মিসেস সুমনা চৌধুরী তখনও সেই রুমে শুয়ে বিশ্রাম নিচ্ছে, তার কেন জানি খুব শরীর খুব দুর্বল লাগছে । কিন্তু হাসান সাহেব যে এমনভাবে ভেঙ্গে পড়েছেন, সেই খবরটা তাকে দেওয়া হয়নি । এই খবর শুনলে যে স্বামীর প্রতি কর্তব্য আদায় করতে গিয়ে নিজের শরীরে আরও ঝক্কি পোহাতে হবে, এই রিস্কেই তাকে খবরটা দেওয়া হল না । কিন্তু ওদিকে হাসান সাহেব এখন প্রচণ্ড মানসিক অস্থিরতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন ।
যাই হোক, বন্ধুর পরামর্শেই স্ত্রীকে বাড়িতে নিয়ে আসলেন হাসান সাহেব । অবশ্য আসার সময় ডাঃ হান্নান বারবার করে বলে দিয়েছেন মিসেস সুমনা চৌধুরীকে যেন কোনমতেই কোনকিছুতেই বেশি চাপ না দেওয়া হয় । পারলে বাড়ির কাজ থেকে তাকে পুরোপুরি ছুটি যেন দেওয়া হয় । তার শরীরের যে অবস্থা, এই অবস্থায় বাড়ির কাজ করলে শরীর আরও খারাপ হওয়ার সম্ভাবনা আছে । তাছাড়াও বেশ কয়েকটি হাই পাওয়ারের ঔষুধ দেওয়া হয়েছে, এগুলো নিয়মিত খেলে এমনি ঘুম আসার সম্ভাবনা বেশি । তাই এমনিতেই চাইলেও হয়তো মিসেস সুমনা চৌধুরী নিজেকে বাড়ির কাজের সাথে সম্পৃক্ত করতে পারবেন না । তাকে ছুটি নিতেই হবে । তাই চিন্তা-ভাবনা করেই বাড়ির জন্য একটি ছুটা বুয়া রাখা হলো । তাকে অবশ্য আয়ার কাজও করতে হবে । মিসেস সুমনা চৌধুরীর অসুস্থতার কারণেই বাচ্চা দুইটাকে দেখাশুনাও তাকেই করতে হবে । এতসব চিন্তা করেই বেশ মোটা অংকের মাইনে দিয়েই রাখা হলো মহিলাকে । নামে ছুটা হলেও একরকম বান্ধা বুয়ার মতই কাজ অনেকটা । মহিলা কাজে যোগ দিয়েই সবার মন জয় করতে লাগলো আস্তে আস্তে । বেশ কয়েকদিনের মধ্যেই বাড়ির সকলেরই মন জয় করে ফেললো সে । যাক এমন একজনকে বাচ্চাদের দেখাশুনা আর বাড়ির দায়িত্ব দেয়ার কারণে তার স্ত্রী বিশ্রামের অনেক সুযোগ পাবে, ভেবেই মনে মনে প্রশান্তি মিললো হাসান সাহেবের ।
হাসান সাহেবে ও মিসেস সুমনা চৌধুরীর দশ বছরের সাংসারিক জীবনে দুই সন্তান রয়েছে । বড় সন্তান ছেলে । আট বছর বয়স । বাড়ির পাশের একটি কিন্টারগার্ডেন স্কুলে ক্লাস ফোরে পড়ে । আর ছোট সন্তান মানে মেয়েটির চার বছর বয়স । এখনও স্কুলে ভর্তি হয়নি সে । হাসান সাহেবের দুই সন্তানের উপর তাদের মায়ের অসুস্থতার যেন কোন প্রভাব না পড়ে সেদিকটাতে হাসান সাহেব সবসময় সতর্ক থাকলেন । যদিও বুয়াকে বাচ্চাদের দেখাশুনার দায়িত্ব দিয়ে রেখেছেন, তবু মনে করে প্রতিদিন কাজ শেষে যতটুকু সময় থাকে তা তিনি বাচ্চাদের প্রয়োজনে কাটাতে লাগলেন । বাচ্চাদের প্রতি তার স্বামীর আলাদা সময় দেওয়ার মিসেস সুমনা চৌধুরী মনে মনে বেশ খুশি হলেন ।
১৬ই সেপ্টেম্বর হাসান চৌধুরী এবং মিসেস সুমনা চৌধুরীর ম্যারেজ ডে । দশ বছরের বৈবাহিক জীবন অতিবাহিত হওয়ার পর এমন একটি বিশেষ দিনের আপিল ধীরে ধীরে বিবাহিতদের মধ্যে কমে আসে স্বাভাবিকভাবে । যেমনটা কমে গিয়েছে মিসেস সুমনা চৌধুরীর মধ্যে । তাই তো গত বছর তাদের এই বিশেষ দিনটি পালন করার কোন সুযোগই ছিল না । হাসান সাহেব কাজে প্রচণ্ড ব্যস্ত ছিলেন । এমনকি মিসেস সুমনা চৌধুরীও তার স্বামীকে তেমন চাপ দেননি কোন । কিন্তু এবারের কথা ভিন্ন । মিসেস সুমনা চৌধুরীর কাছে এই দিনের গুরুত্ব না থাকলেও হাসান সাহেবের কাছে এখন এই দিনের গুরুত্ব অনেক । আর মাত্র তিনদিন পরেই সেই বিশেষ দিনটি । তো এই বিশেষ দিনটিকে সামনে রেখে তিনি তার দুই সন্তানকে নিয়ে একটি সারপ্রাইজ পার্টির পরিকল্পনা করলেন । কিন্তু এই পার্টির সম্পর্কে নিজে তার স্ত্রীকে কিছুই বললেন না, এমনকি দুই সন্তানকেও তাদের মা কে বলতে না করে দিলেন ।
(বাকীটা আগামী পর্বে)
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে জানুয়ারি, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:৩৫