কাঁটায় কাঁটায় বারোটা বাজে এখন। রাত বারোটা। বাতি নিভিয়ে, কম্বল মুড়ি দিয়ে শুয়ে লাকি আখন্দের একটা গান শুনছিলাম। খোলা জানালা দিয়ে বাইরের তুষাড় আর বৃষ্টি পড়ার শব্দ আসছে। একটা ছন্দ আছে শব্দগুলোর মাঝে, ঠিক টিপ্টুপ্টাপ্ নয় আবার ঝুপঝুপঝাপ ও নয়। বলা নেই, কওয়া নেই আজ হঠাৎ করে তুষাড় পড়া শুরু হয়ে গেল। বৃষ্টি আর তুষাড়ের এই ছন্দ কাল রাতের দ্রুপদী নৃত্যের কথা মনে করিয়ে দিচ্ছে। হিমহিম রাত, তাও আমি ফ্যান ছেড়ে শুয়েছিলাম। গানটা শুনতে শুনতে হঠাৎ মনে ইচ্ছে হল উঠে পড়ি এবং লিখতে বসি। ঠিক জানিনা কি। শুধু ইচ্ছে করলো লিখতে :-) যেই মনে হল ওমনি উঠে পড়ে বাতি জ্বালিয়ে ল্যাপটপটা নিয়ে বসে পড়লাম :-) গানটা বাজছে এখনো।
শুয়ে শুয়ে যখন গানটা শুনছিলাম একটা দৃশ্য ভাসছিল কল্পনায়। ইস্ চিত্রকর হতে পারলে কি কাজের কাজটায় না হত। মনের ভাবনাগুলোকে তুলির পরশ দিয়ে আকার দিতে পারতাম। শব্দে এখন সেই দৃশ্যকে বন্দী করি কেমন করে! দৃশ্যটা এই এখনো চোখে ভাসছে। রবি ঠাকুর বলছিলেন অনির্বচনীয়কে বর্ণনা করতে রুপকের আশ্রয় নিতে। চেষ্টা করে দেখি -

দেখছিলাম, একটা নির্জন পথের মাঝপথে দাঁড়ানো একজন। দাঁড়িয়ে কি যেন ভাবছে। পেছনে ফেলে আসা জনবিরামহীন পথ। সামনেও যদ্দুর চোখ যাচ্ছে সেই একি পথ। এই পথই তার চলার সঙ্গী। দিগন্তের কোন সীমানায় কি সে লক্ষ্য তার কিছুই জানা নেই। শুধু এইটুকু জানা আছে যে তাকে হাঁটতে হবে। হেঁটে দেখতে হবে দিগন্তের ওপারে কি অজানা ভবিষ্যত অপেক্ষা করছে তার জন্য। কিন্তু মনটা তার থেকে থেকে ডানা মেলে উড়ে যাচ্ছে কোথায়! কোন সেই অপরিচিতার আকাশে ঘুরে ফিরছে চাতক পাখীর মতোন। দৃষ্টি তার কাকে খুজে ফিরছে এদিক হতে ওদিক। পথ চলতে চলতে পথিমধ্যে এক পান্থসখার সাথে আলাপ হয়েছিল। মনে হচ্ছিল ভালোয় হল আলাপ হয়ে। পথের বাকী সময়টা আলাপনেই কেটে যাবে। কিন্তু পথিমধ্যে কি হল, মাঝপথে এসে অপরিচিতা বিদায় নিয়ে তার পথে চলে গেল, আর এই পথিক তার পথে। সেই চিরচেনা পথের চলাটাকে একসময় বড্ড ক্লান্তিকর মনে হতে লাগলো। বড় বেশী দীর্ঘ মনে হতে থাকলো সময়গুলো। আজ পথের মাঝামাঝি দাঁড়িয়ে, এই গানটা হঠাৎ সেই ফেলে আসা পথের পথিকের কথা মনে করিয়ে দিল। আর বুক চিরে বেড়িয়ে এল চাপা একটা দীর্ঘশ্বাস।
...
গানটা শুনতে চাইলে এইখানে ক্লিক করতে পারেন।