পিঁপড়েরা দল বেঁধে রওয়ানা হয়। ওদের পুরো বসতির আজ নৈশভোজের ব্যস্ততা। রাণি পিঁপড়ে পথ দেখিয়ে নিয়ে যায় ওদের। আমি দূর থেকে ওদের আনন্দ ধ্বণি শুনি। আমি আজ পিঁপড়েদের ভাষা বুঝতে পারছি। ওদের পায়ের শব্দটা পর্যন্ত অসম্ভব স্পষ্ট আমার কাছে। ওরা এগিয়ে আসে। নিজেরা বলাবলি করে "সোনার মত রং তার, মেঘের মত চুলের ভেতর যে ঘিলুটা আছে সেটা নিশ্চয় অনেক উপাদেয়ই হবে"। আমি মুচকি হাসি। কারন সব থেকে উপাদেয় অঙ্গটা ওরা খেতে পারবেনা।
আমি অপেক্ষা করতে থাকি ওদের পৌছবার। রয়ে সয়ে নিজেদের নৈশভোজের মজা নিতে ওরা ধীর পারে এগোয়। আমি অধীর অপেক্ষায় সময় গুনে চলি..........এর মাঝে কোন এক কাঠপোকা এসে আঙ্গুলের ডগা চুরি করে খেয়ে যায়। আমি নালিশ জানাতে অপেক্ষা করি।আমি পিঁপড়েদের সেই কাঠপোকার চেহারার বর্ণনা দিতে চাই হুবহু যাতে তারা খুঁজে পায় সেই বদমাশ চোরটাকে। ওর পেট চিরে বের করে নেবে আমার আঙ্গুলের ডগা!
একজন একজন করে ঢুকছে ওরা। চাটাই আর কলাপাতের ফাঁক গলিয়ে ঢুকে পড়ে সদলবলে। ওদের হুড়োহুড়ি লেগে যায়, কে কোথায় বসবে। রাণী সাবধান করে না লড়তে! আমি এবার নড়াচড়া বন্ধ করি, পাছে ওরা ভয় পেয়ে পিছিয়ে যায়। ওদের নিরেট আনন্দে বাঁধা দেবার বিন্দু মাত্র ইচ্ছে আমার নেই। তাই চুপ করে অপেক্ষা করি ওদের ভোজপর্ব শুরু হবার!
ওরা আমার চোখ দিয়ে শুরু করে। চোখের ভেতর তোমার ছবি দেখে ঘাবড়ে যায় প্রথমে। পরে বুঝে ফেলে ও ছবি স্থির, ওর কোন ক্ষমতা নেই ওদের থামাবার। ওরা মনোযোগ দেয় খাবারের দিকে। প্রথেম চোখের মণি তারপর পুরো কোটরটা খালি করে ফেলে। থেকে যায় আমার জমানো অজস্র কান্নার জল। লোনা জলে ওদের পিপাসা মেটেনা। এর পর আমার হাত, পা, মাথার ঘিলু সমস্ত জায়গায় দখল বসায় ওরা। আমি চুপ করে ওদের খাওয়ার শব্দ শুনি। দেখার সাধ্য নেই। চোখ দুটো কোটর থেকে ওদের পেটে ঢুকেছে অনেক আগেই!
রাণি তার মন্ত্রী-সান্ত্রী নিয়ে ঢুকে পড়ে আমার ভেতরে। তার রাজভোগের খোঁজে। মন্ত্রীরা কেউ পায় ফুসফুস, কেউ যকৃত এমনি করে অনেক কিছু। রাণীর মহাভোজের খোঁজ নিতে গিয়ে দেখা গেল হৃৎপিন্ড বদলে সেখানে এক বিশাল খাঁদ! হৃৎপিন্ডটা অনেক আগেই কোথায় যেন হারিয়ে গেছে। অভুক্ত রানী ক্ষেপে গিয়ে সবার খাবার বন্ধ করে দেন। আক্ষেপে সবাই ফিরে চলে নিজের ঘরে।
আমি চুপটি করে হাসি, হেসেই চলি............. হৃদয়টা যে অনেক আগেই আমি তোমাকে দিয়েছিলাম!