somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মুভি রিভিউ :: অশ্রুর বাঁধ ভেঙে দেয়া ১৩ টি সিনেমা

২০ শে জুন, ২০০৯ বিকাল ৫:৪৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

((ছোট্টমানুষগুলোর দৃষ্টিজুড়ে "বড় হওয়ার" স্বপ্নের বুননটা অন্যদের মত ছোট্ট আমার কাছেও অচেনা ছিলনা । জীবনে বড় হওয়া নয় বরং লম্বায় বড় হওয়ার স্বপ্ন দেখার বয়েসটা শুরু হতেই কাঁদতে ভুলে গেলাম । চারপাশের লম্বা মানুষগুলোকে কখনও কাঁদতে দেখি না , ছেলেমানুষগুলোকে অশ্রু ফেলতে দেখি না। বড় হওয়ার দুর্নিবার নেশায় অশ্রু বিসর্জন দেয়াটা তখন থেকেই আমার কাছে ভীষণ বিব্রতকর ব্যাপার। কষ্টে , ব্যথায় অশ্রগুলো জমে পাথর হয়ে যায় , তবুও এক ফোঁটা জল বিসর্জন দিই না । অথচ হাতে গোনা কিছু সিনেমার যখন সেই আমার পাষাণ হৃদয়ে রক্তক্ষরণ ঘটায় , অঝোর ধারায় যখন কেঁদে ফেলি তখন নিজেই অবাক হই))

ডিপার্চারস(জাপান)

মৃত্যুকে কেন্দ্র করে আমার দেখা সবচেয়ে হৃদয়স্পর্শী মুভির নাম ডিপার্চারস। এপ্রিলের কোন এক গভীর রাতে ডিপার্চারস দেখার সূচনা মুহূর্তে মুভিটি নিয়ে কোন ধারণাই ছিল না আমার । হঠাৎ করে চাকরি হারানো প্রতিভাবান যন্ত্রী-বাদক দাইগোর টোকিও ছেড়ে পিতৃভিটায় আশ্রয় নেয়া , পেশা বদলে মৃত মানুষের শেষকৃত্যের আগে সাজ-সজ্জার নতুন পেশা গ্রহনকে কেন্দ্র করে মুভির ঘটনা এগিয়ে যেতে থাকে । আবহসংগীতের অভিনবত্ব আর ছোটবেলায় পিতাকে হারিয়ে ফেলা দাইগোর মনস্তত্ব আমাকে মোহাবিষ্ট করে তোলে । নিজের অজান্তেই বুকের ভেতর চাপ চাপ কষ্ট জমা হয় । শেষ দিকে এসে দাইগো খুঁজে পায় নিজের জন্মদাতা বাবাকে । বাবাকে নিয়ে অনেক অভিমান দাইগোর , বাবার হাত থেকে যখন স্মৃতিময় নুড়ি গড়িয়ে পড়ে , আমার বাঁধ ভেঙে যায় । অস্থির কান্নায় ভেঙে পড়ি । ডিপার্চারস আমাকে কাঁদিয়েছে বারবার , নিজের কোন আপনজনের মুখ যখন দাইগোর বাবার মুখে ভেসে ওঠে হৃদয় ভেঙে চুরমার করে দিয়ে যায়।

ব্রাদারহুড (কোরিয়া)

ব্রাদারহুড (তায়েগুকজি) দেখার আগেই জানা ছিল মুভির মাঝে কান্নার সম্ভাবনার কথা , এমনটা জানার কারণেই নিশ্চিত ছিলাম মুভিটা আমায় হয়ত তেমন নাড়া দেবে না । কোরিয় যুদ্ধের পটভূমিতে নির্মিত ব্রাদারহুডের ঘটনা আবর্তিত হয়েছে দু'ভাইয়ের মাঝে চিরস্থায়ী ভ্রাতৃত্ববন্ধনকে কেন্দ্র করে । পঞ্চাশ বছর পর ছোটভাইটি যখন বড় ভাইয়ের দেহাবশেষের পাশে কান্নায় ভেঙে পড়ে , নিজেকে ধরে রাখা আমার কাছে অসম্ভব হয়ে পড়ে । যুদ্ধকে কেন্দ্র করে নির্মিত মুভিগুলোর মাঝে তুলনামূলক বিচারে আমার দৃষ্টিতে ব্রাদারহুড সব মুভিকেই ছাড়িয়ে যায়

ব্যালাড অফ অ্যা সোলজার(রাশিয়া)

ছোট শিশুর মত কেঁদেছি রুশ মুভি ব্যালাড অফ অ্যা সোলজার দেখে । তরুণ সৈনিক আলিয়োশা যখন পাঁচদিনের ক্লান্তিকর যাত্রা শেষে মায়ের বুকে কেবল একটি বার মাথা রাখার সুযোগ পায় , অশ্রু ধরে রাখা কার সাধ্য ?

চিলড্রেন অফ হেভেন(ইরান)

বাঁধভাঙা কান্না কেঁদেছিলাম "চিলড্রেন অফ হেভেন" দেখে । আলি নামের ছোট্ট ছেলেটি যখন দৌড় প্রতিযোগিতায় দ্বিতীয় হতে পারে না , কষ্টে ভেতরটা চুরমার হয়ে যায় । প্রথম হয়ে ট্রফি উঁচিয়ে ধরার দৃশ্যে এমন স্বপ্নভঙ্গের উপাখ্যান আর কোথাও কি কখনও দেখেছি ?

কালার অফ প্যারাডাইস (ইরান)

কাঁদিয়েছিল মুহম্মদ । ইরানী সিনেমা "কালার অফ প্যারাডাইস" এর অন্ধ সেই স্বর্গীয় শিশুটি , অভিমান করে যখন মুহম্মদ বলে ওঠে "আমাকে কেউ ভালবাসে না" , কপোলজুড়ে অশ্রুর অবিরাম ধারা কেবল অনুভব করি । মুহম্মদ কাঁদায় একদম শেষ অবধি , স্বর্গের আলো যখন মৃত শিশুটির হাতে প্রাণের শেষ ছোঁয়া এনে দেয় , মুভির সমাপ্ত হয় , রেখে যায় অব্যক্ত ব্যাথা।

ফরেস্ট গাম্প

ফরেস্ট গাম্প মুভিতে ভালবাসার মানুষটিকে হারানোর কথা বলে যখন ফরেস্ট কান্নায় ভেঙে পড়ে , নিজেকে ধরে রাখা আমার দুঃসাধ্য হয়ে পড়ে । হৃদয়ের সবটুকু নিঙরে দিয়ে ফরেস্টের আকুলতাকে অনুভব করি ।

শিন্ডলার্স লিস্ট

সারাটা মুভি জুড়ে পিতার মত হাজারো মানুষকে পিতার মত আগলে রেখে , জীবনের আলো দেখায় যে অস্কার শিন্ডলার , শেষ দৃশ্যে তার প্রস্থান ভীষণ হয়ে বাজে । শিন্ডলারের বিদায়বেলা ভাষাহীন করে দেয় বারবার ।

বাইসাইকেল থিফ(ইটালি)

দারিদ্রের কাছে অসহায় পিতা অ্যান্টোনিওকে চৌর্যবৃত্তির দায়ে অভিযুক্ত দেখে ছোট্ট ছেলে ব্রুনোর নিষ্পাপ অশ্রুসজল মুখচ্ছবি আমাকে অসহায় করে তোলে । অভাবের তাড়না আর আত্মসম্মানবোধের দ্বন্দ্বে নিস্পৃহতা ভেঙে দিয়ে দর্শক আমাকে ভীষণ তাড়িত করে ।

লাইফ ইজ বিউটিফুল(ইটালি)

লাইফ ইজ বিউটিফুল সিনেমায় রবার্টো বেনিনির পিতৃত্ব সত্ত্বা হৃদয়ে গভীর দাগ কেটে যায় । বুকের ভেতর জমাট বাঁধা কষ্টটা এখনও অনুভব করি । জীবনের শেষ ক'টি ক্ষণ যখন ছেলে ভুলানো কমেডিতে মেতে ওঠে , ঠোঁটে আমার হাসি দেখি , ভেতরটা দুমড়ে যায়

*বিয়োন্ড দ্যা গেটস
*হোটেল রুয়ান্ডা

নৃশংসতা , আর যুদ্ধের ভয়াবহতা চিরাচরিত বীরত্বের বার্তা ছাড়িয়ে থুবড়ে পড়া মানবতার অবক্ষয়ের ছবি আঁকে হোটেল রুয়ান্ডা আর শুটিং ডগস মুভিতে । চোখ বেয়ে হয়ত জল গড়িয়ে পড়েনি , কিন্তু বিষন্ন মনে চোখের কোণে কয়েকফোঁটা জল চিকচিক করে ওঠে ।

লাভ লেটার(জাপান)

স্কি করতে গিয়ে পর্বতের বুকে হারিয়ে যাওয়া বন্ধুকে কিছুতেই ভুলতে পারে না হিরোকো নামের মেয়েটি ।ভীষণ কষ্ট হয় যখন বরফ ঘেরা পর্বতে হারিয়ে যাওয়া বন্ধুকে চিৎকার করে ডেকে ওঠে হিরোকো ।রোমান্টিক মুভিতে কষ্টের পর্বগুলো ফিকে হয়ে যায় একটা সময় , লাভ লেটার তার ব্যতিক্রম ।

ইনোসেন্ট ভয়েসেস(মেক্সিকো)

মধ্য আমেরিকান প্রজাতন্ত্র এল সালভাদরে গৃহযুদ্ধে যে নির্মমতা আর নৃশংসতার শিকার হয়েছিল শিশুরা ,কত হাজার শিশু হারিয়েছে তাদের শৈশব সেটা হয়ত বিশ্বের খুব কম লোকেরই জানা । ১১ বছরের ছোট্ট ছেলে শাভা'র জবানীতে যখন যুদ্ধ দানা বাঁধে , অন্যরকম খারাপ লাগা অনুভূতিতে ভেতরটা ছেয়ে যায় ।
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে জুন, ২০০৯ সন্ধ্যা ৬:১৮
১৪৪টি মন্তব্য ৭৪টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ফখরুল সাহেব দেশটাকে বাঁচান।

লিখেছেন আহা রুবন, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৫০





ফখরুল সাহেব দেশটাকে বাঁচান। আমরা দিন দিন কোথায় যাচ্ছি কিছু বুঝে উঠতে পারছি না। আপনার দলের লোকজন চাঁদাবাজি-দখলবাজি নিয়ে তো মহাব্যস্ত! সে পুরাতন কথা। কিন্তু নিজেদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হচ্ছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। প্রধান উপদেষ্টাকে সাবেক মন্ত্রীর স্ত্রীর খোলা চিঠি!

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:০৩




সাবেক গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনকে মুক্তি দিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে খোলা চিঠি দিয়েছেন মোশাররফ হোসেনের স্ত্রী আয়েশা সুলতানা। মঙ্গলবার (২৯... ...বাকিটুকু পড়ুন

কেমন হবে জাতীয় পার্টির মহাসমাবেশ ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৫৬


জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিক্ষুব্দ ছাত্র জনতা আগুন দিয়েছে তাতে বুড়ো গরু গুলোর মন খারাপ।বুড়ো গরু হচ্ছে তারা যারা এখনো গণমাধ্যমে ইনিয়ে বিনিয়ে স্বৈরাচারের পক্ষে কথা বলে ,ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ হওয়াতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী

লিখেছেন সামিউল ইসলাম বাবু, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১২:১৩

ফিতনার এই জামানায়,
দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী খুব প্রয়োজন ..! (পর্ব- ৭৭)

সময়টা যাচ্ছে বেশ কঠিন, নানান রকম ফেতনার জালে ছেয়ে আছে পুরো পৃথিবী। এমন পরিস্থিতিতে নিজেকে গুনাহ মুক্ত রাখা অনেকটাই হাত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা

লিখেছেন মুনতাসির, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৮:২৪

বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×