গত ১৫ বছর যাবৎ অনেকেই রাজনৈতিক নেতা ও সচিবদের লেজ ধরে সরকারের কাছ থেকে নানা সুবিধা নিয়েছে। যেমন- নানারকম পুরস্কার নিয়েছে, মন্ত্রণালয়ের নানা প্রকল্পের কাজ বাগিয়েছে, সিনেমার অনুদান নিয়েছে, তথ্যচিত্রের কাজ পেয়েছে ইত্যাদি। এসবই পেয়েছে ব্যক্তিগত সম্পর্ক তৈরির মাধ্যমে। ব্যক্তিগত সম্পর্ক তৈরি ব্যতিত এসব পাওয়া যায় না। এই সুবিধাভোগীরা এখন শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের গতিপথ দেখে ভোল পাল্টে রাজপথে নেমে পড়েছে।
আচ্ছা, সরকার কি হঠাৎ করে গত বিশ দিনে ভয়ানক স্বৈরশাসক হয়ে উঠেছে? মোটেও না।
২০১৪ সালের নির্বাচনের পর থেকেই আওয়ামী লীগ বদলে যেতে শুরু করে। আওয়ামী লীগ হয়ে ওঠে মৌলবাদের পৃষ্ঠপোষক। একের পর এক ব্লগার হত্যা করে ইসলামী জঙ্গিরা, সরকার ব্লগারদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়, উল্টো ব্লগারদের কটাক্ষ করে। অনেক ব্লগার দেশ ছাড়ে, অনেকে আত্মগোপনে চলে যায়। সরকার ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন (পরবর্তীতে সাইবার নিরাপত্তা আইন) করে ব্লগার ও অনলাইন অ্যাক্টিভিস্টদের গ্রেফতার করতে থাকে। হেফাজতে ইসলামের সাথে আপোস করে, তাদেরকে জমি দিয়ে ঠান্ডা করে সরকার। পাঠ্যবই থেকে হিন্দু এবং মুক্তচিন্তার লেখকদের লেখা বাদ দেয় হেফাজতের দাবী মেনে। সারাদেশে ৫৬০ টি মডেল মসজি তৈরি করে বিভিন্ন ধর্মের সাধারণ মানুষের টাকায়। ব্যাঙের ছাতার মতো মাদ্রাসা গজিয়ে উঠতে দেয় এবং কওমীদের মাস্টার্সের সমমানের সনদ দিয়ে শিক্ষা ব্যবস্থার ব্যাপক ক্ষতি করে। সুস্থ সংস্কৃতির বিকাশ ঘটাতে ব্যর্থ হয় সরকার, বরং সংকুচিত হতে থাকে স্থানীয় রাজনীতিক ও প্রশাসনের সহযাগিতার অভাবে। দেশের বিভিন্ন এলাকা ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র তালেবান শাসিত অঞ্চলে পরিণত হয়েছে, যেখানে কোনো সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড করতে দেওয়া হয় না।
এছাড়াও লক্ষ লক্ষ কোটি টাকা পাচার হয়েছে, দুর্নীতি হয়েছে নানা স্তরে, সিন্ডিকেট করে ব্যবসায়ীরা দ্রব্যমূল্যের দাম বাড়িয়েছে। সরকার কোনো কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে পারেনি। এছাড়া ছিল রাজনীতিক এবং পুলিশের দৌরাত্ম্য। সরকার সুশাসন প্রতিষ্ঠায় বার বার ব্যর্থ হয়েছে।
এত কিছু ঘটেছে, এর ভেতরই সুবিধাভোগীরা নানা সুবিধা নিয়েছে। সরকারের ভুল না ধরিয়ে, তৈলমর্দন করে সরকারকে আরও বে-পরোয়া করে তুলেছে। অনেক আওয়ামী বুদ্ধিজীবীকে বলতে শুনেছি, ‘সরকার এখন আমাদের কথাও শোনে না।’
এইসব সুবিধাভোগীরা শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের উত্তপ্ত তাওয়ায় এখন রুটি সেঁকতে শুরু করেছে, ফেসবুকে মহামানবের মতো বাণী দিচ্ছে। এছাড়াও বামাতী, জামায়াতী, জঙ্গি, জিহাদী কবি-লেখককেরও আন্দোলনের উত্তপ্ত তাওয়ায় এখন রুটি সেঁকে নিচ্ছে। জামায়াতী-জঙ্গি ও জিহাদী কবি-লেখকরা চাইছে ইসলামী শাসন।
যদি এই সরকারের পতন হয়, পরবর্তীতে যে সরকার-ই আসুক, সেই সরকারকেও তৈলমর্দন করে মাখন খাবে এই সুবিধাভোগীরা। সরকারকে করবে বিপথগামী। যেমন বর্তমান সরকারের ঘি, মধু, মাখন এমনকি সরকারের ছাল-বাঁকল-মাংস খেয়ে, এখন শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের উত্তপ্ত তাওয়ায় রুটি সেঁকছে সুবিধাভোগীরা।
ঢাকা।
৩ আগস্ট, ২০২৪
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা আগস্ট, ২০২৪ রাত ১১:২৩