somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

'কমন জেন্ডারঃপুরুষ ও নারীর মাঝে যে জন ! '

১৭ ই জুলাই, ২০১২ রাত ১:১১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

"পুরুষ ও নারীর মাঝে যে জন সেও মানুষ ..." ---- এই বয়ান যখন সমাজ বাস্তবতায় জারি থাকে তখন স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন আসে সেই সমাজ দেশ জন-জাতি সেই প্রত্যয় কিংবা প্রত্যয়হীনতাকে কীভাবে দেখে বা সেই ব্যক্তিসত্ত্বাকে কীভাবে নেয় ? বিবদমান আর্থনৈতিক রাজনৈতিক প্রেক্ষিতে যদি সেই বয়ান আসে তবে তার সংজ্ঞা কী দাঁড়াবে ? দেশে পুরুষ-নারীর যে ভেদাভেদ তা বোধকরি এই টপিকে আলোচ্য নয় কিন্তু কথা হলো এই ‘পুরুষ ও নারীর মাঝামঝি' সত্ত্বাকে আপনি কীভাবে নিবেন ? এটা সমাজবিজ্ঞানের আলোচ্য বিষয় বলে যদি এড়িয়ে যাই কিংবা ‘আমার বিষয় না’ বলে নাক-মুখ কুঁচকে যদি সাময়িক প্রশান্তি খুঁজি তবে তা কিন্তু মোটেই থেমে থাকবে না । সেই প্রশ্ন কিংবা অস্বস্তি যাই বলেন না কেনো আজ আপনার জন্য একটা দায়ও নিয়ে এসেছে ! আপনি না চাইলেও সেই আপনার ঘরে উপস্থিত । নোমান রবিন সেই ‘না নারী , না পুরুষ’কে রূপালি পর্দার ফ্রেমে বন্দী করে আপনার ঘর পর্যন্ত পৌঁছে দেওয়ার বন্দোবস্ত করে ফেলেছেন , তো সেই ব্যক্তিসত্ত্বাকে আপনি স্বীকার করেন আর নাই করেন কিংবা এড়িয়ে যেতে চান কিংবা অস্বস্তিবোধ যাই করেন না কেনো , তো সেই ‘জেন্ডার ক্রাইসিস’কে পাশ কাটিয়ে চাইলেও আপনি এড়িয়ে যেতে পারছেন না , পারেন না ।

সেই অস্বস্তিদায়ক বিবদমান সত্যকে নোমান রবিন যখন সিনেবন্দী করেন তখন প্রশ্ন আসে নোমান সেই ব্যক্তিস্বত্তাকে কীরূপে চান , কীভাবে দেখাতে চান ...? সমাজ যেখানে পুরুষের অপৌরুষেয় অলিখিত নিয়মে চলে তখন নারীস্বত্ত্বা কীভাবে বিকশিত হয় তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না । রাসসুন্দরী থেকে বেগম রোকেয়া হয়ে আজকের প্রেক্ষাপটে বিচার করলে নারীর অবস্থান যতোটা না নারীর ততোটা পুরুষের , পৌরুষের । এমন প্রেক্ষাপটে নোমান যে সিনে-কাহিনি নিয়ে এসেছেন তা সাহসের বটে কিংবা চ্যালেঞ্জডও বটে । একে একে যখন সিনেমা হলগুলো ভেঙে মাল্টিপ্লেক্স বিল্ডিং হচ্ছে সেই সিনে-ভাঙনের কালে নোমান রবিন আমাদের দেখান অন্য জীবন , অন্য গান তা নিছক শুধু সিনেমার বানোনোর পাঁয়তারা তা নয় , এতে তাঁর দায়ও আছে , থেকে যায় ... হ্যাঁ আমরা আজ নোমান রবিনের প্রথম সিনেমা ‘কমন জেন্ডার’র কথাই বলছি ।
void(0)
সিনেমার দায় থাকে , থাকতে হয় এই আপাত কঠিন সত্যকে কেউ ধারণ করুক আর নাই করুক , সে লারেলাপ্পা কিংবা আঁতেল , ম্যাসেজট্যাসেজওয়ালা সিনে-মেকার যেই হোক না কেনো । সিনেকাহিনির শুরু করেছেন নোমান ...তার দায় এখানেই । সমাজের ‘না নারী না পুরুষ’ যাকে আমরা হিজড়া বলে সম্বোধন করি তাদের চিত্রভাষ্য এই ‘কমন জেন্ডার’ । সমাজ আর দশটা নারী , পুরুষের বাইরে যে সত্ত্বা তাকে আমরা কীভাবে দেখি ? প্রকৃতির পালাবদলে যে শিশুটির শারীরিক বিকাশ অসম্পূর্ণ থেকে যায় কিংবা হয় না বরং তার শারীরিক বিকাশ না বিকলাঙ্গ না প্রতিবন্ধী কিছুই না তখন যে শারীরিক আদল বা রূপ নেয় তা না পুরুষ না নারী এই ধাঁচের বা কাছাকাছি কিছু একটা । তখন সেই বৈরী-বন্ধ্যা সময়কে স্নিগ্ধ-কোমলমতি শিশুটি কীভাবে নেয় ? তারচেয়ে বড় কথা মা-বাবা বা আরো যারা পরিবারভুক্ত আছেন তারা কীভাবে নেন ? তা অনুমান করতে কষ্ট হলেও সত্য যে সেই ভয়াবহ আকাল সময়কে উভয়ই সামলে উঠতে পারেন না !
কীভাবে কীভাবে জানি সেই শিশুটিও বুঝে যায় বোধকরি ... সে অনাহূত , অনাকাঙ্ক্ষিত ! না হলে সে তার গোত্রীয়জনদের কাছে চলে যায় কীভাবে ? সেও এক রহস্যই বটে ! সে জীবন যে সে জীবন নাকি ... হিজড়ার জীবন ! অস্পৃশ্য , না পুরুষ , না নারী ‘এই জীবন লইয়া আমি কী করিব’ এই দায় কবির থাকতে পারে , হিজড়ারও কী নাই , নাকি থাকতে পারে না , কোনটা ? ঘর নাই , দোর নাই । সমাজ রাষ্ট্র কিছুতেই তাঁর দায় নাই , বিকার নাই । চাইতে নাই , পাইতেও নাই । না নারী , না পুরুষ হিজড়ারা । পুরুষ প্রভু ,অপৌরুষেয় নারী হলেও কথা ছিলো ! উর্বর , সন্তানের খনি , রসুইঘরের রানি সেই নারীও না ! সেও না যখন তখন কী হে তুমি ? রাষ্ট্রের ভোটাধিকারে তুমি নাই , মরলেও তোমার দাহ-কব্বরের বিধান নাই , সমাজ-সংসারে তোমার প্রবেশ নাই আর্থনৈতিক ইঁদুর দৌড়েও তোমার লৌড়ালৌড়ি নাই , মাও নাই , বাপও নাই কী আছে তোমার ? অলস বেকার অন্যের দ্বারেদ্বারে হাত পেতে তোমার চ্যাটের প্যাট চলে আর কীনা দাবি-দাওয়া , ঢং দেখে বাঁচি নে ...মর গে মরাখাগীর দল ! জাত নাই , আজাইত্যা , কুজাইত্যা ধম্মেরও ঠিক নাই আর কীনা মানুষ হতে চায় , সাহস কতো !

সমাজ জাতি রাষ্ট্র লিঙ্গহীন না । আচারে-বিচারে , কাজে-কর্মে , ধর্মে-অধর্মে লিঙ্গ প্রকাশ্যে প্রকটিত হয় । এই লৈঙ্গিক রাজনীতির মনোহারী বাজারে লিঙ্গহীনতা কী কাজে দেয় ? বোঝা বাড়ানো ছাড়া আর কীইবা হতে পারে এই ‘কমন জেন্ডার’ কিংবা ‘না নারী , না পুরুষেরা’ কিংবা ‘হিজড়া’রা ? এই বয়ান জারি থাকুক ...

শিল্পের দায় শিল্পীর না ক্যামেরার পেছনের অনুঘটকের ? এই প্রশ্ন সর্বকালেই ছিলো , থাকবেও কথা হলো এই সিনে-আখ্যানের হৃদয় যারা তাঁরা কেমন ঢেলে দিলেন নিজেকে ? একটা সমাজের এই জন-গোষ্ঠীর যে বেঁচে-বর্তে থাকা তাঁর যে দৈনন্দিন কেওয়াজ চলে তাঁর চিত্র ‘কমন জেন্ডারে’ পুরোটাই আছে । আমাদের অভিনেতাদের যে পেশাদারিত্ব আছে , কমিটমেন্ট আছে তা ‘কমন জেন্ডারে’র প্রায় প্রত্যেকটা ক্যারেকটার তাঁদের জায়গা থেকে একদম ফাটিয়ে দিয়েছেন । চরিত্রাভিনেতা ঠিক আছে কিন্তু একদম না নারীর , না পুরুষের ঢঙয়ে যে কন্ঠ , আচার-আচরণ হাঁটাচলা তা হুবহু আয়ত্ত্ব করে স্বকীয় বৈশিষ্টে তুলে ধরা চাট্টিখানি কথা না । তাঁর উপর নোমান যেভাবে এই অভিনেতাদের মুখেমুখে বাংলা সিনেমার নায়ক-ভিলেনদের চারিত্রিক দিক তুলে ধরে সমাজের পুরুষের অপৌরুষেয় মহিমাকেই মহিমান্বিত ! করেন তখন তা কথিত পৌরুষে লাগে বৈকি !

সিনেমার কাহিনি লাগে ... এ অর্থে ‘কমন জেন্ডার’ ‘না গল্প’ কিংবা ‘অগল্প’ । তবে যে গপ্পো-সপ্পো সিনেমায় থাকে তা ‘কমন জেন্ডারে’ নাই বটে , তবে আদৌ কী এদের গপ্পো নাই ? নাকি এরা গপ্পোহীন ? এ বোধকরি সেই গপ্পোহীনের গপ্পো বলাই নোমান রবিনের চেষ্টা ছিলো ...সেই চেষ্টা প্রায় সফল তাঁর । থাকলো গতি , সিনেমায় গতি না থাকলে কী চলে ? ‘কমন জেন্ডার’র গতি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত দর্শকদের ধরে রাখবেই রাখবে ।

মেকিং চিত্রনাট্য পরিণতি মিলিয়ে নোমান রবিন এক্ষেত্রে প্রায় সফলই বলা যায় তবে শেষে মনে হয়েছে কেনো জানি বড্ড তাড়াহুড়ো করে শেষ করে ফেলেছেন । ডলি জহুরের উপস্থিতি অনেকটা আরোপিত মনে হয়েছে । তবে একটা কথা সত্যি যে এই সিনেমা সিনেমার স্ট্রাকচার মেনে আদৌ সিনেমা হয়ে উঠতে পেরেছে কী না তা একটা প্রশ্ন থেকে যায় ! আর এই কথা বলার পরপর যে প্রশ্ন আসে তা হল এই ... 'সিনেমা হয়ে উঠা আর না উঠার' মাঝে যে দোলাচল তাতে আগের বয়ানের তো খামতি থেকে যায় , তাই না ? হ্যাঁ তা থেকে যায় , নোমানের এই সিনেমা সিনেমা হয়ে ওঠা না ওঠার মাঝখানে যে বাধা তা নোমান বোধকরি জানেন , না হলে এমনটা হয় কী করে !? তো এই প্রশ্নের সুরাহাটাও বোধ করি নোমানেরই উপরই বর্তায় । কথা হলো একজন নির্মাতার সে দায় থাকে , থেকে যায় । আর এই ৫৬ মিনিটের চিত্র কতোটুকু সে দায় মেটাতে সক্ষম সে প্রশ্নও বোধকরি তোলা দরকার । এমন যখন সিনেমার ধরণ তখন নোমান যে আত্মঘাতি সিদ্ধান্ত নেন তা হুটহাট এই কাহিনি কাব্যের যবনিকা বা লাগাম টেনে ধরেন , এখন প্রশ হলো সেটা নির্মাতা একটা সময় করেন , করতে হয় হয় কিন্তু তার সময়জ্ঞান কেমন হলে করেন ? এই প্রশ্ন রেখেই যদি 'কমন জেন্ডার' দেখতে বসি তাহলে তা নিছক ছেলেভুলানো গল্পই দেখি ! যে ইচ্ছে যখন হলো তখন তার লাগাম টেনে ধরলাম ! এই পরিস্থিতে 'কমন জেন্ডার' একটা সিনেমা না নাটক তা দর্শক-বোদ্ধাদের কাছে বিরাট প্রশ্নও বটে ! থেকে যান কুশীলব , তাইতো ? হ্যাঁ , যারাযারা অভিনয় করেছেন সবার অভিনয় প্রায় নিখুঁত ও প্রাণবন্ত হয়েছে । নোমানের প্রচেষ্টা যে সফল তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না । এই চেষ্টা অব্যাহত থাকুক । বাংলা সিনেমা আবার জেগে উঠুক , আবার ফিরে আসুক বাংলা সিনেমার সুন্দর আগামি , ফিরে আসুক আগের হলভাঙা দর্শক , আবার যেনো দেখি সিনেমা হলের গেইটে ঝুলছে ‘হাউজফুল’ । নোমানেরা সেই ভোর আনবেন আর তা বুঝি ।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই জুলাই, ২০১২ রাত ১:৩৭
৯টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কমলার জয়ের ক্ষীণ ১টা আলোক রেখা দেখা যাচ্ছে।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:১৮



এই সপ্তাহের শুরুর দিকের জরীপে ৭টি স্যুইংষ্টেইটের ৫টাই ট্রাম্পের দিকে চলে গেছে; এখনো ট্রাম্পের দিকেই আছে; হিসেব মতো ট্রাম্প জয়ী হওয়ার কথা ছিলো। আজকে একটু পরিবর্তণ দেখা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×