ঘটনাটি ২০০৮ সালের। স্থান: রাজশাহী জেলার কোন একটি উপজেলা। আমার এই পর্বটি যাকে নিয়ে, সে হলো আমার স্ত্রীর বড়দুলাভাই এর ভাতিজি। আমি তাকে কখনও দেখিনি। বয়স আনুমানিক ১০ বছর।
তাদের বাড়ী একেবারে পদ্মা নদীর ধারে। অর্থাৎ নদীর পাড় ঘেঁষা প্রত্যেক জনগোষ্ঠীর জীবনধারার কিছু অংশের সাথে নদী মিশে থাকে। যেমন নদীতে গোসল করা, কাপড় কাঁচা ইত্যাদি। সেই এলাকার পদ্মা নদীতে বেশ অনেকখানি চর পড়ে গেছে। অর্থাৎ পাড় থেকে কয়েক'শ গজ পানি আছে তারপর বিশাল চরের পরে আবার নদী। অর্থাৎ নদীর মাঝখানে চর। আর পাড়ে যে অংশে পানি আছে সে অংশটি খুবই গভীর।
ঘটনার দিন সেই মেয়ে, তার বেশ কয়েক বান্ধবী মিলে পদ্মা নদীতে গোসল করতে যায়। গোসল করার একপর্যায়ে হঠাৎ মেয়েটি ডুবে যায় যদিও সে সাঁতার জানতো। তার ডুবে যাওয়ার বর্ণনা পাওয়া যায় তার বান্ধবীদের কাছ থেকে, যারা তার সাথে গোসল করছিল। ঠিক সেই সময়ে নদীর পাড়ে যারা ছিল তারা অনেক খুঁজেও কোন লাশ পায়নি।
এরপরেও অনেক খোঁজ করা হয় নদীতে। তারপর রাজশাহী সদর থেকে ডুবুরী এনে প্রচুর খোঁজাখোজি করা হয়। কিন্তু কোন ভাবে কোন লাশের সন্ধান মেলে না। যদিও ঐ জায়গাটি খুবই গভীর। অভিজ্ঞ ডুবুরীরাও একেবারে নদীর তলদেশ পর্যন্ত গিয়েও কিছু না পেয়ে ফিরে এসেছে। এভাবে পর্যায়ক্রমে কয়েকদিন লাশ খোঁজা হয় পানির নিচে। আর নদীর ঐ অংশে এমন কোন স্রোত ছিলনা যে লাশটি ডোবার সাথে সাথে দুরে কোথাও ভেসে যাবে।
সন্তানহারা মা-বাবা এবং আত্মীয়স্বজন প্রায় সবসময়ই নদীর ধারে বসে থাকে লাশের আশায়। সে এক করুন দৃশ্য। ঐ মেয়ের বাবা-মাকে যে যেই রকম কথা বলছে তারা সেরকমই কাজ করছে ঐ লাশের সন্ধানের জন্য। যার কাছে যেতে বলছে তার কাছেই যাচ্ছে। এমন সময় তারা খোঁজ পেল দুরে কোন এক স্থানে এক ব্যাক্তি ("পরী/ফকির" যে যাই বলেন) আছে, সে খোঁজ দিতে পারবে।
মেয়ের, বাবা-মা সেই লোকের কাছেই যায়। তখন তারা সেই লোকের কাছ থেকে জানতে পারে যে, তাদের মেয়ে নিখোঁজ হওয়ার পরেও কয়েকদিন বেঁচে ছিল, কিন্তু দু/একদিন আগেই তাকে মেরে ফেলেছে এবং তার লাশ এখন পানির নিচেই আছে এবং পানিতে ডোবার ঠিক একুশ দিনে মাথায় তাদের মেয়ের লাশ ঐ জায়গাতেই ভেসে উঠবে। এবং সেই লোকটি আরো জানায় যে, মেয়েটিকে জ্বীনেরা নিয়ে গিয়েছিল।
ঐ লোকের কথা সত্য প্রমাণ করে সবাইকে আশ্চর্য করে ঠিক ২১ দিনে মাথায় সকাল বেলা ঠিক ঐ জায়গা থেকেই মেয়েটির লাশ ভেসে উঠে। এলাকাবাসি সবাই এটা নিজে চোখে দেখেন। কিন্তু তার চেয়েও আশ্চর্য বিষয় হলো, লাশটি ছিল অক্ষত। পানির নিচে ২১ দিন থাকার ফলে সেটা পচে, ফুলে যাওয়ার কথা ছিল। লাশের কোথাও কোন মাছও ঠোকর দেয়নি। মানে পুরোই অক্ষত। দেখে মনে হচ্ছিল, মেয়েটি এখনও ঘুমিয়ে আছে এবং তার সারা শরীর ভিজিয়ে দেয়া হয়েছে।
এই ঘটনাটা আমার এখানো একটা অমীমাংসিত রহস্য হয়ে আছে।
[পাঠক/পাঠিকার উপরে এই পোষ্টের বিষয়বস্তু বিশ্বাস বা অবিশ্বাসের ব্যাপারে কোন চাপ নেই]
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে জুন, ২০১১ রাত ৮:১৭