দেশ: সোভিয়েত ইউনিয়ন/ রাশিয়া
ইউরোপের পূর্ব রণাঙ্গনে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জার্মানদের অগ্রাভিযান
রুখে দেয়ার জন্য লড়ছে সোভিয়েত যোদ্ধারা । এদেরই একজন ১৯ বছরের সোভিয়েত তরুণ আলিয়োশা । যুদ্ধের এক গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়ে তার হাতে ধ্বংস হয় দু'টি জার্মান ট্যাংক । আলিয়োশার বীরত্বে সন্তুষ্ট হয়ে
কমান্ডিং অফিসার তাকে পদোন্নতি দিতে চান । কিশোর আলিয়োশা
অনেক দূরে একা ফেলে আসা তার মায়ের সাথে একটি রাত কাটানোর
ইচ্ছার কথা কথা জানায় , পদোন্নতি বিনিময়ে চায় দু'দিনের ছুটি । যুদ্ধে
বীরত্বের প্রতি শ্রদ্ধাস্বরুপ কমান্ডিং অফিসারের নির্দেশে ছয়দিনের বিরল ছু'টি মেলে আলিওশার । মায়ের মুখ দেখার বাড়ির উদ্দেশ্যে ফ্রন্ট ছেড়ে
যায় কিশোরটি , এখনও সে জানেনা সামনের দিনগুলোতে কি অপেক্ষা
করছে তার জন্য .......
ছবিটি দেখে আবেগকে সামলাত পারিনি , কেঁদে ফেলতে বাধ্য হয়েছি । কেউ একটি ছবি দেখতে চাইলে নির্দ্বিধায় এ সিনেমাটি দেখতে বলব ।
লেটারস ফ্রম আইয়ো জিমা(Letters from Iwo Jima)
দেশ: যুক্তরাষ্ট্র(জাপানিজ ভাষা)
জাপানের দক্ষিণে প্রশান্ত মহাসাগরের বুকে শান্ত সমাহিত দ্বীপটির নাম "আয়ো জিমা" । ১৯৪৫ সালের শুরুর দিকে অশান্ত হয়ে ওঠা প্রশান্ত মহাসাগরীয় রণাঙ্গনে "ব্যাটল অব আয়ো জিমা" হয়ে উঠে দ্বিতীয়
বিশ্বযুদ্ধের জাপান-মার্কিন যুদ্ধাপখ্যানের শেষ পাঠ । ১৯৪৪ এর শুরুর দিক থেকেই একের পর এক যুদ্ধে তুমুলভাবে পর্যদুস্ত জাপানের মূল-খন্ডের বাইরের শেষ ঘাঁটি আয়ো-জিমা । আর মার্কিনীদের লক্ষ্য আয়ো জিমা দখলের পর দ্বীপটিকে ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করে জাপানের মূল-খন্ডে চূড়ান্ত মরণ ছোবল হানা । মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে সমরবিদ্যায় প্রশিক্ষিত লেফটেন্যান্ট জেনারেল কুরবায়াশির দিকে চেয়ে আছে পুরো
জাপান ।দ্বীপের কমান্ডে থাকা জেনারেল কুরবায়াশি নৌ, বিমান আর স্থল বাহিনীর সাহায্য চেয়ে পাঠান । একের পর এক যুদ্ধে পর্যদুস্ত ইমপেরিয়াল জাপান আর্মড ফোর্সেস আয়ো জিমার জন্য কোন সাহায্য পাঠাতে
অপারাগতার কথা জানায় ।মাত্র ২২০০০ সৈন্য , ভারী মর্টার আর মেশিন গানের সম্বল নিয়ে জেনারেল কুরবায়াশির চোখে প্রবল প্রতাপশালী মার্কিন বাহিনীর কাছে নিশ্চিত পরাজয়ের ছবিটা স্পষ্ট হয়ে যায়। বদলে ফেললেন যুদ্ধের চিরাচরিত রীতিনীতি , সিদ্ধান্ত নিলেন আয়ো জিমাতে প্রতিটি
জাপানী সৈন্যের মৃত্যুর আগে বিলম্বিত করতে হবে মার্কিনী চূড়ান্ত বিজয় , সুযোগ করে দিতে হবে জাপানের মূল-ভূখন্ডের সৈন্যদের সংগঠিত হয়ে ওঠার ।
ফেব্রুয়ারী , ১৯৪৫ আয়ো জিমার পথে রওনা হয়ে যায় শতাধিক মার্কিন ব্যাটলশীপ , আর লক্ষাধিক সেনা । মৃত্যুর প্রহর গুনতে থাকা কুরবায়াশির সম্বল কেবল দেশের মাটির প্রতি অপরিসীম মমতা আর প্রতিজ্ঞা ।
জাপানি দৃষ্টিকোণ থেকে নির্মিত সিনেমাটির পরিচালক ক্লিন্ট ইস্টউড । একঘেঁয়ে মার্কিন সমর দৃষ্টিভঙ্গির বাইরে নির্মিত সিনেমাটি বহু বহুদিন আমার মনে দাগ কেটে থাকবে ।
জোয়াইউ নোয়েল/হ্যাপি ক্রিসমাস(Joyeux Noël)
দেশ: ফ্রান্স (ফ্রেঞ্চ/ইংলিশ/জার্মান ভাষা)
১৯১৪ সাল , ইউরোপ জুড়ে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের দামামা । ফ্রান্সের অভ্যন্তরভাগে ঢুকে পড়ে জার্মান বাহিনী । উত্তর পশ্চিম ফ্রান্সের এমন একটি রণাঙ্গনে তিনটি ভিন্ন ভিন্ন পরিখায় ত্রিমুখী অবস্থানে তিন দেশের তিনটি বাহিনী । পূর্ব দিকের পরিখায় অবস্থানরত জার্মান বাহিনীকে অন্য দুই ট্রেন্চ থেকে প্রতিহত করছে যথাক্রমে ফ্রেঞ্চ আর স্কটিশ বাহিনী ।
২৪ ডিসেম্বরের দিনব্যাপী রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে তিন পরিখার মাঝের নো ম্যান্স ল্যান্ডে প্রাণ ঝরে যায় অনেকগুলো স্কটিশ আর ফরাসী সৈন্যের ।
সন্ধ্যা নেমে আসার পর বিগ্রহ বিষাদ ভুলে ক্রিসমাসের আগমনী সংগীত বাজে স্কটিশ ঘাঁটিতে ।বিমুগ্ধ জার্মানরা প্রত্যুত্তরে গেয়ে উঠে অপেরা
সংগীত ।ক্রিসমাস ট্রি হাতে গাইতে গাইতে নোম্যান্স ল্যান্ড উঠে আসে
এক জার্মান সৈন্য । গুলি করার বদলে স্কটিশ শিবির থেকে কয়েকজন সৈন্য উঠে আসে বাদ্যযন্ত্র হাতে । দুই শিবিরের ঐকতানে স্কটিশদের
মিত্র ফরাসীরা খানিক হতচকিয়ে যায় , খুব শিঘ্রই পানীয়ের বোতল হাতের নোম্যান্স ল্যান্ডে দেখা যায় ফরাসী বাহিনীকেও । ক্রিসমাসের রাতের জন্য ঘোষিত হয় যুদ্ধবিরতি । সাময়িক বিরতি শেষে যুদ্ধাবস্থায় ফিরে যায় তিন বাহিনী , কিন্তু পরের দিনগুলোতে অপেক্ষা করছে আরও বড় বিস্ময় .........
একদমই অন্যরকম সিনেমা , হৃদয়ছোঁয়া ।যুদ্ধের বিভীষিকায় এমন হৃদয়ের ছোঁয়া কিছুতেই কিছুতেই মিস করবেন না ।
ডাস বুত/ দ্যা বোট(Das Boot)
দেশ: জার্মানি
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের জার্মান নৌবাহিনীর শক্তিশালী আর অত্যাধুনিক ইউ-বোট (ডুবোজাহাজ) গুলোর সাফল্য আটলান্টিক মহাসাগরকে পরিণত করে ব্রিটিশ আর মার্কিন জাহাজগুলোর জন্য মৃত্যুপুরীতে । অক্টোবর , ১৯৪১ সালে ৪২ জন ক্রু নিয়ে ফ্রান্সে অবস্থিত জার্মান নৌঘাঁটি থেকে
লেঃ ক্যাপ্টেন লেহম্যানের নেতৃত্বে ইউ-৯৬ রওনা হয় আটলান্টিক মিশনে । যুদ্ধাবস্থা পর্যবেক্ষণের জন্য তাদের সাথে যোগ দেন সামরিক সংবাদদাতা লেফটেন্যান্ট ওয়ার্নার । বিপদসংকুল এক অভিযানে
মিত্রবাহিনীর ডেস্ট্রয়ারগুলোর কবল থেকে অসংখ্যবার রক্ষা পাওয়া
ইউ-৯৬ বেশ কয়েকটি জাহাজের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা
করে।ক্রিসমাস উপলক্ষে ফ্রান্সের লা রোশেলে নৌঘাটিতে ফেরার পথে সদর দপ্তরের গুপ্ত তারবার্তার ঘুরিয়ে দেয়া হয় জাহাজের গতিপথ ।ব্রিটেন নিয়ন্ত্রিত সংকীর্ণ জিব্রালটার প্রণালী পার হয়ে এবার তাদের যেতে হবে ইতালী ।ক্যাপ্টেনের জিব্রালটারে বিপর্যয়ের আশংকা সত্য পরিণত করে ব্রিটিশ বিমানের আক্রমণে বিকল হয়ে পড়া ইউ=-৯৬ আটকে যায় সাগের তলদেশে ,নিশ্চিত মৃত্যুর প্রহর গুনতে থাকে ৪২ জন নাবিক ..
জার্মানির ইতিহাসের সবচেয়ে ব্যয়বহুল এই সিনেমার পুরোটাই চিত্রায়িত হয়েছে একটি সাবমেরিনের অভ্যন্তরের । নাজিদের কে এড়িয়ে সাধারণ জার্মানদের দেশপ্রেমের দৃষ্টিভঙ্গিতে জার্মানদের উপস্থাপন করা হয়েছে । নৌযুদ্ধের অভিনব একটি দিক তুলে ধরায় অসাধারণ লেগেছে মুভিটি ।
ইন্ডিজিনেস/ডে'জ অব গ্লোরি(Indigènes)
দেশ: আলজেরিয়া(ফ্রেঞ্চ ভাষা)
ফরাসী কলোনীভুক্ত আলজেরিয়া , মরক্কো আর তিউনিসিয়ার আরবদের নিয়ে গড়ে তোলা বাহিনী ফ্রান্সের প্রতি পূর্ণাঙ্গ আনুগত্যের শপথ নিয়ে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে বীরোচিত ভূমিকা পালন করে ।এদেরই চারজন
...আবদাল কাদির , মেসাউদ , সাঈদ , ইয়াসির । ইতালীর যুদ্ধ আর ফ্রান্সকে দখলদারিত্ব থেকে মুক্ত করার অভিযানে আফ্রিকান আরব রেজিমেন্টের অন্যযোদ্ধাদের সাথে এই চার অকুতোভয় যোদ্ধাও জীবন বাজি রেখে লড়াই করে । এক সময় মুক্ত হয় ফ্রান্স , পরাজিত হয়ে বিতাড়িত হয় নাজি জার্মানি । যুদ্ধ শেষ হয় , কিন্তু আরবদের কথা কেউ মনে রাখে না । বীরত্বের স্বীকৃতি মেলে না ফ্রান্সের কাছে মেলে কেবল একরাশ গ্লানি আর বঞ্চনা ।
আলজেরিয়ান এই মুভিটিকে তুলনা করা হয় , সেভিং প্রাইভেট রায়ানের সাথে । হলিউডের বাইরে আফ্রিকার কোন দেশের জন্য মাইলফলক হয়ে থাকার মত মুভি
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা আগস্ট, ২০০৯ সকাল ১১:৫৯