নব্বই পরবর্তী কিংবা তারও পরে সিনেমায় কেমন জানি একটা স্থিরতা স্থিরতা ভাব এসে সিনেমাকে আচ্ছন্ন করে দিলো । বিশেষ করে বাংলা সিনেমায় কেমন জানি একটা নতুন পাকে মোড় নিলো । দেশীয় ঘটনাপ্রবাহ ছেড়ে বাংলা সিনেমা আন্তর্জাতিকতার গলিগুজি দিয়ে প্রবেশাধীকার চাইলো আন্তর্জাতিকতার । এমনি এক সিনেমা 'কাঁটাতার' পরিচালক বাপ্পাদিত্য বন্দ্যেপাধ্যায় । ' এপারের হাওয়া এপারেও যায় , এপারের মেঘ অপারেও ভেসে বেড়ায় , এপারের আকাশ অপারেও এক , এপারের টাকা অপারে চলে তেমনি অপারেরটাও শুধু এই কাঁটাতারটাই বারবার মনে করিয়ে দেয় এই ভূখণ্ড আলাদা ! ' এমনি এক মহাসত্যের প্রান্তে দাঁড়িয়ে মজিদরূপী মানুষেরা সারা পৃথিবীতে দেশহীন ঘর স্ত্রী সন্তানহীন ভাসমান ঘুরে বেড়ায় । 'নারীর কোন দেশ নেই ' এটা যদি সরলসত্য মেনে নেই তবে 'কাঁটাতার' কিন্তু সেই জায়গায় হেচকাটানে মুখোশ খুলে দেয় । গান , কাহিনি , সংলাপ , চরিত্র , লোকেশন তথা সিনেমাভাষ্য বলতে যা বুঝায় তা এই সিনেমা পুরন করে ।
১২ ঘণ্টার সময়কালকে ১ ঘণ্টা ২০ মিনিটে চিত্ররূপ দেয়া খুব একটা কঠিন কাজ না । বলা যায় সিনেমায় এটা খুব সহজ । কিন্তু এই সরলীকরণে অনেক হ্যাপাও আছে ! বলছি এই কারণে তা যদি নির্মিত হয় কোনও ধর্মীয় পুরুষকে নিয়ে তাইলে কিন্তু খবরই আছে । বিশেষ করে ধর্মকেন্দ্রিক সিনেমা সারা পৃথিবীতে খুব একটা গ্রহনীয় হয়েছে কিংবা ভাল চোখে দেখা হয়েছে তার নজির নাই । ধর্মীয় পাণ্ডা-পুরুতেরা যেমন চোখ রাঙ্গানি দিয়েছে তেমনি দিয়েছে ফতোয়া-হুমকি । সাধারন জনগণও খুব একটা ভালভাবে নিয়েছে তাও জোর গলায় বলা যায় না । সে এশিয়া , ইউরোপ-আমেরিকা যাই হোক না কেনো পার্থক্য খুব একটা অদল-বদল হয় নি । হ্যা বলছিলাম মেল গিবসনের 'দ্যা প্যাশন অফ দ্যা খ্রাইস্ট'য়ের কথা । কোনো ধর্মের প্রতি আমার বিশেষ কোনও আকর্ষণ নেই , নেই সেই প্রেরিত লোকটার প্রতি আকর্ষণও । কিন্তু যিশু খ্রিস্টের প্রতি আমার কেমন জানি একটু আলাদা জায়গা আছে । মানছি আগের কথা ধরলে এই বয়ানের আর অর্থ হয় না কিন্তু এটা তো সত্য যে , শ্রদ্ধা প্রেম স্নেহ এই কয়টা বরাবর ই নিম্নগামী মানে মান বিচারে এর তুল্যমূল্য চলে না । মেল গিবসনের 'এপিক্যালিপটো' দেখার পরপরই আমার একটু ধারণা হলো এই লোকটা কিছু দিবে । সে 'দ্যা প্যাশন অফ দ্যা খ্রাইস্ট' এ ঠিক ই তা করে দেখিয়েছে ! যে সমাজে একজন ভয়ানক ডাকাতকে সাজা না দিয়ে যিশুর মতো সহজ সরল মানুষকে পৈশাচিক কায়দায় ফতোয়া দিয়ে মারে সে সমাজ কি তা মেল গিবসন চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন । নির্মমতা কারে কয় তা যিশুর মৃত্যুর আগের শেষ ১২ ঘণ্টার কাহিনির ১২০ মিনিটের চিত্রভাষ্য না দেখলে আপনারা বুঝতে পারবেন না ।