আমি যেখানে থাকি তার পাশেই একজন মুরুব্বি এবং তার স্ত্রী থাকেন । মুরুব্বী চাকরি থেকে অবসর নিয়েছেন তার ছেলে সম্ভবত ঢাকার বাইরে কোথাও পড়াশোনা করে। প্রায় বিকেলেই তার বাসার সামনে আরও কয়েকজন মানুষ সহ তারা বসে গল্প করেন । আমার রুম থেকে সব স্পষ্ট শোনা যায়। গত কয়েক দিনের হরতাল শুরু হবার পরে দেখতাম তারা আলোচনায় ছেলেপেলেদের নিয়ে দুশ্চিন্তা করত। এই গণ্ডগোলের মধ্যে কোথায় কেমন আছে এইসব। এটা খুবই স্বাভাবিক। এই হরতাল গন্ডগোল শুরু হবার পর আমার বড় ভাই প্রায়ই ফোন দেয় জানতে চায় কোথায় আছি কি কি করছি আর সবসময় বলে যাতে বাইরে না যাই। অথচ এমনিতে সে মাসে একবারও ফোন করে না।
আমি যেটা বলতে চাচ্ছি, ৩য় বা শেষ ওয়ান ডেতে যখন বাংলাদেশ জিতল সেদিনও ওই মুরুব্বি চাচার বাসার সামনে গল্প চলছিল।বিভিন্ন কথার মধ্যে হটাত আমি শুনতে পাই এক মহিলা বলছে বাংলাদেশ জিতেছে দুই রান বেশী করছে।উল্লেখ্য বাংলাদেশ ।৩০৮ রানের টার্গটে পরে ব্যাট করে জিতে যায় । আমরা সবাই জানি পরে ব্যাট করে জিতলে তাকে উইকেটে জেতা বলে সেইমতে অইদিন বাংলাদেশ ৪ উইকেটে জিতেছিল :v । এই কথাটা সাময়িক মনে আসলেও ওই মহিলার কথার উচ্ছ্বাসে সেটা চাপা পড়ে যায়। সে হয়ত ক্রিকেট খেলাটা ভাল বুঝে না তাই একথা বলেছে কিন্তু বাংলাদেশ দলের জয়ে যে তার উচ্ছ্বাস সেটাই সব থেকে বড় হয়ে ধরা পরা পড়েছে। এই মানুষ গুলোই কিন্তু তার আগেরদিন ওই সময়ে নানা দুশ্চিন্তায় অন্যরকম গল্পগুজব করেছে অথচ আজ তাদের মনে আনন্দ খেলাটা ভাল না বুঝলেও এটা যে দেশের একটা অর্জন সেটা ঠিকই বুঝেছে। দেশের প্রতি যে তাদের ভালবাসা সেটা ঠিকই প্রকাশিত হয়েছে।
আমার রুম থেকে একটু দুরেই একটা দোকান সেখানে প্রতিদিন বিকেলে চা খাই। সেদিনও গেলাম গিয়ে দেখি আরও কয়কজন মানুষ এর মধ্যে শিক্ষক এবং ভুমি অফিসে চাকরি করে এমন লোকও আছে মানে সবাই কর্মজীবি । এইসব কর্মজীবিরা কর্ম শেষে বিকেলে এসে এখানে আড্ডা দিত । প্রতিদিন দেশের অবস্থা নিয়ে তাদের নানা কথা এবং তর্ক বিবাদ করতে শুনতাম কারন সেখানে আওয়ামীলীগ এবং বিএনপি সমর্থনকারী ছিল। সেদিন ওখানে গেলে দেখি সেখানেও ওই একই বিষয় নিয়ে আলোচনা হচ্ছে যে বাংলাদেশ জিতেছে নিউজিল্যান্ড হোয়াইট ওয়াশ হয়েছে

দেশ জিতলে এমন হবে এটাই স্বাভাবিক । আমরাও ত এই স্বাভাবিক অবস্থাটাই চাই যেখানে সবাই একটু শান্তিতে থাকতে পারবে। কেউ তার বাইরে থাকা পরিবার পরিজন নিয়ে উৎকণ্ঠিত থাকবে না এমনটাই ত আমরা চাই। দিনশেষে আমরা সবাই বাঙালী আমরা ভাই-ভাই

এখন মনে হচ্ছে আহা যদি এমন হত প্রতিদিন বাংলাদেশ এমন একটা করে জয় পেত সেটা ক্রিকেট হোক আর ফুটবল হোক আর অন্য কিছুতেই হোক। আর আমারা সবাই উচ্ছ্বাস করতে পারতাম। সেই স্বল্পজ্ঞান সম্পন্ন মহিলাটি কণ্ঠে উচ্ছ্বাস শোণা যেত মুরুব্বিরা তাদের সন্তান বা পরিজনদের নিয়ে দুশ্চিন্তিত না হত। সেই কর্মজীবি ভাই চাচারা একাসাথে চা খেত আর গল্প করতে যেখানে থাকত শুধুই উচ্ছ্বাস।
আবার কেউ মনে কইরেন না আমি এক কাপ চা পাওয়ার জন্য এমন চাইছি

আমরা যদি না জাগি মা কেমনে সকাল হবে ।