সময়টা কারো কারো কাছে নির্দয় শীতকাল হলেও আমার জন্য আশীর্বাদের। বিশেষ কোনো কারণ নেই , গরম একেবারেই সইতে পারি না বলে ! তবে যান্ত্রিক শহরে দিনের আলোতে শীতকাল খুব একটা হিম না নামালেও সন্ধ্যার চাঁদ ঠিকই উঁকি দিয়ে যায় নারকেল গাছের পাতার ফাঁকে ফাঁকে।
দিনের নিয়মমাফিক কাজ শেষ করে বাড়ি ফেরার পথে পাশের রেস্তোরাঁ শিস দিয়ে ডাকে। গোধূলির শেষ আলোতে রঙচঙে রেস্তোরাঁ ততক্ষণে রাত্রির নতুন সাজ একে একে গায়ে জড়াতে ব্যস্ত। ক্লান্তি কমাতে সেখানে এক কাপ চা নিয়ে বসলে রাস্তার ধুলো , পাশ দিয়ে হুস করে চলে যাওয়া যাত্রীবাহী বাসের চাকার ঘর্ষণ, শিরশিরে বাতাসের হু হু শব্দ – সব এসে জমা হয় আমার চায়ের কাপে। চায়ের দামও এখন ক্রমশ ঊর্ধ্বমুখী ; আট টাকা প্রতিকাপ ! ছলাৎ ছলাৎ ঘূর্ণন শেষে চায়ের সাথে চিনি মিশে একাকার হলে সেখানে যেন মুহূর্তেই বেজে ওঠে বাঁশীর সুর ! তখন আমার রাত্রিকালীন ব্যক্তিগত ঘর আমায় টানতে থাকে। সাধারণের কাছে এটি মামুলী ঘর হলেও আমার এই ব্যক্তিগত ঘরের পলেস্তরায় গাঁথা আছে অজস্র পরিবর্তনের মোটামুটি অখ্যাত সব সুখী গান, কিছু স্বপ্ন।
আমার চোখের পৃষ্ঠা ভারী হবার আগ মুহূর্ত পর্যন্ত সময়ের ভেলভেটে আমি নকশা আঁকি বাঁশীর দীর্ঘ কিন্তু গভীরতম চুম্বনে। যদিও রোজকার ক্লান্তির মাঝে নিঃশব্দে বসে থাকা সময়কে বদলানো সহজ হয় না আমার জন্য, তবু নিজের মাঝের উদ্দাম বোহেমিয়ান সত্ত্বার টান থাকলেও ব্যক্তিগত ঘরটির মায়াও ছাড়তে পারি না , পায়ে পায়ে ফিরে আসি এখানেই। ঘরময় নিঃসঙ্গ পাখির ওড়াওড়ি দেখলে বেশীরভাগ সময়ই আমার ইচ্ছে হয় নৈঃশব্দ্যের চক্রবালে রাতের আকাশের বুক জুড়ে নক্ষত্রফুল হয়ে থাকি । গ্রহণের চমক থেকে বেরিয়ে মধুরতম ব্যথা হয়ে লটকে থাকতে চাই কারো বুকের গোপন কুঠুরিতে। কিন্তু নির্ভেজাল মায়াময় ছোঁয়া পাওয়াও আজকাল দুষ্প্রাপ্য হয়ে উঠেছে বলে প্রাপ্তি আর বাসনার মাঝে খানিকটা ফাঁক থেকেই যায়।
এসব ভাবতে ভাবতে একটা সময় দু’চোখ ছাপিয়ে আমার ঘুম নামে । কিন্তু পাঁজরে তখনো জেগে রয় নেশার কাঁটা কৌমুদী তৃষ্ণায়।
=====
উৎসর্গ - ৎঁৎঁৎঁ কে। কিছুদিন আগে অপ্রত্যাশিত ভাবে মন্তব্যের জবাবে কবিতা লিখে আমাকে ঋণী করায় তার জন্য এ উৎসর্গ। ঋণী থাকতে ভালো লাগে না ।
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে জুলাই, ২০১৩ সকাল ১১:৫০