
"পুলিশি জনতা জনতাই পুলিশ"
দুর্নীতিমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠায় এ স্লোগানকে সামনে নিয়ে কাজ করছে কমিউনিটি পুলিশিং ইউনিট। বর্তমান সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এডভোকেট সাহারা খাতুন, এলজিআরডি প্রতিমন্ত্রি এডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক, সংসদ সদস্য আসাদুজ্জামান খান ও স্বরাষ্ট্র সচিব আবদুস সোবহান সিকদার এবং পুলিশ বিভাগের অন্যান্য উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে দেশের প্রতিটি জেলা, থানা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে পুলিশের পাশাপাশি কমিউনিটি পুলিশিং ব্যবস্থা চালুর কার্যক্রম উদ্বোধন শেষে ঢাকার শেরে বাংলা নগর ন্যাম ভবনের সামনে এক বিশাল পদযাত্রা শুরু করেন। পরতর্তিতে দেশব্যাপী প্রতিটি জেলায় জেলা পুলিশ সুপারদের নেতৃত্বে সকল পেশার বিশিষ্টজনদের নিয়ে এক কার্যক্রম শুরু হয়। এতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এডভোকেট সাহারা খাতুন দেশের জনগণকে আইনী জটিলতা থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য পুলিশের পাশাপাশি সেবা ও সহায়তা দানের জন্য একটি সুনির্দিষ্ট নীতিমালা প্রয়োগ করে এই কমিউনিটি পুলিশিং ব্যবস্থা চালুর প্রক্রিয়া শুরু করেন। উন্নত দেশগুলোতে এই ধরনের সেবামূলক কার্যক্রম চালু থাকলেও বাংলাদেশে এবারই প্রথম সরকার এ ব্যাপারে জোর উদ্যোগ গ্রহন করেছেন। এটা দেশের সাধারণ মানুষের শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য একটি মহৎ উদ্যোগ। অবশ্য এ ক্ষেত্রে সরকারের সাবেক এক উর্দ্ধতন কর্মকর্তার নাম উল্লেখ না করলেই নয়; গত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে তিনি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। তিনি প্রথম বাংলাদেশে এর প্রয়োজনীয়তা বোধ করেছিলেন। সাবেক এই দূরদর্শী সচিব মোঃ আব্দুল করিম। তার দূরদর্শী চিন্তাভাবনার সর্বপ্রথম উদ্ভব ঘটান গত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে তার নিজ জেলা চট্টগ্রামে। উন্নত দেশগুলোতে “পুলিশ জনগণের বন্ধু আবার জনগণও পুলিশের বন্ধু” এই উক্তির সত্যতা শতভাগ থাকলেও আমাদের দেশে এর বিশ্বস্থতা কেন নেই! বিষয়টির উপর গুরুত্ব দিয়েই তিনি ওই এলাকার বিশিষ্ট সামাজিক ব্যক্তিত্ব ও বিবিধ পেশার লোকজনদের নিয়ে আজকের এই কমিউনিটি পুলিশিং ব্যবস্থার উদ্ভব ঘটিয়েছিলেন। দূরদর্শী চিন্তা চেতনায় সমৃদ্ধ এ ধরনের মেধাবী ব্যক্তিত্বরা কখনো হারিয়ে যান না, জানা যায় তিনি এখন বর্তমান সরকারের আমলেও একটি বিশেষ দায়িত্বে নিয়োজিত রয়েছেন।
যাহোক; বর্তমানে দেশের প্রতিটি জেলায় পুলিশ সুপারদের নেতৃত্বে থানা পর্যায়ে কমিউনিটি পুলিশিং কার্যক্রম চালু হয়েছে। এতে নিয়মানুযায়ী থানা কমিউনিটি পুলিশিং ইউনিট গঠন করতে হলে সংশ্লিষ্ট থানা অফিসার ইনচার্জকে সভাপতি করে এলাকার বিশিষ্ট গন্যমান্য ব্যক্তিদের সমন্বয়ে মোট ১৩ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করতে হয়। যাতে কমিটির চেয়ারম্যান নিযুক্ত থাকেন থানার অফিসার ইনচার্জ নিজে এবং অন্যান্য সদস্যের মধ্যে একজন নিযুক্ত হন কমিটির সেক্রেটারী ও অন্যান্য ১১ জন সদস্য নিযুক্ত হন সমাজের বিভিন্ন ক্যাটাগরী থেকে। এই কমিটির কাজ হলো, এলাকার স্থানীয় কোন ব্যক্তি, পরিবার বা সামাজিক কোন সমস্যা বা জটিলতার সৃষ্টি হলে তা আলোচনা-পর্যালোচনার মাধ্যমে সমাধান করা এবং সমাধান শেষে তা কমিটির চেয়ারম্যানকে অবহিত করা।
তাছাড়া স্থানীয় কোন জটিলতায় কোন ব্যক্তি বা পরিবার এই কমিটির বাইরে বা কমিটির অজানায় সরাসরি থানায় গিয়ে যদি অভিযোগ বা মামলা করার উদ্যোগ নেন তা হলে থানা কর্তৃপক্ষ সংশ্লিষ্ট এলাকার কমিউনিটি পুলিশিং ইউনিটের মতামত জানতে চান, ফলে এলাকার অনেক সমস্যাগুলোই মামলায় নথিভুক্ত হওয়ার পূর্বেই সমাধান হয়ে যায়। এটা একদিকে যেমন থানায় মামলার সংখ্যা কমে যায় অন্যদিকে মানুষ আইনী জটিলতা থেকেও রেহাই পায়। তাছাড়া স্থানীয়ভাবে পুলিশ ও জনগণের মধ্যে দূরত্ব কমে গিয়ে এক পরিবারের ন্যায় একটি আন্তরিকতার সৃষ্টি হয়। তবে এক্ষেত্রে কমিউনিটি পুলিশিং ইউনিটের সদস্যরাই যদি দূর্নীতিতে জড়িয়ে যায় তাহলে শাস্তি ও নিরাপত্তার চেয়ে অশান্তিই হতে পারে বেশী। তাই ইউনিটকে বা ইউনিটের সদস্যদেরকে সরকারের দেয়া নীতিমালা অবশ্যই পালন করে যেতে হবে। এই কমিউনিটি পুলিশিং ইউনিট গঠন হওয়াতে দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতির সাথে সাথে কিছুটা হলেও দেশের বেকারত্ব রোধ হচ্ছে। ব্যপারটি এমন যে, কমিউনিটি পুলিশিং ইউনিটে যারা দায়িত্ব পালন করবে তারা আনছারদের অনুরূপ স্থানীয় মহতি ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান থেকে স্ব-ইচ্ছায় বৈধ চাঁদাদানের মাধ্যমে যে আর্থিক একটি ফান্ড তৈরী হয় মূলতঃ তা থেকেই তারা নির্ধারিত একটি সম্মানীভাতা পেয়ে থাকবে। এটা অনেকেই প্রশ্নও করে থাকেন, পুলিশ তো সরকারী লোক তারা সরকার থেকে বেতন-ভাতাদি ভোগ করেন কিন্তু কমিউনিটি পুলিশিং ইউনিটের সদস্যরা কিভাবে চলবে? এটা পরিস্কার করার লক্ষ্যেই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হলো। এতে আরও উল্লেখ করা যেতে পারে, স্থানীয়ভাবে ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান কেন তাদের সম্মানীভাতা প্রদানের জন্য চাঁদা দিবেন।
মানুষ শান্তির প্রতিক, জনগন সব সময়ই চায় তারা চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই ও সন্ত্রাসী থেকে রেহাই পাক। আর স্থানীয়দের এ ধরনের ঝামেলা থেকে মুক্ত রখতেই কমিউনিটি পুলিশিং ব্যবস্থার উদ্ভব হয়েছে। এর সুফল দেশব্যপী জনগন এখন পাচ্ছেন এবং সর্বজন প্রশংসনীয়। মাগুরা জেলার শ্রীপুর থানার অফিসার ইনচার্জ কাজী আব্দুল সালেক তার সাথে আলোচনা কালে জানা যায় যে, কমিউনিটি পুলিশিং ব্যবস্থা চালু হওয়াতে থানা কর্মকর্তাগণ এখন অনেক সঠিক ও সহজভাবে কাজ করতে সক্ষম হচ্ছে। থানার কমিউনিটি পুলিশিং ইউনিটের সদস্যরা প্রতি শুক্রবার থানায় এসে এলাকার সার্বিক বিষয় সম্পর্কে তথ্য ও হাজিরা দিয়ে অবহিত করে যান। এছাড়াও প্রতিমাসে একবার অফিসার ইনচার্জ সংশ্লিষ্ট থানা এলাকায় সাংবাদিকদের উপস্থিতিতে কমিউনিটি পুলিশিং ইউনিটের সদস্যসহ অন্যান্য সামাজিক বিশিষ্ট ব্যক্তিদের নিয়ে এক মতবিনিময় সভারও আয়োজন করে থাকেন। এতে থানা এলাকার সর্বস্তরের জনগন থানা পুলিশের সাথে যেন এক পরিবারের ন্যায় এক মিলনমেলায় পরিণত হয়।
তবে এই সুফলকে কেন্দ্র করে কোথাও কোথাও কেউ কেউ এর অপব্যবহারও করছে বলে জানা যায়। এক অনুসন্ধানে প্রকাশ পায় যে, দেশের পশ্চিম ও দক্ষিন অঞ্চলের একমাত্র পাটুরিয়া ও দৌলতদিয়া ফেরি ঘাটের চিত্র অন্যরকম। কিছুদিন আগে নৌপরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান ঘাট পরিদর্শনে গেলে ঘাটের চরম যানজট অবস্থা দেখে সংসদ সদস্য রাজবাড়ী, কাজী কেরামত আলীকে ঘাট কমিউনিটি পুলিশিং ইউনিটের কার্যক্রম চালুর উদ্যোগ নেয়ার কথা বলেন।
সংসদ সদস্য কাজী কেরামত আলী দৌলতদিয়া ঘাটের ইউপি সদস্য নূরুল ইসলাম মন্ডলকে কমিউনিটি পুলিশিং ইউনিটের ব্যবস্থা গ্রহনের অনুমতি দিলে সে নিজেই কমিউনিটি পুলিশিং নীতিমালা উপেক্ষা করে থানা কর্তৃপক্ষের অজান্তে লালমিয়াকে কমান্ডার করে ৩৮ জন সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি করে এলাকা থেকে প্রতিদিন হাজার হাজার টাকা কমিউনিটি পুলিশিং এর নামে চাঁদা তুলে নিজেরাই আত্নসাৎ করে চলেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এ বিষয়ে রাজবাড়ী জেলার সহকারী পুলিশ সুপারে আব্দুল মান্নান এর সাথে আলাপ করলে তিনি জানান, দৌলতদিয়া ঘাটে বর্তমানে কমিউনিটি পুলিশিং এর কোন ব্যবস্থা নেই, তবে শুনেছি সেখানে কিছু পাহাড়াদাররা মিলে অবৈধভাবে কমিউনিটি পুলিশিং এর কার্যক্রম চালাচ্ছে এবং তাদের বিরুদ্ধে কিছু চাঁদাবাজীর অভিযোগও রয়েছে। এই সব কিছুই আমাদের কমিউনিটি পুলিশিং এর নীতিমালার বাইরে। এ তথ্যের ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট জেলার উর্দ্ধতন এক পুলিশ কর্মকর্তার সাথে আলাপ করলে জানা যায় এ ব্যাপারে তিনি দ্রুত আইনী ব্যবস্থা গ্রহন করবেন।
আমাদের সমাজের উন্নয়নে তথা সমাজের শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষায় সবচেয়ে বড় অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায় এই রকম কিছু লেবাসধারী, সুবিধা ভোগী, অর্থ লোভী মানুষ। আর এইসব গুটি কয়েক হীনমনস্ক, নীচ প্রকৃতির, মানুষের লেবাসধারী সমাজের কীট গুলোর কারনেই সমাজ তথা দেশের জনগণের সুরক্ষায় পুলিশের নেয়া অনেক ভালো উদ্যোগ জনগণের কাছে প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে থাকে। বাংলাদেশ পুলিশের কাছ থেকে কমিউনিটি পুলিশিং এর মত একটি যুগোপযোগী উদ্যোগ এবং সেই উদ্যোগ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে গৃহীত সিদ্ধান্তের ফলশ্রুতিতে প্রত্যাশিত সফলতার অন্তরায় হয়ে জনগণের সেবক রুপে যে লেবাসধারী মানুষটি দাঁড়ায় সে আপনার আমার মাঝেই বসবাসকারী। তাই আসুন আমাদের নিজেদের স্বার্থে হলেও সেইসব তথাকথিত জনগণের সেবকরূপী লেবাসধারীদের প্রতিহত করার চেষ্টা করি। সর্বপরি পুলিশকে তার কাজে সহায়তা করার মাধ্যমে সমাজের প্রতি আমাদের দায়িত্ব পালন করি।
(০১)বিদ্রঃ আমার এই পোষ্ট আপনাদের ভালো লাগুক বা না লাগুক তাতে কি; ফেসবুকের এই পেজে একটি লাইক দিতে তো কোন সমস্যা নাই, তাই না?



(০২)বিদ্রঃ পোষ্ট দাতা খুব ভালো করেই জানেন যে, শিরোনামের ইমো পোষ্টের বিষয়বস্তুর সহিত সঙ্গতিপূর্ণ নয়।
সূত্র