রোযার দৈহিক উপকারিতা_বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ ।
ইসলামের বিধি-বিধান বা রাসুল সাঃ এর প্রতিটি সুন্নতের মধ্যেই মানুষের ইহ ও পরকালীন কল্যাণ নিহিত আছে । ইসলাম হচ্ছে মানবজাতির স্বভাব-প্রকৃতির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ বাস্তবভিত্তিক এক ধর্ম।আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞানের যত উন্নতি হচ্ছে ততই প্রমাণিত হচ্ছে শরীয়তের অনুশাসনগুলোর বাস্তবতা ও প্রয়োজনীয়তা ।
ঈমানদার লোকেরা কোনরূপ ব্যাখ্যা বিশ্লেষন বা বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা, নিরীক্ষার জন্য অপেক্ষা করে না । নবী প্রেমে অন্ধ কোটি কোটি মানুষ হাজার বছর ধরে যেভাবে তাঁর কথা ও কাজের অনুসরণ করে আসছে ; আজকের উম্মতরাও গভীর আস্থা ও পূর্ণ বিশ্বাস নিয়ে তাঁর আদর্শের উপর অবিচল। প্রকৃত মুসলমানরা এ নীতিতে বিশ্বাসি যে , ইসলামের বিধি-ব্যপস্থা কোন যুক্তি বা দর্শনের উপর নির্ভরশীল নয়। ইসলাম হচ্ছে কতগুলো বিশ্বাসের নাম । এর নিজস্ব একটা দর্শন রয়েছে যা বিশ্বাস, জ্ঞান ও কর্মের সমন্বয়ে রুপ লাভ করেছে ।
বিজ্ঞানের অগ্রগতি অন্যান্ন ধর্ম বা মতবাদের ধারনা, অবিশ্বাসকে অবাস্তব কল্পকাহিনী বা অসার আখ্যা দিলেও আজ পর্যন্ত ইসলামের কোন বিশ্বাস বা অনুশাসনকে ভুল প্রমানীত করতে পারেনি।আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞান যতই উন্নত হচ্ছে ততই প্রমাণিত হচ্ছে ইসলামের বিধি-বিধানের বাস্তবতা ও প্রয়োজনীয়তা ।সৌরজগত সম্পর্কে পবিত্র কোরআনের ভাষ্যগুলো একে একে প্রমাণিত হচ্ছে। মাদকদ্রব্য, ধূমপান ও উচ্ছৃংখল যৌনতার ভয়াবহ পরিণতি সম্পর্কে শরীয়ত আজ থেকে চৌদ্দ শ’ বছর আগে যে সতর্কবাণী উচ্চারন করেছিল, চিকিৎসা বিজ্ঞানের উন্নতির মাধ্যমে ঐ সত্য প্রমাণিত হওয়ার পর এখন গোটা বিশ্ব ইসলামের ঐ সতর্কবাণীর সাথে সুর মিলিয়ে চিৎকার করছে।
বিজ্ঞান ইসলামের প্রতিটি অনুশাসনের উপযুক্ততা ও প্রয়োজনীয়তা স্বীকার করে। বহু বছর আগেই চিকিৎসা বিজ্ঞান ইসলামের দৈহিক অনুশাসনগুলিকে স্বাস্থের জন্য উপকারী বলে ঘোষণা করেছে। বিশেষ করে বছরে এক মাস রোযা পালন করা মানুষের জন্য শুধু উপকারীই নয় অপহার্য বলে অনেক চিকিৎসক মত প্রকাশ করেছেন।
চিকিৎসকদের মতে রোযা দেহের রুগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। শরীরের পরিপাক প্রক্রিয়ায় সুস্থতা বিধানে ব্যাপক ভূমিকা পালন করে ।আমরা সাধারণত যে খাদ্য গ্রহণ করি, তাঁর মধ্যে আমিষ, শ্বেতসার ও স্নেহ জাতীয় খাদ্যগুলো দেহের মধ্যে জীর্ণ ও শোষিত হয়ে গ্লুকুজ আকারে পোটালশি হয়ে যকৃতে প্রবেশ করে । এভাবে মানুষের দেহে যতটা গ্লুকোজ উৎপন্ন হয় তাঁর সবটা প্রতিনিয়ত খরচ হয় না। যকৃত হতে কিছু গ্লুকোজ রক্তে প্রবাহিত হয়ে দেহের চালিকা শক্তিতে কর্মক্ষম রাখে। বাকি অংশ গ্লাইকোজেন রুপে যকৃতের মাংসপেশিতে জমা হয়। কিছু অংশ চর্বিজাতীয় পদার্থে পরিণত হয়ে চামড়ার নীচ এবং শরীরের অন্যান্ন স্থানে জমা হয়। এই সঞ্চিত গ্লুকোজ ও চর্বি উপবাসের কারনে পুনরায় গ্লুকোজে পরিণত হয়ে রক্তের মধ্যে প্রবাহিত হয়।এ রূপান্তরিত গ্লুকোজ দেহের তাপ ও শক্তি বৃদ্ধিতে দ্বিগুণ সহায়তা করে। রোযা পালনের ফলে গ্লাইকোজেন ও চর্বি দরকার মত খরচ হয়ে যায়।ফলে দেহের শক্তি ও কর্মদক্ষতা বৃদ্ধি পায়। ক্ষতিকর চর্বি জমতে পারে না। মেদ কমে গিয়ে শরীর সুগঠিত হয়।
পেপটিক আলসারে আক্রান্ত রুগীদের রোযা রাখা উচিৎ নয় যারা বলেন; তাদের ধারনা ভুল প্রমাণিত হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে যে অতিরিক্ত হাইড্রোক্লোরিক এসিডের জন্য পাকস্থলিতে গ্যসটিক ও ডিওডেনাল আলসার হয় সে এসিড সাধারণত আহারের পর পরই বেশী নির্গত হয়। অপর দিকে পাকস্থলী খালি থাকলে এ এসিড কম নির্গত হয়। প্রীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা গেছে যে, রোযা অবস্থায় এ এসিড সবচেয়ে কম সৃষ্টি হয় এবং রোযার কারনে তা কমতে থাকে। তাই পেপটিক আলসারের কথে বলে রোযা না রাখা অযৌক্তিক ও অবৈজ্ঞানিক কাজ হবে। তবে সাময়িক কোন অসুবিধার জন্য চিকিতসিকের পরামর্শ নেয়া যেতে পারে।
মার্মাথিউ পিকথল বলেছেন, সভ্যতার এই চরম যুগ সন্ধিক্ষণেও রোযার উপকারিতা সম্পর্কে কারো দ্বিমত নেই। সকল মানুষকে কর্মক্ষম থকার জন্য চেষ্টা করতে হয়। পরিশ্রমের কি গ্লানী তা প্রত্যক্ষ করারা জন্য রোযার সাধনা এক উৎকৃষ্ট মাধ্যম।
ডাঃ আর ক্যাস ফোর্ডের মতে রোজা হলো, পরিপাক শক্তির শ্রেষ্ঠ সাহায্যকারী। রমযান সাধনা সম্পর্কে প্রিন্সিপাল ডি এফ ফোর্ট বলেছেন, রোযা পালন আত্মশুদ্ধি ও সংযমের অন্যতম উপায়। যার মাধ্যমে স্রষ্ঠার পরিচয় ও অনুগ্রহ লাভ করা যায়, স্বাস্থ রক্ষা করা সহজ হয়, হিংসা-বিদ্ধেষ ও কুপ্রবৃত্তি হতে বেঁচে থাকা যায়।
ডঃ ডিউই লিখেছেন, জীর্ণ এবং ক্লিষ্ট পাকস্থলী হতে খাদ্যদ্রব্য সরিয়ে ফেললে রুগ্ন মানুষটি উপবাস থাকে না, সত্যিকারভাবে উপবাস থাকে তাঁর রোগটি। রোযা দ্বারা আলসার জাতীয় রোগ, যকৃতের ফোঁড়া, মূত্রাশয়ের নানা উপসর্গ, ফুসফুসের কোন কোন সমস্যা, খুশখুশে কাশি, লিভার সিরোসিস, নিউমোনিয়া, সর্দি ও ইনফ্লোয়েঞ্জা ইত্যাদি হিতে অরোগ্য লাভ করা যায়। সিয়ামের কারনে মস্তিষ্ক এবং স্নায়ুতন্ত্র সর্বাধিক উজ্জিবীত হয়। পক্ষাঘাত ও আধাপক্ষাঘাত রোযার কারনে দ্রুত সের যায়। সিয়াম দ্বারা মানসিক শক্তি ও বিশেষ বিশেষ অনুভূতিগুলো জাগ্রত হয়। স্মরণশক্তি বাড়ে, প্রীতি, ভালোবাসা, সহানুভুতি অতীন্দ্রিয় এবং আধ্যাত্মিক শক্তির উন্মেষ ঘটে ।