রাস্তা ঘাটে হাটতে হাটতে, বাসে বসে ঝিমুতে ঝিমুতে অনেক কিছু মাথার ঘিলুর মাঝে এসে কিচির মিচির করে। কিন্তু পিসির সামনে বসলে যে সব কই যায়—খুঁজেই পাইনা। ধারাবাহিক তার গতি হাড়ায়। কারন যা মনে আসে তা লিখে চলার এই লেখায় যদি লিখতে বসে কিছু না ই আসে মনে তাহলে তো মহা সমস্যা। এবার চাচ্ছি কিছু টেনে হিঁচড়ে বেড় করতে। দেখি—আপনারা যেভাবে চোখ গোল গোল করে তাকিয়ে আছেন তাতে না লিখলে মান আর থাকলো কোথায় বলেন?
মানুষ নামক আজব জীবের চাহিদার কোনো শেষ নেই। দেখেন আজ আমি একজনকে জিজ্ঞেস করলামঃ আপনার চাওয়া কি? বললো এই তেমন কিছু না- একটা সুখের সংসার, একটা গাড়ী আর একটা বাড়ী। এবার ভাবুন লোকটা তার চাওয়ার এই বিষয়গুলো পেয়ে গেলো। এর পর তাকে প্রশ্ন যদি করা হয় আপনি কি চান জীবনে? হতবাক হয়ে শুনবেন আরো কতো কিছু। আমরা আসলে জানিনা যে আমরা কি চাই, কিভাবে চাই এবং কতটুকু চাই?
প্রশ্ন এখানেই শেষ নয়। আজকাল মাথায় নানান প্রশ্ন ঘুরপাক খেতে খেতে ঘুর্ণিঝড়ের মতো আমাকেও উঠিয়ে নিয়ে যায় কোন অজানায়। মরে যাওয়ার চেয়ে বেঁচে থাকাটা কিঞ্চিৎ ভালো বলেই বেঁচে আছি। বিশ্বাস করুন—নয়তো কবেই...। থাক কেঁদেই ফেলবেন হয়তো। আমি কারো সাথে মরনের কথা বললেই ও প্রান্ত থেকে বলা হয় ছি ছি এসব বলতে হয়না। বললে কি হয়? কিছুই হয়না। যা হওয়ার এমনিতেই হবে, যা না হওয়ার হাজার চিল্লালেও হবেনা।
অদ্ভুত লাগে যখন মানুষ চোরকে মারার জন্য অদ্ভুত হাতে ক্ষিপ্র আঘাত করে যায় নির্দয় ভাবে। যে চোরটা মার খাচ্ছে সে নিশ্চয় সম্ভ্রান্ত কোনো চোর নয় বলেই এই অবস্থা। সে চুরি করছে অভাবের তাড়নায়। অভাব না থাকলে হয়তো সে চুরি করতোনা। আমরা অভাব দূরের কথা ভাবিনা। ভেবে যাই কিভাবে কিলিয়ে ফেটে যাওয়া ঠোট থেকে রক্ত বেড়িয়ে গল গল করে আঘাতের দাগে খয়রী হয়ে যাওয়া গন্ডাদেশ বেয়ে পড়ছে সেই অনিন্দ্য দৃশ্য দেখে পূলক অনুভব করার কথা।
এক শ্রেনীর মানুষ রয়েছে যারা পতিতাপল্লীর কথা শুনলেই ছি ছি করে উঠেন। ওদেরকে ব্রাশফায়ার করে মারার কথা বলেন। তারা কি জানে যে পতিতাপল্লী বন্ধ করে দেয়া হলে তাদের নিজেদের মা এবং বোনেরা ঐসব পুরুষদের দ্বারা আক্রান্ত হবে যারা নিয়মিত পল্লিতে যেতো? গরীবেরা সখ করে পতিতা হয়না। জীবনের ব্যার্থতা অথবা বেদনা অথবা নির্মম বাস্তবতা তাদেরকে পতিতা হতে বাধ্য করে। সখ করে পতিতা হয় ধনীরা। বিশ্বাস হলোনা? তাহলে যান। গিয়ে শুনে আসুন তাদের অপ্রকাশিত দূখের বিষন্ন শব্দাবলী। এদের কারো স্বামী তাদেরকে ছেড়ে গিয়েছে। কেউ প্রেম করে অসৎ লোকের পাল্লায় পড়ে এখানে এসে হাত পা বাঁধা অবস্থায় নিজেকে আবিষ্কার করেছে। কেউবা এখানে জন্ম গ্রহন করেছে অজানা কোনো লোকের বীজ থেকে।
দুটি শ্রেনীর যে কোনো একটি কে নিষিদ্ধ করেও এর সমাধান হবেনা। পল্লী নিষিদ্ধ করলে কি হবে তা আগেই উল্লেখ করেছি। আর যদি পল্লী থাকে কিন্তু ঐ সব লোকগুলোকে যেতে বাঁধা দেয়া হয় তাহলে পল্লীর শত শত নারী শিশু ও বৃদ্ধারা অনাহারে মৃত্যু বরন করবে। একটি ট্রেনের দুটি লাইনকে যেভাবে সম্নতরালে এগিয়ে না গেলে ট্রেন সেখানে চলতে পারেনা তেমনি উভয় পক্ষকে সমান ভাবে সংশোধনের দিকে না আনলেও এর সমাধান সম্ভব নয়। আজকাল অনেকের মধ্যেই এই প্রবণতা চরম আকারে দেখা যাচ্ছে যে তারা বচায় এক ঝটকা দিয়ে অথবা একটা প্রবল ঝাকুনি দিয়ে সেই সনি এরিকসনের মোবাইল ফোনটার মতো সমাজটাকে চেঞ্জ করে দেবে, যেটাতে ঝাকুনি দিলে নেক্সট সং প্লে হয়। স্রষ্টা কখনই মানুষের এই ধির গতিকে অস্বীকার করেননি। বিশ্বের মহান মানুষরা পর্যন্ত পারেনি এক পলকে পরিবর্তন করতে আর আমরা তো সে কোন ছার।
এক দিকে পল্লীর অসহায় দুস্থ মানুষদেরকে হাতের কাজ বা কুটির শিল্প অথবা তাদের উপযোগী কাজে অভ্যস্ত করে এর মাধ্যমে আগের জীবিকার চেয়ে উন্নত মানের জীবন যাপনের ব্যাবস্থ করা এবং সেই সাথে এখানে আগত মানুষদেরকে এই অনৈতিক কাজে নিরুৎসাহিত করার পাশাপাশী মিডিয়ায় এর ব্যাপারে শক্ত সচেতনতা মূলক ব্যাবস্থা গ্রহন করা।
নয়তো হাজার চিল্লাচিল্লি আর হারাম ঘোষনা করেও দুর্বার এই গতিএ কেউ বন্ধ করতে পারবেনা।
ওফ!! অনেক বক বক করে ফেললাম তাই না??