একটা লেখা পড়ছিলাম। একজনের ছাদের উপর পাইচারি করতে করতে Beethoven এর Moonlight Sonata শুনবার ইচ্ছের কথা। বাতাসে শাড়ির আঁচল উড়তে থাকবে আর মনে মনে হবে কবিতার সাথে আলাপন। "চাঁদের আলো পড়ে কপালের টিপ চমকে চমকে উঠুক, বেজে উঠুক হাতের চুড়ি আর হাতে থাকুক কারো হাত...."
এই লাইনগুলো পড়তে পড়তে হঠাৎ খেয়াল গেল কারো ভাবনার মাঝে টুপ করে ঢুকে যেতে পারলে কেমন হয়। হয়তো পাশের বাসার ছাদে জায়গা করে নিলাম। রেলিংয়ে দুহাতে ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে পূর্ণিমার সৌন্দর্য্য দেখতে দেখতে রাতের হাওয়া গেলা যাক না হয় -
(না হয় পাশের বাসার Moonlight Sonata-কে গুনগুন সুরে গান গাওয়ালাম)
: বাহ্ আপনি তো দারুণ গান করেন
(প্রথমে প্রশ্নবোধক দৃষ্টি, কিছুক্ষণ নীরবতা, আরও কিছুক্ষণ পর)
: আপনি?
: (মৃদু হেসে) আমি এইখানে নতুন এসেছি। গতকালকেই এলাম
: ওহ। তাই বলি আগে দেখিনি কেন।
: স্টেটসে ছিলাম। আমার ফুফু থাকে এইখানে
: ওহ আচ্ছা।
: অনেক সুন্দর না আজকের রাতটা?
: হুম
: ছাদে আসেন বুঝি নিয়মিত
: না ঠিক নিয়মিত না। যখন ইচ্ছে করে।
: কেমন লাগে?
: দারুণ! বিশেষ করে এই এমন কোন রাতে যখন আকাশে মেঘ থাকে না, বাতাসে মৌ মৌ করতে থাকে হাসনাহেনার সৌরভ, আর রাতের পৃথিবীর সাথে চলে চাঁদের অভিসার।
: বাহ্ দারুণ বলেছেন তো! কি গান গাইছিলেন একটু আগে
: ওহ সেইরকম কিছু না। এমনিই গুনগুন করছিলাম আরকি
: আমার তো বেশ মনে হল। গান করেন বুঝি?
: আরে না। ওরকম কিছু না
: আচ্ছা

অদ্ভুত! সত্যিই অদ্ভুত! লেখাটা থামিয়ে এসির স্পীডটা বাড়িয়ে দিতে গিয়ে জানালা দিয়ে চোখ পড়তে দেখি আজ সেইরকমই একটা রাত। পূর্ণিমা শশী যেন মৃদু মৃদু ছন্দে Moonlight Sonata-র সুরটা রাতের আকাশে ছড়িয়ে ছড়িয়ে দিচ্ছে। ইচ্ছে করছে রাতটাকে স্বপ্নসুতোয় দিয়ে বেঁধে পাঠিয়ে দিই সেই অপরিচিতার মনের আকাশে।
...
ভাত খাচ্ছিলাম। আয়েশ করে। এই আয়েশ শব্দটা আমার এত এত প্রিয়। ইচ্ছে করে আয়েশ করে আয়েশের গালটা ঠেনে বলি, "এমন মিষ্টি কেন তুমি"


হঠাৎ করে খুব প্রফুল্ল লাগছে। কারণ আছে অবশ্যই কিছু। তবে ঠিক বুঝতে পারছিনা সেগুলোই মুখ্য কিনা। প্রথম কারণ রবিঠাকুরের প্রায় ৬০টা পেইন্টিংস এর একটা প্রদর্শনী হচ্ছে কাল। সেই একি যায়গায় এই সেদিন যেখান থেকে ঘুরে এলাম। এর অনেকগুলো নাকি আগে কখনো প্রদর্শিত হয়নি। শিহরিত হচ্ছি খবরটা জানার পর থেকেই। আর তর সইছে না কখন সকাল হবে কখন ছুটে যেতে পারবো ছবিগুলোর কাছে। আর দ্বিতীয় কারণ, কদিন পরেই তাহমিমা আনাম আসছেন। তার সদ্য বের হওয়া বইটা সম্পর্কে আলোচনা করতে। তাহমিমা আনাম! যার জন্য ফেইসবুকে আমি ফ্যান পেইজ খুলে বসেছি সেই কোন কালে। যার উপর একসময় কঠিন ক্রাশ ছিল। সেই তাহমিমা আনামকে সামনাসামনি দেখতে পাবো! ওয়াও :-) :-)
বেশ অনেকদিন পরে লিখতে বসেছি। নিজের সাথে কিছু বোঝাপড়া করতে নিজের মাঝে ডুব মেরেছিলাম। ভাবছিলাম সুয়চ্চ কোন পাহাড় বা সাগরের কিনারায় দাঁড়িয়ে সমুদ্রের গর্জন শুনতে শুনতে বোঝাপড়ার কাজটা করলে মন্দ হয় না। যেই ভাবা সেই কাজ। চলে গেলাম এমন এক পাহাড়ের চূড়ায় যেখানে এই মহাদেশে পূব আকাশের রবির কিরণের প্রথম রশ্মিটা এসে পড়ে। বিস্ময়ে নির্বাক হয়ে গিয়েছিলাম সে সৌন্দর্যের সামনাসামনি যখন হয়েছিলাম। আমার স্বপ্নেও আমি এমন কোন দৃশ্যের কথা ভাবতে পারতাম না। সামনে নীচে যতদূর চোখ পড়ে মেঘের বিশালতা। তার ফাঁকে ফাঁকে দ্বীপ, সমুদ্র, আর বাকী পৃথিবী। প্রথমেই প্রাণেশ্বরকে মনে মনে প্রণতি জানিয়ে নিয়েছিলাম এমন একটা দৃশ্য চাক্ষুস করার জন্য আমাকে বাঁচিয়ে রেখেছে বলে। কত্তদিন, কত্ত কত্তদিন এমন একটা পাহাড়ের চূড়ার উঠে মেঘদেখবার জন্য ভেতরটা ছটপট করেছে সে একমাত্র আমিই জানি। কিছু পর যখন মেঘের হিমহিম ছোঁয়া শরীরে পরশ ভুলিয়ে দিয়ে গেল তখনো ঠিক বিশ্বাস হচ্ছিল না সত্যি সত্যিই আমি মেঘকে এমন করে আমার সমস্ত অন্ত:করণ দিয়ে অনুভব করছি...সেই মুহূর্তটাকে শুধু অনুভূতি দিয়েই পরখ করা যায়। পৃথিবীর কোন শব্দ নেই তার ঠিকঠিক বর্ণনা করে। এই এখন লিখতে বসে মনে হচ্ছে অনুভূতির সেই দুর্লভ মুহূর্তটা ফিরে ফিরে পাচ্ছি। আরেকটি মুহূর্তের কথা মনে পড়ছে। সাগরের তীরে বালুর উপর খালি পায়ে দাঁড়ানো আমি আর ঠান্ডা ঠান্ডা আটলান্টিকের জল যখন আমাকে একটু পর পর ছোঁয়ে ছোঁয়ে যাচ্ছিল। অসাধারণ সেই অনুভূতিটাও। মন মনে হচ্ছে বহুদিন পর স্নিগ্ধতার একটা ডুব মেরে উঠেছে প্রতিদিনকার কর্মব্যস্ততার মাঝ থেকে।
অর্ণবের "হারিয়ে গিয়েছি" গানটা শুনছি কদিন ধরে। বেশ লাগছে।
"...হারিয়ে যাওয়ার নিয়ম নেই এইখানে...হারিয়ে গিয়েছি এই তো জরুরী খবর..." ♩ ♪ ♫ ♬





সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১১ ভোর ৫:৪৯