যেহেতু ইন্ডিয়ান বংশোদ্ভূত তাই ইন্ডিয়ান ভোটার টানার জন্য সে নির্বাচনের আগে বাংলাদেশ প্রসঙ্গে টেনে জাস্ট... ...বাকিটুকু পড়ুন

চট্রগ্রামে যৌথবাহিনীর ওপর ইসকনের এসিড হামলা সাত পুলিশ আহত।

লিখেছেন তানভির জুমার, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১:৪৩

এসিড নিক্ষেপে আহত পুলিশ সদস্য



চট্টগ্রামে পুলিশের ওপর ইসকন সমর্থকদের হামলা ও এসিড নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় সাত পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। মঙ্গলবার (৫ নভেম্বর) সন্ধ্যা থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইসকন

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:৪৭


INTERNATIONAL SOCIETY FOR KRISHNA CONSCIOUSNESS যার সংক্ষিপ্ত রূপ হলো ISKCON এর বাংলা অর্থ হল আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘ। যে সংঘের ঘোষিত উদ্দেশ্য হল মানুষকে কৃষ্ণভাবনাময় করে তোলার মাধ্যমে পৃথিবীতে প্রকৃত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×