দেশবাসী, আসসালামু আলাইকুম।
আমাদের দেশ যখন আজ এক গভীর অনিশ্চয়তায় নিমজ্জিত, তখন 'আপনারা ভালো আছেন' এই প্রত্যাশা যেন নিছকই এক আনুষ্ঠানিকতা। মত প্রকাশে সরকারী হস্তক্ষেপ, হয়রানি, দমন-পীড়ন এবং জনমনে সর্বোপরি অশান্তি আজ এমন এক মাত্রায় পৌঁছে গিয়েছে যে, আমি আশংকা করি বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষই হয়তো আজ আর আন্তরিক ভাবে বলতে পারেন না যে - আমরা ভালো আছি।
:: ভিডিও দেখুন ::
প্রিয় দেশবাসী,
নানান পালাবদল থাকলেও রাজনীতি হচ্ছে মৌলিক ভাবে মানুষ কেন্দ্রীক। আমি, আপনি, আপনারা - আমাদের সকলেরই রাজনৈতিক বিশ্বাস আছে। রাজনীতিতে আমরা হয়তো কেউ সরাসরি যুক্ত, বা কেউ কোন সংগঠন বা আদর্শকে সমর্থন করি। আমাদের সবারই নিজেদের মত করে রাজনৈতিক মতামত আছে। হতে পারে সেই মতামত গুলো ভিন্ন-ভিন্ন ও স্বতন্ত্র। কিন্তু রাজনৈতিক ভাবে আমাদের সবার মাঝে যে মিলটি রয়েছে, তা হচ্ছে - আমাদের চিন্তা ও চেতনায় রয়েছে এই দেশ, এই দেশের মানুষ। দেশের কল্যাণের উপায় নিয়ে আমাদের নিজেদের মাঝে ভিন্নমত থাকতেই পারে। কিন্তু দেশের অস্তিত্ব নিয়ে কোন ভিন্নমত থাকতে পারে না।
আজ অত্যন্ত দুঃখজনক হলেও সত্যি, চলমান রাজনীতিতে যেন দেশের এই অস্তিত্বকে ঘিরেই বিভাজন সৃষ্টি হয়েছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা আর সার্বভৌমত্বের যে সংজ্ঞা আমরা চিরকাল জেনেছি, ক্ষুদ্র একটি রাজনৈতিক জনসমষ্টি নিজেদের স্বার্থে আজ সেই সংজ্ঞাকে বদলে ফেলছে। প্রতিবেশি যে রাষ্ট্রের সাথে আমাদের সম্পর্ক হতে পারে স্বাভাবিক, ভিত্তি হতে পারে পারষ্পরিক মঙ্গল ও সমঝোতা, সেই সম্পর্ককে ব্যাক্তিগত ও সংকীর্ণ স্বার্থে ব্যবহার করে সেই রাজনৈতিক জনসমষ্টি আজ জনমতকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখাচ্ছে। গণতন্ত্রের পালাবদলেই এক সময়ে আজকের এই জনবিচ্ছিন্ন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় গিয়েছিল। ক্ষমতায় যাওয়ার সেই প্রক্রিয়া প্রশ্নবিদ্ধ হলেও গণতন্ত্রের স্বার্থে আমরা সেই প্রক্রিয়াকে মেনে নিয়ে বিরোধী দলে গিয়েছিলাম। কিন্তু গত পাঁচ বছরে দেশের সম্পদের অভূতপূর্ব লুটপাট, দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বর ন্যাক্কারজনক বিনাশ, আর রাজনৈতিক-বিরোধী ও সমালোচকদের নজিরবিহীন দমনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ প্রমাণ করেছে, তাদের ক্ষমতা লাভের সেই প্রক্রিয়া প্রকৃতপক্ষেই কলংকজনক ছিল।
বাংলাদেশ জুড়ে আজ চলছে এক গভীর রাজনৈতিক সংকট। জনবিচ্ছিন্ন আওয়ামী লীগের উপর বিক্ষুদ্ধ হয়ে আছে দেশের মানুষ। জনসমর্থন ও আত্মবিশ্বাস শূণ্যের কোঁটায় পৌছানো আওয়ামী লীগ সরকার গণমানুষের ইচ্ছাকে তাদের হীন রাজনৈতিক স্বার্থের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে। রাষ্ট্র পরিচালনায় ব্যর্থতা, রাজনৈতিক গুম-খুন, সাংবাদিক নির্যাতন ও হত্যা, নতজানু পররাষ্ট্রনীতি, ধর্মপ্রাণ নাগরিকদের গণহত্যা, আর দুর্নীতির স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক সব অভিযোগের মুখে মানুষ প্রতিটি পদে-পদে এ সরকারের উপর অনাস্থার কথা জানিয়ে দিয়েছে। রাষ্ট্রযন্ত্র দ্বারা নিয়ন্ত্রিত স্থানীয় নির্বাচনগুলোয় প্রতিকুল পরিস্থিতিতেও বিএনপি প্রার্থীদের ব্যাপক বিজয়ের মধ্য দিয়ে দেশের মানুষ আওয়ামী লীগ এবং আওয়ামী লীগের নির্বাচনী অবস্থান - দু’টোকেই দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে।
এর ফলে সৃষ্ট অচলাবস্থায় মানুষের মনে স্বাভাবিকভাবেই আজ কয়েকটি প্রশ্ন উঠে এসেছে। নির্বাচনকালীন যে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার দাবিতে আওয়ামী লীগ ১৭৩ দিন হরতাল করেছিল, ৬ জন সাধারণ মানুষকে নিহত হতে হয়েছিল, সেই ব্যবস্থার প্রতি আজ তাদের কেন এত অনীহা? সেই ব্যবস্থা বিলুপ্ত করেই ক্ষান্ত না হয়ে কেন তারা একের পর এক গণহত্যা চালাচ্ছে; বিরোধীদলের নেতা-কর্মীদের গুম করছে; অকথ্য নির্যাতন-নিপীড়ন-গ্রেফতার চালাচ্ছে? পুরো দেশ যেন আজ একটি কারাগার, যেখানে জান-মালের নিরাপত্তা নেই; আছে কেবল ভীতি ও আতঙ্ক। নিরপেক্ষ নির্বাচনে অপমানজনক পরাজয় আর গণহত্যা-নৈরাজ্য-দুর্নীতি-অপশাসন সৃষ্টির দায়ে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড়ানোর ভয় থেকেই কি শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগের এই অবস্থান? দেশবাসীর চাওয়া-পাওয়া, তাদের ইচ্ছা-অনিচ্ছা, এসবের কি কোনই মূল্য নেই? আওয়ামী লীগ কি আবারও চূড়ান্ত ভাবে সেই বাকশালে ফিরে যাওয়ার পরিকল্পনা করছে; যেখানে ভিন্ন মত, ভিন্ন আদর্শ আর সমালোচনাকে রাষ্ট্রযন্ত্র দ্বারা হত্যা করা হত? বাকশালের পরিনতি সম্পর্কে আমরা সবাই জানি। তলাবিহীন ঝুড়িতে পরিনত হওয়া এ দেশের জন্য, এ দেশের মানুষের জন্য, এমনকি আওয়ামী লীগের জন্যও তা ভালো ফল বয়ে আনেনি। আমাদের সবার রাজনীতি যেহেতু দেশের কল্যাণার্থেই হওয়া উচিত, তাই মানুষকে সাথে নিয়ে উজ্জ্বল সম্ভাবনার দিকে যাত্রা না করে কেন আমরা আবার সেই অরাজক অতীতে ফিরে যাব?
তথ্য সুত্র :: ঢাকাটাইমস২৪ ছবি ও ভিডিও সহ সম্পুর্ন খরটি এই খানেই পাবেন