somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

২০১৩ সালে শিল্পকলায় বিতর্কিত নিয়োগ

১০ ই জুলাই, ২০২৪ বিকাল ৪:০৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :







২০১২ সালে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির কালচারাল অফিসার পদের লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছিলাম। শিল্পকলার একজন চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী আমাকে বলেছিল, ‘ভাই, টাকা না দিলে চাকরি হবে না। ৮ লাখ দিলে নিশ্চিত চাকরি হবে।’

আমি ৮ লাখ টাকা দিইনি। ভাইভায় সব প্রশ্নের উত্তরই দিয়েছি। আরণ্যকের মতো প্রথম সারির নাট্যদলে রাঢ়াঙ, সংক্রান্তি, কবর, এবং বিদ্যাসাগর নাটকে অভিনয় করেছি। ভাইভার কিছুদিন আগেই দল থেকে আমার লেখা নাটক মঞ্চস্থ হয়েছে- ‘পুতুলকথন।’ আবৃত্তি সংগঠনে কাজ করেছি। লেখিলেখি তো ছিলই। না, আমার চাকরি হয়নি।

কালচারাল অফিসার পদে নিয়োগ হয় ২০১৩ সালে, শিল্পকলার মহাপরিচালকের নাটকের দলের একাধিক নাট্যকর্মীর চাকরি হয়। একজনের নাম এখনও বলতে পারি- চাকলাদার মোস্তফা আল মাসউদ, শিল্পকলার ওয়েবসাইটে গেলেই দেখতে পাবেন। ২০১৩ সালের শিল্পকলার সব নিয়োগ বিতর্কিত। হ্যাঁ, ২০১৩ সালের শিল্পকলার প্রায় সব নিয়োগ অবৈধ। প্রতিটি পদের জন্য ৮-১০ লাখ টাকা নেওয়া হয়েছে। অনুসন্ধানী সাংবাদিকেরা একটু খোঁজ নিলেই জানতে পারবেন যে শিল্পকলার মহামহিম কাদেরকে নিয়োগ দিয়েছিলেন, তারা কতটা যোগ্য কালচারাল অফিসার পদের জন্য।









একটা ঘটনা বলি- একবার জাতীয় নাট্য উৎসবের আর্থিক বিষয় দেখাশোনার দায়িত্ব পড়ে আমাদের আরণ্যকের এক বড় ভাইয়ের। নাট্য উৎসবের পরে ছোটখাটো কোনো একটা অনুষ্ঠান হয়েছিল। সেই অনুষ্ঠানে খরচ হয়েছিল পঁচিশ হাজার টাকা। মহাপরিচালক বড়ভাইকে বলেন সেটা বাড়িয়ে তিন লাখ করার জন্য। বড় ভাই পড়লেন মহা ফাঁপড়ে! পঁচিশ হাজার থেকে বাড়িয়ে না হয় পঞ্চাশ হাজার করা যায়, না হয় আরেকটু বাড়িয়ে পঁচাত্তর করা যায়! তাই বলে তিন লাখ! বড়ভাই ভালো অভিনেতা, কিন্তু এই ধরনের ক্রিয়েটিভিটি তো তার নেই। বড়ভাই মহাপরিচালকের পিছনে ঘোরেন আর বলেন- ‘ভাই কেমনে কী করবো?’

শেষে একদিন মহাপরিচালক বড় ভাইয়ের কাছ থেকে কাগজ-কলম নিয়ে কয়েক মিনিটের মধ্যে তিনলাখ ব্যয় দেখিয়ে দিলেন! কী সাংঘাতিক ক্রিয়েটিভ মহাপরিচালক আমরা পেয়েছি!

এই মহাপরিচালক এহেন অপকর্ম নেই যা করেছেন, তার বিরুদ্ধে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ হয়েছে। আর্থিক দুর্নীতির কারণে তার নাটকের দলও ভেঙে যায়। বাংলা ট্রিবিউন ধারাবাহিকভাবে তার দুর্নীতির খবর প্রকাশ করেছে। সেই খবরের সূত্র ধরে আমাদের টেলিভিশন প্রোগ্রামে আলোচনাও হয়েছে। এই প্রোগ্রামে অংশ নেবার জন্য আমি তখনকার সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির একজন সদস্যকে ফোন করেছিলাম। তিনি সব শুনে আমাকে বলেছিলেন, ‘আমারে মাফ করো ভাই, এই বিষয়ে আমার কথা বলা উচিত হবে না। উনি আমাদের ছাত্রলীগের বড় ভাই। বোঝো তো ব্যাপারটা।’
কী দারুণ, না? ছাত্রলীগ করলেই দুর্নীতি করে পার পাওয়া যায়!

আমি ঢাকার মঞ্চের বেশ কয়েকজন নাট্যব্যক্তিত্বকে ফোন করেছিলাম মহাপরিচালকের বিরুদ্ধে ওঠা দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে কথা বলার জন্য, নানা অজুহাত দেখিয়ে তারা কথা বলতে রাজি হননি। শিল্পী, কবি-লেখকদের মৌনতার জমিনেই বেড়ে ওঠে দুবৃত্ত!

শেষে স্বয়ং মহাপরিচালক আমাদের প্রোগ্রামে অংশ নিয়েছিলেন। আলোচনার জন্য আরও যুক্ত করেছিলাম আমাদের আরণ্যকের একসময়ের কর্মী দীপক সুমনদাকে। সুমনদা আমাদের দল থেকে বের হয়ে পরে তীরন্দাজ নামে একটি নাটকের দল গড়েন। তীরন্দাজের নাটকের আগে বাহাসের আয়োজন করেছিলেন মিলনায়তনে। বাহাসে বিষয়বস্তু সরকারের বিরুদ্ধে যায় দেখে সেই বাহাস করতে দেননি মহাপরিচালক। মহাপরিচালকের বক্তব্য ছিল- মিলনায়তন শুধু নাটক মঞ্চস্থ করার জায়গা, বাহাস বা আলোচনার জায়গা নয়।

ডাঁহা মিথ্যা কথা। আমরা প্রতি বছর মে দিবসে রাঢ়াঙ নাটকের আগে এক্সপেরিমেন্টাল হলে আলোচনার আয়োজন করেছি। বাহাসের ঘটনার পর থেকে মহাপরিচালক দীর্ঘদিন যাবৎ তীরন্দাজকে শিল্পকলায় নাটক করতে দেন না, শিল্পকলাকে তিনি বাপের জমিদারি বানিয়েছেন।

যাইহোক, টেলিভিশন প্রোগ্রামের আলোচনা একটু এগোতে না এগোতেই মহাপরিচালক সুমনদার বিরুদ্ধে মিথ্যার আশ্রয় নেন। সুমনদা নাকি প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে বাজে কথা বলেছেন, প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে পোস্টার সেঁটেছেন। ব্যাপারটা খারাপের দিকে যাচ্ছে এবং সুমনদা অহেতুক বিতের্কের মধ্যে পড়তে পারেন ভেবে আমরা আলোচনায় দ্রুত ইতি টানি।

আমি নিজে সাক্ষী বাহাসের ঘটনায় সুমনদা কখনোই প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে কথা বলেননি, প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে কোনো পোস্টার সাঁটাননি। তাদের বক্তব্য ছিল সরকারের কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে, ব্যক্তি প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে নয়। দুর্নীতিবাজ মহাপরিচালক নিজে বাঁচার জন্য প্রধানমন্ত্রীকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করেছেন।

মহাপরিচালকের দুর্নীতি নিয়ে এত সংবাদ প্রকাশের পরও তার কিছুই হয়নি, দীর্ঘ বছর ধরে তিনি পদে আছেন! তিনি এতটাই মহাশক্তিশালী মহামহিম মহাপরিচালক!


সর্বশেষ এডিট : ১০ ই জুলাই, ২০২৪ বিকাল ৪:১৯
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পাগলের প্রলাপ' যখন সত্যি হয়......

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ সকাল ১০:১৯

'পাগলের প্রলাপ' যখন সত্যি হয়......
[/সব

আমার এক মামা ততকালীন পূর্ব পাকিস্তানে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে জব করতেন হোটেলের শুরু থেকেই। সেই মামা মাঝেমধ্যে আমাদের জন্য হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল থেকে মুখরোচক কেক, পেস্ট্রি ছাড়াও বিভিন্ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তার চাওয়া পাওয়ার কিছু ছিল না, তবুও

লিখেছেন খাঁজা বাবা, ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১:৩২



শেখ হাসিনার নাকি বায়ক্তিগত চাওয়া পাওয়ার কিছু ছিল না। শেখ মুজিবের বেয়ে নাকি দুর্নীতি করতে পারে না। সে এবং তার পরিবার যে হাজার হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি করতে পারে... ...বাকিটুকু পড়ুন

দেশের বর্তমান পরিস্থিতি সংক্রান্ত বিষয়ে সামু কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি

লিখেছেন সাড়ে চুয়াত্তর, ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৩:৪৬

ছাত্র-জনতার সম্মিলিত অভ্যুত্থানের মাধ্যমে গত ৫ আগস্ট, ২০২৪ তারিখে ফ্যাসিস্ট হাসিনা এবং তার দলের পতন ঘটানো হয়। এটা আমাদের একটা জাতীয় গৌরবের দিন। এটা নিয়ে কারও সন্দেও থাকলে মন্তব্যে লিখতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জ্বীনভুতে বিশ্বাসী বাংগালী ও ঢাকায় ৫০ হাজার ভারতীয় একাউন্টটেন্ট

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৩




ব্লগার সাড়ে চুয়াত্তর ব্লগে লিখেছিলেন যে, উনার ভগ্নিপতিকে জ্বীনেরা তুলে নিয়ে গিয়েছিলো; ২ সপ্তাহ পরে ভগ্নিপতিকে দিয়ে গিয়েছে; এই লোক, সামুর কাছে আমার বিরুদ্ধে ও অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

বেছুর নিজস্ব একটি জ্বীন ছিলো!

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ রাত ৮:২৪



আমাদের গ্রামের খুবই সুশ্রী ১টি কিশোরী মেয়েকে জংগলের মাঝে একা পেয়ে, প্রতিবেশী একটা ছেলে জড়ায়ে ধরেছিলো; মেয়েটি ঘটনাকে সঠিকভাবে সামলায়ে, নিজের মাঝে রেখে দিয়েছিলো, এটি সেই কাহিনী।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×