গতকালকে আমার প্রথম একটি লেখা প্রথম পাতায় স্থান পেয়েছে। সেই লেখায় আমি বলার চেস্টা করেছি - নাস্তিকতা মুলত একটি বিশ্বাস, বিজ্ঞান নয়। কিন্তু আমার নাস্তিক বন্ধুরা ব্যাপারটা মানতে পারছেন না। তারা বলতে চাচ্ছেন যা নেই তা প্রমানের প্রয়োজন নেই। তাদের জন্যই আবার বিষয়টা বিস্তারিত বলতে হচ্ছে।
বর্তমান সময়ের অন্যতম একটা বৈজ্ঞানিক গবেষনার বিষয় দিয়েই আমার বক্তব্য ব্যাখ্যা করার চেস্টা করছি। বিষয়টি হচ্ছে পৃথিবীর বাইরে মহাবিশ্বের আর কোন গ্রহে প্রানের অস্তিত্ব আছে কি না। এই প্রশ্নের উত্তর হতে পারে দুটি- "হ্যা আছে" অথবা "না নেই"। আমি বলছি এখানে "হ্যা আছে" উত্তরের ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়ার চেয়ে "না নেই" উত্তরের ব্যাপারে নিশ্চত হওয়া বেশি কঠিন। কিভাবে?
আমাদের গ্যালাক্সিতেই প্রায় ৪০০-৫০০ বিলিয়ন নক্ষত্র আছে। বিজ্ঞানীরা এগুলোর কতটিতে সৌরজগতের মত গ্রহ আছে এবং তার কতটিতে প্রানের অস্তিত্ব থাকতে পারে তা নিয়ে গবেষনা করছেন। এই গবেষনার যে কোন পর্যায়ে কোন একটা গ্রহে প্রানের অস্তিত্ব পাওয়া মাত্রই প্রমানিত হবে যে পৃথীবির বাইরে আমাদের গ্যালাক্সিতেই প্রানের অস্তিত্ব আছে। সেই গ্রহটা প্রথম ১০০ টা নক্ষত্রের মধ্যে হতে পারে, হতে পারে প্রথম ১ মিলিয়ন, বা প্রথম ১ বিলিয়ন বা প্রথম ১০০ বিলিয়ন - যে কোন তম নক্ষত্রের ক্ষেত্রে প্রমানিত হয়ে যেতে পারে যে প্রানের অস্তিত্বসহ গ্রহ আছে। কিন্তু আমাদের গ্যালাক্সিতে পৃথীবি ছাড়া অন্য কোন গ্রহে প্রানের অস্তিত্ব নেই বলতে হলে আমাদেরকে শেষ নক্ষত্রটা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। একটা নক্ষত্রও যদি আমাদের জানার বাইরে থাকে তাহলে বিজ্ঞান বৈজ্ঞানিক সত্য হিসেবে বলতে পারবে না যে আমাদের গ্যালাক্সিতে প্রানের অস্তিত্ব নেই। একই ভাবে মহাবিশ্বের বিলিয়ন বিলিয়ন গ্যালাক্সিকে জানার আওতায় আনার আগে বৈজ্ঞানিক সত্য হিসেবে বলা যাবে না যে মহা বিশ্বর কোথাও প্রানের অস্তিত্ব নেই। তাহলে কোনটা প্রমানিত হওয়া কঠিন? আছে না নেই? অবশ্বই নেই প্রমানিত হওয়া বেশি কঠিন।
একই ভাবে আল্লাহ, তাঁর সৃস্ট জ্বিন, ফেরেশতা, বেহেস্ত, দোজখ কিছু আছে কি নেই সেই প্রশ্নের বৈজ্ঞানিক উত্তরও "আছে" হওয়ার চেয়ে "নাই" হওয়া অধিকতর কঠিন। কারণ নাই বলতে হলে থাকার সম্ভাব্য সবগুলি দিক ও বিভাগ পরীক্ষা-নিরিক্ষা করে তার পর বলতে হবে নেই। এজন্য আমাদের জানতে হবে বিলিয়ন বিলিয়ন আলোকবর্ষ ব্যাপি ছড়ান বস্তু জগত, আমাদের চতুর্মাত্রিক জগতের বাইরে অন্য মাত্রার কোন জগত আছে কি না, থাকলে সেই জগত এবং এ'সব জানতে গিয়ে আরো যত অজানা জগতের সন্ধান পাওয়া যাবে তার সব। তার আগে যদি কেউ "নেই" বলে তাহলে সেটা বিজ্ঞান হবে না হবে একটা বিশ্বাস।
সুতরাং নাস্তিকরা বিজ্ঞানের দোহাই দিয়ে যে সবকিছুকে নাই ঘোষনা করে সেটা সত্যিকার বিজ্ঞান নয় বরং তাদের অন্ধ বিশ্বাস। তারা মনে করে তাদের জ্ঞানের বাইরে কিছু নেই, তারা যা জানে তাই সব। এজন্য আমার মতে এদের বেলায় "অল্প বিদ্যা ভয়ঙ্কর" প্রবাদটা সঠিকভাবে প্রযোজ্য।