somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বিধাতা পশ্চিমে চলে গেছেন!

২১ শে মে, ২০১৪ বিকাল ৩:১৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমার খুব প্রিয় একটা মুভি হল Blood Diamond'। কাহিনীর সত্যতা আর ডিক্যাপ্রিওর অনবদ্য অভিনয়ের বদৌলতে ছবিটা আমার সংক্ষিপ্ত কালেকশনে ঢুকে গেছে অনেক আগে।
পাশ্চাত্যের 'উন্নত' দেশগুলোর বড় বড় হীরা আর অস্ত্র ব্যবসায়ীরা কিভাবে তাদের দালালদের মাধ্যমে আফ্রিকায় গৃহযুদ্ধ লাগিয়ে রেখেছে বছরের পর বছর, এই ছবিতে তারই বাস্তবচিত্র ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। ছবিটার এক পর্যায় নায়ক ড্যানি আর্চার (ডিক্যাপ্রিও) আক্ষেপ করে বলেছিল 'God has left this country long ago' অর্থাৎ, বিধাতা বহু আগে এই দেশ ছেড়ে চলে গেছেন। আগে এই স্বগোতক্তিটা ছবির প্রয়োজনে নায়কের ক্যারিশমেটিক ডায়লগ হিসেবেই ভালো লাগত। কিন্তু নাইজেরিয়ার তিন শতাধিক স্কুলছাত্রী অপহরনের ঘটনা এবং এই ব্যাপারে বিশ্ব-মোড়লদের ভূমিকা দেখে এখন মনে হচ্ছে আসলেই বিধাতা অনেক আগেই আফ্রিকার এসব দেশগুলো ছেড়ে চলে গেছেন!
বিগত দশকের শুরুর দিকে যখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র টুইন টাওয়ার ধ্বংসের মূল কারিগর আখ্যা (কোন অকাট্য প্রমান কি পেয়েছিলেন কেউ?) দিয়ে ওসামা তথা মুসলিমদের (War against Terrorism!) বিরুদ্ধে অলিখিত যুদ্ধ ঘোষনা করে, তারপর থেকে ওসামাকে ধরার (মারার) জন্য আফগানিস্তানের তোরাবোরা অঞ্চলে সাঁড়াশি আক্রমন চালায় মাসের পর মাস ধরে। কোটি কোটি ডলার খরচ করা হয় এই অভিযানে। এক মিলিয়ন ডলার দামের একটি বোমা ফেলে সর্বমোট একটি (১ টি মাত্র) পাহাড়ী ছাগল হত্যা করার গল্পও শোনা গেছে বাতাসে।
অথচ, নাইজেরিয়ার ইস্যুতে মার্কিন মোড়লদের ভূমিকা কি? অপহরনের প্রায় এক মাস পেরিয়ে যাবার পর মিঃ প্রেসিডেন্ট বিবৃতি দিলেন যে, হতভাগ্য ৩০০ মেয়েকে খুঁজে বের করতে তারা বাহিনী পাঠাবেন, বিশেষজ্ঞ দল পাঠাবেন ইত্যাদি ইত্যাদি। আরো বেশ কিছু ইউরোপীয়ান দেশও একই সুরে গান গাইতে লাগল। এমনকি, জাতিসংঘের সাবেক প্রধান কফি আনান সাহেবও অবিলম্বে উদ্ধারকাজে অংশগ্রহনের জন্য সব মোড়ল দেশগুলোর প্রতি 'আহবান' জানালেন, তাও প্রায় একমাস পরে। ইনি সেই কফি আনান, ৯০ দশকে রুয়ান্ডায় হুটু আর টুটসিদের মধ্যে জাতিগত দাঙ্গা রোধে যিনি চরম ব্যর্থ হয়েছিলেন, যার ফলশ্রুতিতে নিহত হয়েছিল প্রায় সাড়ে আট লক্ষ মানুষ।
আফ্রিকা মহাদেশ, যেখানে গত কয়েক দশক ধরে অগনিত যুদ্ধশিশুর জন্ম হয়েছে, যেই দেশে ধর্ষন যুদ্ধজয়ের একটি 'প্রচলিত' অনুষঙ্গ, সেই দেশে তিন শতাধিক স্কুলছাত্রীকে অপহরনের পর একমাস পার হয়ে গেছে, ওই হতভাগ্য মেয়েগুলোর ভাগ্যে কি হয়েছে, সেটা আমরা তৃতীয় বিশ্বের অতি সাধারন মানুষও দিব্যদৃষ্টি দিয়ে দেখতে পারি। অথচ বিশ্ব মোড়লদের গদাইলস্করি চাল দেখে মনে হয় তাদের তেমন তাড়া নেই।
যারা নিজেদের উদ্দেশ্য পূরনের জন্য পুরো দুনিয়া তোলপাড় করে ওসামাকে খুঁজে বের করতে পারে, মাটির নীচ থেকে সাদ্দামকে তুলে এনে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে দিতে পারে, তাদের জন্য ৩০০ হতভাগ্য মেয়ের অবস্থান বের করা কি কঠিন কাজ? ওসামাকে খুঁজে বের করার অভিযান চালানোর সময় তো নির্বিচারে সাধারন মানুষ মেরেছেন আপনারা, এখন তাহলে কেন 'বোকো হারাম' নামের সংগঠনটিকে ধূলোয় মিশিয়ে দিতে আপনারা অপারগ? অপহরনকারীদের নেতা বন্দুক উঁচিয়ে আরো অপহরন করার হুমকি দেয় সদম্ভে, তাকে আপনারা ধরতে পারেন না। এটা কি আদৌ বিশ্বাসযোগ্য? প্রযুক্তির উৎকর্ষতার এই যুগে যেখানে নানা গ্রহে প্রানের অস্তিত্ব খোঁজার প্রয়াস চলে নিরন্তর, সেখানে নিজেদের এই চিরচেনা গ্রহে কিছু মানুষকে খুঁজে পাওয়া কি এতই অসম্ভব কাজ? হারিয়ে যাওয়া মালয়েশিয়ান উড়োজাহাজের খোঁজে তো ১৬ কোটি ডলার ব্যয় করেছেন আপনারা, সব উন্নত দেশগুলো নিজেদের আধুনিক প্রযুক্তির মহড়া দেখিয়েছেন। কিন্তু এই মেয়েগুলোর জন্য আপনারা কত ডলার খরচ করেছেন? কয়টা বোমা ফেলেছেন বোকো হারামের আস্তানায়?
পৃথিবীর সবচেয়ে দুর্ধর্ষ মেরিন সেনা আছে আপনাদের। কুয়েত, ইরাক কিম্বা আফগানিস্তানে তো চোখের নিমেষে ওদের পাঠিয়ে দিয়েছিলেন, তাহলে আফ্রিকাতে কেন মেরিন সেনাদের কোন ব্যবহার নেই? নাকি আপনাদের বিলাসিতার যোগান দেয়ার মত কিছু আর অবশিষ্ট নেই ওখানে, তাই ওদের ব্যাপারে আপনারা শীতল আচরন করছেন?
কি আর বলব। আপনারা বিশ্ব শাসন করেন, তাই আপনাদের উপরে কথা বলার তো উপায় নেই। যাদের সাথে আপনাদের কোন স্বার্থ জড়িত নেই, তাদের ব্যাপারে আপনারা নির্লিপ্ত থাকবেন, এটাই হয়তো স্বাভাবিক।
এইসব কিছু দেখে আসলেই এখন মনে হয় বিধাতা অনেকদিন হল পশ্চিমেই বসত গেড়েছেন। আমাদের তৃতীয় বিশ্বে মাঝে মাঝে আসেন বলে হয়তো আমরা এখনো করে খাচ্ছি, তবে অন্ধকার মহাদেশে যাওয়া একদমই ছেড়ে দিয়েছেন!!
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

Dull Friday !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই এপ্রিল, ২০২৫ রাত ২:৩৭


ইদের ছুটি শেষ হতে চলেছে। বাংলাদেশের বেশিরভাগ মানুষ ঈদের ছুটিতে ঢাকা থেকে বাড়িতে যায়। আমার ক্ষেত্রে বরবার উলটো ঘটনা ঘটে। কুমিল্লা থেকে ঢাকায় এসেছি ঈদের ছুটিতে এবার।... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিটিংয়ের জন্য কেন এত তোড়জোড়?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ০৫ ই এপ্রিল, ২০২৫ ভোর ৫:১২



অর্থাৎ চীনের সহায়তায় লালমনিরহাটের দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের এয়ার বেইস চালুর চেষ্টা, তিস্তা মহাপরিকল্পনা চীনকে নিয়ে বাস্তবায়নের পরিকল্পনা ও চীনে গিয়ে ডক্টর ইউনূসের সেভেন সিস্টার্স সম্পর্কিত বক্তব্য ভারতের ভালো লাগেনি।... ...বাকিটুকু পড়ুন

কানাডার প্রধানমন্ত্রী ঈদের শুভেচ্ছা এবং বাংলাদেশে এর প্রতিফলন

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ০৫ ই এপ্রিল, ২০২৫ ভোর ৬:১৮



গত বছরের মতো এবছর আর কানাডার প্রধানমন্ত্রী ঈদের শুভেচ্ছা জানাননি। রোজার শুরুতেও “রামাদান করিম” শুভেচ্ছাবচনটি কেউ পাঠায়নি। আগে যখন ট্রুডো ঈদের ঠিক আগে আগে সরকারি দপ্তর থেকে কানাডার মুসলিম... ...বাকিটুকু পড়ুন

অকুতোভয় বাসচালক মো. সোহেলকে পুরষ্কৃত করা হোক

লিখেছেন নতুন নকিব, ০৫ ই এপ্রিল, ২০২৫ সকাল ৯:১৭

অকুতোভয় বাসচালক মো. সোহেলকে পুরষ্কৃত করা হোক

ছবিসহ মিনি পোস্টারটি এআই দিয়ে তৈরিকৃত।

থেঁতলানো চোয়াল, ভেঙ্গে গেছে দাঁত, রক্তাক্ত অবয়ব—তবু ৪০ কিমি বাস চালিয়ে যাত্রীদের বাঁচালেন! এই সাহসী চালকই বাংলাদেশের নায়ক... ...বাকিটুকু পড়ুন

মৃত্যুর পর যা হবে!

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৫ ই এপ্রিল, ২০২৫ সকাল ১০:৪২



বেহেশত বেশ বোরিং হওয়ার কথা।
হাজার হাজার বছর পার করা সমস্যা হয়ে দাঁড়াবে। দিনের পর দিন একই রুটিন। এরচেয়ে দোজক অন্য রকম। চ্যালেঞ্জ আছে। টেনশন আছে। ভয় আছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×