somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কাফন : মুন্সি প্রেমচাঁদের অনবদ্য একটি গল্প

১৯ শে নভেম্বর, ২০১৪ রাত ১২:১৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


মুন্সি প্রেমচাঁদ (জন্ম ৩১ জুলাই, ১৮৮০-মৃত্যু ৮ অক্টোবর, ১৯৩৬)

ঝুপড়ির দুয়ারে বাপ-বেটা দু’জন বসে আছে । চুপচাপ । সামনে একটা আগুনের কুণ্ডুলি নিভু নিভু জ্বলছে । ভেতরে বেটার যুবতী বউ বিধিয়া প্রসব বেদনায় উথাল পাথাল আছাড় খায় । থেকে থেকে তার মুখ থেকে এমন মর্মবিদারক আর্তনাদ বের হয়ে আসে যে, উভয়ের কলিজা পানি হয়ে যায় ।

শীতের রাত । চারদিক নৈশব্দে ডোবা । সারা গ্রাম অন্ধকারের চাদরে ঢাকা ।
- মনে হচচে বাঁচপে নাকো । দিনমানই তড়পি গেলো । যা তো যা, মাধু, একটু দিকি আয় । বাপ হাসু বললো ।
- মরিই গিলি জলদি মরচে না ক্যান ? কী দিকি আসপো গো ? ভয়-খাওয়া পাখির মতো জবাব দিলো মাধু ।
- তুই একটু শক্ত-মক্ত পাষাণ আচিস হে । বচ্ছর ভরি যার সাতন জীবনের সুকু-মুকু খেললি তার সাতে এমন অকরুণ করচিস ?
- বললি-ই হবি ? ওর ওই তড়পানি, তাতে আবার হাত-পার ছট-ফটি, ওসব আমি দিকতি পারি নাকো ।

একে তো চামারের ঘর । তারপর আবার গাঁ জুড়ে তার বদনাম আছেই । হাসু একদিন কাজ-কাম করে তো তিন দিন করে আয়েশ । মাধুও কম না । সে এমনই কামচোর, এক ঘণ্টা খেঁটে-ছিটে ফের এক ঘণ্টা চুরুট টানে । এ কারণে কেউই তাকে কাজে রাখে না । ঘরে যদি একমুঠ চাল, ডাল কিংবা একফোঁটা শালুনের ঝোল থাকে তো কসম খেলেও কাজে নামবে না মাধু । দিন দু-এক অনাহারে কাটলে পরে একদিন হাসু গাছের ডাল-পাতা ভেঙ্গে কুড়িয়ে মাধুর কাছে দেয়, আর মাধু সেগুলো নিয়ে বাজারে বেচে আসে । যে ক’দিন এ দিয়ে চলে সে ক’দিন আর রোজগার নেই । দু’জন নবাবের বদন নিয়ে দিনভর এদিক সেদিক ঘুরে বেরায় । আবার যখন খুদ-পিপাসা হবে তখন হয়তো আবার কাঠখড়ি ভাঙে, নয়তো অনিচ্ছায় কারো দু’চার আনার মজদুরির তালাশে যায় ।
এমন না যে, গাঁয়ে এখন কাজের দুর্ভিক্ষ যাচ্ছে । কাজবাজের কোনো অভাব নেই । কৃষাণকুলের গ্রাম । মেহনতি মানুষের জন্য পাচ-পঞ্চাশটা কাজ ছড়িয়েই থাকে । কিন্তু গায়ের মানুষ এদের কাজের জন্যে তখনই পায় যখন দু’জন থেকে অন্তত একজনের কাজ না করে আর কোনো উপায় থাকে না । ভাগ্যক্রমে এ দু’জন যদি সাধু-সন্ন্যাসী হতো তবে ‘অল্পতুষ্টি’ আর ‘খোদাভরসা’র লাইনে এদের শুদ্ধ করতে কোনো সবকের দরকার হতো না । কেননা, এসব তাদের স্বভাব জাত ‘গুণাবলি’ ।

আজব এক জীবন ধারা এদের । ঘরের মেঝেতে দু-তিনটে মাটির বাসন ছাড়া আর কোনো সম্পত্তিও এদের নেই । ছেঁড়া-ফাটা কাপড়ে লজ্জা ঢাকাই সার । পার্থিব ভাবনা থেকে বিলকুল বেফিকির । ঋণে-কর্জে একেবারে জেরবার । গালিও শোনে । মারও কম খায় না । কিন্তু মোটে লাজ নেই, গম নেই । নি:স্বও এতোখানি যে, পাওয়ার আশা বাদ দিয়েই লোকে যা কিছু কর্জ দেয়ার দেয় । এমনি দেয় । শোধ চাইলেও পায় না ।

কালাই মটর বা মিষ্টি আলুর ফসলের দিনে ক্ষেত থেকে আলু-মটর উগলে এনে খায় । সিদ্ধ-অসিদ্ধ খায় । ক্ষেত থেকে পেয়াঁজ উঠিয়ে, মরিচ ছিঁড়ে ভুনা করেও খায় । কখনো দিন পাঁচের জন্য পরের ক্ষেত নিড়িয়ে আঁখ তুলে আনে, তারপর রাতে বসে বসে চোষে ।

এই রকম যাযাবর সন্ন্যাসের মতো করে জীবনের ষাট বছর কাটিয়ে দিয়েছে হাসু । মাধুও বাবার পদচিহ্ন দেখে দেখে চলছে গর্বিত সন্তানের মতো । বরং বলা ভালো, বাবার নাম-শিরোনাম আরো খানিকটা উজ্জ্বল করেই চলছে সে ।

আজো দু’জনে একসাথে আলোর কুণ্ডর সামনে বসে আলু সিদ্ধ করছে । এই আলুও কারো ক্ষেত থেকে হালাল করা হয়েছে নিশ্চিত ।

হাসুর বিবির পরপারযাত্রা হয়েছে বহুদিন । মাধুর শাদি হয়েছে মাত্র গত বছর । মেয়েটা জাতবংশীয়ই ছিলো বটে । আসার পর থেকে এই পরিবারে কিছুটা আদব-লেহাজের ভিত-বুনিয়াদ রেখেছে সে-ই । যাতায় ঘাস-দানা পিষে খোসা ছাড়িয়ে দিনে না হলেও সেরখানেক আটা জোগাড় যন্তর করে ফেলতো মেয়েটা । তারপর তা দিয়ে এই দুই নির্লজ্জ নিকাম্মার উদর-আগুন নেভাতো । কিন্তু এ আসার পর বাপ-বেটা আরো বেশি আলসে, আরামখাকি হয়ে গেছে । শরীরের জোড়া আরো একটু নির্লোদ শক্ত হয়ে উঠছে এদের । কেউ কাজের ডাকলে নবাবি ঢঙে দ্বিগুণ মজুরি হাঁকতো, না করার ইচ্ছায় ।
সেই মেয়েটাই আজ ভোর থেকে প্রসবযন্ত্রণায় মরতে বসেছে, আর এই দুই স্বজন সম্ভবত এই অপেক্ষায় আছে, মরুক, ও মরলেই একটু শান্তি মিলবে ওদের ।

হাসু আলু বের করে ছিলতে ছিলতে বললো- যা না, একটু দিকি আয়, কেমনতরো রইছে ।
- ওই ডাকিনীটা উহ-আহ করচে, আর কি ! এ গাঁয়ে তো ওঝাজিও এক রুপি মাঁগবে । সেটি আসপেনে কুন ঘর থিকে ?

আসলে মাধুর আশঙ্কা হলো, সে ঘর যাওয়ামাত্রই আলুর বড় ভাগটা সাবার করে দেবে হাসু । বললো, কুটুরিতে যাতি আমার ডর লাগচে ।
- ডর কিসের ? আমি তো হেথায় আচি না কি ?
- তালি পরে তুমি গে দেকো না ?
- শোন, মাধু, আমার মেয়েমানুষ যবে মরেচিলো, আমি তিন দিন তার সিথান থেইকে একচুল নড়ি নি, হুম । তাপ্পর, তোর পরিবার আমাকে দিকলি পরে কেমন শরম পাবে বল্ দিকি । কুনোদিন তো তার সুরমুকটি আমি দিকি নি । আজ গিয়ে তার খোলাপটকা শরীর দিকবো না কিরে ? তার গা-গতরের কুনো বালা-ই তো অকন সিদে নেই । হামাক দিকলি পরে কুয়াইশ করে একটু হাত-পা নাড়াবে, তাও তো পারবি নানে ।
- ওদিকে হামি তো চিন্তা করি মরছি, বাপুজি । তেল, গুড়ও নেই হামাক ঘরে । একটি কাঁচি পর্যন্ত নেইকো । ইকখান বাচ্চা-কাচ্চা হলি পরে কী করবো নে ?
- সবই আসি পড়বেনে । ভগবান বাচ্চা দিলি পরে দিকপি, যারা ইকটু নুন-পানি, একটি পয়সা তক দেয় নি কুনোদিন, তারাও ডাকি ডাকি দু-চার আনা বাইর করি ছাড়বিনে । হামার তো চেলে হলো, ঘরে কিচ্চুটি ছিল নাকি ? ওমনতরো দেকিস, আজ ভি একরকম কাম চলিই যাবে নে ।

যে সমাজে দিনমান গতর-খাটানো মানুষের অবস্থাও এদের থেকে বিশেষ ভালো ছিলো না আদৌ । সেখানে বাস করেও এমন ভরসার কথা বলার তাগত একমাত্র এদেরই ছিলো বলতে হবে । এরা সেই ক্ষেত-খামারের মেহনতি কৃষকদের ভজিয়ে ভাজিয়ে ফায়দা হাসিল করতে পারতো বলে কৃষক পরিবারের থেকেও এদের ভার-ভাবনা ছিলো অনেক কম । বলতে গেলে বিলকুল চিন্তামুক্তই ছিলো এরা । এ ধরনের মন-মগজ তৈরি হয়ে যাওয়াতে আশ্চর্যের কিছু নেই । আমার মতে, কৃষাণকুলের তুলনায় হাসু অনেক বেশি সূক্ষ্মদর্শী ছিলো হয়তো; যার ফলে মাথামোটা সাধাসিধে কৃষক গোষ্ঠীর একজন না হয়ে সে উচ্ছৃঙ্খল চিটার-বাটপারদের কাতারে ঢুকে পড়েছিলো । তবে হ্যাঁ, তার মধ্যে অবশ্য এই যোগ্যতা ছিলো না যে, একদম পায়ে পায়ে সন্ত্রাস-গুণ্ডাদের আদবকেতা মেনে চলবে । অর্থাৎ এতোটাই ঢিলামাশি ছিলো যে, কোনো বদ-কানুনের আদতও গড়ে উঠতে পারে নি সঠিকমাত্রায় । হয়তো এ জন্যই, তার বয়েসি, একই সাথে বেড়ে উঠে যেখানে অন্য অনেকে গাঁয়ে-গঞ্জের মাতবর-সরদার হয়ে বসেছে, আর এই হাসুকে মানুষ ভ্রুকুটি করছে, ছিঁচকে চোর বলে চিহ্নিত করছে, তারপরও হাসু মনে মনে তৃপ্তির হাসি হাসতে পারছে । ভাবছে, তার এই গরিবি হাল যদি না হতো আজ, তাহলে কী ভোগটাই না ছিলো কপালে । এই জীর্ণ-দুর্দশা আছেই বলেই তো তাকে কৃষকের মতো হাড়ভাঙা খাঁটুনি করে মরতে হয় না । তদুপরি কৃষকের মতো সাদাদিল হলে তার সরলতা আর নির্বচনতার সুযোগ নিতো তার মতো অন্য মানুষ । আহ্, বড় বাঁচা বেঁচে গেছে সে ।


দু’জনেই আগুন থেকে আলু বের করে গরম গরম গিলতে থাকে । কাল থেকে এ অবধি কিচ্ছুটি মুখে পড়ে নি । খাওয়ার মতো পায় নি কিছুই । তাই বলে এটুকু সময়েরও বার নেই যে, খানিকটা জুড়াক, তারপর মুখে দেবে । বেশ ক’বারই দু’জনের জিভ ঝলসে গেছে ।
খোসা ছাড়ানোর পর আলুর শরীরটা তেমন গরম না মনে হলেও ভেতরটায় আগুন অঙ্গার হয়ে জমে থাকে । দাঁতের নীচে নামার সাথে সাথেই গলাসহ টাকরা জ্বালিয়ে দেয় । কিন্তু এই অঙ্গারটা মুখে রাখার থেকে ভালো হলো ভেতরে পাঠিয়ে দেয়া । যেহেতু সেখানে ঠাণ্ডা করার বেজায় উপকরণ মজুদ আছে । অতএব দু’জনেই ঢোক গেলার মতো করে আলুগুলো তাড়াতাড়ি গলার ওপারে ঠেলে দেয় । এই করতে যেয়ে তাপে-কষ্টে চোখ থেকে ছটাকখানেক পানিও বেরিয়ে গেল হাসু-মাধুর । তবু ক্ষান্তি নেই । কে কার চেয়ে আগে বেশিটুকু খেতে পারলো, চলছে তার এক অসম প্রতিযোগ ।
এমনই নিদারুণ সময়ে কোত্থেকে হাসুর চোখে একখানি ভোজ-নিমনতন্নর স্মৃতি ভেসে আসে উড়াল পাখির মতো ।

বিশ বছর আগে । সেই নিমনতন্নে গিয়ে হাসু যেমন ভরপেট খেতে পেয়েছে, তা তার জীবনে একটা মাইল ফলক ঘটনা বৈকি । আজো তার ক্ষিদে চাগানো স্মৃতি টাটকা মাছের মতো সুগন্ধি ছড়ায় । সে স্বগতোক্তি করে, সেই ভোজের কাহন ভুলবো না রে, মাধু । আজতক তেমন মজেদার খানা পেটপুরে খাওয়া হয় নিকো আর ।
মেয়েপক্ষের লোকেরা সবাইকে লুচি খাইয়ে ছিলো, সব্বাইকে। ছোট-বড় সকলেই সে লুচির ভাগ পেয়েছে । সাথে ছিলো খাঁটি ঘিয়ের চাটনি । রায়েতা, তিন রকমের শাকভাজি, একটা ঝোল ঝোল রসালো তরকারি, আচার, মিঠাই । কী করে বোঝাবে যে, সেই ভোজের খাবারে কেমনতরো সোয়াদ যে হয়েছিলো সেদিন । যা খুশি চাও আর যত চাও খাও, কেউ বাধা দেবে না, জিজ্ঞেসও করবে না । অতিথিরা এতো এতো খেয়েছে, খাইয়েছেও যে, কেউ হয়তো পানি খাবে, গ্লাসে পানি নিয়ে খাবার আগেই পাতে তার গরম ভাপ ওঠা গোল গোল কচুরি ঢেলে দিলো । হয়তো সে না করছে, ভাই আর খেতে পারছি না । কিন্তু কে শোনে সে কথা, দিয়ে যাচ্ছে তো যাচ্ছেই । শেষে যখন সবার হাত-মুখ ধোয়া হলো, তো সবাইকে একটা করে বড় পানও খেতে দেয়া হয়েছে ।

- কিন্তু আমার আবার পান খাওয়া সইতো নারে, মাধু । মুণ্ডু পে চক্কর মারে । সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারচি না । ত্বরা করে গিয়ে ঠাকুরের কম্বল মুড়ি দিয়ে শুয়ে পড়েচিলুম । বড় দিল দরিয়া লোক আচে সে ঠাকুর ।

মাধু তার বাপ হাসুর কথা শুনছিলো, আর জিভ বের করে মজা চাখছিলো । তারপর বললো, আহ্, ইক্কন যদি কেউ আমায় সিরাম এককান ভোজ খাতি ডাকতো !
- ইকানে আর কে কী খাওয়াবে ? ও জামানা চিলেক আলাদা । ইক্কন তো সবেরে কেষ্টগিরিতে পেয়িচে । বিয়ে-ছাদিতে কম খর্চা করো । শ্রাদ্ধে-খানাতে বেশি খর্চা করে হবি কী- ইরাম কত্তা মুসল্লি বের হয়িচে । পুচে দেকো তো, গরিবের মালামাল চুষে চুষে কোথা নিয়ে রাখপে, বাপু ? পরেরটা চোষণের কালি তো কোনো খামতি দিকিনাকো । হামাক খিলানের কালিই যতো কেষ্টগিরি।
- তুমি কি কুড়িটা লুচি খাতি পারিচো, বাপুজি ?
- কুড়িটা বলিস কীরে, তারচে বেশি খায়িচি না ?
- হামি হলে পঞ্চাশ খাতি পারতাম ।
- হামিও পঞ্চাশের কম খাইনি মনে কচ্চে ।
- পাঠার গোশতের ঝোল চিলে । আজ তো তার আধেকটা কেউ খাতি দেবে না ।

আলু খাওয়া হলে দুজনেই পানি খায় পেট ভরে । তারপর পরনের ধুতি বিছিয়ে সেই আগুনের সামনেই পা-দুখানা পেটের সাথে দ-এর মতো পেচিয়ে শুয়ে পড়ে । দূর থেকে দেখলে মনে হয় যেনো, দুটি আজদাহা সাপ কুণ্ডুলি পাকিয়ে পড়ে আছে । ওদিকে বিধিয়া আহ-উহ আর্তনাদ করেই যাচ্ছে ।


সকালে মাধু কুঠুরির মধ্যে ঢুকে গিয়ে দেখে, তার বিবি ঠাণ্ডি মেরে পড়ে আছে । তার মুখের ওপর মাছি ভনভনিয়ে উড়ছে। ফ্যাকাশে চোখের মণি ও পুতুলিটা উল্টে আছে । সারা দেহে মাটি-কাঁদা লেপ্টে একেবারে লুতুপুতু অবস্থা । পেটের মধ্যেই নবজাতক বাচ্চাটার জানাযা হয়ে গেছে ।

মাধু ভয়ে আঁতকে ওঠে । দৌড়ে আসে হাসুর কাছে । তারপর দুজনেই একসঙ্গে হায় হায় রবে কোরাস-কান্না জুড়ে দেয় । দুই হাতে মাটি মেখে বুক চাপড়ানোর কাজটাও চালায় সমান তালে ।

এই আহাজারি শুনে প্রতিবেশিদের ছুটে আসতে দেরি হয় না । পুরোনো রসম অনুযায়ী শোকসন্তপ্ত পরিবারকে সান্ত্বনা দিতে যায় তারা ।

কিন্তু বেশি কান্নাকাটি করার সুযোগ কই ! মেলা কাজ বাকি পড়ে আছে । কাফনের জোগাড় যন্তর এবং কাঠ-পাট-লাকড়ির ব্যবস্থাও করতে হবে । এমন দুর্দিনেও এদের ঘরে একসিকি পয়সা দেখা পাওয়া চিলের বাসায় আস্ত-খণ্ড বাঁশ পাওয়ার মতোই দুষ্কর, দুর্লোভ ।

অগত্যা নিরুপায় হয়ে বাপ-বেটা কাঁদতে কাঁদতে গ্রামের জমিদারের দুয়ারে ধর্ণা দেয়, যা দেখে মনে হতে পারে পূর্বপরিকল্পনারই অংশমতো । জমিদার মশায়, যদিও এদের দুজনের চেহারা অব্দি দেখতে ঘেন্না করতেন, এমনকি চুরির অপরাধে, কথা দিয়েও কাজ না করার গুনেগার দিতে নিজের হাতে এদের দুইটাকে উত্তম-মাধ্যমও দিয়েছেন কয়েকবার, কান্না দেখে তিনিও জিজ্ঞেস না করে পারলেন না, কি হে হাসু, কাঁদচিস ক্যান রে ? মনে হচ্চে, কাঁদতে কাঁদতে চেহারাখানাই বিগড়ি ফালিচো, দিকি তো চিনাই যাচ্চি নাকো । কী, আবার কোনটা ফলিয়েচো ? এই গাঁয়ে আর থাকপি না, সেই সিদ্ধান্ত পাকা করিচিস নাকি ?

হাসু মাটিতে মাথা ঠেকিয়ে জল থৈ থৈ চোখে বললো, সরকারজি, বড় বিপদে পড়ে এয়েচি । মাধুর পরিবার ও রাতে গত হই গিয়ে । দিনমান তড়পে তড়পে গেলো সরকার । দুপুর রাত তক তার সিথানে পড়েচিলুম হাম দুটি প্রাণী, সরকার । অষুধ-পথ্যি যেটুকু পায়িচি, সব করেচি । কিন্তু ও হামাক সব ফেলে মনে বড় দাগা দিয়ে চলি গিয়ে । মালিক, ইক্কন হামাক একটা রুটি দেওনের কেউ নেইকো আর । বড় নি:স্ব হয়ে গিয়ে হামি । ঘর উজাড় হয়ে গিয়ে । হামি তো আপনার গোলাম, ইক্কন আপনি বিনি বিধিয়াক মাটি দেওনের আর কে আচে... । হামাক সব তো অষুধ-পথ্যিতে খুইয়ে দিয় । আজ মালিক আপনি কিচু দিলি পরে ওর সমাধিত্ ছাই উড়বে, সরকার । আপনি বিনি আর কার দুয়ারে যাবো, মালিক... ?

জমিদার সাহেব দিলদরিয়া মানুষ বটে । কিন্তু তিনি বিলক্ষণ জানেন, হাসু-মাধুর প্রতি দয়া করা আর কালো কম্বলে রঙ করা একই কথা । মনে চাচ্ছিলো বলে দেন যে, যা, দূর হ, ইকান থিক । লাশ ওই ঘরের মেঝেতেই পুঁতে রেখে দে । এমনিতে তো শ’বার ডাকলি পরেও পাত্তা পাওয়া যায় না । এখন যেই না গরজ পড়িচে, অমনি এসে খোশামোদি-তোষামোদির বাণ ছুটিয়ে দিচ্চিস । ছালা, হারামখোর, বদমাশ কাহাঁকা ।

কিন্তু গোস্বা কিংবা প্রতিশোধ নেওয়ার সময় এটা নয় । ইচ্ছায় না অনিচ্ছায় কে জানে, দুই রুপির একটা নোট ধরে ছুঁড়ে মারলেন জমিদার । এইটুকুই । সান্ত্বনার একটা শব্দও মুখ থেকে বের করলেন না তিনি । এমনকি একবার সেদিকে ফিরেও তাকালেন না । মনে হয়, মাথার বোঝা ঝেরে ফেলে স্বস্তি পেয়েছেন খানিক, ব্যস ।

জমিদার সাহেব যেহেতু দুই রুপি দিয়েছেন, তাই গাঁয়ের বেনিয়া মহাজনেরও প্রত্যখ্যান করার সাহস হলো না । হাসু আবার জমিদারের নামে ঢেঁড়া পেটাতে বেশ ওস্তাদ । সুতরাং কেউ এক আনা-দুই আনা আবার কেউ চার আনা বিলিয়ে দিলো হেসেখেলে । ঘণ্টা পার না হতেই হাসুর হাতে প্রায় পাঁচ রুপি পরিমাণ পয়সা জমে গেছে । এছাড়াও কেউ দিয়েছে ডাল-শস্য, কেউবা চাল । কেউ জোগাড় করে দেয় লাকড়ি । দুপুর বেলা হাসু আর মাধু কাফনের কাপড় আনতে বাজারে রওয়ানা হয় । আর আশপাশের লোকেরা বাঁশঝাড়ে যায় বাঁশ কাটতে । এদিকে গ্রামের পাতলাদিল মহিলারা এসে বসে লাশ দেখার পুণ্যে হাসিল করছে আর তার দুর্ভাগ্যের কথা স্মরে স্মরে দু’ফোঁটা অশ্রু ঝরিয়ে বিদায় নিচ্ছে ।

বাজারে পৌঁছে হাসু বললো, দাহ করার কাঠ-খড়ির জোগাড় তো হই গিয়ে, কী বলিস মাধু ?
মাধু বললো, হ্যাঁ, লাকড়ি তো অনেক জমচে দিকি এলুম, এখন কাফন লাকপে । তো সস্তা একজোড়া নিলেই হবি ।
- হাঁ, তাছাড়া আর কি ! লাশ দাহখাঁটে চড়তি চড়তি রাত হয়ে যাবেখন । রাতে কাফন দিকপিই-বা কে, আর পরখ করবিই-বা কে ।
- কেমন রেওয়াজ হয়িচে সমাজে, দেকো বাপু, যে আচ্ছা-খাচ্ছা জিন্দা থাকতি ছেঁড়াফাঁটা কাপড় পরতি পারে নি, মরলে তারও নয়া কাপড় চাই ।
- কী-ইবা করার আচে বল, এই পাঁচটা রুপি যদি আগে পেতিস, তবে তো সত্য খানিক অষুধ-পথ্যির জোগাড় হয়ি যেতো ।

দু’জনেই একে অপরের মনের মর্মকথা বুঝতে পারছিলো ঠিক ঠিক । বাজারে দু’জনেই এদিক সেদিক ঘুরতে থাকে ।

সন্ধ্যা ঘনিয়ে এসেছে । দুই বাপ-বেটা ঘটনাচক্রে অথবা হয়তো ইচ্ছাচক্রেই এক শুঁড়িখানার দরোজায় এসে ঠেকে । এবং যেনো নিয়তি ঘুরপাকেই ভেতরে ঢুকে পড়ে । খানিকক্ষণ উভয়ে হতভম্ব অবস্থায় দরোজার সামনেই দাঁড়িয়ে থাকে । সম্বিত ফিরতেই হাসু এক বোতল মদের অর্ডার করে বসলো এবং তারপর দুজনেই চেয়ারে বসে টেবিলে কনুই রেখে পুরোদস্তুর পানে নিমজ্জিত হয়ে গেলো । কয়েক পেগ পান করার পর দু’জনকেই নেশায় পেয়ে বসে বেশ করে ।
হাসু বললো, কাফন পরিয়ে কী লাভ হবি নে ? শিষবেলা তো পুড়ে ছাইপাসই হয়ে যাবেখন । তোর বিবির পাতে কিছুমাত্র থাকপিনে ।
মাধু আকাশ পানে তাকিয়ে বললো, যেনো নিজের নিষ্কলুষতার কথা ফেরেশতাদের শুনিয়ে দিচ্ছিলো, দুনিয়ার কী এক রীতিরে বাপ, ইকানের মানুষ ক্যান যে মন্দিরে হাজার রুপি দান-দক্ষিণা করচে ? কে দিকপে যে, পরলোকে পায় কি না পায় ?
- ধনীদের কোচে ধন আসে আর তারা সব ফু মেরে উড়িয়ে দেয় । আর হামাক কোচে উড়ানোর কীইবা আছে ?
- কিন্তু বাপুজি, মানুষকে কী কবে নে, যদি জানতি চায়, কাফন কনে ।
হাসু হেসে বললো, কবো যে, কোমর থেকে ফসকে পড়ি গিয়ে । খুপ খুঁজেচি । পাইনিকো ।

মাধু হাসে । এমন অপ্রত্যাশিত সৌভাগ্যে নিজেকে ভাগ্যবান মনে করে বলে, বেচারি বড় ভালো চিল বাপ । মরেও দেক কতো খাইয়ে গিয়েচে ।
আধ বোতলের বেশি সাবাড় হয়ে গেছে ততক্ষণে । হাসু তাই সের দুই লুচি অর্ডার করে । সাথে নেয় গোশতের তরকারি, কলিজা ভুনা আর তেলে ভাজা মাছ । শুঁড়িখানার সাথেই রেস্টুরেন্টের দোকান ছিলো । মাধু দুই পাতিল ভরে সব নিয়ে আসে । দেড় রুপির বেশি খরচ হয়ে গেছে এতেই । সবমিলে আর মাত্র সামান্য পয়সা বেঁচে আছে । দু’জনে এমন ভাবে গোগ্রাসে গিলছে সব, যেনো বনের মধ্যে ক্ষুধার্ত বাঘের সামনে বহুদিন পরে শিকার মিলেছে । না কোনো কৈফিয়তের ভয় আছে তাদের, না ছিলো দুর্নামের আশংকা । মানবিক দুর্বলতার এইসব মঞ্জিল তারা অনেক আগেই পার করে এসেছে । তবু হাসু একটু দার্শনিক মেজাজে বললো, পরলোকে আমাদের প্রশ্ন করা হলে তখন কী জবাব দেবো ?
- প্রশ্ন তো অবশ্যই হবি রে । হা ভগবান, তুই সব জান্তা । তুই ওঁকে বৈকুণ্ঠে ঠাঁই দিস । হামি দুটি প্রাণী অন্তর থিকে ওঁর জন্যে প্রার্থনা করচি । আজ ভোজন খাচ্ছি, কোনোদিন এমনটি খাতি পাই নিকো । সব তো ওঁর জন্যেই পাচ্চি ।

একমুহূর্ত পরে মাধুর মনে একটু সংশয় ভর করলো । বললো, বাপুজি, হামিও তো কোনোদিন উকানে যাতি হবেখন । তখন ?
হাসু এমন শিশুসুলভ প্রশ্নের কোনো জবাব দিলো না । মাধুর দিকে কেবল ভর্ৎসনার দৃষ্টিতে একবার তাকায় । যদি সেদিন আমাদের ধরে বিধিয়া জিজ্ঞেস করে, আমায় তোমরা কাফন দিলি না ক্যান ? তখন কী কবো ?


- কবো তোর মুণ্ডুটা ।
- পুচবে তো ঠিকই ।
- হাঁদারাম, তুই কী করে জানলি যে, ও কাফন পাবি না ? হামাক বেকুফ মনে করচিস ? হামি ষাট বচ্চার দুনিয়াতে বসে শুধু কি ঘাস কাটিচি ? মনে রাখিস, তোর বউ কাফন তো পাবিই, এর চায়ে আরো ভালো কাফন পাবি ।
মাধু বাপের কথা বিশ্বাস করতে পারছিলো না । বললো, কে দিচ্চে কাফন ? পয়সা তো তুমি সব উজার করি দিয়ে ?
হাসু ধমকে উঠে বললো, আমি কচ্চি যে, এর চায়ে ভালো কাফন পাবি, তুই ওটা মানতি পারচিস না ক্যান ?
- কে দিচ্চে, ওটা কলিই তো হয় ?
- ওরাই দিচ্চে, যারা এবার দিয়ে । হাঁ, তবে সেই পয়সা হামাক হাতে আসপি না বটে । তবে যদি কোনোমতে আসতি পারে, তেইলে হাম ফের মদটদ খাইয়ে সব ফিনিশ করে দেবোখব । কাফনের জন্যে তালি পরে ফের পয়সা তুলতি হবি নে ।

আঁধার যতো বাড়ছে, তারার ঝলমলানির সাথে সাথে শুঁড়িখানার জৌলুসও বৃদ্ধি পাচ্ছে । কেউ গান গাচ্ছে, কেউ মাতলামি করছে, আবার কেউ তার বন্ধুর গলায় হেলে লুটিয়ে পড়ছে । আবার কেউ হয়তো তার প্রেয়সীর মুখে লোকমা তুলে দিচ্ছে । শুঁড়িখানার আবহে মাদকতা, বাতাসে নেশার গন্ধ । কেউ কেউ আসতে না আসতেই মাতাল হয়ে যায় । এখানে মানুষ আসেই নিজেকে ভুলে থাকার আস্বাদ নিতে । মদ্যপানের চেয়েও বেশি আনন্দ পায় মানুষ এখানকার উচ্ছল উন্মাতাল পরিবেশের গুণে । হতাশার বেদনাই এখানে টেনে নিয়ে আসে আর কিছুক্ষণের জন্য সে ভুলে যায়, সে কি জিন্দা না মুর্দা । নাকি বেঁচে আছে কবরের গুহায়।

এই দুই বাপবেটাও আনন্দ উল্লাস চরমভাবে উপভোগ করছে । এমনকি উত্তেজনায় ফেটে পড়ছে বারবার । মানুষের নজর কাড়তেও সক্ষম হয়েছে তারা । সবাই ভাবছে, কী ভাগ্যবান তারা ! পুরো বোতল নিয়ে বসেছে ।
খাবার দাবার শেষ হলে মাধু অবশিষ্ট লুচি আর প্লেটে জমে থাকা তেল উঠিয়ে এক ভিখিরিকে দান করে দেয় । ভিখিরিটা বহুক্ষণ যাবত বুভুক্ষের মতো তাদের দিকে তাকিয়েছিলো । মদপানের এই আনন্দ, নেশা আর উত্তেজনা জীবনে এই প্রথম তারা অনুভব করেছে । হাসু ভিখিরিকে বললো, যা, সব নিয়ে যা । বেশি করে আশীর্বাদ দিস । যার কামাই করা এই পয়সা, সে তো বেঁচে নেইকো । তাতে কি, তোর আশীর্বাদ ওঁর কাছে পৌঁছে যাবি ঠিক । খুপ কেঁদে কেঁদে তার তরে প্রার্থনা করিস । একদম নির্ভেজাল কাজের মজুরি নিয়ে কামাই করা পয়সা । বুঝেচিস।
মাধু আবার আকাশপানে চেয়ে বললো, ওঁ ঠিক বেকুণ্ঠে যাবে গা । হতি পারে ও বৈকুণ্ঠের রানি হবি ।

হাসু হঠাৎ উঠে দাঁড়ায় । নেশায় টালমাটাল হয়ে বলে, হাঁরে বেটা, ও তো অবশ্যি বৈকুণ্ঠে যাবি । ও না গেলি পরে যাবে কি এই মোটা মোটা ভুঁড়িরা, এরা তো গরিবকে দু’হাতে লুটেপুটে খায়, আর আপন বাপের পাপ মোচনের জন্যে গঙ্গায় সাঁতার কাটে, মন্দিরে জল চড়ায় ?

বিশ্বাসের এই খোশ রঙও ছিলো নেশার এক অভূতপূর্ব বৈশিষ্ট্য । এর কারণেই দু:খ হাওয়া হয়ে যায় ।

মাধু বললো, কিন্তু, বাপুজি, বেচারি জীবনভর দু:খেই ভুগি গিয়ে । মরলোও বড় দু:খ-কষ্ট সতি না পেরে । মাধু চোখে হাত রেখে কাঁন্না জুড়ে দিলো ।
হাসু সান্ত¡নার স্বরে বললো, কেনো কাঁদচিস খামোকা । দুনিয়ার মায়াজাল থাকি ও মুক্ত হয়ে গিয়ে, বেশ । বড় জঞ্জাল ছে বাঁচে গিয়ে । ও তো বড় ভাগ্যবান, এতো তাড়াতাড়ি মায়ার মোহ বন্ধন ছাড়ি চলে যাতি পারিচে ।

এবার দু’জনে সেখানে দাঁড়িয়ে গান গাইতে শুরু করে- দু চোখের মণিতে যা দেখা যায়, সবই হলো ভেলকি ।

শুঁড়িখানা জুড়ে চলছে আনন্দ, উল্লাস, বেহায়াপনা আর বেলেল্লপনার হুল্লোড় । এই দুই বাপবেটাও সেই হুল্লোড়ে গাইতে থাকে মনে যা আসে সেই গান । একসময় দুজনেই উঠে নাচতে শুরু করে । হেলে দুলে, টালমাটাল হয়ে । এদিকে সেদিকে ঢুলে ঢলে বেসামাল হয়ে । বোতলের সবটুকু মদ গলায় ঢেলে দিয়ে । পরিশেষে মাতলামির চূড়ায় উঠে আর নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে না নিজেদের । সেখানেই বেহুঁশ হয়ে পড়ে যায় । মরেই গেছে হয়তো ।
কাফনের কাপড় এবার আর একটায় সামাল দিতে পারবে না গাঁয়ের মানুষ । তিনটেই জোগাতে হবে ।

অনুবাদ : মনযূরুল হক
[email protected]


লেখক পরিচিতি : মুন্সি প্রেমচাঁদ হিন্দি এবং উর্দু ভাষার অন্যতম সফল সাহিত্যিক। বেনারসের কাছে লমহি নামক এক গ্রামে বিরাট এক পরিবারে জন্মগ্রহন করেন তিনি । গ্রামের কোষাধক্ষ গুরসহায় লালের নাতি ও পোষ্ট অফিসের কেরাণী অজৈবলালের ছেলে প্রেমচাঁদ, সাত বছর বয়সে, গ্রাম থেকে আড়াই কিলোমিটার দূরে লালপুর মাদ্রাসাতে শিক্ষাজীবন শুরু করেন । সেখানেই তিনি উর্দু ও ফারসি ভাষা শেখেন । মাত্র আট বছর বয়েসে তাঁর মা, আনন্দি দেবি (সম্ভবত ইনিই প্রেমচাঁদের ‌বড়ে ঘর কি বেটি' -র চরিত্র আনন্দির অনুপ্রেরণা) অসুস্থতার কারণে মারা যান । অল্প কিছুদিনের ভেতর তাঁর ঠাকুরমাও তাঁকে ফেলে রেখে চলে যান । এইসময় প্রেমচাঁদ নিতান্ত একা পড়ে যান । তিনি পরিবারের চতুর্থ সন্তান । তাঁর আগের দুই দিদি শিশুকালে মারা যায়। তাঁর ঠিক আগের যে দিদি, সুগগি, তারও বিয়ে হয়ে যায় ঠাকুরমা মারা যাওয়ার আগেই । বাবার পোস্টিং হয় গোরখপুরে- সেখানে তিনি আবার বিয়ে করেন । বাবা-মা নাম রেখেছিলেন ধনপত রাই, তবে তাঁর কাকা মহাবীর তাঁকে নবাব বলে ডাকতেন । ‌নবাব রাই' তাঁর প্রথম ছদ্মনাম । তাঁকে হিন্দি ভাষার প্রথম বাস্তববাদী লেখক হিসেবে মানা হয়। তাঁর লেখায় দরিদ্র ও নিম্নবিত্ত মানুষের নানাবিধ সমস্যার ছোঁয়া পাওয়া যায় । তাঁর লেখায় সামাজিক নানা সমস্যা- যেমন, corruption, child widowhood, prostitution, feudal system, poverty, colonialism বিষয়বস্তু হয়ে এসেছে বহুবার ।
রচনাটির অনুবাদ হয়েছে মূল উর্দু থেকে ।
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে নভেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৫:৪৩
১০টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ফখরুল সাহেব দেশটাকে বাঁচান।

লিখেছেন আহা রুবন, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৫০





ফখরুল সাহেব দেশটাকে বাঁচান। আমরা দিন দিন কোথায় যাচ্ছি কিছু বুঝে উঠতে পারছি না। আপনার দলের লোকজন চাঁদাবাজি-দখলবাজি নিয়ে তো মহাব্যস্ত! সে পুরাতন কথা। কিন্তু নিজেদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হচ্ছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। প্রধান উপদেষ্টাকে সাবেক মন্ত্রীর স্ত্রীর খোলা চিঠি!

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:০৩




সাবেক গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনকে মুক্তি দিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে খোলা চিঠি দিয়েছেন মোশাররফ হোসেনের স্ত্রী আয়েশা সুলতানা। মঙ্গলবার (২৯... ...বাকিটুকু পড়ুন

কেমন হবে জাতীয় পার্টির মহাসমাবেশ ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৫৬


জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিক্ষুব্দ ছাত্র জনতা আগুন দিয়েছে তাতে বুড়ো গরু গুলোর মন খারাপ।বুড়ো গরু হচ্ছে তারা যারা এখনো গণমাধ্যমে ইনিয়ে বিনিয়ে স্বৈরাচারের পক্ষে কথা বলে ,ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ হওয়াতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী

লিখেছেন সামিউল ইসলাম বাবু, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১২:১৩

ফিতনার এই জামানায়,
দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী খুব প্রয়োজন ..! (পর্ব- ৭৭)

সময়টা যাচ্ছে বেশ কঠিন, নানান রকম ফেতনার জালে ছেয়ে আছে পুরো পৃথিবী। এমন পরিস্থিতিতে নিজেকে গুনাহ মুক্ত রাখা অনেকটাই হাত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা

লিখেছেন মুনতাসির, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৮:২৪

বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×