আমি অধ্যাপক আর আমার স্ত্রী হাইস্কুলের শিক্ষিকা।
সকাল বেলায় আমার গিন্নির মেজাজ আর চায়ের পানি এক সংগে ফুটতে থাকে।
আজ হঠাৎ গিন্নির আদেশ হলো, তিতলির স্কুল থেকে ডাক এসেছে, তোমাকে যেতে হবে। অংকের দিদিমণি দেখা করতে চেয়েছেন।
অগত্যা যেতেই হলো।
গিয়ে দেখি, বিশাল একটা হলঘরে চশমা আঁটা অংকের দিদিমণি আর অভিভাবকরা বসে আছেন।
দিদি গম্ভীর গলায় ডাকলেন-
অনন্যা পাল!
সেই ডাকে অনন্যার মা উঠে দাঁড়ালেন। চললো অনন্যা কোন কোন অংক পারেনি তার বিশ্লেষণ। তার সংগে পাল্লা দিয়ে চললো, বেচারা অনন্যার মায়ের তীব্র আস্ফালন।
- এতগুলো টাকা খরচ করে মাষ্টার রেখেছি। আজ বাড়ি চল, তোর হাত-পা ভাঙব!
পল্লবীর মা আর বাড়ি পর্যন্ত অপেক্ষা করলেন না। তিনি হলের মধ্যেই পল্লবীর চুলের মুঠি ধরে কয়েকটা চড় মেরে বললেন,
-আজ তোর বাবা বাড়িতে আসুক। দেখবি ফাঁকি মারার কত মজা!
আর টুম্পার বাবা টুম্পা তিনটে অংক ভুল করায় তীক্ষ্ণ কন্ঠে বললেন
-সামনের তিনদিন টুম্পার খাওয়া বন্ধ!!!
এভাবেই কেটে গেল অনেকটা সময়।
অবশেষে ডাক এলো-
তিতলি চ্যাটার্জ্জী! মানে আমার মেয়ে, যার জন্য এখানে আমার আসা।
দিদিমনি বলে চললেন,
-আপনার মেয়ে তো অর্ধেক অংকই পারেনি!
আমি বললাম
-বাকী অর্ধেক অংক তো পেরেছে! আর একটু বড় হলে বাকিটা শিখে নেবে। আপনি টেনশন করবেন না ম্যাডাম!
-আপনি কনফিডেন্ট?
-নিশ্চিত! আসলে কি জানেন ম্যাডাম, আমি আর তিতলির মা, মাধ্যমিকে দুজনে মিলেও অংকে ১০০ তুলতে পারি নি। তবুও আমার অধ্যাপক হওয়া কিম্বা তিতলির মায়ের রাগী দিদিমণি হতে কোন অসুবিধেই হয় নি!
তিতলি খুশী হয়ে বলল,
-বাবা, আজ বিরিয়ানী খাব।
আমি বললাম,
-টুম্পাকেও ডাকিস। ওর বাবা ওকে তিন দিন খেতে দেবে না বলেছে !!!!
বাড়তি চাপ দিয়ে ছেলেমেয়েকে টেনশন দেবেন না। টেনশন নেওয়ার জন্য সারাটা জীবন সামনে পড়ে আছে! ওরা নিজেরা যেদিন বুঝবে ঠিক শুধরে নেবে!
_জনৈক অধ্যাপক
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা মে, ২০২০ রাত ১০:২২