নদীর ধারে একটা গাছের ছায়ার নীচে পা গুটিয়ে বৃষ্টি বসা। আর তার কোলের উপর মাথা রেখে মেঘ আধো শোয়া অবস্থায়।
: বৃষ্টি
:: হুম
: কাল কি হয়েছে জানো?
:: জানি
: কি বলোতো দেখি
:: তুমি বৃষ্টির মধ্যে ছাতা মাথায় করে আসছিলে, পথিমধ্যে কাঁদার মধ্যে ধপাস

: কচু জান। জান কাল নাচের অনুষ্টান দেখা শেষে দরজা ঠেলে বেড়োতে যাব শুনি কে যেন আমার নাম ধরে ডাকছে। দু'দুবার। স্পষ্ট শুনেছি।
:: তারপর?
: তারপর আর কি। আমি দরজা ধরা অবস্থায় মাথা ঘুরিয়ে দেখতে চাইলাম কে ডাকছে। কিন্তু পরিচিত কাওকে দেখতে পেলাম না।
:: আচ্ছা! তারপর কেমন দেখলে নাচ?
: দেখলাম আর কই। চোখ দেখছিল দেওল পরিবারের নাচ আর মনে ভাসছিল কিছু দৃশ্য।
:: কি দৃশ্য?
: শুনতে চাও? (মেঘ মাথা ঘুড়িয়ে প্রশ্ন করে)
:: নাহ্ (দুষ্টমী করে হেসে বলে)
: (আশাহত হয়ে) আচ্ছা বেশ
:: মন খারাপ হয়ে গেল? আচ্ছা বল
: সত্যিই শুনতে চাও?
:: হু বললাম তো
: (উচ্ছ্বসিত হয়ে) তবে শোন -
...
দেখি শিশিরভেজা সকালে ঘাসের উপর পা ফেলে ফেলে মেঘ ভোরের হাওয়া গিলছে। গাছে গাছে পাখিরা গাইছে কিচিরমিচির করে। একটুপর মেঘ বুকভরে একটা শ্বাস ঠেনে নেয়। শিশিরবিন্দুগুলো দেখে মনে হচ্ছে যেন সূর্যরশ্মি গায়ে মেখে অলস ভঙ্গীতে ধীরে ধীরে আড়মোড়া ভাঙ্গছে।
মেঘ হঠাৎ শুনতে পায়, তার নাম ধরে কে যেন ডাকছে। কান পেতে মনে হল না আসলেই তো কেও তাকে ডাকছে -
-: মেএএএঘ...মেঘ...এইদিকে
-- (কাছে গিয়ে দেখে)বৃষ্টি!
এক জায়গায় ঘাসের উপর অনেকগুলো শিউলীফুল ঝরে পরে আছে। আর তার মধ্যিখানে দাঁড়ানো বৃষ্টি। মনোহারিণী বৃষ্টি...নাচের একটা ভঙ্গিমায় স্থির হয়ে আছে...একটু আগে দেখা শিশিরবিন্দুর মতো কোমল, স্নিগ্ধসুন্দর দেখাচ্ছে তাকে। শুভ্র একটা শাড়ি পরিহিতা...চারিদিকে ছড়ানো ছিটানো ফুলের অর্ঘ্যের মাঝে তাকে দেখাচ্ছে দেবীর মতোন
-- তুমি এইখানে! এমন স্থির হয়ে আছো যে!
-: আর্রে দেখছো না ফুল গুলো কেমন চারপাশে জড়ো হয়ে আমার রূপকীর্তন গাইছে, গাছে গাছে পাখীরা সেই কীর্তনে সুর দিচ্ছে। দেখছিলাম আর কি তাদের সভার মধ্যরাণী হয়ে দাঁড়াতে কেমন লাগে। হিহিহি
আচ্ছা এইদিকে আসো তো
-- কেন?
-: আহা আসোই না
-: এই শিউলী ফুল গুলো দিয়ে আমাকে একটা মালা গেঁথে দাও তো
-- আমি!
-: তো আর কে?
-- তারপর
-: তারপর সেই মালা পড়ে আমি আমার প্রাণ-পুরুষের উদ্দেশে নেচে নেচে পুষ্পাঞ্জলী দিব
-- ইস্। কষ্ট করে মালা গাঁথবো আমি আর পুষ্পাঞ্জলী পাবে আর এক জন
-: হিহিহি। বেশী কথা বলো তুমি
-- ( হাসি ) বৃষ্টি
-: হুম
-- তোমাকে কি বলেছি আজ তোমায় কেমন দেখাচ্ছে? মনে হচ্ছে ঠিক কবিতার মত। কবিতার শব্দের মতো তোমার অঙ্গের প্রতিটা বাঁকে ছন্দ খুঁজে পাচ্ছি যেন
-: আচ্ছা হয়েছে...সে তোমার শুরুতে ড্যাব ড্যাব করে চেয়ে থাকা দেখেই বুঝেছি। হিহি
(কয়েক মুহূর্ত মিষ্টি নীরবতা)
-- তোমার জন্য যে স্বর্গের উদ্যান থেকে পারিজাত ফুল কুড়িয়ে নিয়ে এসেছি বৃষ্টি। মালা যদি গাঁথতেই হয় তবে আমি সেগুলো দিয়েই না হয় গাঁথতে বসি। সেই হবে মেঘের তড়ফ থেকে বৃষ্টির তরে নিবেদন।
...
:: তারপর?
: তার আর পর নেই
:: কেন নেই?
: কারণ শিল্পী শ্রীকান্ত বলে গিয়েছেন, তার আর পর থাকতে নেই।
যা কিছু গিয়েছে থেমে যাক থেমে যাক না ♩ ♪ ♫ ♬
:: হুম
: আচ্ছা চলো এইবার উঠা যাক, সূর্যটাও অস্ত যেতে বসেছে।
:: ঠিক আছে, চলো।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে জুন, ২০১৩ সকাল ৯:০১