ডিবি পুলিশ পরিচয়ে আটকের পর রাতভর রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ঘুরিয়ে এক বৃদ্ধের কাছ থেকে এক লাখ টাকা চাঁদা নিয়েছে দুষ্কৃতকারীরা। দুষ্কৃতকারীরা ওই বৃদ্ধের কাছে ২০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। নাহলে তাকে ইয়াবা দিয়ে গ্রেফতার দেখিয়ে জেলে দেয়ার হুমকি দেয়া হয়। শেষ পর্যন্ত পাঁচ লাখ টাকায় হয় রফাদফা। এক লাখ নগদ নিলেও বাকি চার লাখ টাকার জন্য দুষ্কৃতকারীরা একাধিকবার ফোন করেছে ওই বৃদ্ধ এবং তার পরিবারের সদস্যদের। ঘটনার ব্যাপারে ওই বৃদ্ধ সবুজবাগ থানায় সাধারণ ডায়েরি করতে গেলে পুলিশ তা রেকর্ড করেনি।
রাজধানীর সবুজবাগ এলাকায় গত ১৮ মে রাতে এই ঘটনা ঘটে। ঘটনার শিকার জহিরুল হক বাবুল (৫৫) নয়া দিগন্তকে বলেন, ওই দিন রাত ৯টার দিকে তিনি দক্ষিণ মান্ডার নিজ বাড়ির নিচতলায় তার ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান জহির ডেইরি ফার্মে আরো ৭-৮ জন লোক নিয়ে বসা ছিলেন। হঠাৎ চারজন লোক অফিসে ঢুকে নিজেদের ডিবি পুলিশ পরিচয় দিয়ে তাকে জোরপূর্বক ধরে নিয়ে গাড়িতে উঠায়। ওই গাড়িটির নম্বর ঢাকা মেট্রো ১১-৬০৬৭। স্খানীয় লোকজন তাকে ধরে নেয়ার ঘটনা প্রত্যক্ষ করেন। গাড়িতে উঠিয়ে ওই বৃদ্ধকে এলোপাতাড়ি মারতে শুরু করে দুর্বৃত্তরা। সেখান থেকে তাকে নেয়া হয় মতিঝিল এজিবি কলোনির মাঠে। মারধরের এক পর্যায়ে দুষ্কৃতকারীরা ওই বৃদ্ধের কাছে ২০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। টাকা না দিলে তারা ইয়াবা ট্যাবলেট দিয়ে তাকে আদালতে পাঠিয়ে দেবে বলে হুমকি দেয়। এমনকি, তাকে বলে তাদের কাছে ৬৮ পিছ ইয়াবা ট্যাবলেট আছে। তা দিয়ে চালান দেয়া হবে। ‘অত টাকা কোথায় পাবো’ এ কথা বললে দুর্বৃত্তরা বৃদ্ধের চোখ কালো কাপড় দিয়ে বেঁধে মতিঝিল থেকে তাকে আজিমপুরের এক মাঠে নিয়ে যায়। তারা বৃদ্ধের আঙুল থেঁতলে দেয়ার জন্য ‘প্লাস’ বের করে। ওই পরিস্খিতিতে প্রহার থেকে রেহাই পেতে জহিরুল পাঁচ লাখ টাকা দিতে রাজি হন। এ সময় দুষ্কৃতকারীদের ব্যবহৃত মোবাইল ফোন দিয়ে জহিরের স্ত্রীকে ফোন দেয়া হয়। টাকা জোগাড় করে বাসার কাউকে না নিয়ে মগবাজার আসতে বলা হয়। এরপর দুষ্কৃতকারীরা জহিরকে নিয়ে মগবাজার রেল লাইনের ওপর যায়। গভীর রাতে জহিরের ভাগ্নে মোক্তার হোসেন, শামীম, বাবু এবং মেয়ের জামাই কালাম এক লাখ টাকা নিয়ে মগবাজার চৌরাস্তার তাজ হোটেলের সামনে যায়। সেখান থেকে তাদেরকে গাড়িতে উঠিয়ে রমনা থানার পাশের রাস্তায় নিয়ে টাকা গ্রহণ করা হয়। এক লাখ টাকা দেখে ভাগ্নে এবং মেয়ের জামাইকে গাড়ি থেকে নামিয়ে দেয়া হয়। পরে তারা প্রতিশ্রুতি দেয় পরদিন সকালে বাকি টাকা পরিশোধ করা হবে। জহির জানান, তাকে ইলেকট্র্রিক শকসহ বিভিন্ন ধরনের নির্যাতনের হুমকি দেয়া হয়। তিনি বারবার দুষ্কৃতকারীদের বলেছেন, তার কোনো দোষ থাকলে তাকে ডিবি অফিসে নেয়া হোক। কিন্তু দুষ্কৃতকারীরা তাকে ডিবি অফিসে না নিয়ে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় গাড়িতে নিয়ে ঘুরে তার ওপর নির্যাতন চালায়। পরদিন ১৯ মে দুপুর সোয়া ১২টা থেকে সাড়ে ১২টার মধ্যে ০১৭১১৯৩৫৮৮০ নম্বর মোবাইল ফোন দিয়ে জহিরের স্ত্রীকে ফোন করে বাকি টাকা নিয়ে ডিবি অফিসের সামনে যাওয়ার জন্য চাপ দেয়া হয়।
হায়রে দেশ... ভোরে চোখ মেলেই এমন খবর পড়তে হয়। মানবীক বোধ গুলো এভাবেই দিনে দিনে হাড়িয়ে যাচ্ছে!!