আমার বড় খলামনির বড় মেয়ে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আই ই আর এ পড়ে এখন (আমি অসুস্থ হওয়ার পর যে আপু শ্রাবনের ফুল কে ফোন করে আমার ব্যাপারে জানিয়েছিল)। আপু যখন ইন্টারমিডিয়েট পড়ে তখন তার দাদী খুব অসূস্থ ছিলেন। বাড়ির বড় মেয়ে, বড় সন্তান আপুর জামাই দেখার সখের কাছে আপু তার ইচ্ছে গুলো কবর দেয়। রাজপুত্তুর দেখে বিয়ে দেয় খালুজান মেয়েকে। বছর না গড়াতেই রাজপুত্তুরের রাজকীয় চেহারা টা ধরা পড়ে। সেই দৃশ্য গুলো চোখে না দেখে কেউ ভাবতেও পারবেনা। তবুও সেই সমঝোতার নামে আপু মেনে নেয় অনেক কিছু। কিন্তু একদিন আর সম্ভব হয়না। আমাদের খুব প্রিয় আপুটা একদিন ফিরে এল বাপের বাড়ি,সব শেষ! আজও সেই কষ্ট বুকে করে ঘোরে আপু। যখন মাত্র ডিভোরসি হওয়ার কারনে অনেক কিছু তাকে ফেইস করতে হয়। অনেকে ভাবেন আমি লিখতে বসে বোধ হয় শুধু নিজের কষ্ট গুলো নিয়েই লিখি, আমি দুঃখবিলাসী। লেখার সময় এই মুখটা চোখে খুব ভাসে, তারপরও বলবেন আমি দুঃখবিলাসী????!!!
রিনি আপু, বুয়েটের টিচার, বাবার বন্ধুর মেয়ে। বন্ধুর মেয়ে বললে বোধ হয়
সম্পর্ক টা খুব ফিকে হয়ে যায়, আমার বাবার আরেকটা মেয়ে। তার স্যার নেম বললে
হয়ত অনেকে যারা বুয়েটে পড়েন তাকে চিনবেন। বিয়ে হয়েছিল এক পুলিশের
সাথে।পাত্র বিসি এস ক্যাডার, সুপুত্তুর। বিয়ের পরে তার বাহাদুরী দেখানো
শুরু হল আপুমনির সাথে। কথায় কথায় মা ছেলে মিলে হেনস্তা করতো আপুকে। বেল্ট
দিয়ে মেরে রক্তে ভরে ফেলতো বিছানা বালিশ। বলতো বউ নাকি বেয়াড়া বলদ, না
পিটালে হাল চাষ হয় না ঠিক মতো। রক্তাক্ত অবস্থায় একদিন বাবা আর আঙ্কেল
মিলে তাকে নিয়ে আসে। ডিভোর্স হয়ে যায়, ছেলের চাকরীও যায়। সেই নাইটমেয়ার্স
সেই ট্রমা এখনও কাঁপিয়ে দেয় আপুকে। এরা দুজনেই এখনও বলে "আমি ওকে আজও
ভালবাসি"! লিখতে বসে এই ঘটনাটাই চোখে ভাসে। এর পরও কি কারও বলার আছে, আমার কষ্টগুলো, তাদের কষ্টগুলোর সাথে মিলে যাওয়া স্রেফ দুঃখবিলাস????!!!
আমার একমাত্র বান্ধবী ডিপার্টমেন্টে। ২০০৮ এর ১৩ জুন বিয়ে হয়। বিয়ের পর
থেকেই একটা কামুক পারভার্ট ওকে অতিষ্ট করে ফেলছে আজ অবধি। কথায় কথায় গায়ে হাত তোলা, মা ভাই বোন মিলে একটি মেয়েকে টর্চার করা। ম্যারিটাল রেপ বলে
একটা জিনিস আছে তার অস্তিত্ব বোধ হয় ওর কনজুগাল লাইফ। তারপরও দাঁতে দাঁত
চেপে আছে। প্রায়ই আমাকে ধরে কাঁদে আর বলে " কেন এত ভালবাসতে গেলাম রে?"
ভালবাসাটা যে কেন এত অবুঝ আর যুক্তিহীন হয়!!!
আজ কের ঘটনাটা বলতেই এত কিছু লিখলাম, ভার্সিটি থেকে বাসায় ফিরে ব্লগে
বসছিলাম। ফোনটা চার্জ না থাকায় বন্ধ হয়ে গেছিল। ৬ টার দিকে ফোন খুলে
দেখলাম রিয়াদের মেসেজ। ওকে ফোন দিলাম। ফোন ধরেই বললো "রুহি মারা গেছে, আজ ।সকালে ওর ঘরেই লাশ পেয়েছে, হয়ত রাতেই মরেছে"।
আমরা মিরপুর-১০ এ ইউ সি সি তে কোচিং করতাম। ঐ ব্যাচে ৪ টি শয়তান ছিল, আমি, রিয়াদ, সুমি আর রুহি। টকটকে সুন্দর একটা মেয়ে। যেন গায়ে টোকা দিলে রক্ত জমবে। চার ভায়ের এক বোন। মা মারা গিয়েছিল ওর ছোট ভাইটা ডেলিভারী হওয়ার সময়। তার পর আঙ্কেল আবার বিয়ে করেন। সেই আন্টি ওদের সৎ মা ছিলনা, ছিল আপন মায়েদের চেয়েও বেশি। রুহি সবার চোখের মনি। প্রেম করতো কবি কাজী নজরুল ইসলাম কলেজের ছাত্র রাজনের সাথে।
গত জানুয়ারী মাসে হঠাৎ একদিন রুহি আমাকে ফোন করে দেখা করতে বললো, আমি মিরপুর ১ এ প্রিন্সে দেখা করলাম, ওর সাথে রাজনও ছিল, রুহি বললো ও বাসা থেকে গত ১৫ দিন আগে বের হয়ে আসচে ২ জন বিয়েও করেছে। আজিমপুরে সাবলেটে উঠেছে। আমি শুনেসামনা সামনি কিছু না বললেও আমার ভাল লাগেনি সেদিন। এড়পর এপ্রিলে আমার ফাইনাল পরীক্ষা শুরু হয়। হঠাৎ একদিন ও আমাকে ফোন করে ওর বাসায় ডেকে নিয়ে যায়। তার পর কাঁদতে কাঁদতে জামা তুলে পিঠ,বুক সহ শরীরের বিভিন্ন জায়গায় দেখায় কালচে আঘাতের দাগ। এর পর ওর বড় ভাই রাকিব ভাইয়া, রিপন ভাইয়া সবাই মিলে ওকে বুঝাই রাজনকে ছাড়ার জন্য। ও রাজী হয়না। এর পর জুন মাসের শেষের দিকে একদিন গুরুতর অবস্থায় ওকে বাসা থেকে আমি আর রাকিব ভাইয়া ওকে উদ্ধার করি।
ঐ পোড়ামুখি সেদিন উকিলের সামনে বলেছিল ও নাকি একসিডেন্ট করেছে, রাজন
মারেনি ওকে। তারপর ওকে বাড়িতে নিয়ে আসা হয়। সবাই ওকে সাপোর্ট দিলেও,
আঙ্কেল ওর সাথে কথা বলতো না ঠিক মতো। এই কষ্ট টা ওকে পোড়াচ্ছিল। পরশু দিন
ও সারাদিন কিছুই খায়নি। ঐ অবস্থায় ভার্সিটি গিয়েছিল। তার পর রাতে খালি পেটে
ঘুমাতে গেছিল এই বলে যে ক্যাম্পাসে অনেক কিছু খেয়েছে আজ। বিভিন্ন দোকানে
প্রেসকিপশন দেখিয়ে ও অনেক গুলো ঘুমের ওষুধ যোগাড় করেছিল, প্রায় ৮০ টার মত।
হয়ত অনেক দিন ধরেই করেছে। আজ সকালে, ভোর বেলায় ঘুম ভাঙ্গা মেয়েটাকে ১০ টা অবধি উঠতে না দখে তার মায়ের সন্দেহ হয়। দরজা ভেঙ্গে দেখে টকটকে শরীরটা
কালচে হয়ে আছে। সব শেষ।
আমার রুহি আর নেই। আমার বাসায় আসতো, আমাকে জড়িয়ে ধরে বলতো "তোকে ছাড়া আমি থাকতে পারবো না তুই আমার সতীন হবি?" ওর সাথে গত ৪-৫ তারিখে কথা হয়। আমার একটা দুর্ঘটনার কথা রিয়াদের কাছে শুনে খুব রেগে গিয়েছিল আমি কেন ওকে জানায়নি তাই। কয়েকদিন আগে আমার সাথে দেখা করতে চেয়েছিল। আমি ২ সপ্তাহ খুব বিজি তাই বলেছিলাম নেক্সট শুক্রবার দেখা কোরবো। ও শেষ দেখাটাও কোরলো না। কাল সকালে ওদের বাসায় যাবো। জানিনা রাকিব ভাই আন্টির মুখের দিকে তাকাতে পারবো কিনা!! আমার রুহির মৃত মুখটা দেখতে পারিনি আমি। ভালোই হয়েছে ঐ সুন্দর মুখটাই আমার স্মৃতিতে থাক।
এতগুলো ঘটনা ঘটেছে আমারই সামনে। নিজের সবকিছু না হয় বাদই দিলাম। নিজের ঘটনা গুলো সবই আমি ভুলে গেলাম না হয়। তবে একটা কথা, যারা সত্যি অন্যের কষ্টে ভেবে নেন সব দুঃখ বিলাস, তারাও যেন এমন দুঃখবিলাসের জীবন ভোগ না করে এই দোয়া করি। আমাদের ভালবাসা যদি হয় দুঃখবিলাস তবে আজ থেকে আর কোনদিন কাউকে ভালবাসবো না, দুঃখবিলাসও না।
না না না প্রমিস!!!
রুহির জন্য দোয়া করবেন সবাই।
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে মার্চ, ২০১০ রাত ১১:৩১