তিউনিসিয়া আরব বসন্তের সূতিকাগার।
জাতীয় নির্বাচন হয়ে গেল তিউনিসিয়ায়। ১৫ সেপ্টেম্বর। গতকাল ফল ঘোষনা না হলেও ফলাফল জানা গেছে।
স্বৈরশাসক বেন আলীর বিদায়ের পর অন্যান্ন আরব দেশের মত মৌলবাদি বা একনায়কের খপ্পর থেকে বেচে যাওয়া তিউনিসিয়া নিয়ে আমার আগ্রহ বরাবরই ছিল।
বাংলাদেশী পত্রিকায় ইসরাইলি নির্বাচনের খবর থাকলেও তিউনিসিয়ার কোন খবরই দেখি না। টিভিতেও নেই।
বিবিসি ইংলিশ পেজে কিছু পেলাম।
২০১৪ নির্বাচনে পশ্চিমা সেক্যুলার ধারণাকে ভিত্তি করে সুশীল সমাজকে নিয়ে সাইদ এসেবসি গড়ে তোলেন 'নিদা তুনিস'। আরব বসন্তের পর কর্মদক্ষতা দিয়ে নিদা তুনিসকে স্থানীয় ও প্রেসিডেন্ট নির্বাচন জিতিয়ে দেশটিকে মৌলবাদি খপ্পর থেকে বাচিয়ে দিয়েছিল।
এসেবসি জয়লাভ করলেও ইসলামপন্থি আধা-মৌলবাদি আন্নাহদা দলের অনেককে স্পিকার পদ সহ বিভিন্ন পদ দেয়া হয়েছিল।
তিউনিসিয়া ছিল আরব বসন্তের সূতিকাগার।
বিপ্লব-পরবর্তী উত্তাল দিনগুলোতে ইসলামপন্থী আর সেক্যুলারদের ক্ষমতা ভাগাভাগিতে স্থিতিশীল ছিল তিউনিসিয়া। যদিও ক্ষমতার ভাগাভাগি করে দেশটিকে ৫ বছর একটানা শান্তিপুর্ন রাখা আরব দুনিয়ায় অকল্পনীয় ঘটনা।
গত বছর মুসলিম উত্তরাধিকার আইন সংসোধন করেছিল।
ত্রুটিপুর্ন মুসলিম উত্তরাধিকার আইন সংশোধন করে আরব বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে তিউনিসিয়ায় সম্পত্তিতে নারীপুরুষের সমান অধিকার বিল পাশ হয়েছে। এর মাধ্যমে নারী-পুরুষেরা উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া সম্পত্তির সমানাধিকার দেয়া হচ্ছে।
গত ২৩ নভেম্বর দেশটির মন্ত্রীসভা পরিষদ নতুন এই বিল পাস করে। বিলটি পাস করার আগে দেশটির মন্ত্রীসভায় ব্যাপকভাবে আলোচনা করা হয়।
তিউনিসিয়ার কট্টরপন্থি মুসলিমরা এই বিলের প্রবল বিরোধিতা করে আসছিলন। তাদের অভিযোগ নতুন এই আইন ইসলাম বিরোধী। তবে প্রেসিডেন্ট এসবেসি পক্ষ থেকে বলা হয়, তিউনিসিয়ার সংবিধান দেশটির নাগরিকদের মতামতের উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে। নাগরিকদের সমানাধিকার নিশ্চিত করতে এসবেসি সরকার বদ্ধ পরিকর।
২০১৭ সালে প্রেসিডেন্ট এসেবসি দেশটির নাগরিকদের ব্যক্তিস্বাধীনতা নিশ্চিত করার জন্য স্বতন্ত্র স্বাধীনতা ও নারী সমানাধিকার কমিটি গঠন করেন।
অন্যান্ন আরব দেশের মত তিউনিসিয়ায় ভিন্নধর্মে বিবাহ নিষিদ্ধ ছিল, বিশেষ করে মুসলিম নারীদের ভিন্নধর্মে বিবাহ কঠিন ভাবে নিষিদ্ধ ছিল। গত বছর একটি আইনে দেশটির মুসলিম নারীদের যে কোন ধর্মে বিয়ে করার স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে।
মুসলিম উত্তরাধিকার আইন অনুযায়ী পিতার সম্পত্তির পুত্রের চেয়ে কন্যা সন্তান বঞ্চিত হয়ে অর্ধেক কম পেত। এখন সমানধিকার।
গত অগাস্টে দেশটির প্রেসিডেন্ট, যিনি একজন উদার সেক্যুলার রাজনীতিক, নারীদের অধিকার এগিয়ে নেওয়ার লক্ষে খসড়া প্রস্তাব পেশ করতে একটি কমিটি গঠন করেন।
তিউনিসিয়াই একমাত্র দেশ যেখানে ‘আরব বসন্ত’ সফল হয়ে রাজনৈতিক স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছে।
১৫ সেপ্টেম্বর আবারও জাতীয় নির্বাচন হয়ে গেল তিউনিসিয়ায়।
তবে স্বতন্ত্র প্রার্থিরা গত বছর থেকেই ভাল করছিল
গত বছরের স্থানীয় নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ৩৩, ইসলামপন্থি আধা-মৌলবাদি আন্নাহদা ২৯ আর এসেবসি সেকুলার নিদা তুনিস ২৩ শতাংশ ভোট পেয়েছিল।
কিন্তু বেচারা প্রেসিডেন্ট সাইদ এসেবসি মারা যাওয়াতে একটু আগেই আগাম নির্বাচন হলো।
এই নির্বাচনে মোট প্রার্থীর সংখ্যা ছিল ২৬ জন, যার মধ্যে দু’জন নারীও ছিলেন। মূল প্রতিদ্বন্দীদের মধ্যে ছিলেন -
১। মিডিয়া ব্যক্তিত্ব নাবিল করৌই।
২। ইসলামপন্থী আন্নাহাদা দলের প্রধান ও প্রাক্তন স্পিকার আবদুল ফাত্তাহ মুরো।
৩। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ইউসুফ শাহেদ।
কিন্তু নির্বাচনের ফলাফলে সবাইকে অবাক করে একজন স্বতন্ত্র প্রার্থি কায়েস সাইদ 18.4% ভোটে প্রথম হন। উনি একজন ল প্রফেসর।
২য় হন মিডিয়া ব্যক্তিত্ব নাবিল করোই (সদ্য জেল থেকে বের হওয়া)।
যেহেতু এরা কেউই ৫০% ভোট পান নি। ফ্রান্স, মিশরের মত এই দুজনের ভেতরেই আবার ভোট হবে। অক্টোবরে।
আর পার্লামেন্ট নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে ৬ অক্টোবর। সেই একই দিনে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দ্বিতীয় রাউন্ড (ফাইনাল) ভোটগ্রহণও করা হতে পারে।
তিউনিসিয়ার গণতন্ত্রের জন্য শুভকামনা।
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৯ দুপুর ২:৪৩