দক্ষিন ভারতীয় সিনেমা যে কোন পর্যায়ে গেছে সেটা এদের সিনেমা গুলো না দেখলে বোঝানো যাবে না। সিনেমার কাহিনি, এডিটিং, কোরিয়গ্রাফ, একশন সব কিছুতেই এদের অসাধারণ দক্ষতার ছাপ। গত সাত আট বছর বাংলা হিন্দি ব্লকবাস্টার সিনেমা গুলো দেখে যেভাবে মনে মনে নেচেছি, এই সিনেমা গুলো দেখতে গিয়ে বুঝলাম, আমি এত দিন আসলে ঠকেছি। কারন, অনেক ব্লকবাস্টার সিনেমা এই সব দক্ষিন ভারতীয় সিনেমার নকল। গত সাত আট বছর কলকাতার প্রায় অর্ধেক ব্লকবাস্টার সিনেমা এই সব দক্ষিন ভারতীয় সিনেমার নকল। অবশ্য নকল বলাটা ঠিক হবে না। কারন, স্বত্ব কিনে নেওয়া ছাড়া হুবহু নকল করা কপিরাইট আইনের ঝামেলায় পড়বে। বলিউডের আমির খানের গজনি, অজয়ের সিংহাম ছাড়াও অনেক সিনেমা এই দক্ষিন ভারতীয় সিনেমার কপি।
দ্যা, ব্রেভ সোলজার সিনেমায় স্টাইলিশ নায়ক আল্লু অর্জুন একজন সৈনিক। তার একটাই লক্ষ্য, সীমান্তে গিয়ে জঙ্গীদের মোকাবেলা করা। সিনেমার ভিলেন সাল্লা(আর শরতকুমার) একজন ভুমিখেকো। একটা নির্দিষ্ট এলাকা দখল করতে গিয়ে বাধা হয়ে দাঁড়ায় এক মুসলিম পরিবার। সেই পরিবারের কর্তা একজন সাবেক সেনা সদস্য। তিনি জমি বিক্রি করবেন না। সিনেমায় যা হয়, প্রভাবশালী সেই ভিলেন শেষ পর্যন্ত বাড়ির কর্তার চরিত্রে কলঙ্ক লেপন করে খুন করে আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দেয়। বাড়ির বড় ছেলে, যার লক্ষ্য ডাক্তার হওয়া, নিষ্ফল আক্রোশে জঙ্গিদের খাতায় নাম লেখায়। এবং এই জঙ্গিকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে নিয়ে আসাই মুলত সিনেমার কাহিনি।
আমরা সচরাচর যে সিনেমা গুলো দেখি, সিনেমাগুলোতে প্রতিটা পরিচালক একটা মেসেজ দেয়ার চেষ্টা করেন। এই সিনেমার মেসেজটা দেশপ্রেম এবং জঙ্গিবাদ। মানুষ যখন তার অতীত ভুলে যায় তখন সে তার চরিত্র বদলে ফেলে। আপনি পাহাড়ের উপর উঠে ফেলে আসা পথকে যদি ভুলে যান তাহলে সে পাহাড়ে ওঠা হবে পণ্ডশ্রম। কারন ফেলে আসা পথে লেখা আছে আপনার কষ্ট গাথা। আপনার চরিত্র, আপনার আচরণ।
আল্লু অর্জুন একজন সৈনিক। তার চরিত্রের সমস্যা হল, সে যখন রেগে যায়, প্রচন্ড ভায়োলেন্স ঘটিয়ে ফেলে এবং স্থান কাল পাত্র মানে না। এই চারিত্রিক সমস্যাটা ঠিক করতে পাঠানো হয় ভারতের সবচেয়ে বড় এক সাইকিয়াট্রিস্ট (অর্জুন সারজা) এর কাছে। ঘটনাক্রমে মানুষটা নায়কের বাবা। দশ বছর পর বাবা-ছেলের দেখা। পরষ্পরকে চেনে তারা। কিন্তু দেখা হয় একজন ডাক্তার ও একজন রোগী হিসেবে। ডাক্তার শর্ত দেয়, একুশ দিন সে কোন রাগ করতে পারবে না। যদি সফল হয় তাহলে সে ডাক্তারের কাছ থেকে একজন স্বাভাবিক মানুষ হিসেবে সার্টিফিকেট নিয়ে বর্ডারে যেতে পারবে।
ডাক্তারের শর্ত মেনে একুশ দিন পর নায়ক দেখে, নিজের চরিত্র সে বদলে ফেলেছে। অন্যায়ের সাথে আপোষ করেছে এবং একজন সাধারণ মানুষের পর্যায়ে নিজেকে নামিয়ে এনেছে। স্বপ্নের পেছনে ছুটতে গিয়ে সে আদর্শ জলাঞ্জলি দিয়েছে।
একটা জীবন দর্শন ফুটিয়ে তোলা হয়েছে সিনেমাটায়। মানুষের চরিত্রের অনেক গুলো বৈশিষ্ট্যের একটা শক্তিশালী বৈশিষ্ট্য হল সততা। আরও একটা হল রাগ। কিন্তু সততা থাকলে এ রাগ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। এই বিষয়টাই উপস্থাপন করা হয়েছে সিনেমায়।
ছোটখাটো কিছু অসঙ্গতি ছাড়া খুব সুন্দর একটা সিনেমা। অসাধারণ কিছু ডায়লগ, একশন এবং দৃশ্যগুলো দেখতে গিয়ে কখনও একঘেয়েমির স্বীকার হবেন না। দশ বছর পর মা ছেলের মিলনের দৃশ্য এবং শেষ দৃশ্যে বাবা ছেলের মিলনের দৃশ্য চোখের পানি আটকাতে কষ্ট হবে। সিনেমার কাহিনির প্রতিটা বাঁক আপনাকে স্ক্রিনের সামনে থেকে উঠতে দেবে না।
বলিউডের সিনেমার প্রতি দর্শকের একটা চাহিদা থাকে। তাই সিনেমা গুলো অনেক হিসেব করে বানানো হয়। ফলে পাঁচটা সিনেমা দেখলেই এক ঘেয়েমি আসে। কিন্তু দক্ষিন ভারতীয়রা এত হিসেব করে বানায় না। তাদের প্রতিটা কাহিনি ব্যতিক্রম। আমি গত ছয়/সাত মাসে প্রায় পঁয়ত্রিশ চল্লিশটা দক্ষিন ভারতীয় সিনেমা দেখেছি। তেমন কোন এক ঘেয়েমি আসেনি। আল্লু অর্জুন, মহেশ বাবু, সুরিয়া শিবকুমার, বিদ্যুৎ জামওয়াল, প্রভাশ এরা আসলে দক্ষিন ভারতীয় সিনেমাগুলোকে অন্য পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছে। এদের সিনেমা মানেই বিশেষ কিছু। এই সিনেমাটাও আমার কাছে বিশেষ কিছু মনে হয়েছে।
সিনেমাটা ডাউনলোড করতে চাইলে এখান থেকে চেষ্টা করে দেখতে পারেন। অবশ্যই সার্ভারের নিচের লাল লিংকগুলোতে ক্লিক করবেন।
(কোন মুভি সম্পর্কে এটাই আমার প্রথম রিভিউ।)
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে অক্টোবর, ২০১৮ রাত ৯:৩৮