আপনি যদি বর্তমানে সবসময় চোখ কান খোলাই রাখেন, তাহলে নিশ্চয়ই বাংলাদেশের দক্ষিণ - পশ্চিমাঞ্চলের অন্যতম বৃহত্তম ও স্বনামধন্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় যা কিনা খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় বলেই পরিচিত, সেখানকার বর্তমান উত্তপ্ত পরিস্থিতি সম্পর্কে অবহিত । হলে তো ভালোই, এমনকি না হলেও আপনাকে ঘটনার বিস্তারিতই জানাবো পুরো লেখায় । দয়া করে পুরো লিখাটি মনোযোগ দিয়ে পড়ার পর নিজের মূল্যবান মতামত অবশ্যই দিবেন ।
ঘটনার আসল সূত্রপাত হয় ২০১৯ সালের ১৩ই নভেম্বর । আমরা মোটামুটি সবাই জানি খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় দেশের একমাত্র অরাজনৈতিক উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান (যদিও শুধুমাত্র ছাত্ররাজনীতি নেই কিন্তু নোংরা শিক্ষকরাজনীতি আছে) । অরাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান হওয়ার দরুণ অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের মত এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র আন্দোলন প্রায় হয় না বললেও চলে কিন্তু ২০১৯ সালের ১৩ই নভেম্বর শিক্ষার্থীরা সমবেত হয়ে পাঁচ দফা দাবী নিয়ে আন্দোলনে নামে । এক কথায়, তাদেরকে আন্দোলনে নামতে বাধ্য হতে হয় । এই পাঁচ দফা দাবী ছিলঃ
১) শিক্ষার্থীরা বেতন কমানো, (ফি বছর এই বিশ্ববিদ্যালয়ে বেতন বাড়ানো হচ্ছে গত ১০/১২ বছর ধরে । বর্তমানে যা বেতন তা ১০ বছর আগের তুলনায় প্রায় ২/৩ গুণ)
২) আবাসন ব্যবস্থা নিশ্চিতকরণ, (বিশ্ববিদ্যালয়ে ছেলেদের ৩টি আর মেয়েদের ২টি আবাসিক হল থাকা সত্ত্বেও ফি বছর ডিপার্টমেন্ট বৃদ্ধি করা হলেও আবাসিক হল বৃদ্ধির আর নামগন্ধ নেই)
৩) চিকিৎসা ব্যবস্থা উন্নত করা, (বিশ্ববিদ্যালয়ে মেডিকেল সাপ্লাই খুবই অপর্যাপ্ত, প্রয়োজনের সময় ডাক্তারের অপ্রতুলতা, ঔষধ সাপ্লাই খুবই সীমিত)
৪) অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে অবকাঠামো নির্মাণ (ডিপার্টমেন্টগুলোতে ক্লাসরুম সংখ্যা খুবই কম, সর্বোচ্চ ৩/৪ টি, কোন কোন ডিপার্টমেন্টে ১/২ টি করেও ক্লাসরুম বিদ্যমান)
এবং ৫) ছাত্রবিষয়ক সিদ্ধান্ত গ্রহণে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ (ছাত্ররাজনীতি না থাকার প্রশাসনের সিনিয়র মেম্বাররা এক জোট হয়ে যে সিদ্ধান্ত নেয়, সেটাই সিন্ডিকেটে পাশ করে, এক্ষেত্রে ছাত্রছাত্রীদের বলার কোন সুযোগ থাকে না । শিক্ষকদের মধ্যে চরম আকারে রাজনীতি বিদ্যমান। আওয়ামী লীগপন্থী শিক্ষকরাও আবার লাল দল, সবুজ দল ইত্যাদি নানান ভাগে বিভক্ত )।
দাবী আদায়ে ছাত্রদের এই আন্দোলন ছিল অত্যন্ত শান্তিপূর্ণ এবং এসব দাবী আদায়ে মানবিক দিক বিবেচনা করার জন্য একটি লিখিত স্মারকলিপি ছাত্রবিষয়ক পরিচালকের মাধ্যমে উপাচার্যের কাছে পেশ করে ছাত্রছাত্রীরা। কিন্তু এই মানবিক দিক বিবেচনা করতে বয়েই গেছে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় (খুবি) প্রশাসনের। কোনো সমাধান না পেয়ে ২০২০ সালের ১ জানুয়ারি শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে নামেন শিক্ষার্থীরা। তাতেও প্রশাসনের ভ্রুক্ষেপ না দেখে সেই চলমান আন্দোলনেই সামান্য হার্ড লাইনে যেতে বাধ্য হয় তারা (যেমনঃ প্রশাসনিক ভবনে তালা মেরে দেওয়া ইত্যাদি)। পাঁচ দফা দাবিতে খুবির প্রশাসনিক ভবনে তালা
পরিশেষে টানা ৪/৫ দিন আন্দোলনের পর এই আন্দোলনের হেতু ৫ দফা ন্যায্য দাবীগুলো দ্রুত মেনে নেবার মৌখিক প্রতিশ্রুতি দেয় প্রশাসনের পক্ষ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়েরই সাবেক ছাত্র ও বর্তমান ছাত্র বিষয়ক পরিচালক অধ্যাপক মো. শরীফ হাসান লিমন ।
তবে এতটুকু পর্যন্ত ঠিকই ছিল, বিপত্তি বাধে এর কিছুদিন পর আন্দোলন চলাকালীন সময় দুইজন শিক্ষকের সঙ্গে অসদাচরণের অভিযোগ তোলায়। এই অভিযোগের প্রেক্ষিতে খুবি প্রশাসন একটি ডিসিপ্লিনারি কমিটি গঠন করে দুইজন শিক্ষার্থীকে চূড়ান্ত করে, তারা হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস ও সভ্যতা ডিসিপ্লিন (খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে ডিপার্টমেন্ট শব্দটাকেই ডিসিপ্লিন বলা হয়) এর ২০১৬/১৭ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ইমামুল ইসলাম সোহান ও বাংলা ডিসিপ্লিনের ২০১৭/১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ মোবারক হোসেন নোমান (যে কিনা বিশ্ববিদ্যালয় ভলিবল দলের সদস্য)।
দোষী ছাত্র চিহ্নিত করে অতঃপর ডিসিপ্লিনারি কমিটি এই দুই শিক্ষার্থীর বক্তব্য জানতে চায় । কিন্তু শুধুমাত্র অভিযোগের ভিত্তিতে দুইজন শিক্ষার্থীকে সুষ্ঠু তদন্ত ছাড়াই অভিযোগে অভিযুক্ত করাই প্রমান করে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রছাত্রীদের উপর শিক্ষকদের দৌড়াত্ব কতটুকু । যাই হোক, পরবর্তীতে ঐ দুই শিক্ষার্থীকে তাদের নিজেদের পক্ষে সাফাইতে কিছু বলার জন্য অতি সংক্ষিপ্ত সময় এবং শুধুমাত্র সাক্ষাতে উপস্থিত থেকে মৌখিক বক্তব্য দিতে বলা হয় কিন্তু যখন শিক্ষার্থীরা মৌখিক বক্তব্য প্রদান না করে লিখিত বক্তব্য প্রদানের জন্য অনুমতি চায়, তখন সেই অনুমতি তাদেরকে দেওয়া হয় না । বরং সোহান ও নোমানকে যথাক্রমে ১ বছরের (২ সেমিস্টার) ও ২ বছরের (৪ সেমিস্টার) জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল একাডেমিক কার্যক্রম থেকে বহিস্কার করা হয়। তাদেরকে বলা হয়, তারা এর বিরুদ্ধে ঐ ডিসিপ্লিনারি কমিটির কাছে আপিল করতে পারবে । কিন্তু শিক্ষার্থীদের কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে শাস্তি ঘোষণা করে আবার পরবর্তীতে আপিল করার সুযোগ করে দেওয়াটা যেন “নিজে পিটিয়ে আবার নিজেই হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে দেওয়া” এর মতন । পক্ষপাততুষ্ট না হলে এটা সবার কাছেই অন্যায্য কর্মকাণ্ড হিসেবে প্রতীয়মান হবে ।
আন্দোলন এবং অভিযোগের হেতু বিষয়টি ঘটে যাবার প্রায় এক বছর পর ২০২১ সালের ১৩ই জানুয়ারী ডিসিপ্লিনারি কমিটি তথা খুবি প্রশাসন এই শাস্তি ঘোষণা করে । অথচ করোনা ভাইরাস মহামারির প্রকোপের কারণে ৩০ই মার্চ, ২০২০ থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রছাত্রীদের একাডেমিক কার্যক্রম কার্যত বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবনগুলোতে বন্ধ রাখা হয়েছে, তার পরিবর্তে অনলাইন কার্যক্রম চালু আছে । সেই হিসেবে একটি বিষয় কিন্তু এখানে লক্ষ্যণীয়, খুবি প্রশাসন কিন্তু সুবিধাজনক সময়েই শাস্তির ঘোষণা করলো, যাতে ছাত্রছাত্রীরা স্বশরীরে পুনরায় এই শাস্তির প্রতিবাদ না করতে পারে। কিন্তু তাদের অনুমান যে ভুল, তার প্রমান তারা পেতে থাকে ঠিক এর পর থেকেই ।
ন্যায্য একটি আন্দোলনের ফলশ্রুতিতেই এই শাস্তি, এটা যদিও সবার জানা কিন্তু মূল অভিযোগে বলা হলো, শিক্ষকদের সাথে দুর্ব্যবহার ।
মূল অভিযোগ ছাত্র আন্দোলনের সময় বিশ্ববিদ্যালয়েরই দুইজন শিক্ষক এবং ফরেস্ট্রি এন্ড উড টেকনোলজি ডিসিপ্লিনের অধ্যাপক (সম্পর্কে তারা স্বামী-স্ত্রী) এর সাথে বাজে আচরণ ও অশোভন আকারে বাক্যালাপ অথচ সেদিনের করা ছাত্রদের ভিডিওতে এমন কিছুর প্রমান পাওয়া যায়নি । সেই ঘটনার ভিডিও লিংকঃ আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের মাঝে দুইজন সিনিয়র শিক্ষকের কথোপকথন
শিক্ষার্থীরা বুঝতে পেরেছিল ডিসিপ্লিনারি কমিটি শুধু এই স্বৈরাচারী খুবি প্রশাসনের সাজানো স্টেজ । এদের কাছে আপিল করাও যা আর সারাদিন সমুদ্র থেকে পানি তুলে সমুদ্রকে খালি করার চেষ্টাও তা । লাভের লাভ কিছু হবে না শুধু অহেতুক কালক্ষেপন হবে ।
তাই তারা দুইজন আরও কিছু শিক্ষার্থীদের সাথে নিয়ে ১৬ই জানুয়ারী ২০২১ খুলনা প্রেসক্লাবে একটি সংবাদ সম্মেলন করে । সেখানে শিক্ষার্থীরা তাদের অন্যায্য বহিস্কারাদেশ প্রত্যাহারের যৌক্তিকতা লিখিত আকারে পেশ করেন ।
প্রথমা আলো পত্রিকার পক্ষ থেকে শিক্ষার্থীদের অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রবিষয়ক পরিচালনা ও শৃঙ্খলা বোর্ডের সদস্যসচিব (ডিএসএ) অধ্যাপক মো. শরীফ হাসান প্রথম আলোকে বলেন, ওই শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে আসলে কোনো অভিযোগ ছিল না। তদন্ত কমিটি তাঁদের ডেকেছিল অভিযোগের ব্যাপারে তথ্য অনুসন্ধানের জন্য। কিন্তু তাঁরা তদন্ত কমিটিকে কোনো তথ্য না দিয়ে অসহযোগিতা করেন এবং অনুমতি ছাড়া বক্তব্য (কমিটি মৌখিক বক্তব্য চাইলেও, শিক্ষার্থীরা মৌখিক বক্তব্য না দিয়ে লিখিত বক্তব্য দিতে চেয়েছিল) রেকর্ড করার চেষ্টা করেন। যেহেতু তাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল না এ কারণে তাঁদের অভিযোগের নথি দেওয়া হয়নি। মো. শরীফ হাসান বলেন, চিঠি যাওয়ার ১০ দিনের মধ্যে শিক্ষার্থীরা চাইলে একাডেমিক কাউন্সিলে সাজা মওকুফের জন্য আবেদন করতে পারবেন।
কতটা হাস্যকর !! অভিযোগ নেই অথচ শাস্ত প্রদান করাও শেষ !!
শিক্ষার্থীরা সেই সংবাদ সম্মেলনে তারা খুবি প্রশাসনকে ৪৮ ঘণ্টার একটি আল্টিমেটাম দেয় তাদের শাস্তি তথা বহিস্কারাদেশ বিনাশর্তে প্রত্যাহার করার, অন্যথায় ৪৮ ঘণ্টা শেষে তারা আমরণ অনশন শুরু করবে । ১৭ই জানুয়ারী ও ১৮ই জানুয়ারী এই ৪৮ ঘণ্টা সময়ে ঐ দুইজন শিক্ষার্থী আরও কিছু শিক্ষার্থীদের নিয়ে খুবির প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান নেয় । সেখানে তারা সাময়িক অনশন কর্মসূচি হাতে নেয় ।
১৮ই জানুয়ারী আনুমানিক বিকেল সাড়ে পাঁচটায় উপাচার্য ফায়েকুজ্জামান শিক্ষকদের একটি দল নিয়ে অনশনরত শিক্ষার্থীদের সাথে দেখা করতে আসেন । তিনি ছাত্রদের সাথে কথা বলেন । কিন্তু তার বলা কথাগুলোর মাঝে স্পষ্টতই ৪টি মারাত্মক অসংগতি খুঁজে পায় সেখানে অবস্থানরত সকল শিক্ষার্থীবৃন্দ -
১. প্রথম আলোতে যাওয়া ছাত্রবিষয়ক পরিচালকের বক্তব্যকে তিনি 'তাঁর ভুল হতে পারে' এমনভাবে অভিহিত করেছেন।
২. বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল ছাত্র-শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারী সবার ফোন কল রেকর্ডিংসহ সকল ব্যক্তিগত তথ্য তাঁর কাছে আছে বলে দাবি করেছেন।
৩. তিনি বলেছেন, বহিষ্কৃত দুজন শিক্ষার্থী গাড়ি থেকে শিক্ষকদেরকে টেনে নামিয়েছে। এ বিষয়ে সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষার্থীরা এই ঘটনার প্রমাণ চাইলে তিনি কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি।
৪. বহিষ্কৃত শিক্ষার্থীদের আমরণ কর্মসূচি দেখে তিনি বলেছেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে এটি কোনো ভালো ঘটনা না।
খুবিতে স্বৈরাচারী মনোভাব কায়েম করার পিছনে যার হাত সবচেয়ে বেশি তিনি কিন্তু এই উপাচার্য ফায়েকুজ্জামানই । সরকারদলীয় মনোভাবে মদদপুস্ট এই ব্যক্তির বিরুদ্ধে দুর্নীতি, যৌন নিপীড়নসহ রয়েছে নানা অভিযোগ । তার ক্ষমতা অস্তপথে, এমন সময় তিনি দুর্নীতি এবং ক্ষমতার সর্বোচ্চ অপব্যবহার করে ফায়দা লুটে নিচ্ছেন, অবৈধ ভাবে পদ বৃদ্ধি করছেন, তাছাড়াও মালি থেকে শুরু করে শিক্ষক নিয়োগে দারুণ স্বজনপ্রীতি ও দলপ্রীতি মনোভাব দেখিয়ে তিনি রেকর্ড করে চলেছেন । তাই তার কাছ থেকে অসংগতিপূর্ণ বক্তব্য পাওয়াটা, আমার মধ্যে আশ্চর্যান্বিত হবার ইচ্ছার উদ্রেক ঘটায় না ।
উপাচার্যের মেয়াদ শেষের আগেই বিধি লঙ্ঘন করে নিয়োগের অভিযোগ
উপাচার্যের যৌন নিপীড়নের প্রতিবাদে উত্তাল খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়
৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটামেও খুবি প্রশাসনের ইতিবাচক মনোভাবের দেখা না পেয়ে অবশেষে ১৯ই জানুয়ারী থেকে আমরণ অনশন শুরু করে অন্যায্যভাবে বহিষ্কৃত ঐ দুই শিক্ষার্থী সোহান ও নোমান । এমনকি এই ৪৮ ঘণ্টাও কনকনে শীতের রাত তারা কাটিয়েছে খুবীর প্রশাসনিক ভবনের সামনেই । তবে শিক্ষক প্রতিনিধিদল যে এরপর আর আসেনি, তা নয়, ১৯ই জানুয়ারীতেই একটি শিক্ষক প্রতিনিধি দল বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল ইউনিটের একজন চিকিৎসক নিয়ে এসে অনশনরত শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য পরিক্ষা করতে আসে কিন্তু স্থান পরিবর্তনের কথা বললে ঐ দুই শিক্ষার্থীসহ বাকি শিক্ষার্থীরা আপত্তি জানায় । তাই চিকিৎসক ও শিক্ষক প্রতিনিধিদলও ফিরে যায় সেখানে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতে পারবে না এই বলে ।
বহিষ্কৃত ছাত্রদের অনশনের মধ্যেই ১৮ই জানুয়ারী খুবি প্রশাসন ইতিহাস ও সভ্যতা ডিসিপ্লিনের ২০১৬/১৭ ব্যাচের শিক্ষার্থী ইমামুল ইসলাম সোহানের বহিস্কারাদেশ প্রত্যাহার না করে বরং আরও ১ বছর বাড়িয়ে দেয় খুবি প্রশাসন, সর্বমোট ২ বছর (৪ সেমিস্টার) করে দেয় । এ যেন মরার উপর আবার ঘাড়ার ঘা । শুধু সোহানের শাস্তি বাড়ানো না, খুবি স্বৈরাচারী প্রশাসন ঐ ১৮ই জানুয়ারী তারিখেই অবাধ্যতা ও অসদাচরণের জন্য অভিযোগে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩ জন শিক্ষককে অপসারণ করার সিদ্ধান্ত নেয় । এই তিন শিক্ষক হলেন: বাংলা ডিসিপ্লিনের সহকারী অধ্যাপক আবুল ফজল, বাংলা ডিসিপ্লিনের প্রভাষক শাকিলা আলম এবং ইতিহাস ও সভ্যতা ডিসিপ্লিনের শিক্ষক হৈমন্তী শুক্লা কাবেরী। অবাধ্যতা ও অসাদাচারনের অভিযোগ কাগজ কলমে হলেও ঐ ৩ শিক্ষককে অপসারনের মূল কারণ ৫ দফা শিক্ষার্থীদের ন্যায্য আন্দোলনে সম্পূর্ণ নৈতিক সমর্থন ও একাত্মতা জানানো । এবার কি বুঝা গেলো, কেন এতক্ষণ বারবার খুবির প্রশাসনকে স্বৈরাচারী বলছি? স্বৈরাচারী মাত্রই যৌক্তিক দাবী ও বাকস্বাধীনতাকে হরণ করে, খুবিতেও তাই হয়, এখানে প্রশাসনের বিরুদ্ধে ন্যায্য বললেও কিন্তু আপনার আর রক্ষা নেই ।
(চলবে - পরবর্তী ২য় পর্বে)
২য় পর্বের লিংকঃ ২য় পর্ব
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে জানুয়ারি, ২০২১ দুপুর ১:২৩