আবার ও আমাদের পরীক্ষা পিছিয়ে গেল। আগের ছয় বার পরীক্ষা পিছানোতে যেমন খুশিতে লাফিয়ে উঠেছিলাম, এইবারের বিষয় টা সম্পূর্ণ আলাদা। আসলে এইবার সব ফ্যাকাল্টি আলাদা হয়ে যাওয়াতে আমি ভাবিওনি যে পরীক্ষা পিছাতে পারে। এমন না যে, পরীক্ষার পড়া সব শেষ, তার পরেও পরীক্ষা পিছানোতে কেন যেন সস্তুষ্ট হতে পারছিনা। গত তিনদিন ধরে লর্ড অব দ্য রিংস দেখে সময় নষ্ট করে একসপ্তাহ বেশি সমযের জন্য 'হা-পিত্যেশ' করলেও মন থেকে কখোনোই চাইনি এইবার পরীক্ষা পিছাক।

গত পাঁচ বছরের বুয়েট শিক্ষাজীবনে এইবার ই প্রথম দেখলাম পরীক্ষার আগের দিন বিকাল বেলা মিটিং করে পরীক্ষা পিছানোর নোটিস দেয়া হলো। শিক্ষক, সিনিয়র ভাই সবার কাছ পরীক্ষা পিছানোর কুফল শুনে আসলেও কখোনোই সেগুলোকে বিশেষ পাত্তা দিতাম না। কিন্তু যখন সমস্যা গুলোর মুখোমুখি হতে হয় তখনই আসলে এর স্বরুপ বোঝা যায়। শিক্ষাজীবনের শেষ দুই টার্ম এ এসে পরীক্ষা পেছানা মানে কেবল কতগুলো দিন শিফট হওয়া না, এর সাথে সামনের দিনের পরিকল্পনাও জড়িত। বাবা-মার চাকুরী জীবন ক্রমশ শেষ হয়ে আসছে, বাইরের ভার্সিটির সহপাঠীরা অনেকেই চাকুরীরত বা উচ্চশিক্ষায় দূরদেশে, ক্রমশ: বাংগালীর জীবনে শুভকাজ বলে পরিচিত দিল্লীকা লাড্ডু

এইবারের পরীক্ষা পেছানোটা আসলে খুবই আকস্মিক। ফ্যাকাল্টি আলাদা করা হয়েছে, ডিপার্টমেন্টাল হেড আমাদের সাথে নিজে কথা বলে পরীক্ষা না পেছানোর জন্য একরকম অনুরোধ ই করেছেন বলা যায়, নিজেদের পছন্দ মতই রুটিনও অফিস থেকে করে দেয়া হয়েছে, তারপরও কেন পরীক্ষা পিছালো বোধগম্য না।

হয়তো দেশেই চাকুরী করতে চাইলে বা উচ্চশিক্ষা নিতে চাইলে পাশ করার 'ডেডলাইন' তেমন মূখ্য না, কিন্তু যারা দেশের বাইরে উচ্চশিক্ষা নিয়ে যেতে চায় তাদের জন্য মাস এবং দিনের হিসাব খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের বর্তমান অ্যাকাডেমিক ক্যালেন্ডার অনুযায়ী ফ্রেবুয়ারী-২০১২ এর শেষের দিকে ফাইনাল রেজাল্ট (আমরা সিনিয়র ব্যাচ, আমাদের জ্ন্য আন্ডারগ্রাড লেভেলের শেষ রেজাল্ট) দেবার কথা। রেজাল্টের এক মাস পরে প্রভিশনাল সার্টিফিকেট পাওয়া যায়। আবার বাইরের অনেক ইউনিভার্সিটিতেই কাগজপত্র পাঠানোর জন্য ডেডলাইন থাকে ১ এপ্রিল। যদি রেজাল্ট দিতে ১৫ দিন মতো দেরী করে তাহলে অনেকেই ২০১২ সালের সেমিস্টার-এ ভর্তির জন্য প্রয়োজনীয় ট্রানসক্রিপ্ট/সার্টিফিকেট পাঠাতে পারবে না।
পরীক্ষা পেছানের কোপ মূলত পড়ে সিনিয়র ব্যাচ গুলোর উপর। আমাদের সিনিয়র ভাইয়া-আপুরা এইসবের মুখোমুছি হয়ে এসেছেন, আমরা হছ্ছি এবং যা আলামত দেখছি এই চক্র থেকে আমাদের জুনিয়ররাও মুক্তি পাবে না। চার বছরের কোর্স ছয় বছরের বেশি সময়ে শেষ করে ক্রমশ ভবিষ্যত পরিকলল্পনা, আগামীর স্বপ্নগুলো ধুসর হতে দেখে নিজেকে দোষারোপ করা ছাড়া আর কিছুই করার থাকে না।

সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে জুন, ২০১১ রাত ৯:৫৬