মক্কাবাসী মহানবী (সা.) ৬২২ খ্রিস্টাব্দে ইয়াসরিব উপত্যকাতে হিজরত করেন। তাঁর হিজরতের মাধ্যমে ইসলাম আধ্যাত্মিক জগতের পাশাপাশি রাজনীতির জগতেও প্রবেশ করে। পি কে হিট্রি তার 'হিস্ট্রি অব দি আরবস' গ্রন্থে হিজরতকে মোহাম্মদ (সা.)-এর জীবনের মোড় পরিবর্তনকারী ঘটনা বলে অভিহিত করেছেন। অন্যদিকে সৈয়দ আমীর আলী তার 'দ্য স্পিরিট অব ইসলাম' গ্রন্থে এ ঘটনাকে মদিনাবাসীর জন্য নতুন শতাব্দীর সূচনা হয়েছে বলে মন্তব্য করেন। প্রিয় নবী (সা.) মক্কা থেকে মদিনাতে হিজরত করার পর সমকালীন পরিস্থিতিকে বিবেচনা করে আনসার ও মোহাজিরদের মধ্যে একটি চুক্তি লেখেন। এ চুক্তিটিতে তিনি ইহুদিদেরও অন্তর্ভুক্ত করেন। আনসার-মোহাজির-ইহুদিসহ সমগ্র ইয়াসরিবের জনগণের জন্য তিনি যে সনদ প্রদান করেন তা ইতিহাসে মদিনা সনদ নামে পরিচিত। ইসলামের ইতিহাসে ম্যাগনাকার্টা খ্যাত মদিনা সনদকে ঐতিহাসিকরা বিশ্ব (বাকি অংশ ২৭ পৃষ্ঠায়)
(২৮ পৃষ্ঠার পর)
ইতিহাসে সর্বপ্রথম লিখিত সংবিধান বলে স্বীকৃতি প্রদান করেছেন।
ইয়াসরিববাসীর সঙ্গে স্বাক্ষরিত এ সনদের মাধ্যমে ইসলামী রাষ্ট্রের ভিত্তি স্থাপিত হয়। এ সনদই ইসলামের নবী হজরত মোহাম্মদ (সা.)-কে নবপ্রতিষ্ঠিত মদিনা রাষ্ট্রের সর্বময় কর্তৃত্ব প্রদান করে। এ সনদ স্বাক্ষরিত হওয়ার পর ইয়াসরিব উপত্যকার নাম পরিবর্তিত হয়ে মদিনাতুন্নবী বা নবীর শহর নাম ধারণ করে। পরে এ শহরই মদিনা নামেই জগৎময় পরিচিতি লাভ করে।
প্রায় সমসাময়িক ইতিহাসবিদ ইবন হিশাম (রহ.) তার সিরাতুন্নবী (সা.) গ্রন্থে এ সনদের ৫৩টি ধারার বর্ণনা করেছেন। [দ্র. ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ থেকে বাংলা ভাষাতে অনূদিত এ গ্রন্থের দ্বিতীয় খ-ের (ঢাকা : ১৯৯৪) পৃ. ১৬৩-১৭১)]। তবে উইলিয়াম মন্টেগোমারি ওয়াট তার 'মোহাম্মদ অ্যাট মদিনা' গ্রন্থে এ সনদের (পৃ. ২২১-২২৫) ৪৭টি ধারা উল্লেখ করেছেন। যা হোক, এ সনদের মাধ্যমেই মহানবী (সা.) ধর্ম, বর্ণ, জাতি, উপজাতি নির্বিশেষে সকলকে নিয়ে ঐক্যবদ্ধ রাষ্ট্র ব্যবস্থা গড়ে তুলেছিলেন। তিনি যে রাষ্ট্র ব্যবস্থার কা-ারি ছিলেন সেই রাষ্ট্রে সকল মানুষের সমান অধিকার সুনিশ্চিত হয়েছিল। তিনি ছিলেন অসামপ্রদায়িক চেতনার মূর্ত প্রতীক। তিনি সকলের সমন্বয়ে রাষ্ট্র পরিচালনা করতেন। এ সনদে মদিনাবাসী ইহুদি, খ্রিস্টান, মাজুসি, অগি্ন উপাসক অর্থাৎ সনদে স্বাক্ষরিত সকল সম্প্রদায়কে উম্মাভুক্ত বলে ঘোষণা করা হয়। এ সনদের ১নং ধারাতে বলা হয়েছে_ 'তারা সকলে মিলে সকল জাতি থেকে পৃথক একটি উম্মা।' আর উম্মাভুক্ত সকল ধর্ম ও বর্ণের মানুষের মদিনা উপত্যকাতে বসবাসের অধিকার রয়েছে। এ বিষয়টি সনদের ৩৯নং ধারাতে বলা হয়েছে। এ ধারার মাধ্যমে মূলত তিনি মদিনাকে সামপ্রদায়িকতার বিষবাষ্পে বিষাক্ত হওয়া থেকে রক্ষা করেছেন।
বিস্তারিত মূল লেখায় পড়ুন