আগের পর্বগুলো পড়ুনঃ
সেন্টমার্টিনে এক বিদেশীর কাছে জীবন শিক্ষা - বাস্তব অভিজ্ঞতার আলোকে - পর্ব - ১
সেন্টমার্টিনে এক বিদেশীর কাছে জীবন শিক্ষা - বাস্তব অভিজ্ঞতার আলোকে - পর্ব - ২
- তা পরিবারের কে কে আছে আপনার ? সরি, ব্যক্তিগত প্রশ্ন করে বসলাম মনে হয় ।
- না, সমস্যা নেই । আমার পরিবারে আমি, আমার দুই বোন, আমার বাবা-মা এই তো ।
- বাহ, ছোট পরিবার !! ভালো তো ।
- আসলে আমাদের পরিবারগুলো আরও ছোট হয় । আমরা তিন ভাই-বোন কেউই বাবা-মায়ের সাথে থাকি না । আমি গার্লফ্রেন্ডের সাথে থাকি, আমার বোনেরাও তাদের বয়ফ্রেন্ডদের সাথে থাকে । তাই বাবা-মা দুইজনে নিজেদের মত থাকে ।
- হ্যাঁ, আপনাদের সংস্কৃতি তো এরকমই, তাই না ?
- হুম ।
- আমরা চার ভাইবোন আমাদের বাবা-মায়ের সাথেই থাকি ।
- হুম ।
- আচ্ছা, আরেকটা কথা জিজ্ঞেস করবো ? আপনি কি বিলিভার নাকি নন-বিলিভার ?
- মানে গড ?
- হুম, গড ।
- আমি আসলে নন-বিলিভার ।
- মানে কি ? আপনি কিভাবে পৃথিবীতে আসলেন, কে মাটি দিচ্ছে, কে হাওয়া দিচ্ছে, কে পানি দিচ্ছে, এগুলো আপনাকে ভাবায় না ?
- এগুলো তো ন্যাচারাল প্রসেস । আসলে বিলিভার আর নন-বিলিভারের মধ্যে সবচেয়ে বড় পার্থক্য বিলিভাররা সবসময় ভীতু । তারা কোনকিছু করতে গেলেই ভয় পায় । তারা সাহস নিতে ভয় পায়, তারা সাহস দিতে ভয় পায় ।
- মানে ?
- আমাদের ধর্মে মানুষ কোন পাপ করলেই ফাদারের কাছে গিয়ে সেটা স্বীকার করে আর ভাবে সেটা মোচন হয়ে গেছে ।
- আচ্ছা, দাঁড়ান ! দাঁড়ান ! এটা কি সত্যিই মোচন হয় ? মানে এটা কি আদৌ সম্ভব ?
- না, এটা তো আমিও বিশ্বাস করি না । দেখেন, এই কারণেই তো আমি নন-বিলিভার । আমার কাছে মানুষই সব । মানুষের জীবনই সব । মানুষের দৃষ্টিভঙ্গিই সব ।
- আপনার বাবা-মাও কি নন-বিলিভার ? আপনার বোনরাও ?
- না, তারা কেউই নন-বিলিভার না । তবে হ্যাঁ, তারা চার্চে একটু কম যায় ।
- আপনি তাহলে নন-বিলিভার হলেন কিভাবে ?
- কারণ আমি জীবন ভালো করে পর্যবেক্ষণ করেছি ।
- কিন্তু আমাদের ধর্মে তো বিষয়টা এত জটিল না । আমরা বিশ্বাস করি, ভালো কাজ করলে গুড আর খারাপ কাজ করলে সিন মানে পাপ ।
- হ্যাঁ, এটা এই কারণেই যে আপনি বিলিভার । যদি বিলিভার না হতেন, তবে...... ?
- তবে আর কি, ইচ্ছামত পাপ করে বেরাতাম ।
- ঠিক তা না । খারাপ কাজটুকু আপনি নন-বিলিভার হলেও কম করবেন কারণ কেউই চায় না কারও জীবন ধারনের উপায়গুলো খারাপ হোক । জীবনে শুধুশুধু অশান্তি আসুক ।
- সরি, আমি আসলে ইংরেজি শব্দগুলো ঠিকভাবে বলতে পারছি না । মনে হচ্ছে আমি নার্ভাস ।
- না, ঠিক আছে ।
- কিন্তু আমি তো আমার বন্ধুদের সাথেও এমন ইংরেজি প্র্যাকটিস করি, নিজেরা একে অন্যের সাথে কথা বলি । তখন তো আমার বাধে না, এখন কি সমস্যা, সেটা তো বুঝছি না ।
- আসলে আপনি আপনার বন্ধুদের সাথে যখন ইংরেজি বলেন তখন কিন্তু আপনরা ভুলমিশ্রিত ইংরেজিও বলেন তবে কেউ কারও সেই ভুল খেয়াল করে না ।
- হয়তো । কিন্তু ইংরেজি তো আমরা শিখি । এটা তো আমাদের মাতৃভাষাও না ।
- তাতে কি !! ইংরেজি তো আমাদেরও মাতৃভাষা না ।
- তাহলে আপনার মাতৃভাষা কোনটি ?
- অস্ট্রেইয়ান ।
- কিন্তু আপনার ইংরেজি তো অনেক স্বাভাবিক । আপনি তো ইংরেজিতে অনর্গল আর স্বাভাবিকভাবেই কথা বলতে পারেন, কিভাবে ?
- আসলে আমাদের ইংরেজি সেই ছোটবেলা থেকেই শিখতে হয় । আর আমাদের যেখানে আমরা চর্চা করি, সেখানে আমাদের শুধুই ইংরেজিতে কথা বলতে হয়, সেই ছোটবেলা থেকেই । তাই...
- ওহ...
(দীর্ঘক্ষণ ধরে একের পর এক প্রশ্ন, মনে হচ্ছিল আমি লোকটির ইন্টার্ভিউ নিচ্ছি । কিন্তু লোকটি বেশ আন্তরিকতার সাথেই আমার একের পর এক প্রশ্নের উত্তর দিয়ে যাচ্ছিলেন । অবশ্য কথোপকথন এখানেই শেষ নয় । বাকীটা আগামী ও শেষ পর্বে)
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৬ রাত ২:০৬