somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার অমীমাংসিত রহস্যগুলো -১

১৪ ই জুন, ২০১১ রাত ৯:৩৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ঘটনাটা যতদুর সম্ভব ১৯৮৯ সালের নভেম্বরের দিককার। তখন রাতে পড়াশুনা করে বিছানায় যেতে যেতে একটু দেরী হতো। কারণ সামনে ফাইনাল পরীক্ষা ছিল। মোটামুটি বাসার সবাই ঘুমিয়ে পড়লে আমি সবকিছু শেষ করে ঘুমাতে যাই। তাও তো শুতে শুতে প্রায় প্রতিদিনই রাত একটা দেড়টার মত বাজতো। আমরা যে বাড়ীটায় থাকতাম সেটা ছিল তিনতলা। আমরা থাকতাম দোতলায়। আমার ঘরটা ছিল বাসাটার প্রায় শেষ দিকে। ঘরের একপাশে বারান্দা আর আমাদের অন্যঘরগুলো। আর জানালা ছিল দুটি তার একটি দক্ষিনমুখী। আর আমার রুমের পাশটাতেই ছিল আরেকটি বাড়ী পিছন সাইড। সেখানে কলাগাছ ও কিছু জঙ্গল টাইপ গাছ ছিল। সেখানটায় সাধারনতঃ কেউ আসতো না।

আমার পড়ার টেবিলটা ছিল বিছানার পাশেই। মানে বিছানায় বসেই আমি টেবিলে পড়তাম। টয়েলেট থেকে ফিরে এসেই আমি লেপ গায়ে দিয়ে শুয়ে পড়লাম। কিন্তু ঘুম আসছিল না। আমি তখন ঘরের ভিতর একটা গন্ধ পাই। কেমন যেন ঠিক গন্ধটা। ঠিক ফুলেরও না আবার কোন খারাপ গন্ধও না। ভাবলাম জানালার পাশে যেহেতু বিভিন্ন প্রকার গাছ আছে তো সেখান থেকেই হয়ত গন্ধটা আসছে।

তার কিছুক্ষণ পরে জানালার কাচে কিছু একটা আঁচড় কাটার শব্দ শুনতে পাই। বিছানা থেকে লাফ দিয়ে উঠে জানালার পর্দা সরিয়ে কিছুই দেখতে পেলাম না। তারপর বিছানায় এসে আবার লেপ গায়ে দিয়ে শুয়ে পড়লাম। তারপর আজব কিছু ব্যাপার একের পর এক ঘটতে থাকলো। আমার মনে হলো কেউ আমার পায়ের কাছে লেপটা ধরে নাড়াচাড়া করছে। কিন্তু পায়ের কাছে কিছুই দেখতে পেলাম না। এসব সব মনের খেয়াল ভেবে বেশ কিছুক্ষণ পরে কখন ঘুমিয়ে গেছি টের পাইনি।

পরের রাতে ঠিক একই ভাবে পড়া শেষ করে বিছানায় যাওয়ার পরে ঐ আগের রাতের গন্ধটা পেলাম। কিন্তু আমি আগের চেয়ে আরো বেশী গন্ধটা অনুভব করতে থাকলাম। পায়ের নিচে নরম কি যেন একটা তুলতুলে কিছু অনুভব করলাম। মনে হচ্ছিল একগোছা চুল টাইপের কোন একটা কিছু। ঘটনার আকস্মিকতায় লাফ দিয়ে বিছানা থেকে নেমে লাইট জ্বালিয়ে দেখলাম কোন কিছুই নেই। সেই রাতে আর ঘুম হলো না। সারারাত জেগেই থাকলাম প্রায়।

তারপরে আর অনেকদিন সেই রকম কোন কিছুর অনুভব করিনি। যথারীতি ফাইনাল পরীক্ষা শুরু হয়ে যায় নভেম্বরের মাঝামাঝি। মোট চারটা পরীক্ষার পরে কয়েকদিনের জন্য ব্রেক ছিল কি যেন একটা কারণে। তো ম্যাথ পরীক্ষার দুইদিন আগের রাতে হঠাৎ করেই ঘরের ভিতর আবার সেইরকম গন্ধ পেতে থাকি। আমি লেপের ভিতর মাথা দিয়ে শুয়ে পড়ি। হঠাৎই আমার মনে হয় রুমের লাইটা জ্বলে উঠল। মনে করেছিলাম হয়ত আম্মা আমার ঘরে ঘুকেছিল। কিন্তু মাথা বের করে দেখি ঘর অন্ধকার। তখন খুব ভয় পেয়ে যাই। জোড়ে যে চিৎকার দিবো সেই শক্তিটুকু হারিয়ে ফেলি। আমি লেপের মধ্যে মাথা ঢুকিয়ে আবার শুয়ে পড়ি। ভয়ে নড়াচড়া করতে পারছিলাম না।

আবারো পায়ের কাছে নরম কিছু একটা অনুভব করি। আস্তে আস্তে লেপ থেকে মাথাটা বের করে যা দেখলাম তা দেখে আমার সারা গা শিউরে উঠলো। ঘাড় থেকে পিঠের নীচ দিকে একটা ঠান্ডা কিছু তরঙ্গ বয়ে গেলো। আমি শোয়া থেকে লাফিয়ে বিছানায় বসে পড়লাম। গায়ে আমার লেপ দিয়ে জড়ানো। আমার গলা শুকিয়ে কাঠ। হাত পা কাঁপছে।

দেখলাম, একটা মেয়ে বসে আছে আমার খাটের একটা দিকে। যেদিকে আমি পা দিয়ে শুই আমি। মেয়েটার মুখ আমি দেখতে পাচ্ছিলাম না। কারণ তার চুল এমন ভাবে মাথার তিনপাশ দিয়ে পড়ে আছে যে মুখটা ঢেকে আছে। মেয়েটা যে ড্রেস পরে আছে সেটা থেকে হালকা আলো বের হচ্ছিল সেটাতে মেয়েটাকে আমি স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছিলাম। এবার সে তার মাথাটি বাম পাশে ঘুরিয়ে আমার দিকে তাকায়। মেয়েটির চেহারা মোটেই ভয়ংকর ছিল না। খুবই শান্ত টাইপের। চেহারা দেখে মনে হচ্ছিল আমার চেয়ে বয়সে অল্প কিছু বড় হবে হয়ত।

মেয়েটা আমার দিকে তাকিয়ে মিষ্টি করে হাসে আর বলে "আমাকে ভয় পাচ্ছো কেন তুমি? আমাকে ভয় পাওয়ার কিছু নাই। আমি তোমার কোন ক্ষতি করবো না।" কিন্তু আমার মুখ দিয়ে কোন কথাই বের হচ্ছিল না। যত দোয়া জানা ছিল সেগুলো পড়ছিলাম কিন্তু সব উল্টাপাল্টা হয়ে যাচ্ছিল। আবারো সে বলল, "আমি তোমাকে সাহায্য করবো, সবসময় সবসময়, সবসময়। কেউ তোমার কোন ক্ষতি করতে পারবে না।" সে তিন বার "সবসময়" শব্দটা উচ্চারণ করল। আর বললো, "সামনের পরীক্ষায় তুমি বিপদে পড়বে, তোমার খুব কাছের লোক তোমাকে বিপদে ফেলবে। এখন চোখবন্ধ করে শুয়ে পড়ো।"

আমি তাড়াতাড়ি লেপমুড়ি দিয়ে শুয়ে পড়লাম। একটু পরে সাহস করে লেপ থেকে মাথা বের করে দেখলাম যে ঘরে কেউ নেই। আর ঘরে সেই গন্ধটাও আর নেই। আমি উঠে লাইট জ্বালিয়ে দিয়ে বিছানায় এসে শুয়ে পড়লাম। সারারাত খুব ভয় লাগছিল। কিন্তু কাউকে কিছু বলতে পারছিলাম না।

পরদিন সকালে যথারীতি পরীক্ষা দিতে গেলাম। পরীক্ষার সময় আমার আর অতটা খেয়াল ছিল না গতকালের কথা। পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে হঠাৎ পাশের একটি ছেলে আমার পায়ের কাছে একদলা কাগজ ফেলে। মানে, সে নকল করে আমার পায়ের কাছে ফেলে দিয়েছে। আর ঠিক ঐ মূহুর্তে একজন স্যার সেটা দেখে ফেলে। আমি মনে করি স্যার আমাকে সন্দেহ করেছেন। ব্যাপারটা আমার কাছে সবচেয়ে বেশী লজ্জার। কারণ ছাত্রজীবনে আমি কখনও এমন কাজ করিনি। স্যারদের কাছে আমার একটা সুনাম ছিল ভালো ছাত্র বলে। কিন্তু স্যার সরাসরি ঐ পাশের ছেলেটিকে চার্জ করে। তাকে পরীক্ষাহল থেকে বহিষ্কার করতে চায়। তখন সে উত্তর দেয় যে, সে আমাকে ফাঁসানোর জন্য এই কাজটি করেছিল। স্যার তাকে হলের মধ্যেই খুবই মারে আর শাস্তিসরূপ আধাঘন্টার জন্য খাতা কেড়ে নেয়।

আমার মনে পড়ে তার আগের দিনের কথা। কিভাবে এই ঘটনাটা ঐ মেয়েটার বলা কথার সাথে মিলে গেলো তা আমি বুঝতে পারি নাই। এটা আমার কাছে একটা রহস্য হয়ে আছে এখনও।

[পাঠক/পাঠিকার উপরে এই পোষ্টের বিষয়বস্তু বিশ্বাস বা অবিশ্বাসের ব্যাপারে কোন চাপ নেই]
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই জুন, ২০১১ রাত ১০:০৭
২২টি মন্তব্য ১৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ফখরুল সাহেব দেশটাকে বাঁচান।

লিখেছেন আহা রুবন, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৫০





ফখরুল সাহেব দেশটাকে বাঁচান। আমরা দিন দিন কোথায় যাচ্ছি কিছু বুঝে উঠতে পারছি না। আপনার দলের লোকজন চাঁদাবাজি-দখলবাজি নিয়ে তো মহাব্যস্ত! সে পুরাতন কথা। কিন্তু নিজেদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হচ্ছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। প্রধান উপদেষ্টাকে সাবেক মন্ত্রীর স্ত্রীর খোলা চিঠি!

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:০৩




সাবেক গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনকে মুক্তি দিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে খোলা চিঠি দিয়েছেন মোশাররফ হোসেনের স্ত্রী আয়েশা সুলতানা। মঙ্গলবার (২৯... ...বাকিটুকু পড়ুন

কেমন হবে জাতীয় পার্টির মহাসমাবেশ ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৫৬


জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিক্ষুব্দ ছাত্র জনতা আগুন দিয়েছে তাতে বুড়ো গরু গুলোর মন খারাপ।বুড়ো গরু হচ্ছে তারা যারা এখনো গণমাধ্যমে ইনিয়ে বিনিয়ে স্বৈরাচারের পক্ষে কথা বলে ,ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ হওয়াতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী

লিখেছেন সামিউল ইসলাম বাবু, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১২:১৩

ফিতনার এই জামানায়,
দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী খুব প্রয়োজন ..! (পর্ব- ৭৭)

সময়টা যাচ্ছে বেশ কঠিন, নানান রকম ফেতনার জালে ছেয়ে আছে পুরো পৃথিবী। এমন পরিস্থিতিতে নিজেকে গুনাহ মুক্ত রাখা অনেকটাই হাত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা

লিখেছেন মুনতাসির, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৮:২৪

বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×