মা দিবসে মা কে উইস করা হয়নি। আমার মনেও ছিল না আজ মা দিবস। টেলিভিশনের রিমোট চাপতে চাপতে কোন একটা ইন্ডিয়ান চ্যানেলে দেখলাম বলিউডের "ইয়ামি (!!!) মাম্মিদের র্যাঙ্কিং হচ্ছে! আমরা বন্ধুরা এক জাগায় হলে গল্প করি কার মা কতটা কেয়ারিং, কত ভালোবাসে, কত ভালো রান্না করে, কিংবা কতটা কেয়ারফুল আমাদের প্রতি। আমাদের সন্তান রা হয়ত গল্প করবে কার মা কতটা ইয়ামি, আই মিন সেক্সি!!!! মজাই লাগছে ভাবতে!
যাকগে "মা" শব্দটাই এমন যে শব্দটা মনে এলেও অজানা এক শান্তি-স্বস্তিতে মনটা ভরে ওঠে। মা কে মনে হতেই ছোট বেলা থেকে আজ অবধি কত কথা যে মনে পড়ে গেল। ছোটবেলা থেকে আমি খুব রাগী আর জিদ্দি। কারও উপর রাগ হলেই তার সাথে কথা বলা বন্ধ করে দেই। কতবার যে রাগ করে মায়ের সাথে কথা বলা বন্ধ করেছি, আবার সুযোগ বুঝে দফারফা করে নিয়েছি তার হিসেব নেই। মা ছিল মাথার উপর মস্ত বড় এক ছায়া। মায়ের আর আমার স্বভাব সম্পূর্ণ বিপরীত তাই হয়ত বিপরীত ধর্মী প্রান্তের আকর্ষণ সূত্র অনুযায়ি মায়ের সাথে আমার এত সখ্যতা।
আমি গাছে চড়তে খুব পছন্দ করি। গাছে বসে পেয়ারা খাওয়া, গাছের ডালে বসে পা দুলিয়ে গান গাওয়া, এমনকি গাছের ডালে বসে বই পড়া! আজও সুজোগ পেলেই গাছে চড়ে বসে থাকি। মা কিছুই বোলতো না। যেন আমি মেয়ে নই, তার ছেলে। যেন আমার সব কিছুই শোভা পায়। কীসে আমি রেগে যাই,রাগলেও মনের ভেতরটা আমার অতটা চটা নয় এসব শুধু মা'ই বোঝে। এখন যখন কেউ আমার রাগ জিদ দেখে আমার প্রতি বিরুপ হয় তখন মা কে খুব মিস করি। শুধু মা,ই একজন যিনি বুঝে আমার ভেতর আর বাইরেটা একই। আমার ভেতরে যদি কোন মেঘ জমে আমি তাকে জমিয়ে না রেখে ঝরিয়ে দেই। কুটিল মনে তাকে ফুলিয়ে ফাপিয়ে তুলিনা।
ছোট বেলার একটা বড় অংশ কেটেছে দাদু বাড়ি। ভর দুপূরে মানুষের গাছের বরই, কাঁচা মিঠা আম চুরি করলে যখন বাসায় নালিশ আসতো মা সেসব কোনদিন বাবার কানে উঠতে দেন নি। এই তো কিছুদিন আগেও দাদুবাড়ির বিলটা পানিতে টইটুম্বুর। নৌকা নিয়ে সারা বিল চষে বেড়িয়েছি। মা কিচ্ছুটি বলেনি। "সেয়ানা মেয়ের এমন ছটফটানি ভালো না" লোকের এমন কথা মায়ের কানেই ঢুকতো না। মা যেন স্বর্গ থেকে কোন এখ দৈববাণী পেয়েছেন "তার মেয়েটা কোন ভুল করতেই পারেনা"!
স্কুলে পিয়ালীর সাথে আমার একটা প্রতিযোগীতা ছিল, সেটা হল কার কত রঙের কতগুলো চুল বাঁধার রিবন আছে। আর তার রসদ যোগাত মা। আমার যে পরিমান ভ্যালভেটের রিবন ছিল সব জুড়লে ঐশ্বরিয়া রায়ের একটা পার্টি গাউন হয়ে যেত! ছোট বেলা থেকে সাজগোজের একটা বাতিক ছিল। মা সাজগোজের যত আধুনিক যন্ত্রপাতি আমায় কিনে দিতেন! আজ আমি নিজে নিজে যখন কিছু কিনি মা কে মনে পড়ে!
ভায়ের সাথে খুব মারামারি করতাম আমি। এখনও করতে চাই কিন্তু পারিনা। ভাইটা আর মারখুটে নাই আগের মত। যদিও আমি আগের মতই ফুলন দেবীই আছি । মা সবসময় আমার পক্ষ নিয়ে ওকে পেটাত। বাবাও আমার পক্ষ নিত। সময়ের চাহিদা জীবনের চাহিদার চেয়েও কেমন যেন বড় হয়ে যায়। আপনজন কে দূরে সরিয়ে নিজেকে তৈরি করার প্রতিযোগীতাই নামতে হয়। তবুও পড়ে থাকে কিছু চলে যাওয়া সময়, এলোমেলো পুতুলের বাক্সে!