somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আওয়ামী লীগও মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ ও সংস্কৃতিবিমুখ মৌলবাদী সমাজ নির্মাণের কারিগর

১৬ ই জুলাই, ২০২৪ বিকাল ৩:২১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

যাচ্ছিলাম আমের আড়তে। প্রধান সড়কের কাছে যেতেই দেখি রাস্তা বন্ধ, চৌরাস্তায় অবস্থান নিয়েছে কোটাবিরোধী আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। রিক্সা ছেড়ে দিয়ে ভাবলাম রাস্তার ওপাড়ে গিয়ে আবার রিক্সা নেব। রাস্তা পার হচ্ছি, বামদিক থেকে স্লোগান উঠল, ‘তুমি কে আমি কে/ রাজাকার রাজাকার।’

কয়েকবার স্লোগান দেবার পর একজন শিক্ষার্থী দৌড়ে এসে স্লোগানরত শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলল, ‘এই স্লোগান দিও না।’

স্লোগান থামল। আমি মুখগুলো পড়ার চেষ্টা করলাম।

টানা পনের বছর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায়। নেতাকর্মীরা নানাভাবে মুক্তিযুদ্ধ বিকিয়ে আখের গোছাতে ব্যস্ত। স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর পূর্তি আর বঙ্গবন্ধুর জন্ম শতবর্ষ উপলক্ষে হাজার কোটি টাকার বিকিকিনি করেছে নেতাকর্মী ও কিছু সাংবাদিক। বিজয় দিবস, স্বাধীনতা দিবসে চাঁদাবাজি করে নেতারা। অথচ আসল কাজটি করতেই ব্যর্থ হয়েছে। নতুন প্রজন্মের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ ছড়িয়ে দিতে পারেনি। হাজার হাজার ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা তালিকাভুক্ত করেছে। বিএনপির মতোই আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীারাও মুক্তিযোদ্ধাদের ভূমি দখল করেছে। মুক্তিযোদ্ধাদের গায়ে হাত তুলেছে। আওয়ামী লীগের অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের এখন চেনা যায় না! ২০০১-২০০৬ সালে ছাত্রদল নেতাকর্মীদের যেমন উশৃঙ্খল ও মারমুখী দেখেছি, এখনকার ছাত্রলীগও তেমন। সামন্ত জমিদারের লাঠিয়াল বাহিনীর মতো এদের কর্মকাণ্ড!

দায় মুক্তিযোদ্ধাদেরও আছে। কাদের সিদ্দিকীর মতো শত শত মুক্তিযোদ্ধা বিপথগামী হয়েছে, দুর্নীতি করেছে। মানুষের মনে বিতৃষ্ণার জন্ম দিয়েছে। এদের দৌরাত্মে সৎ মুক্তিযোদ্ধারা হালে জল পায়নি। ব্যক্তিস্বার্থের কারণে মুক্তিযোদ্ধারা সম্মিলিত শক্তি হয়ে থাকতে পারেনি। বিপুল সংখ্যক মানুষের কাছে মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধ এখন হাসির বস্তু। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা নিজেদের রাজাকার বলছে! স্বাধীনতাবিরোধীরা এই দিনটির জন্য এতদিন অপেক্ষা করছিল। এই দিনটি দেখার জন্য স্বাধীনতাবিরোধীরা অনেক লড়াই করেছে। ওরা আজ সফল।

মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ ও সংস্কৃতিবান্ধব রাষ্ট্র গঠনের চেষ্টা না করে আওয়ামী লীগ হেফাজতে ইসলামের সাথে আপোস করেছে। মুসলমানদের খুশি করতে ৫৬০ টি মডেল মসজিদ করেছে। এসবই এখন বুমেরাং হয়ে আওয়ামী লীগের দিকেই ফিরে আসতে শুরু করেছে। আওয়ামী লীগের এই সহজ হিসাবটি বোঝা উচিত ছিল যে- তারা বিপুল সংখ্যক মানুষের অনিচ্ছা সত্ত্বেও পাকিস্তানের সাথে লড়াই করেছে, স্বাধীনতাযুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়েছে। দেশের সব মানুষ রাজাকার-আলবদর হয়নি। রাজাকার-আলবদর না হওয়া মানুষের বিরাট অংশ পাকিস্তানের সাথেই থাকতে চেয়েছিল। ফলে ‘ইসলামী রাজনীতি’তে আওয়ামী লীগ কখনোই বিএনপি-জামায়াত-হেফাজতের সাথে পারবে না। কারণ, তাদের গায়ে পাকিস্তান ভাঙার গন্ধ লেগে আছে। আওয়ামী লীগের হাঁটা দরকার ভিন্ন পথে। মুক্তিযুদ্ধের আদর্শে সংস্কৃতিবান্ধব সমাজ ও রাষ্ট্র নির্মাণের পথে। কিন্তু আওয়ামী লীগ সেই পথে না হেঁটে ‘ইসলামী রাজনীতি’র দিকে হেঁটেছে। আওয়ামী নেতৃত্ব কি জানে যে হাটে-মাটে-ঘাটে সর্বত্র মোল্লা ও ওয়াজকারীরা তাদের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষদের ক্ষেপিয়ে তোলে? কে জানে! আওয়ামী লীগের আমলেই মানুষ সবচেয়ে বেশি সংস্কৃতি থেকে বিচ্ছিন্ন হয়েছে। সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড সংকুচিত হয়েছে। গ্রামাঞ্চলে সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড করতে গেলে প্রশাসন অনুমতি দিতে চায় না, আওয়ামী লীগের তৃণমূলের নেতাকর্মীরাও বাধা দেয়। যদিবা অনুমতি দেয় তো চাঁদা চায়। যাত্রা, পুতুলনাচ, পালাগান, সার্কাস করতে গেলে হয়রানি হতে হয়। অথচ রাতভর ওয়াজ চলে বিনা বাধায়। তৃণমূলের সংস্কৃতিকর্মীরা আক্রমণের শিকার হয়। বাউলরা প্রহৃত হন। আওয়ামী লীগ সরকার দেখেও দ্যাখে না। ফলে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে মানিকগঞ্জের গোবিন্দল গ্রামের মতো ইসলামী গ্রাম গড়ে উঠেছে- যেখানকার প্রায় সব ছেলেমেয়ে মাদ্রাসায় পড়ে, কোনো সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড করতে দেওয়া হয় না। আওয়ামী লীগকে বুঝতে হবে যে- এই দেশে সংস্কৃতি না টিকলে, আওয়ামী লীগও টিকবে না। কারণ তারা মুসলমানের ‘পেয়ারের পাকিস্তান’ ভেঙেছে!

এই দেশে সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড সংকুচিত হয়ে, মোল্লাতন্ত্রের যত বিস্তার ঘটেছে, আওয়ামী লীগের ভোট তত কমেছে। দিন দিন আরও কমবে। নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে আওয়ামী লীগ দীর্ঘদিনের জন্য ক্ষমতার বাইরে চলে যাবে।

মুক্তিযুদ্ধের আদর্শে সংস্কৃতিবান্ধব সমাজ ও রাষ্ট্র গড়তে না পারার ফলেই আজকের বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের মুখে শুনতে হচ্ছে এই স্লোগান- ‘তুমি কে আমি কে/ রাজাকার রাজাকার।’

ঢাকা।
১৬ জুলাই, ২০২৪
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই জুলাই, ২০২৪ বিকাল ৩:২১
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পাগলের প্রলাপ' যখন সত্যি হয়......

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ সকাল ১০:১৯

'পাগলের প্রলাপ' যখন সত্যি হয়......
[/সব

আমার এক মামা ততকালীন পূর্ব পাকিস্তানে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে জব করতেন হোটেলের শুরু থেকেই। সেই মামা মাঝেমধ্যে আমাদের জন্য হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল থেকে মুখরোচক কেক, পেস্ট্রি ছাড়াও বিভিন্ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তার চাওয়া পাওয়ার কিছু ছিল না, তবুও

লিখেছেন খাঁজা বাবা, ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১:৩২



শেখ হাসিনার নাকি বায়ক্তিগত চাওয়া পাওয়ার কিছু ছিল না। শেখ মুজিবের বেয়ে নাকি দুর্নীতি করতে পারে না। সে এবং তার পরিবার যে হাজার হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি করতে পারে... ...বাকিটুকু পড়ুন

দেশের বর্তমান পরিস্থিতি সংক্রান্ত বিষয়ে সামু কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি

লিখেছেন সাড়ে চুয়াত্তর, ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৩:৪৬

ছাত্র-জনতার সম্মিলিত অভ্যুত্থানের মাধ্যমে গত ৫ আগস্ট, ২০২৪ তারিখে ফ্যাসিস্ট হাসিনা এবং তার দলের পতন ঘটানো হয়। এটা আমাদের একটা জাতীয় গৌরবের দিন। এটা নিয়ে কারও সন্দেও থাকলে মন্তব্যে লিখতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জ্বীনভুতে বিশ্বাসী বাংগালী ও ঢাকায় ৫০ হাজার ভারতীয় একাউন্টটেন্ট

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৩




ব্লগার সাড়ে চুয়াত্তর ব্লগে লিখেছিলেন যে, উনার ভগ্নিপতিকে জ্বীনেরা তুলে নিয়ে গিয়েছিলো; ২ সপ্তাহ পরে ভগ্নিপতিকে দিয়ে গিয়েছে; এই লোক, সামুর কাছে আমার বিরুদ্ধে ও অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

বেছুর নিজস্ব একটি জ্বীন ছিলো!

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ রাত ৮:২৪



আমাদের গ্রামের খুবই সুশ্রী ১টি কিশোরী মেয়েকে জংগলের মাঝে একা পেয়ে, প্রতিবেশী একটা ছেলে জড়ায়ে ধরেছিলো; মেয়েটি ঘটনাকে সঠিকভাবে সামলায়ে, নিজের মাঝে রেখে দিয়েছিলো, এটি সেই কাহিনী।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×